শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


পূর্ণিমার চাঁদ, জ্যোৎস্না ছড়িয়ে রয়েছে চারিদিকে। অনন্ত রূপ যেন শতধারে গড়িয়ে পড়েছে আকাশ গঙ্গা থেকে এই ধরনের বুকে। সাধক সাধিকার মনে অনন্তের ভাবনা তোলপাড় করে নানা জিজ্ঞাসায়। কেন এই সৃষ্টি? কী কারণেই বা এই শরীর ধারণ? এর অন্ত কোথায়? ঈশ্বর আর তার সৃষ্টির সম্পর্কই বা কী? সত্য সত্যই কি ঈশ্বর দর্শন করা যায়?

শ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ তো বলছেন, একটু চেষ্টা করলেই তাকে লাভ করা যায়। একটু এগোলেই কেউ এসে পথ দর্শন করিয়ে দেবে; বলে দেবে এই এই পথে যাও। তাঁর কৃপা হলে তিনি অবশ্যই দর্শন দেবেন। তা না হলে বলবেন কেন! মাস্টার মহাশয় বলছেন, এই জগত সামনে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, জীব, চতুর্বিংশতি তত্ত্ব, এই সব কী রূপে হল, এর কর্তায় বা কে? আর আমি বা তার কে, এ না জানলে বৃথাই জীবন।
ঈশ্বর ইচ্ছায় এই জগত সৃষ্টি, তাঁর মায়া শক্তির দ্বারা জগৎ পরিচালিত আবার তিনি এই মায়ার আড়ালে থেকে নিত্যই জগৎকে দৃষ্ট করে চলেছেন। তিনিই দ্রষ্টা। যে তাঁকে জানতে চায় তিনি তাকে তাঁর স্বরূপ জানিয়ে দেন। তাকে মায়ার খেলা থেকে মুক্ত করে দেন। কেন তার এই খেলা তিনি জানেন। যিনি তাকে জানেন তিনি আর খেলা দেখতে পান না। যেমন চোর-বন্দি খেলা। চিনতে পারা মাত্রই উধাও হয়ে যায়। তিনি তখন হা হা করে হেসে বেরিয়ে আসেন। তিনি চান জীব, এই সৃষ্টি ও তার সঙ্গে কী সম্পর্ক তা জানুক। তিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সৃষ্ট হয়েছেন। তিনি রূপ বদল করে রয়েছেন। এই বিশ্বের অন্তরালে, এইসব এক চৈতন্য খেলা করছে।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৪৬: সরল বিশ্বাস না থাকলে ভগবান লাভ হয় না

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৪: সে যেন অন্য এক ‘পূনর্মিলন’

শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “মায়াকে যদি চিনতে পারো এমনি লজ্জায় পালাবে। একজন বাঘের ছাল পড়ে দেখছে তাকে ভয় দেখাচ্ছে, সে বললে, ‘আমি তোকে চিনেছি তুই আমাদের হরে।’ তখন সে হেসে চলে গেল। আর একজনকে ভয় দেখাতে গেল।” শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “যত স্ত্রীলোক সকলেই শক্তিরূপা। সেই আদিশক্তিই স্ত্রী হয়ে স্ত্রীরূপ ধারণ করেছেন। আধ্যাত্ম্যে আছে রামকে নারদাদি স্তব করছেন। হে রাম! যত পুরুষ সব তুমি আর প্রকৃতি যত রূপ সীতা ধারণ করেছেন। তুমি ইন্দ্র সীতা ইন্দ্রাণী। তুমি শিব সীতা শিবানী। তুমি নর সীতা নারী। বেশি আর কি বলব যেখানে পুরুষ সেখানে তুমি যেখানে স্ত্রী সেখানে সীতা।”
আরও পড়ুন:

চলো যাই ঘুরে আসি, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের পথে, পর্ব-৩: অবশেষে অভাবনীয় প্রাপ্তি ও স্বপ্নপূরণ

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?

এই শরীর ধারণ কী কারণে? পারব্ধ, আর পূর্ব সংস্কার। একজন রাজাকে একজন যোগী বললে, তুমি আমার কাছে বসে থেকে ভগবান চিন্তা কর। রাজা বলে, “সে বড় হবে না। আমি থাকতে পারি আমার এখনও ভোগ আছে। এ বনে যদি থাকি হয়তো বনেতে একটা রাজ্য হয়ে যাবে। আমার এখনো ভোগ আছে।” যিনি জানতে চান তিনি তাকে জানেন। জানতে গিয়ে আমরা তাই হয়ে যায়। কারণ আমরা যে তাই। আমাদের স্বরূপ যে ঈশ্বর। জল আর তার বুদ্ বুদ্। সেই একই থেকেই বহু। আবার বহু থেকে এক। ছায়া আর কায়া। ভিন্নতার কারণ আমাদের অহংকার অজ্ঞানতা। যেমন ছড়ি ফেলে জলের দু’ভাগ করা। অনন্তের খণ্ড হয় না। অখণ্ড, খণ্ড খণ্ড দেখায় মাত্র। অনন্ত, অনন্তই থাকে। বাড়েও না; কমেও না।
আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৬: মোমো চিত্তে!

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৬: স্বপ্নে আমার মনে হল

পরশমণির পর্স্পে লোহা সোনা হয়ে গেলেও তা দিয়ে অস্ত্র তৈরি হয় না। তা দিয়ে দেবতার মূর্তি করা যায়। তেমনই মানুষের অন্তরে ভগবান অধিষ্ঠিত হলে, তার দ্বারা আর অন্য অমঙ্গলকারী কাজ হয় না। তার ভার ঈশ্বরই গ্রহণ করেন। তার আর পুনঃ জন্ম ও হয় না।—চলবে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।

Skip to content