শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


শিবতোষ মুখোপাধ্যায়।

‘বাংলার বাঘ’ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নাতি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন প্রাণিবিদ্যার বাঘ। বিজ্ঞানের এই নব শাখাটিকে তিনি করেছিলেন পর্ণ-পুষ্পে সুসজ্জিত। পিতা ছিলেন রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও মাতা তারা দেবী। ভবানীপুর মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। প্রেসিডেন্সি থেকে পাশ করেন আইএসসি এবং প্রাণিবিদ্যা বিএসসি। ১৯৪৮ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পাস করেন এমএসসি।
পড়াশোনায় উজ্জ্বল এই শিক্ষার্থী গবেষণা করেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে পান ভ্রুণতত্ত্ববিদ ওয়াডিংটনকে। ১৯৫১ সালে ভ্রুণতত্ত্বের ওপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে তিনি প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। অধ্যাপনা ও গবেষণা দুটো ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সাবলীল ও সফল। প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি ও ছাত্রবৎসল হিসাবে খুব অল্প সময়েই তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:

স্বেচ্ছামৃত্যু

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৯: খাবারে একদম মশলা নয়?

১৯৫৩-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজেই ছিলেন। ছাত্রদের প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্যের সন্ধান দিতেন। অধ্যাপনায় তাঁর ক্লান্তি ছিল না, তাঁর অমলিন হাসি মুখ দেখে মন ভালো হয়ে যেত সকলেরই। ভ্রুণতত্ববিদ্যা য় তিনি স্পঞ্জ, হাইড্রা, অ্যামিবা ও অন্যান্য অসংখ্য প্রাণীর উপর গবেষণা করেছেন। ১৯৬২ সালে জুলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া প্রদত্ত ‘টাটা স্মারক পদক’ দ্বারা তাঁকে সম্মানিত করা হয়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৮: খেলার ছলে এসেছিনু যেথা ‘হারজিৎ’-র পর্ব রাখিনু সেথা

পরিযায়ী মন, পর্ব-৬: বৈতরণীর পারে…

১৯৬৬ সালে পান এশিয়াটিক সোসাইটির ‘জয় গোবিন্দ লাহা’ পদক, ১৯৭১ সালে জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি থেকে তিনি দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিদ্যার অধ্যাপক ও ডিন হয়েছিলেন। তাঁর সময়ে ওই বিভাগটি খুবই উন্নত ও পরিবর্তিত হয়েছিল। জেএনইউ তে থাকাকালীন মোট ১০০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল ও মোট ১২ জনকে গবেষণা করিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৬: আজগুবি ‘নয়’, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা!

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৩: নহবতবাড়ির ‘এতটুকু বাসা’

শিবতোষবাবু ছিলেন একজন রসিক কলমচি। সুগভীর রসবোধ ছিল তাঁর। তাঁর কয়েকটি মণিমুক্তো হল ‘অ্যারিস্টোটলের লন্ঠন’, ‘অণুর উত্তরায়ন’, ‘লাবণ্যের অ্যানাটমি’, ‘ম্যানহাট্টন ও মার্টিনি’ ইত্যাদি। বিজ্ঞানী সত্যেন বোস তাঁর লেখা ‘অণর উত্তরায়ন’ পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। জীবজগৎ নিয়ে তাঁর গবেষণা ও লেখালেখি প্রাণিবিদ্যা বিভাগকে অনেক বরিষ্ঠ করেছে। পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তিনি ছাত্রদের মনের মনিকোঠায় থাকবেন চির অমলিন।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।

Skip to content