টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়া এনটি ওয়ান। ছবি; সংগৃহীত।
।।স্বেচ্ছা-নির্বাসন।।
বসুন্ধরা ভিলায় নিজেকে মানিয়ে নিতে ঝকঝকে রুপোলি গ্ল্যামারের দুনিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সুরঙ্গমা দুবার ভাবেনি। সুরঙ্গমা ভীষণ ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইত। সেটা বসুন্ধরা আর স্বর্ণময়ী সেদিনই প্রথম জানতে পেরেছিল। বসুন্ধরা ভিলায় এসেও স্বয়ং শ্বশুরমশাই বিনয়কান্তির অনুরোধ রাখতেই প্রতিবছর বিজয়াদশমীর পারিবারিক আসর ছাড়া আর কখনও গান করেনি সুরঙ্গমা।
সুরঙ্গমার কাছ থেকেই মায়ের বসুন্ধরা ভিলায় আসার গল্প শুনেছে ছেলে সুবর্ণকান্তি। বসুন্ধরার সঙ্গে বিনয় বা স্বর্ণময়ীর সঙ্গে অমলকান্তির সম্পর্কের মতোই, সহজ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল সুরঙ্গমা আর তার ছেলে সুবর্ণকান্তির।
বসুন্ধরার ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়েছিল। বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ বসুন্ধরা ভিলার পরিচয়ে নয়। সাহিত্যিক হিসেবে জনপ্রিয়তাই অমলকান্তি দত্তকে পরিচিতি দিয়েছিল। অনেকে বলতেন, সাহিত্যিক অমলকান্তি দত্ত বসুন্ধরা ভিলায় থাকেন। তারক নিয়োগী অমলকান্তি দত্তকে আলাদা করে শ্রদ্ধা করতেন। বিনয়কান্তির সন্তান বা বসুন্ধরা ভিলার সদস্য বলে নয়, একজন খুব জনপ্রিয় এবং সফল সাহিত্যিক হিসেবে। বলতেন—
‘বসুন্ধরা ভিলার ঐশ্বর্য বৈভব কিছুই আপনাকে স্পর্শ করে না। আপনি সেই অচিন নক্ষত্র। আপনার উজ্জ্বলতায় আমরা আশপাশের সবাই আলোকিত। এক কক্ষচ্যুত নক্ষত্র আপনি।’
সুরঙ্গমা অমলকান্তির দুটি সন্তান। মেয়ে বড় নাম সানন্দা। সে ডাক্তার। আর ছোট আমি সুবর্ণকান্তি। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। বাবা আদর করে বলতেন ‘সা’ আর ‘সু’।
তাই তরুণকান্তির বিশদ কাহিনীতে পরে আসব। তার আগে ফুলকাকা বিমলকান্তির কথা…
ষাটের দশকে ডাক্তারিতে ভর্তি হবার জন্য স্কুলের পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের উপর জেলাভিত্তিক কোটায় ছাত্র-ছাত্রী বাছাই হতো। এ জন্য যে ইন্টারভিউ হতো, সেটাও ছিল ভীষণ কঠিন। জেলাভিত্তিক নির্বাচনের কারণে কলকাতা থেকে ছেলেমেয়েদের কম্পিটিশন ছিল খুব। ১৯৬৬ সালে নিয়মে বদল এল। ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ আরজিকর হাসপাতাল আর এনআরএস হাসপাতালের জন্যে কমন এন্ট্রান্স টেস্ট শুরু হল। সত্তর সাল থেকে এগারো ক্লাসের হায়ার সেকেন্ডারির পর ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষা চালু হল। বারো ক্লাসের হায়ার সেকেন্ডারি আমাদের আমলে। তবে ফুলকাকা বিমলকান্তি খুব ভাল ছাত্র ছিল প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করার পর প্রাপ্ত নম্বরের নিরিখে মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়া শুরু করলেন ১৯৬০ সালে। সে সময়ে ফার্স্ট ইয়ারের শুরুতেই ছিল প্রি-মেডিকেল কোর্স। অ্যানাটমি ফিজিওলজি আর বায়োকেমিস্ট্রির পরীক্ষা হতো সেকেন্ড ইয়ারের শেষে। ফার্মাকোলজির পরীক্ষা থার্ড ইয়ারের শেষে। ফোর্থ ইয়ারের চাপটা খুব।
ন’ছেলের বিদেশে থেকে যাওয়া সেখানেই বিয়ে করা উদারমনস্ক হলেও ঠাম্মি স্বর্ণময়ী সেগুলো খুব একটা ভাল মনে নেননি। অথচ তাঁর শাশুড়ি আমাদের বড় ঠাম্মি বসুন্ধরা তখন ৮১ খালি চোখে খবরের কাগজ পড়তেন। তবে দূরের জন্যে চশমা লাগত। হ্যাঁ, ছেলের বউভাতের দিন পিটারসন সাহেবের সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলতে না পেরে একরকম জেদ ধরেই আমার ঠাম্মির কাছে ইংরিজি শিখে, বড়ঠাম্মি ইংরিজি কাগজ পড়তেন। তিনি পুত্রবধূকে বলতেন,
‘সময়টা বদলে গিয়েছে স্বর্ণ বদলগুলো সহজভাবে মেনে নে, না হলে তোর কষ্টই বাড়বে। জগত সংসার তো তোর ইচ্ছে অনুযায়ী চলবে না।’
পর্ব-৫০: বসুন্ধরা এবং…
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১: ছুটি ও ছোটা ছুটি
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৮: দেখা-অদেখা চেনা-অচেনায় ‘মরণের পরে’
এর ঠিক তিন বছর পর ফুলকাকা আর কীরা কাকিমার সেপারেশান হয়ে গেল। আমি সেইবার মাধ্যমিক পাশ করলাম। রোসিন আর শ্যানন কীরা কাকিমার কাছে থাকল। কাকিমা তখন রিচমন্ড হাসপাতাল থেকে হাতবদল হওয়া ডাবলিনের নতুন বিউমন্ট হসপিট্যালে। আর পেডিয়াট্রিক হার্ট সার্জারিতে স্পেশালাইজেশন করে ডাবলিন থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে আইরিশ সাগরের ওপারে ব্রিস্টলে চলে গেছেন ফুলকাকা।
জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-১: চলার পথে খানিক ভণিতা
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১: অমৃতের সন্ধানে…
স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে চিকেন কারি আর ভালো লাগছে না? বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো বানিয়ে ফেলুন মুর্গ মালাই হান্ডি
ব্রিস্টলে ফুলকাকা যে হাসপাতালে কাজ করত তখন সেটা ছিল সেন্ট মাইকেল হিলস-এ। নাম ছিল হসপিটাল ফর সিক চিল্ড্রেন। পুরনো আমলের গথিক গির্জাছাঁদের বাড়ি। ব্রিস্টলের মেন বাস স্টেশন থেকে একটু দূরে। পরে ২০০১ সালে সেই হাসপাতাল আরও বড় হয়ে হল ব্রিস্টল রয়্যাল হসপিটাল ফর চিল্ড্রেন। সেটা শুনেছি বাস স্টেশনের কাছাকাছি।
ফুলকাকা পরদিন আমাকে গ্লাসগো নিয়ে গিয়েছিল। আমরা ট্রেনে গিয়েছিলাম। বোধহয় ঘণ্টা সাতেক লেগেছিল। অবাক কান্ড গ্লাসগো স্টেশনে আমাদের রিসিভ করতে এল কীরা কাকিমা সঙ্গে আমার খুড়তুতো দুই বোন রোসিন আর শ্যানন একজন তখন বছর ১২, অন্যজন ১০। তখন বড় হয়ে গিয়েছি। মুখে কোনও অভিব্যক্তি না এনেও মনে মনে ভাবছি এটা কি করে সম্ভব? এদের দুজনের তো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তারপরেও আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আয়ারল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছেন কীরা কাকিমা! সঙ্গে দুই মেয়ে!! আমি দু’বোনের সঙ্গে গল্প করতে করতেই খেয়াল করছি ফুল কাকা আর কীরা কাকিমা খুব চেনা দুজন মানুষের মতো গল্প করছে হাসছে। অথচ আমি ভাবতে পারছি না এরা যদি এখনও এত সহজ তাহলে এদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেল কেন? এটা কি আধুনিকমনস্কতা? সত্যি কি এদের দুজনের মধ্যে আর কোন টান নেই। নিছক দুজন পরিচিত মানুষ? হয়তো আমি যে মধ্যবিত্ত ঘরোয়া পরিবেশে মানুষ হয়ে উঠেছি তার জন্য এগুলো অদ্ভুত লেগেছিল। এতদিন বাদে ষাট পেরিয়ে এসে আমার কাছে মানুষের সম্পর্কের টানাপোড়েন বড় অদ্ভুত লাগে।
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়
হেলদি ডায়েট: করলা স্বাদে তেতো হলেও পুষ্টিগুণ কিন্তু মিষ্টি! একঝলকে জেনে নিন রোজ কেন পাতে রাখবেন এই সব্জি
ডায়াবিটিস বাসা বেঁধেছে শরীরে? কী কী লক্ষণ দেখলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে? জেনে নিন খুঁটিনাটি
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১: স্নানের আগে রোজ সর্ষের তেল মাখেন?
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১: নারী কি আলাদা? তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে বসতে ভয় পান? তাহলে কি এত আয়োজন শুধু তাঁদের ভয় দেখাতে…
দশভুজা: দু’শো বছর আগে হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের বদলে সতী হতেন
সুবর্ণ-র স্মৃতি লন্ডনের ব্রিক লেন ।
পরের পর্ব আগামী রবিবার
‘৬৫ সালে বিনয়কান্তি কলকাতার শেরিফ নির্বাচিত হলেন। ভারতে একমাত্র মুম্বই এবং কলকাতায় এই অরাজনৈতিক উপাধি মূলক পদটি রয়েছে। সম্মানের হিসেবে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র বা মহানাগরিক এর ঠিক পরেই শেরিফের গুরুত্ব। কলকাতার কোন এক শেরিফের একটি অফিস থাকে নিজস্ব কর্মী থাকে কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা থাকে না।