বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি: সংগৃহীত।

পুজোপাঠ, ভজন-কীর্তন ভক্তির সাধন আবার কর্মও। নিয়মিত এ সকল সাধক যখন করে থাকেন তখন বৈধীকর্ম হয়ে যায়। নিয়ম নিষ্ঠা আচার উপকরণ মেনে পুজোপাঠ আচরণ করা বৈধীকর্ম। শ্রীরামকৃষ্ণ সহজ করে বৈধী ও রাগভক্তি বুঝিয়েছেন।

“শাস্ত্রে অনেক কর্ম করতে বলেছে। তাই করছি এর নাম, বলছি ভক্তি। আর এক আছে, রাগভক্তি— যে অনুরাগ থেকে হয়। ঈশ্বরের ভালোবাসা থেকে হয়। যেমন প্রহ্লাদের। সে ভক্তি যদি আসে তাহলে আর বৈধীকর্মের প্রয়োজন হয় না”
আমরা যখন ব্যাকুলতার সঙ্গে সাধন করি, তখন তিনি আমাদের নিকটে অনুভব করি। যেমন পাশের বাড়িতে অনেক মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, আমাদের যত তাড়াতাড়ি নিজেদের করে নিতে হবে। ঈশ্বর সুখ ভোগের ইচ্ছা। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “যেমন কলকাতায় যাওয়ার অনেক রাস্তা আছে। একজন অচেনা লোক কলকাতায় যাওয়ার রাস্তা আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করায় সে বলল এই পথে যাও। খানিক পরে আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করলে, সে আরেকটা পথ বলে দিলে। সেই রকম অরেকজন অন্য পথ বলে ও সেখানে অন্য পথে যায়। আর তার কলকাতায় পৌঁছনো হল না। সে খালি ঘুরে মরল। যদি কলকাতায় যেতে চাও, যে জানে এমন একজনের কথায় চলো। সেইরকম ঈশ্বরের নিকট যদি যেতে চাও তো একজনের কথামতো চলো, না হলে ঘুরে মরবে।”
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১৫: ভালো-মন্দ সর্ব-বন্ধন বিমুক্ত হয়ে আত্মা স্বমহিমায় সর্বশক্তিমান রূপে বিরাজ করেন

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১: রাজার ছেলেদের রাজনীতি-কূটনীতি শেখানোর জন্যই লেখা হয়েছিল এই গ্রন্থ

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৬০: দুই ভাইয়ের সাক্ষাৎ হল, হনুমানের রূপে মুগ্ধ হলেন ভীমসেন

ভক্তি, সাধককে নরম করে। যেমন সিদ্ধ হলে নরম হয়। ভক্তি হলে ঈশ্বরে সর্মপণ আসে। ঈশ্বর নির্ভরশীলতা আসে। এই গল্প মধ্য দিয়ে ভগবানের টান ভক্তের প্রতি যেমন বোঝা যায় আবার নির্ভরশীলতা না থাকলে ভগবানও ভার নেন না, তা ও বোঝা যায়।

“এক ভক্তকে একজন ধোপা মারছিল। সে ‘নারায়ণ’ ‘নারায়ণ’ বলে কাঁদছিল। নারায়ণ বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মীর নিকট ছিলেন। তাড়াতাড়ি উঠে তাকে বাঁচাতে গেলেন। কিন্তু খানিকটা গিয়ে ফিরে এলে, লক্ষ্মী তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ফিরে এলেন যে। নারায়ণ বললেন, আর আমাকে যেতে হল না। সে শালা ধোপা হয়েছে। সে নিজেই নিজেকে রক্ষা করছে। যে তাকে মারছিল সেও তাকে মারছে। আর আমার যাওয়ার দরকার কি!” সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হলে তিনি রক্ষা করেন না।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৫: সারদা দাদার থেকে চিল্পিঘাটি

খাবার থেকে পোড়া গন্ধ বেরচ্ছে? চিন্তা না করে সহজেই সমস্যার সমাধান করুন এই সব উপায়ে

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪৩: সীতার মনে কি আশঙ্কার অশনি সংকেত?

“ঈশ্বরকোটি অন্তরঙ্গ, জীবকোটি বহিরঙ্গ। অর্থাৎ ঈশ্বরকোটি অবতারের সঙ্গে শরীর ধারণ করে আসেন। এবং তার লীলা অবসানে তার নিকট চলে যান। তারা কখনও বদ্ধ হন না। এরা অবতারের অন্তরঙ্গ। যারা তাকে সাধন ভজন করে লাভ করে তারা বহিরঙ্গ।

অবতারকে সকলে চিনতে পারে না। নারদ যখন রামচন্দ্রকে দর্শন করতে গেলেন রাম দাঁড়িয়ে উঠে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে বললেন, আমরা সংসারী জীব আপনাদের মতো সাধুরা না এলে কি করে পবিত্র হব? আবার যখন সত্য পালনের জন্য বনে গেলেন তখন দেখলেন রামের বনবাস শোনা অবধি ঋষিরা আহার ত্যাগ করে অনেকে পড়ে আছেন।”
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৭: পঞ্চমের কথা মতো ড্রাম ছেড়ে অমরুতের পিঠের উপর স্যাম্পল রিদম বাজাতে শুরু করলেন ফ্রাঙ্কো!

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১২: স্ট্যানলি ম্যাথুজ— একজন কিংবদন্তি, লড়াই আবেগ আর মেহনতী জনতার বন্ধু

স্কুলপড়ুয়াদের গ্রীষ্মের ছুটিতে কী কী করতে হবে, নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিল শিক্ষা দফতর

রামচন্দ্র যে অবতার তা অনেকে জানতো না। অবতার যখন শরীর ধারণ করেন তখন ঠিক মানুষের মতোই আচরণ করেন। যেমন কত অসহায় কিন্তু আবার সমস্ত শক্তির আধার স্বরূপ। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, ঈশ্বরকোটির যে ভক্তি ভাব আশ্রয় করে থাকেন তার উদাহরণ রূপে এই গল্পটি শুকদেব সমাধিস্থ আছেন নির্বিকল্প সমাধি।

সমাধি ত্যাগ করে পরীক্ষিতকে ভাগবত শোনাতে হবে। ঠাকুর নারদকে পাঠিয়ে দিলেন দেখলেন শুকদেব বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে জড়ের ন্যায় বসে আছেন। তখন নারদ হরির রূপ, চার শ্লোকে বীণার সঙ্গে বর্ণনা করতে লাগলেন। প্রথম শ্লোক বলতে বলতে শুকদেবের রোমাঞ্চ হল। ক্রমে অশ্রু অন্তরে, হৃদয় মধ্যে চিন্ময় রূপ দর্শন করতে লাগলেন। জড় সমাধির পর আবার রূপ দর্শন হল। শুকদেব ঈশ্বর কোটি ছিলেন।”

ভক্তি তখন চরম পরিণতি লাভ করে। বৈধীভক্তি ছাড়িয়ে রাগভক্তি লাভ হয়। তখন তিনি ভক্তি নিয়ে থাকেন, সেব্যসেবক ভাব আশ্রয় করে থাকেন। তুমি প্রভু আমি দাস। হরিনাম আস্বাদন করবার জন্য রস রসিকের ভাব আশ্রয় করে ভগবানকে বলে, আমি রসিক!
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।

Skip to content