রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

এইমাত্র এই দুঃসংবাদ পেলাম। যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তখন থেকে একটা মানসিক প্রস্তুতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তার মাঝে আরেক কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণ। মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিলই তবে সেটা একটু একটু করে কমে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সুস্থ হয়েছেন—তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে— এই খবরগুলো ক্রমশ আশ্বস্ত করছিল। আজ সব আশা শেষ হয়ে গেল।
যে গানটির মাধ্যমে আমি এই শিল্পীকে চিনেছি সেটি আমার জন্মের অনেক আগে ১৯৫৪ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের রোমান্টিক হিট অগ্নিপরীক্ষা ছবিতে ছিল। কী ছবি, কারা অভিনয় করেছেন, এ গানের সুরকার কে, এসব জানার বয়সও হয়নি আর কোনও উৎসাহ ছিল না। শুধু দেখতাম এই গানটি রেডিওতে বাজলেই বাড়ির সকলেই কথাবার্তা বন্ধ করে এ গানটিতে মন দিত। আর আমার মনে হত ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’র শেষে ‘ধনু’ আর পরের লাইন এর শেষে ‘কুহু’ শব্দকে ভারী পিতলের ঘটি গড়িয়ে যাওয়ার কাঁপতে থাকা অনুরণনের মতো করে এই শিল্পী গলায় সুর আনেন কী করে? আমার এই উদ্ভট প্রশ্ন শুনে স্বভাবতই বাড়ির বড়রা খুব হাসাহাসি করত।
এই গান শুনতে শুনতেই তো বড় হয়েছি। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং স্বর্ণযুগের আরও অনেক শিল্পীর আরও অসংখ্য গান শুনেছি, কিন্তু যদি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের একটি গান আমাকে বেছে নিতে বলা হয়—আমি এই গানটিকেই বেছে নেব। এই একটি গান আমার শৈশব কৈশোর যৌবন ও এখন প্রাক-প্রৌঢ়ত্বকেও ছেয়ে রেখেছে। তাই আজও চোখ বুজিয়ে এ গান যতবার শুনব ততবারই আমার মনের আকাশে গানের ইন্দ্রধনু ঠিক খুঁজে পাব। আজীবন।
কিংবদন্তি থাকেন না… নশ্বর শরীর চলে যায়। কিন্তু কীর্তি থেকে যায়। তাঁর যে অসাধারণ কণ্ঠমাধুর্য আজ প্রায় ৬৫-৭০ বছর ধরে আমাদের সকলের নস্টালজিয়াকে উসকে দেয়— তিনি তাঁর জায়গায় সেভাবেই থেকে যাবেন আরও ৫০ বছর। সময়ের আধুনিকতায় মানুষ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন সে পিছন পানে তাকায়—ফিরে দেখতে চায় শুনতে চায় ফেলে আসা দিনের ছবি-গান-সুর। বনলতা সেনের মতোই এই শিল্পীর সেইসব কালজয়ী পুরনো গান, শ্রোতার মনকে, স্মৃতি আবেশ আর আবেগে ভিজিয়ে দেবে। মানুষকে দুদণ্ড শান্তি দেবে। সেভাবেই থেকে যাবেন বাংলার সর্বকালের অন্যতম সেরা সংগীতশিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সুরের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন চিরকাল।

Skip to content