রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

 

সানন্দা ও অর্কপ্রভ

সানন্দার কাছে ডাঃ অর্কপ্রভ গো-হারান হেরেছে। নানান সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হোমরাচোমরা শহরের পরিচিত নানান বড় বড় ডাক্তারবাবুদের দিয়ে সুপারিশ অনুরোধ-উপরোধ এবং শেষের দিকে রাজনৈতিক যোগাযোগে খানিকটা হুমকি সত্বেও সানন্দা তার জেদ থেকে এতটুকু নড়েনি।
উল্টো দিকে দাদুর রেফারেন্স নিয়ে সরাসরি পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। নিজের জন্য নয়, বরানগরের মধ্যবিত্ত স্বামী-স্ত্রী নিলয় ও মনিকা সরকারের নিরাপত্তার জন্য। কমিশনার সাহেবকে সানন্দা বলেছিল—
—স্যার আপনি খুব ব্যস্ত মানুষ। এ সব ছোটখাট ব্যক্তিগত সমস্যায় মাথা দেওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয় আপনার কাছে এ সব পৌঁছনোও উচিত নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি আমার ব্যাপারটা সামলে নেব। আমার এক ক্লায়েন্ট একটা অভিযোগ করেছেন। আমার আশঙ্কা তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে, যাতে তাঁরা অভিযোগটা তুলে নেন। আপনার কাছে একটাই অনুরোধ আমরা গিয়ে লোকাল থানাতে এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে অ্যাপ্লিকেশন করছি। সেটা যেন কোনওভাবে অস্বীকার করা না হয় সেটা আপনি দেখবেন। তাঁরা তাঁদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন। তারা যেন ন্যায়বিচার পান সেটা আদালত দেখবেন কিন্তু তাদের যাতে আর কোনও ক্ষতি না হয় সেটা আপনি লোকাল থানাকে দেখার জন্য একটু অনুরোধ করবেন। সেফটি সিকিউরিটি রিকোয়েস্ট আমরা লোকাল থানাতে করছি। আর নার্সিংহোম যেখানে ছিল সেই থানাতে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-৩৩: রাজনীতিতে বাবু দাদা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬২: শ্রীমার দক্ষিণ ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন

এই পুরো ঘটনায় সানন্দা বসুন্ধরা ভিলার সাহায্য নিয়েছিল এই একবারই। বাকি সমস্ত কিছু সে নিজে হাতে করেছে। নার্সিং হোম যে থানায় সেখানে গিয়ে নিলয় ও মনিকা সরকারকে দিয়ে অভিযোগ করানোর থেকে আজ রাতে মামলা করা এবং মেডিকেল কাউন্সিলের অভিযোগ জমা দেওয়া সবটুকু। অর্ক এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব ভাবতেও পারেনি সানন্দা এতখানি কঠিন হতে পারে। অবস্থা এমন হয়েছিল যে বা আরও বাড়াবাড়ি করলে অর্ক তার নিজের লাইসেন্সও হারাতে পারতো। খুব স্বাভাবিকভাবে খবরের কাগজে একটা মুচমুচে আর্টিকেল হয়ে উঠতে পারতো এই ঘটনা। কিন্তু সেটা হতে পারে পারলো না তারকবাবুর জন্য। বাবা জানতেন যে মেয়ে সানন্দা ভয়ংকর জেদি। বাবার কাছে এসে এই বিষয়ে কোনও সাহায্য চাইবে না। তাই বাবাই তারকবাবুকে দিয়ে বিভিন্ন খবরের কাগজের চিফ এডিটরদের জানিয়ে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮২: খটকা

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৬:কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক

মেডিকেল কাউন্সিলের মিটিং এ পর্যন্ত সানন্দা মনিকা সরকারের জরায়ু থেকে বের করা বিষাক্ত হয়ে যাওয়া গোল ব্যান্ডেজের টুকরো কাচের জারের মধ্যে ফরম্যালডিহাইডে প্রিজার্ভ করেছিল। দু’ দুটো নার্সিংহোমে ভর্তি, অপারেশনের সব কাগজপত্র, প্রথম অপারেশনের পর ডাঃ অর্কপ্রভ দাশগুপ্তের সই করা ডিসচার্জ সার্টিফিকেট সানন্দার দ্বিতীয় বার অপারেশন করবার সময় তার ফটোগ্রাফ সবকিছু জমা দিয়েছিল।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৮: যেথা আমি যাই নাকো / তুমি প্রকাশিত থাকো

মনিকা সরকারের ইউটোরিয়াসের সিস্ট অপারেশনের সময় ডাক্তার অর্কপ্রভ দাশগুপ্তের গাফিলতিই যে তার জরায়ুতে ইনফেকশনের মূল কারণ সেই এভিডেন্স চাপা দেওয়া যায়নি। একটা বিশাল অংকের টাকা মনিকা এবং নিলয় সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ মেডিকেল কাউন্সিলের মিটিংয়ে অর্কপ্রভকে তুলে দিতে হয়েছিল। মুচলেকা দিতে হয়েছিল যে ভবিষ্যতে এই নিয়ে নিলয় এবং মনিকা সরকারের ওপর কোনও প্রতিশোধমূলক আচরণের সঙ্গে সে জড়িত থাকতে পারবে না। মেডিকেল কাউন্সিলের প্রসিডিংস নিয়ে আদালত একই রায় দিয়েছিল।

আমার বোন ডাক্তার সানন্দা যথেষ্ট দৃঢ় মনের মেয়ে, কিন্তু এটা সত্যি যে, ও বসুন্ধরা ভিলার মেয়ে না হলে এত কিছু করা সম্ভব হয়তো হতো না। পিছনে বসুন্ধরা ভিলার প্রচ্ছন্ন সাহায্য থাকার কারণেই তার কোন ক্ষতি করার কথা অর্কপ্রভ ভাবতেও পারেনি। কিন্তু অপমান তো সে ভুলে যায়নি। রাগ সানন্দার ওপরে রাগ বসুন্ধরা ভিলার ওপরে। আর বসুন্ধরা ভিলার ওপর রাগ ক্ষোভ অভিমান প্রণয়কান্তিরও রয়েছে। সুতরাং দুজনে যে দু’জনের কাছাকাছি আসবে তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। তাই হিজিবিজি খাতায় বাবার লেখা অসংখ্য প্রশ্নচিহ্নগুলো সেটা নিয়ে নয়। প্রশ্নগুলো তারা কী কী ক্ষতি করতে পারে। বাবলি ভিতরে ভিতরে আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তপোক্ত হয়ে উঠেছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ রুখে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৮: নন্দিতা কৃপালনি— বিশ শতকের বিদুষী

স্বামীর সঙ্গে ক্লাবের পার্টিতে গিয়েছিল বাবলি। প্রণয় জুয়া খেলতে বসে যে গাড়ির এবং ঘরের চাবি জুয়াতে বাজি রাখবে সেটা সে আন্দাজও করতে পারেনি। এই আধুনিক লাম্পট্যের অভিধানে গাড়ির চাবি দিয়ে গাড়ির মালিকানা আর ঘরের চাবি দিয়ে ঘরণীর মালিকানা হস্তান্তর বোঝায়। মদ্যপ প্রণয়কান্তির জুয়াসঙ্গী মদ্যপানে উত্তেজিত কিন্তু ক্রুর শয়তান আগরওয়াল সরাসরি এসে বাবলির ডান হাত ধরেছিল। পার্টির একরাশ লোকের সামনে বামহাতে সপাটে একটা থাপ্পড় মারতে একমুহূর্ত দেরি করেনি বাবলি। তারপর মাঝে অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে কিন্তু একটা ঘটনা বাবলিকে আমূল বদলে দিয়েছে।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content