ছবি: সংগৃহীত।
আরগ্য লাভের অনেক প্রকার উপায় হতে পারে। অনেক প্রকার ওষুধও আছে। কিন্তু কোন ওষুধ কোন সময় দিতে হবে উত্তম বৈদ্য ঠিক জানেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন উত্তম বৈদ্য, তিনি জানেন কোন ওষুধ এখন আমাদের ভবরোগ থেকে মুক্ত করবে। উত্তম আচার্য উত্তম বৈদ্য শ্রীরামকৃষ্ণ যদিও ভক্তিযোগই যুগ ধর্ম বলেছেন তবু তাঁর প্রয়াস ছিল চার যোগের সমন্বয় সাধনে। তিনি রাজযোগ প্রসঙ্গে বলেন, “রাজযোগ মনের দ্বারা যোগ। বিচারের দ্বারা যোগ। ইহা ভক্তিযোগেরই মধ্যে। মন স্থির না হলে যোগ হয় না, তা যে পথেই যাও না কেন। মন যোগীর বশ যোগী মনের বশ নয়, মনস্থির হলে বায়ু স্থির হয় কুম্ভক হয়। এ কুম্ভক ভক্তিযোগেতেও হয়, স্থির হয়ে যায়। নিতাই আমার মাতা হাতি, নিতাই আমার মাতা হাতি এই কথা বলতে বলতে যখন ভাব হয়, তখন সব কথা বলতে পারে না কেবল বলেন হাতি হাতি তারপর শুধু হা …ভাব হলেই বায়ু স্থির হয় কুম্ভক হয়।”
স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে সর্বদা তন্ময় হয়ে থাকি না। তন্ময়তা আমাদের সচেতনতার ঊর্ধ্বে অনেক সময় অন্য রাজ্যে নিয়ে যায়। শ্রীশ্রী ঠাকুর সুন্দর বলেছেন, “একজন ঝাঁট দিচ্ছেন এমন সময় একজন লোক এসে বললেন, ওগো অমুক নেই মারা গিয়েছেন। যে ঝাঁট দিচ্ছেন তাঁর যদি আপনার লোক না হয় তাহলে ঝাঁট দিতে থাকেন। আর মাঝে মাঝে বলেন আহা, তাইতো গো লোকটা মারা গেল। এদিকে ঝাঁটও চলছে। আর যদি আপনার লোক হয়, তাহলে ঝাঁটা হাতে থেকে পড়ে যায়, আর অ্যাঁ…বলে বসে পড়েন। তখন আর কোনও কাজ ও চিন্তা করতে পারে না। যোগীরা পরমাত্মাকে সাক্ষাৎকার করতে চেষ্টা করেন, উদ্দেশ্য জীবাত্মা ও পরমাত্মার যোগ। যোগীরা বিষয় থেকে মন সরিয়ে লয় ও পরমাত্মাতে মন স্থির করতে চেষ্টা করে। তাই প্রথম অবস্থায় নির্জনে স্থির হয়ে অনন্য মনে ধ্যান চিন্তা করেন।
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১৪: প্রকৃত ভক্ত শত বিপদেও নামের সাধন করতে ছাড়েন না
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৮: রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতেন, সাঁতার শেখাতেন
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫০: ‘ফিশ পাস’ পুরোদমে চালু হলে ইলিশের প্রজনন বাধাহীনভাবে সম্ভবপর হবে
‘যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ’, যোগ হল চিত্তের যে সকল বৃত্তি প্রতিনিয়ত উঠছে ও মনকে বিষয় আসক্ত করে চলছে, সে সকল বৃত্তিগুলোকে প্রতিরোধ করা। চিত্ত হল অন্তঃকরণের উপরিতল যেখানে বৃত্তিগুলো ঢেউ প্রতিনিয়ত অন্তঃকরণকে আন্দোলিত করে, ফলে মনের গভীরে লুকায়িত সত্ত্বা আত্মস্বরূপকে দেখা যাচ্ছে না। তাই পতঞ্জলি ঋষি বলছেন, প্রথমেই আমাদের চিত্র বৃত্তিগুলি নিরোধ করতে হবে। তবেই আত্মার সঙ্গে যোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। যোগীরা সাধনার প্রারম্ভে, সকল বৃত্তিকে নিরোধ করার জন্য প্রাণবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে প্রাণায়ামের মাধ্যমে, মনকে বিষয় বিমুখ করতে চেষ্টা করেন। বুদ্ধির দ্বারা বিচার করে চিত্তকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩১: মরুভূমির উপল পারে বনতলের ‘হ্রদ’
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩০: সত্যজিৎ ও সুচিত্রা জুটির সেই ছবি তৈরি হলে তা মাইলস্টোন হয়ে উঠতে পারতো
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৪: কাওয়ার্ধা পরিভ্রমণ
স্বামীজি পতঞ্জলি যোগ সূত্র ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলছেন, “চিত্ত সর্বদাই স্বাভাবিক পবিত্র অবস্থায় ফিরিয়া যাইবার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু বাহিরে আকর্ষণ করিতেছে। চিত্তকে দমন করার উপায় বাহিরে যাইবার প্রবৃত্তিকে নিবারণ করা ও উহাকে প্রত্যাবৃত্ত করিয়া সেই চৈতন্যঘন পুরুষের নিকট যাইবার পথে ফেরানো। ইহাই যোগের প্রথম সোপান। কারণ কেবল এই উপায় এই চিত্ত উহার প্রকৃতপথে যাইতে পারে। যখনই অঙ্গগুলি শান্ত হইয়া যায় ও হ্রদ শান্ত ভাব ধারণ করে, তখনই আমরা হ্রদের তলদেশ দেখিতে পায়। মন সম্বন্ধেও এরূপ বুঝিতে হইবে যখন শান্ত হইয়া যায় তখনই আমরা আমাদের সত্ত্বা বুঝিতে পারি। তখন আমরাই ওই তরঙ্গ গুলির সহিত নিজেদের মিশিয়ে ফেলি না। কিন্তু নিজের স্বরূপে অবস্থিত থাকি।”
আরও পড়ুন:
স্বাদে-আহ্লাদে: কুলের আচারের নাম শুনলে জিভে জল আসে? রইল সহজ রেসিপি
বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ, জন্ডিসে ভুগছেন? আয়ুর্বেদ মতে ঘরোয়া উপায়ে হবে এর সমাধান!
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৪: গরম পড়েছে, যত পারুন ঠান্ডা খান! কী হচ্ছে এর ফলে?
যোগ অভ্যাস দ্বারা ক্রমাগত ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করতে চেষ্টা করা। ‘মন শুদ্ধ তো সব শুদ্ধ’। আমাদের ক্রমাগত শুদ্ধ হতে চেষ্টা করতে হবে। অনবরত পবিত্র চিন্তা আমাদের শুদ্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। সংস্কার আর চরিত্র কতগুলি অভ্যাসের সমষ্টি মাত্র। সর্বপ্রকার সংযম শক্তি বলে পুরানো অসৎ প্রবৃত্তিগুলি ও সদপ্রবৃত্তিগুলিও চলে যাবে। এভাবে সদসদ্ প্রবৃত্তিগুলি পরম্পরকে অভিভূত করে ফেলবে। ভালো-মন্দ সর্ববন্ধন বিমুক্ত হয়ে আত্মা স্ব মহিমায় সর্বত্র, সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞা রূপে অবস্থান করবে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।