আদিকবির ধ্যানমগ্নহৃদয়ের পথ ধরে আবার ফিরে আসা অযোধ্যায়। মাঝে বারো বছরের দুরত্ব। কৈকেয়ীপুত্র ভরত এবং সুমিত্রানন্দন শত্রুঘ্ন এখনও ফিরে আসেননি ভরতের মাতুলালয় থেকে। দশরথের চার পুত্র যেন বিষ্ণুর এক দেহে উৎপন্ন চারটি হাতের মতো। সকলের প্রতিই পিতার অগাধ স্নেহ। তবে জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম অতুল গুণের আধার, নিজগুণে প্রজাদের ভারি প্রিয়। সুযোগ্য পুত্রের প্রতি পিতার স্নেহ, নির্ভরতা সব চেয়ে বেশি।
রাম বিদ্বান, উদার, মেধাবী, প্রিয়ভাষী, দয়ালু, অসূয়াশূন্য, বীর্যবান রাজকুমার। নিজ শক্তিতে, ধীমত্তায় অহংকারী নন তিনি। উপকারের প্রত্যুপকার করেন অকুণ্ঠ মনে। কৃতজ্ঞতাবোধ রামের সুগভীর। নিজে বহু গুণের অধিকারী, গুণী জনের সমাদরও করতে জানেন সেইসঙ্গে। দাশরথি রাম নিজের লক্ষ্যে স্থির, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কর্মক্ষেত্রে সুদক্ষ, সদা তৎপর, দীর্ঘসূত্রিতার লেশ দেখা যায় না তাঁর মধ্যে। মহাযশস্বী রাম নিজের প্রাণ, নিজস্ব ভোগ্যবিষয় কিংবা বিপুল সম্পদ- সবই ত্যাগ করতে পারেন প্রয়োজনে কিন্তু নিজের সত্যনিষ্ঠাকে কখনো কোনো অবস্থাতেই ত্যাগ করতে পারেন না তিনি। শিশুকাল থেকেই তিনি মধুরভাষী, কর্কশ ভাষায় কথা বলেন না কারো সঙ্গে। নিজেই অনায়াসে আলাপ করে সঙ্গ লাভ করতে চান জ্ঞানবৃদ্ধ, শীলবৃদ্ধ, বয়োবৃদ্ধ ও গুণবান মানুষদের। রাজ্যের প্রজাদের সুখে দুঃখের তিনি সমান অংশীদার। আশ্রয়প্রার্থী হয়ে তাঁর কাছে কেউ এলে কখনো ফিরিয়ে দেন না তাকে। সজ্জন ব্যক্তিদের রক্ষক, শরণাগতের আশ্রয় ছিলেন রাম। তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ প্রজারাও সবসময়ই অনুরক্ত তাঁর প্রতি। রাম কালক্রমে হয়ে উঠেছেন নরচন্দ্রমা – তেজস্বী হয়েও ক্ষমাশীল, যুদ্ধে অপরাজেয় হয়েও শরতের চাঁদের মতো কালিমাহীন, নির্মলচিত্ত।
দীর্ঘদিন রাজ্য শাসন করে এখন ক্লান্ত রাজা দশরথ। বয়সের ভার ন্যুব্জ করেছে তাঁকে। জরাগ্রস্ত দেহ, ক্লান্ত মন এখন যেন বিরতি চায়। যোগ্য উত্তরাধিকারীর হাতে রাজ্যপাটের দায়িত্ব অর্পণ করে এবার অবসর নিতে চান তিনি এ গুরু দায়িত্ব থেকে। তাঁর অভিলাষ, জীবদ্দশাতেই নিজের হাতে রাজমুকুট পরিয়ে দেবেন সিংহাসনের উত্তরসূরিকে। কিন্তু কার হাতে সঁপে দিয়ে যাবেন দায়িত্বভার? মনে মনে তিনি জানেন জ্যেষ্ঠপুত্র রামই সে ভার গ্রহণের যোগ্য অধিকারী। মনে মনে এও জানেন তিনি, রাজ্যের সকল প্রজাই আনন্দিত হবে রাম রাজ্যভার লাভ করলে। ভবিষ্যতে তাঁর থেকেও সফলতর রাজা হবেন তিনি, হয়ে উঠবেন প্রজাদের প্রিয়তর। পরাক্রমে ইন্দ্র, বুদ্ধিতে বৃহস্পতি, ধৈর্যে অচল গিরিরাজ আর গুণে যে রাম পিতার অধিক! —এ ভাবনা নিশ্চিন্ত করে রাজা দশরথকে। সকল গুণের আধার জ্যেষ্ঠপুত্রকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করবেন–এ তাঁর দীর্ঘকালীন মনোবাসনা। তবুও সংশয়ে বুক কাঁপে বৃদ্ধ রাজার। কে জানে, কোথায় কোন অশুভ শক্তি লুকিয়ে আছে। আকস্মিক আঘাতে চূর্ণ করে দেবে তাঁর দীর্ঘলালিত স্বপ্ন। দুঃস্বপ্নেরা ভিড় করে তাঁর মনের কোণে।
রাম বিদ্বান, উদার, মেধাবী, প্রিয়ভাষী, দয়ালু, অসূয়াশূন্য, বীর্যবান রাজকুমার। নিজ শক্তিতে, ধীমত্তায় অহংকারী নন তিনি। উপকারের প্রত্যুপকার করেন অকুণ্ঠ মনে। কৃতজ্ঞতাবোধ রামের সুগভীর। নিজে বহু গুণের অধিকারী, গুণী জনের সমাদরও করতে জানেন সেইসঙ্গে। দাশরথি রাম নিজের লক্ষ্যে স্থির, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কর্মক্ষেত্রে সুদক্ষ, সদা তৎপর, দীর্ঘসূত্রিতার লেশ দেখা যায় না তাঁর মধ্যে। মহাযশস্বী রাম নিজের প্রাণ, নিজস্ব ভোগ্যবিষয় কিংবা বিপুল সম্পদ- সবই ত্যাগ করতে পারেন প্রয়োজনে কিন্তু নিজের সত্যনিষ্ঠাকে কখনো কোনো অবস্থাতেই ত্যাগ করতে পারেন না তিনি। শিশুকাল থেকেই তিনি মধুরভাষী, কর্কশ ভাষায় কথা বলেন না কারো সঙ্গে। নিজেই অনায়াসে আলাপ করে সঙ্গ লাভ করতে চান জ্ঞানবৃদ্ধ, শীলবৃদ্ধ, বয়োবৃদ্ধ ও গুণবান মানুষদের। রাজ্যের প্রজাদের সুখে দুঃখের তিনি সমান অংশীদার। আশ্রয়প্রার্থী হয়ে তাঁর কাছে কেউ এলে কখনো ফিরিয়ে দেন না তাকে। সজ্জন ব্যক্তিদের রক্ষক, শরণাগতের আশ্রয় ছিলেন রাম। তাঁর ব্যবহারে মুগ্ধ প্রজারাও সবসময়ই অনুরক্ত তাঁর প্রতি। রাম কালক্রমে হয়ে উঠেছেন নরচন্দ্রমা – তেজস্বী হয়েও ক্ষমাশীল, যুদ্ধে অপরাজেয় হয়েও শরতের চাঁদের মতো কালিমাহীন, নির্মলচিত্ত।
দীর্ঘদিন রাজ্য শাসন করে এখন ক্লান্ত রাজা দশরথ। বয়সের ভার ন্যুব্জ করেছে তাঁকে। জরাগ্রস্ত দেহ, ক্লান্ত মন এখন যেন বিরতি চায়। যোগ্য উত্তরাধিকারীর হাতে রাজ্যপাটের দায়িত্ব অর্পণ করে এবার অবসর নিতে চান তিনি এ গুরু দায়িত্ব থেকে। তাঁর অভিলাষ, জীবদ্দশাতেই নিজের হাতে রাজমুকুট পরিয়ে দেবেন সিংহাসনের উত্তরসূরিকে। কিন্তু কার হাতে সঁপে দিয়ে যাবেন দায়িত্বভার? মনে মনে তিনি জানেন জ্যেষ্ঠপুত্র রামই সে ভার গ্রহণের যোগ্য অধিকারী। মনে মনে এও জানেন তিনি, রাজ্যের সকল প্রজাই আনন্দিত হবে রাম রাজ্যভার লাভ করলে। ভবিষ্যতে তাঁর থেকেও সফলতর রাজা হবেন তিনি, হয়ে উঠবেন প্রজাদের প্রিয়তর। পরাক্রমে ইন্দ্র, বুদ্ধিতে বৃহস্পতি, ধৈর্যে অচল গিরিরাজ আর গুণে যে রাম পিতার অধিক! —এ ভাবনা নিশ্চিন্ত করে রাজা দশরথকে। সকল গুণের আধার জ্যেষ্ঠপুত্রকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করবেন–এ তাঁর দীর্ঘকালীন মনোবাসনা। তবুও সংশয়ে বুক কাঁপে বৃদ্ধ রাজার। কে জানে, কোথায় কোন অশুভ শক্তি লুকিয়ে আছে। আকস্মিক আঘাতে চূর্ণ করে দেবে তাঁর দীর্ঘলালিত স্বপ্ন। দুঃস্বপ্নেরা ভিড় করে তাঁর মনের কোণে।
কোশলাধিপতির মনের অবস্থা গোপন থাকেনা আচার্য, মন্ত্রী, অমাত্য, পৌরজন, জনপদবাসীদের কাছে। তাঁরা মন্ত্রণা করে এলেন রাজসভায়। রাজসভায় উপস্থিত পূর্ব, উত্তর,দক্ষিণ, পশ্চিম নানা দিক থেকে আগত নানা দেশের রাজন্যবর্গ, ম্লেচ্ছ, যবন, পর্বতবাসী শকজাতির লোক। আছেন মন্ত্রী, রাজপুরোহিত, অমাত্য, সভাসদ। তার মাঝখানে বৃদ্ধ রাজা, বয়োভারে অবসন্ন কিন্তু প্রজ্ঞায়, বহুদর্শিতায় তিনি সর্বজনমান্য আজও। সভামধ্যে উঠল রাজ্যাভিষেকের প্রসঙ্গ। সকলে মিলে জানালেন তাঁদের অভিপ্রায়টি- “মহারাজ, বয়সের ভার ক্লান্ত করে তুলেছে আপনাকে। এবার আপনি জ্যেষ্ঠ পুত্র রামকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করুন।”
এ তো রাজার নিজেরই মনের কথা! আর প্রজাদের সম্মতি বড় শক্তি রাজার কাছে। আনন্দে ভরে উঠল বুক, স্বস্তির শ্বাস পড়ল। তবে সে স্বস্তির ভাব প্রকাশ করলেন না মুখে। বরং আরও গভীরভাবে জেনে নিতে চাইলেন তাঁদের মনের গতিপ্রকৃতি। তাঁদের বললেন, “আমি ধর্মানুসারে পৃথিবী শাসন করে চলেছি। তা সত্ত্বেও আপনারা আমার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করতে চাইছেন কি কারণে?” উত্তরে রামের অসংখ্য গুণাবলীর কথা তুলে ধরলেন তাঁরা। প্রজাদের সকলের সঙ্গে রামের সম্পর্ক আন্তরিক। বহু গুণের অধিকারী হয়েও তাঁর নিরহঙ্কারী ভাবটি বড় প্রিয় প্রজাদের কাছে। হয়তো প্রবাস থেকে ফিরলেন কিংবা প্রবল প্ররাক্রমী শত্রু জয় করে, ফেরার পথে দেখা হলেই প্রজাদের ঘরের সুখ দুঃখ জিজ্ঞাসা করে কাছে টেনে নিতে পারেন অনায়াসে। প্রজানুরঞ্জনই তো রাজার সবচেয়ে বড় গুণ, রাজার ধর্ম। তাই যুবরাজ পদে রামকেই বরণ করে নিতে চান প্রজাবৃন্দ। তাঁর মধ্যেই দেখতে পান তাঁরা ভবিষ্যৎ রাজাকে, যিনি পরম নির্ভরতার আশ্রয়। সমবেত প্রজাদের কাছ থেকে শোনা পুত্রের যশোগাথা বড় আশ্বস্ত করে রাজাকে।
এ তো রাজার নিজেরই মনের কথা! আর প্রজাদের সম্মতি বড় শক্তি রাজার কাছে। আনন্দে ভরে উঠল বুক, স্বস্তির শ্বাস পড়ল। তবে সে স্বস্তির ভাব প্রকাশ করলেন না মুখে। বরং আরও গভীরভাবে জেনে নিতে চাইলেন তাঁদের মনের গতিপ্রকৃতি। তাঁদের বললেন, “আমি ধর্মানুসারে পৃথিবী শাসন করে চলেছি। তা সত্ত্বেও আপনারা আমার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করতে চাইছেন কি কারণে?” উত্তরে রামের অসংখ্য গুণাবলীর কথা তুলে ধরলেন তাঁরা। প্রজাদের সকলের সঙ্গে রামের সম্পর্ক আন্তরিক। বহু গুণের অধিকারী হয়েও তাঁর নিরহঙ্কারী ভাবটি বড় প্রিয় প্রজাদের কাছে। হয়তো প্রবাস থেকে ফিরলেন কিংবা প্রবল প্ররাক্রমী শত্রু জয় করে, ফেরার পথে দেখা হলেই প্রজাদের ঘরের সুখ দুঃখ জিজ্ঞাসা করে কাছে টেনে নিতে পারেন অনায়াসে। প্রজানুরঞ্জনই তো রাজার সবচেয়ে বড় গুণ, রাজার ধর্ম। তাই যুবরাজ পদে রামকেই বরণ করে নিতে চান প্রজাবৃন্দ। তাঁর মধ্যেই দেখতে পান তাঁরা ভবিষ্যৎ রাজাকে, যিনি পরম নির্ভরতার আশ্রয়। সমবেত প্রজাদের কাছ থেকে শোনা পুত্রের যশোগাথা বড় আশ্বস্ত করে রাজাকে।
আরও পড়ুন:
পর্ব ১৭: অপেক্ষার অবসান — অযোধ্যায় চার রাজকুমার
ত্বকের পরিচর্যায়: ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে? যত্নে কী কী করবেন? জেনে নিন ত্বক বিশেষজ্ঞের জরুরি পরামর্শ
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৩৬: অক্ষবিদ্যাশিক্ষা করলেন নলরাজা
হোমিওপ্যাথি: টনসিলের ব্যথায় নাজেহাল? এই সব উপায়ে মিলবে আরাম
আজ বড় তৃপ্ত, আনন্দিত রাজা দশরথ। তিনি নিজের সিদ্ধান্তে শক্তি পেলেন এবার। তবে মনে ছেয়ে আছে আশঙ্কার মেঘ। কোথাও বাধা আসবে না তো এ শুভকাজে? প্রজাদের বললেন, “আপনারা যে আমার প্রিয় জ্যেষ্ঠ পুত্র রামকে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তার জন্য আমি ধন্য।” বড় দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন করতে চান তিনি। সভার মধ্যেই রাজপুরোহিত বশিষ্ঠ আর বামদেবকে বললেন, “এখন চৈত্রমাস। এ বড় পবিত্র মাস। চারদিকে ফুলের সম্ভার, প্রকৃতির আশীর্বাদ যেন। এ মাসেই রামকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে চাই আমি। রাজ্যাভিষেকের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর আয়োজন করুন আপনারা।” তাঁরা আনন্দের সঙ্গে প্রস্তুত করলেন উপকরণের দীর্ঘ তালিকা।শুরু হল রামের যুবরাজ পদে অভিষেকের আয়োজন। সভা জুড়ে মৃদুস্বরে হর্ষধ্বনি আর বাইরে প্রজাদের তুমুল উল্লাসে স্বীকৃতি এল সিদ্ধান্তে। সুমন্ত্রকে আদেশ দিলেন রাজা সভায় রামকে নিয়ে আসার জন্য।
রথ এসে থামল রাজসভার দ্বারে। সভায় এলেন কৌশল্যানন্দন রাম। দীর্ঘবাহু, মহাবল, প্রিয়দর্শন, আত্মপ্রত্যয়ী বলিষ্ঠ রাজপুত্র।গ্রীষ্মতাপে কাতর প্রজারা যেন সজলঘন মেঘের দেখা পেল। পিতাকে প্রণাম জানিয়ে তাঁর নির্দেশে নির্দিষ্ট আসন গ্রহণ করলেন রামচন্দ্র। এ সভা যেন শরতের নক্ষত্রখচিত নির্মল আকাশ, সেখানে উদয় হল চন্দ্রমার।
রথ এসে থামল রাজসভার দ্বারে। সভায় এলেন কৌশল্যানন্দন রাম। দীর্ঘবাহু, মহাবল, প্রিয়দর্শন, আত্মপ্রত্যয়ী বলিষ্ঠ রাজপুত্র।গ্রীষ্মতাপে কাতর প্রজারা যেন সজলঘন মেঘের দেখা পেল। পিতাকে প্রণাম জানিয়ে তাঁর নির্দেশে নির্দিষ্ট আসন গ্রহণ করলেন রামচন্দ্র। এ সভা যেন শরতের নক্ষত্রখচিত নির্মল আকাশ, সেখানে উদয় হল চন্দ্রমার।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১২: কাঠবিড়ালি ঢুকে পড়েছিল দ্বিজেন্দ্রনাথের জোব্বায়
কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না? নিয়মিত শরীরচর্চায় জব্দ হবে ডায়াবিটিস
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৩৬: বসুন্ধরা এবং…
ব্যাকপেন-এ কাবু? শুধু ব্যায়াম নয়, ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
ইক্ষ্বাকুকুলপতি দশরথ দর্পণে যেন দেখতে পেলেন নিজের যৌবনের অলঙ্কারভূষিত প্রতিবিম্বখানি। সস্নেহে পুত্রকে বললেন, “আমার জ্যেষ্ঠা পত্নীর সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ পুত্র তুমি। গুণেও শ্রেষ্ঠ তুমি সকলের মধ্যে। তোমার নিজের গুণেই এই প্রজারা তোমার প্রতি অনুরক্ত। আগামীকাল পুষ্যা নক্ষত্রের যোগ রয়েছে। সমস্ত দিক বিবেচনা করে আমি আগামীকালই তোমার অভিষেক করব বলে স্থির করেছি। আশীর্বাদ করি, তুমি বিনয়ের সঙ্গে, নিরহংকার মনে রাজ্য শাসন ও পালন করবে। কাম-ক্রোধ থেকে জন্ম নেয় যেসব ব্যসন, সেসব তোমার মনে যেন রেখাপাত না করে। তুমি সর্বদাই রাজধর্ম অনুসারে পরোক্ষ ও অপরোক্ষ জ্ঞানের দ্বারা রাজ্যের সাতটি অঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে প্রজা পালন করবে। প্রজারা হবে তোমার সন্তানের মতো। তারা যেন সবসময় সন্তুষ্ট থাকে তোমার প্রতি।”
দশরথের আশীর্বচন রাজধর্মের উপদেশে পরিপূর্ণ। পুত্র ভবিষ্যতে যথাযোগ্য মহীপতি হয়ে উঠবে -এই স্বপ্ন অঙ্কুরিত হয়ে উঠতে থাকে তাঁর মনে। দশরথের বাক্য শেষ হতেই এমন সুখবর দিতে অন্তঃপুরে কৌশল্যার কাছে ছুটে গেল বার্তাবাহক। সে সংবাদ শুনে কৌশল্যা কত জনকে যে ধনরত্ন দান করলেন ইয়ত্তা নেই তার। দশরথকে অভিবাদন জানিয়ে রামচন্দ্র ফিরে গেলেন নিজের প্রাসাদে। প্রজারা ফিরে গেল নিজ নিজ গৃহে। আজ তারাও বড় সন্তুষ্ট।
পরদিন পুত্রের অভিষেক। হাতে সময় নেই একেবারেই। অথচ দায়িত্ব তার অনেক। প্রজাবিদায়ের পর মন্ত্রিদের সঙ্গে মন্ত্রণায় বসলেন রাজা। মন্ত্রণা শেষে অন্তঃপুরে ফিরলেন। মনের মধ্যে আশা-আশঙ্কার আলো-ছায়া। অন্তঃপুরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব-নিকেশ শান্তি দিচ্ছে না তাঁর মনকে। অস্থির হয়ে ওঠেন। আবার সূতকে আদেশ দেন—“শীঘ্র নিয়ে এসো রামকে।” সে বার্তা শুনে চঞ্চল হয়ে উঠলেন রাম। শঙ্কার ছায়া ঘনালো তাঁর মনেও। দ্রুত এলেন তিনি দশরথের প্রাসাদে। কিন্তু কোন আশঙ্কার ছায়া দশরথের পিতৃহৃদয়কে নিশ্চিন্ত হতে দিচ্ছে না? সে বৃত্তান্ত শুনবো আর এক দিন।—চলবে
দশরথের আশীর্বচন রাজধর্মের উপদেশে পরিপূর্ণ। পুত্র ভবিষ্যতে যথাযোগ্য মহীপতি হয়ে উঠবে -এই স্বপ্ন অঙ্কুরিত হয়ে উঠতে থাকে তাঁর মনে। দশরথের বাক্য শেষ হতেই এমন সুখবর দিতে অন্তঃপুরে কৌশল্যার কাছে ছুটে গেল বার্তাবাহক। সে সংবাদ শুনে কৌশল্যা কত জনকে যে ধনরত্ন দান করলেন ইয়ত্তা নেই তার। দশরথকে অভিবাদন জানিয়ে রামচন্দ্র ফিরে গেলেন নিজের প্রাসাদে। প্রজারা ফিরে গেল নিজ নিজ গৃহে। আজ তারাও বড় সন্তুষ্ট।
পরদিন পুত্রের অভিষেক। হাতে সময় নেই একেবারেই। অথচ দায়িত্ব তার অনেক। প্রজাবিদায়ের পর মন্ত্রিদের সঙ্গে মন্ত্রণায় বসলেন রাজা। মন্ত্রণা শেষে অন্তঃপুরে ফিরলেন। মনের মধ্যে আশা-আশঙ্কার আলো-ছায়া। অন্তঃপুরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব-নিকেশ শান্তি দিচ্ছে না তাঁর মনকে। অস্থির হয়ে ওঠেন। আবার সূতকে আদেশ দেন—“শীঘ্র নিয়ে এসো রামকে।” সে বার্তা শুনে চঞ্চল হয়ে উঠলেন রাম। শঙ্কার ছায়া ঘনালো তাঁর মনেও। দ্রুত এলেন তিনি দশরথের প্রাসাদে। কিন্তু কোন আশঙ্কার ছায়া দশরথের পিতৃহৃদয়কে নিশ্চিন্ত হতে দিচ্ছে না? সে বৃত্তান্ত শুনবো আর এক দিন।—চলবে
*শাশ্বতী রামায়ণী (Saswati Ramayani – Ramayana) : ড. অমৃতা ঘোষ (Amrita Ghosh) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সম্পাদিত গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ।