স্কেচ: লেখক।
‘ন্যাশনাল আইসক্রিম ডে’ আর ‘জাতীয় ইমোজি দিবস’ পরপর থাকলে কী হতে পারে? ঈশ্বরের নাকি সকল দিনই সমান। কোনও দিন আকাশের মুখভার তো কোনওদিন ভাজা ভাজা করা রোদ। রেইনি ড’ নিয়ে আমাদের নস্টালজিয়া, বার্থ ডে নিয়ে আমরা ইমোশনাল, ডি ডে, মে ডে, টিচার্স ডে, ইস্টার ডে থেকে ইয়েস্টার ডে, লিপ-ইয়ার ডে থেকে ডে আউট ইত্যাদি সব কিছু নিয়েই আমাদের ভাবনা-চিন্তা ঘোরাঘুরি করে। জুলাই মাসের ষোলো আর সতেরোতে আমাদের ‘ডে’ প্রীতি উস্কে দিতে আয়েসক্রিম আর ইমোজি ডে।
ধরা যাক, আপনি আইসক্রিম কিনে আয়েস করে খেতে খেতে ফিলিং কুল বা হট হয়ে একটা ইমোজি দাগলেন। সেটার জবাবে বন্ধু বলল ‘একা খেলেই হবে?’ উত্তরে আপনি একটা আইসক্রিমের স্টিকার পাঠিয়ে দিলেন। ব্যস, আপনার ইমোশন এবার সম্পূর্ণতা পেলো। এ ভাবে আপনি নির্বিকার থেকেও হাসতে, কাঁদতে, রাগতে, বিদ্রুপ করতে পারেন। দরকারে বিষোদ্গার করতে পারেন, হাসতে হাসতে চোখে জল আনতে পারেন, কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করতেও পারেন। আর এসব করতে পারেন একেবারেই এমনটা না হলেও। আপনি দরকারে ভার্চুয়াল হাততালি, ভালোবাসা, আধিক্যতা (আদিখ্যেতা), জানিয়ে গোলাপ ফুল অথবা বেলপাতা দিতে পারেন যাকে খুশি। স্মিত থেকে প্রশস্ত সবরকমের হাসি হাসার ব্যবস্থা আছে ইমোজিতে। আপনি বাস্তবেও হয়তো এতোরকম হাসতে পারেন না।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫: আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-২: রাজাদের স্থাপত্য-কীর্তি ও রাজধানী
কত রকমের রঙিন হৃদয়বহুল ভালোবাসা হতে পারে এ একমাত্র ইমোজিতেই জানা যাবে। মানুষ অনুভূতিপ্রবণ বলে খ্যাতি আছে। ইমোজিতে তারা এতোরকম ফিলিংস জানাতে পারছে যা হয়তো মুখে বা লিখেও পারতো না। এমনকী, যে কথা বলা যায় না, যে কোনও কারণেই হোক, ইমোজির ব্যঞ্জনায় তাও হবে অনায়াসেই।
এক চোখ টিপে, প্রয়োজনে দু’চোখ টিপে, অথবা চোখ ঢেকে, শিবনেত্র দেখিয়ে অথবা চোখে রসগোল্লা পাকিয়ে, কিংবা কিছুটা কুঁচকে নতুবা জিভটা বের করে খানিক আপনি জানাতে থাকুন মনের কথা। কাঁদতে চান? গ্লিসারিন লাগবে না। ইমোজি আছে তো। এখানে আপনি লজ্জায় মুখ ঢাকতে পারবেন, প্রয়োজনে মুখ খুলতে পারবেন ভালোমতো, হাতের প্রত্যেক আঙুলের অসাধারণ ব্যবহার ইমোজিতে করতে পারবেন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাদ দিয়ে ফুল, ফল, লতা, পাতা, বাড়ি, গাড়ি, কলম, মলম, তারা, মেঘ, পাখি, পশু, এক্কা, দোক্কা, টরটরে ব্যাঙ থেকে শকুনের ঠ্যাঙ সঅঅঅঅব মজুত আছে। দরকার মতো ব্যবহার করুন। দেখাশোনা ফ্রি, ব্যবহার আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আপনার দায় আর রিস্ক। যাকে হয়তো আপনি হাসি ভাবছেন সেটা হয়তো ততটা সরল হাসি নয়।
এক চোখ টিপে, প্রয়োজনে দু’চোখ টিপে, অথবা চোখ ঢেকে, শিবনেত্র দেখিয়ে অথবা চোখে রসগোল্লা পাকিয়ে, কিংবা কিছুটা কুঁচকে নতুবা জিভটা বের করে খানিক আপনি জানাতে থাকুন মনের কথা। কাঁদতে চান? গ্লিসারিন লাগবে না। ইমোজি আছে তো। এখানে আপনি লজ্জায় মুখ ঢাকতে পারবেন, প্রয়োজনে মুখ খুলতে পারবেন ভালোমতো, হাতের প্রত্যেক আঙুলের অসাধারণ ব্যবহার ইমোজিতে করতে পারবেন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাদ দিয়ে ফুল, ফল, লতা, পাতা, বাড়ি, গাড়ি, কলম, মলম, তারা, মেঘ, পাখি, পশু, এক্কা, দোক্কা, টরটরে ব্যাঙ থেকে শকুনের ঠ্যাঙ সঅঅঅঅব মজুত আছে। দরকার মতো ব্যবহার করুন। দেখাশোনা ফ্রি, ব্যবহার আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আপনার দায় আর রিস্ক। যাকে হয়তো আপনি হাসি ভাবছেন সেটা হয়তো ততটা সরল হাসি নয়।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: রোজের খাদ্যতালিকায় তেঁতুল নেই! এ সব জানলে এমন ভুল আর নয়
আবার যাকে আপনি নমস্কার ভাবেন সেটা হয়ত নিছকই হাততালি। ঘাবড়াবেন না। বেড়ালকে হাসতে দেখেছেন? অথবা কুকুরকে অট্টহাস্য করতে? ঘুম পাচ্ছে? ঠান্ডায় জমে যাচ্ছেন? সর্দি হয়েছে অথবা জ্বর? কাউকে চুপ করাবেন? অথবা নিজে থামতে চাইছেন? খুব খারাপ রকমের রেগে গিয়েছেন? মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছে সব? অথবা মাথার মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছে? কিংবা সুনামি? নাকি মেঘভাঙা বৃষ্টি নেমেছে মনে? কেঁদে কেঁদে চারপাশে সাগর বানাতে চান? গরমে কাহিল? স্মার্টলি চুমু খাবেন? নাকি লজ্জা লজ্জা ভাব করে খেতে চাইছেন? ভাবনায় পড়েছেন? নাকি ভাবতেই পারছেন না? রেগে ভূত হয়ে গিয়েছেন? নাকি রাক্ষস? কামড়ে দিতে চান? শুনতে পাচ্ছেন না কানে? দেখতে পাচ্ছেন না? অথবা বেশি দেখছেন? কিংবা কম? কাউকে একদম দেখতে পারেন না? নাকি চোখে হারান? হৃদয় ভেঙেছে? প্রেমে পড়েছেন? মাথা খুলে ফুটোস্কোপে দেখতে চান? দাঁতে ব্যথা নাকি নাকে? জিভে জল আসছে? নজর দিতে চাইছেন ভালোমতো? বৃষ্টি পড়ছে? রোদ উঠেছে? আপনি উঠেছেন নাকি ঘুমাতে গেলেন? মারবেন? কাটবেন? ভাঙবেন? টুকরো টুকরো করবেন? নাকি বেঁধে বেঁধে থাকবেন? এমন হাজারো ইমাজিনেশন আর ইমোশনের একমাত্র অব্যর্থ সমাধান বিশ্ববিখ্যাত ‘ইমোজি’, ‘ইমোটিকন’ এইসব… আর এই সঅঅঅঅঅঅবটাই করতে পারেন একটা আইসক্রিম খেতে খেতে, অথবা আইসক্রিমের জন্য কিংবা একটা আইসক্রিম ফুরোনোর আগেই।
আরও পড়ুন:
রিভিউ: ‘কফস’ হল আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সেই ভয়ঙ্কর খাঁচা
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৮: ‘সম্মতি’ আদায়ের চাবিকাঠি
এমন বাম হাতের খেল মশাই। ইমোজিতে মজুন। মজাবেন না কেবল নিজেকে। মজা করুন না খানিক। কারা যেন বলতো বোকাবাক্সতে দুনিয়া বন্দি হয়ে হয়ে ক্রমশ ক্রমশ দূরে, আরও দূরে সরে যাওয়ার পালা? সরে যাবেন? নাকি পাশে থাকবেন? ঠান্ডা হিমশীতল আইসক্রিমে ঠোঁট ছোঁয়াবেন নাকি গলেগলে আসা সান্দ্র সহনীয় স্বাদু শীতলতায় ডুব দেবেন? আপনি ঠিক করতে পারেন, আপনিই শুধু, কেবল আপনিই।
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।