অলঙ্করণ: লেখক।
রুকু গম্ভীর মুখে বাড়ি এসে বাবাকে বলল, “আমি আর স্কুলে যাব না বাবা। আমাকে মোটু বলে ক্ষ্যাপায়, নিচু ক্লাসের ছেলেগুলো ল্যাং দিয়ে ফেলে দিতে চায়, প্রেয়ার হলে গেমস স্যার কেডস পরিনি বলে আমাকে চড় মারলেন, কিন্তু শুভ-ও তো পরেনি, তাকে কিছুই বললেন না। মহাদেব স্যার…।”
রুকু আরও কিছু বলতো, কিন্তু বাবা ধমকে বলে উঠলেন, “কই তোমাকেই কেন সবাই ক্ষ্যাপায়, তোমার সঙ্গেই এমন করে কেন সকলে? তুমি কিছু না করলে… তারা কি তোমার শত্রু? এত ক্যাবলা হলে চলে না এই বাজারে, কী করে যে তুমি খাবে…।”
রুকু কিছু বলতে পারে না। একটা নিষ্ফল ক্রোধ আর অভিমান তাকে চেপে ধরে। সত্যিই তো, কেন? কেন তার সঙ্গেই এমন করে সকলে? ক্লাসে কি মোটা ছেলে কম পড়েছে? সে আঁকতে পারে, সাইকেল চালাতে পারে, অঙ্ক পারে, রিসাইটেশন জানে, বাংলা, ইতিহাস, কেমিস্ট্রি পারে… এতগুলো হ্যাঁ পরেও কী আছে যেটা সে…
যেদিন আমি পথে-প্রান্তরে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দুটি অন্নের জন্য ভিক্ষা করে চাইছিলাম দ্বারে দ্বারে, সেদিন, হে রাজাধিরাজ! তোমার স্বর্ণরথের অপূর্ব জ্যোতি আমার চোখে এঁকে দিয়েছিল অনাগত দিনের উজ্জ্বল ছবি, এক অপূর্ব নয়নাভিরাম মোহের ছলনা।
আমাকে ক্রুদ্ধ করে, হতাশ করে, হে নিষ্ঠুর! “তুমি অকস্মাৎ ‘আমায় কিছু দাও গো’ বলে বাড়িয়ে দিলে হাত।”
কী নিষ্ঠুর এই পরিহাস! একি এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরিপ্রমাণ ধন ঝলসে দেয় চোখ! তবুও রাজার হস্ত কাঙালের সমস্ত ধন নিঃশেষে হরণ করতে চায়? হে অকরুণ! মরি, “তোমার কী-বা অভাব আছে/ ভিখারী ভিক্ষুকের কাছে/ এ কেবল কৌতুকের বশে/আমায় প্রবঞ্চনা।”
রুকু আরও কিছু বলতো, কিন্তু বাবা ধমকে বলে উঠলেন, “কই তোমাকেই কেন সবাই ক্ষ্যাপায়, তোমার সঙ্গেই এমন করে কেন সকলে? তুমি কিছু না করলে… তারা কি তোমার শত্রু? এত ক্যাবলা হলে চলে না এই বাজারে, কী করে যে তুমি খাবে…।”
রুকু কিছু বলতে পারে না। একটা নিষ্ফল ক্রোধ আর অভিমান তাকে চেপে ধরে। সত্যিই তো, কেন? কেন তার সঙ্গেই এমন করে সকলে? ক্লাসে কি মোটা ছেলে কম পড়েছে? সে আঁকতে পারে, সাইকেল চালাতে পারে, অঙ্ক পারে, রিসাইটেশন জানে, বাংলা, ইতিহাস, কেমিস্ট্রি পারে… এতগুলো হ্যাঁ পরেও কী আছে যেটা সে…
যেদিন আমি পথে-প্রান্তরে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দুটি অন্নের জন্য ভিক্ষা করে চাইছিলাম দ্বারে দ্বারে, সেদিন, হে রাজাধিরাজ! তোমার স্বর্ণরথের অপূর্ব জ্যোতি আমার চোখে এঁকে দিয়েছিল অনাগত দিনের উজ্জ্বল ছবি, এক অপূর্ব নয়নাভিরাম মোহের ছলনা।
আমাকে ক্রুদ্ধ করে, হতাশ করে, হে নিষ্ঠুর! “তুমি অকস্মাৎ ‘আমায় কিছু দাও গো’ বলে বাড়িয়ে দিলে হাত।”
কী নিষ্ঠুর এই পরিহাস! একি এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরিপ্রমাণ ধন ঝলসে দেয় চোখ! তবুও রাজার হস্ত কাঙালের সমস্ত ধন নিঃশেষে হরণ করতে চায়? হে অকরুণ! মরি, “তোমার কী-বা অভাব আছে/ ভিখারী ভিক্ষুকের কাছে/ এ কেবল কৌতুকের বশে/আমায় প্রবঞ্চনা।”
ধীরে ধীরে আমার ঝুলি থেকে একটি ক্ষুদ্র কণা তুলে দিয়েছিলাম তোমার হাতে। আর ফিরে দেখিনি। চলে এসেছি দিনের শেষে সেই জীর্ণ কুটিরে; যা আমার শৈশবের শিশুশয্যা, বাল্যের ক্রীড়াঙ্গন, যৌবনের উপবন, বার্দ্ধক্যের বারাণসী। হায়! এ আমি কী দেখছি। উজাড় করা ভিক্ষালব্ধের মাঝে এক স্বর্ণকণা কেন জ্যোতির্ময় হয়ে জ্বলে উঠছে?
মুহূর্তে আমার চোখে ঘনিয়ে আসে অকালমেদুর মেঘের ছায়া, ভরা-বাদলের অশ্রান্ত বর্ষণ। যা হতে পারতো আমার খেয়ার পারানি, হয়ে উঠতে পারতো অনায়াসেই আমার সোনার তরী, তাকে আমি অক্লেশে বিসর্জন দিয়েছি ওই দূর ছায়াময়ের অতলান্তে। আমার নিশীথরাতের যে বাদলধারায় সিক্ত হয়ে ধন্য হতাম নিজে, তখন এ কোন্ মহাসুষুপ্তির উষ্ণ শ্বাস ঘিরে রেখেছিল আমাকে অকাতরে? কেন, কেন, কেন ওগো অকরুণ, নিষ্ঠুর তোমার ঐ দিব্য করকমলে উজাড় করে দিইনি আমার সকল ভিক্ষাপাত্র?
রুকু ছুটছিল। প্রাণপণে। টিফিনের ঘণ্টা বাজতেই ছেলের দল হুড়মুড়িয়ে নামছিল বিরাট সিঁড়িটা দিয়ে। বিবেকানন্দের বিশাল ছবিটার পায়ের নীচ দিয়ে অজস্র কালো মাথা বাঁধভাঙা জলের মতো ছুটছিল মাঠের দিকে। রুকু টিফিন বাক্স নিয়ে নামছিল। একটা ধাক্কায় ছিটকে গেল বাক্সটা। দুটো ছেলে কিক্ করে সেটাকে শূন্যে হারিয়ে দিল। রুকু কিছু বোঝার আগেই পিছন থেকে একটা গাঁট্টা পড়ল মাথার ঠিক পিছনে। ঝিনঝিন করে উঠল। যারা নেমে যাচ্ছিল কেউ কেউ একটা দুটো থাপ্পড় লাগিয়ে যাচ্ছিল কানের পাশে। হঠাত্ করেই তিনটে বড় ছেলে তাড়া করল তাকে, রুকু ছুটছিল, যেন একটা ছায়াপথ পার হচ্ছে সে। শ্বাস এসে কণ্ঠারোধ করছে, পাশ দিয়ে যেন অনন্ত গ্রহ নক্ষত্র ছুটে যাচ্ছে। ক্যান্টিন, স্টাফ কোয়ার্টার, টেনিস রুম পার হয়ে বড় হলটার দিকে মোড় নিল সে। পিছনে তারা আসছে…।
চারপাশে এক অনন্ত ক্যাবলামির স্রোত, বোকামির ঢেউ আছড়ে পড়ছে, ভেবলে থাকাটাই বুঝি জীবধর্ম। উঠতে-বসতে, নামতে-পড়তে এক ক্যাবলামির লাভাস্রোত পুড়িয়ে মারে, আর সকলে ধমকে বলে “দাও! এবার খেসারত দাও”…
মুহূর্তে আমার চোখে ঘনিয়ে আসে অকালমেদুর মেঘের ছায়া, ভরা-বাদলের অশ্রান্ত বর্ষণ। যা হতে পারতো আমার খেয়ার পারানি, হয়ে উঠতে পারতো অনায়াসেই আমার সোনার তরী, তাকে আমি অক্লেশে বিসর্জন দিয়েছি ওই দূর ছায়াময়ের অতলান্তে। আমার নিশীথরাতের যে বাদলধারায় সিক্ত হয়ে ধন্য হতাম নিজে, তখন এ কোন্ মহাসুষুপ্তির উষ্ণ শ্বাস ঘিরে রেখেছিল আমাকে অকাতরে? কেন, কেন, কেন ওগো অকরুণ, নিষ্ঠুর তোমার ঐ দিব্য করকমলে উজাড় করে দিইনি আমার সকল ভিক্ষাপাত্র?
রুকু ছুটছিল। প্রাণপণে। টিফিনের ঘণ্টা বাজতেই ছেলের দল হুড়মুড়িয়ে নামছিল বিরাট সিঁড়িটা দিয়ে। বিবেকানন্দের বিশাল ছবিটার পায়ের নীচ দিয়ে অজস্র কালো মাথা বাঁধভাঙা জলের মতো ছুটছিল মাঠের দিকে। রুকু টিফিন বাক্স নিয়ে নামছিল। একটা ধাক্কায় ছিটকে গেল বাক্সটা। দুটো ছেলে কিক্ করে সেটাকে শূন্যে হারিয়ে দিল। রুকু কিছু বোঝার আগেই পিছন থেকে একটা গাঁট্টা পড়ল মাথার ঠিক পিছনে। ঝিনঝিন করে উঠল। যারা নেমে যাচ্ছিল কেউ কেউ একটা দুটো থাপ্পড় লাগিয়ে যাচ্ছিল কানের পাশে। হঠাত্ করেই তিনটে বড় ছেলে তাড়া করল তাকে, রুকু ছুটছিল, যেন একটা ছায়াপথ পার হচ্ছে সে। শ্বাস এসে কণ্ঠারোধ করছে, পাশ দিয়ে যেন অনন্ত গ্রহ নক্ষত্র ছুটে যাচ্ছে। ক্যান্টিন, স্টাফ কোয়ার্টার, টেনিস রুম পার হয়ে বড় হলটার দিকে মোড় নিল সে। পিছনে তারা আসছে…।
চারপাশে এক অনন্ত ক্যাবলামির স্রোত, বোকামির ঢেউ আছড়ে পড়ছে, ভেবলে থাকাটাই বুঝি জীবধর্ম। উঠতে-বসতে, নামতে-পড়তে এক ক্যাবলামির লাভাস্রোত পুড়িয়ে মারে, আর সকলে ধমকে বলে “দাও! এবার খেসারত দাও”…
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৪: এ শুধু অলস মায়া?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪০: সে এক স্বর্গপুরীর ‘চিরকুমার সভা’
জীবনের কিছু চাওয়া-পাওয়া, কিছু আনন্দগান, কিছু দূরযাপন যখন নিমেষেই “ক্যাবলামি” হয়ে ওঠে তখন? সুভদ্ররা অচলায়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে ফেলে? অথবা মহাপঞ্চক বলে ওঠে “পঞ্চক, আবার তর্ক?” নাকি?
“ইস! এইটা খেয়াল করে নি এতক্ষণ হাঁদা-বোকা সুবর্ণ। একই ঘরে দালানে পাঁচবার ঘুরপাক খেয়ে মরছে! চেলির কাপড় সামলাতে সামলাতে তিনতলায় ছুট দিল সুবর্ণ। কেউ তো নেই। এখানে, ছুটতে বাধা কি! একেবারে ছাত পর্যন্তই তো ছুট দেওয়া যায়।
না। ছাত পর্যন্ত ছুট দেওয়া গেল না, ছাতের সিঁড়ি বানানো হয় নি।…
কিন্তু বারান্দা?”
সুবর্ণলতার বারান্দার চাহিদা কি ক্যাবলামি নয়? বাড়ি থাকার জন্য, থাকতে পারছো এটাই কি বড় নয়? সেখানে ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আরাম করাটা বাবুয়ানি করে জুড়িগাড়ি করে হাওয়া খাওয়ার বাতুলতা ছাড়া আর কি?
সুবর্ণ পাথরের চোখে তাকায়।
“বারান্দা কই?
বারান্দা!”
প্রবোধ একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে বিস্ময়ের গলায় বলে ওঠে, সে কী! খুঁজে পাওনি? আরে তাই তো! ভূতে উড়িয়ে নিয়ে গেল নাকি?
সুবর্ণর চোখ ফেটে জল আসে, তবু সে-জলকে নামতে দেয় না সে, কঠোর গলায় বলে, মিথ্যে কথা বললে কেন আমার সঙ্গে?”
“ইস! এইটা খেয়াল করে নি এতক্ষণ হাঁদা-বোকা সুবর্ণ। একই ঘরে দালানে পাঁচবার ঘুরপাক খেয়ে মরছে! চেলির কাপড় সামলাতে সামলাতে তিনতলায় ছুট দিল সুবর্ণ। কেউ তো নেই। এখানে, ছুটতে বাধা কি! একেবারে ছাত পর্যন্তই তো ছুট দেওয়া যায়।
না। ছাত পর্যন্ত ছুট দেওয়া গেল না, ছাতের সিঁড়ি বানানো হয় নি।…
কিন্তু বারান্দা?”
সুবর্ণলতার বারান্দার চাহিদা কি ক্যাবলামি নয়? বাড়ি থাকার জন্য, থাকতে পারছো এটাই কি বড় নয়? সেখানে ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আরাম করাটা বাবুয়ানি করে জুড়িগাড়ি করে হাওয়া খাওয়ার বাতুলতা ছাড়া আর কি?
সুবর্ণ পাথরের চোখে তাকায়।
“বারান্দা কই?
বারান্দা!”
প্রবোধ একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে বিস্ময়ের গলায় বলে ওঠে, সে কী! খুঁজে পাওনি? আরে তাই তো! ভূতে উড়িয়ে নিয়ে গেল নাকি?
সুবর্ণর চোখ ফেটে জল আসে, তবু সে-জলকে নামতে দেয় না সে, কঠোর গলায় বলে, মিথ্যে কথা বললে কেন আমার সঙ্গে?”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২০: জীবন্ত লাশ?
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৭: লতা-কিশোর-পঞ্চম-গুলজারের অনবদ্য সৃষ্টি ‘তেরে বিনা জিন্দেগি সে কই শিকওয়া নেহি’
তুর্দশী সুবর্ণলতা, কিশোর পঞ্চক বা বাঙালির বীরপুরুষরা যতোই অচলায়তনের কণ্ঠা ধরে টান দিক, যতোই ক্যাবলা-প্যালা-হাবলার দল উচ্চানুচ্চ স্বরে বলতে থাকুক “সব গুল!” তবুও দিনের শেষে তাদের ক্যাবলামিটাই মনে রাখা দস্তুর, তোমার দিনরাতের যতো ভুলচুক, যতো বিদ্রোহ, যতো প্রশ্নের শেষে উত্তর একটাই!
‘মৃত্যবে ত্বাং দদামীতি’, যমের বাড়ি যাও।
তুমি ক্যাবলা, তাছাড়া “জানার কোনও শেষ নাই /জানার চেষ্টা বৃথা তাই”
বীরপুরুষ যখন রক্ত মেখে ঘেমে এসে জানাচ্ছে লড়াই থেমে গেছে তখন চিরকালীন দাদারা কী বলছে?
“দাদা বলত, ‘কেমন করে হবে,
খোকার গায়ে এত কি জোর আছে।’’
পাড়ার লোক যাই বলুক, দাদা বলবেই, “তোমার খুকি কিচ্ছু বোঝে না মা, তোমার খুকি ভারি ছেলেমানুষ।”
জীবনের হাইওয়ে, এঁদো গলি, বাই লেন, হাই রোড, আপার সার্কুলার, লোয়ার সার্কুলার আর বাইপাশ পার হতে হতে যতো ইউটার্ন আর সিগন্যাল মেনে না মেনে, কিছু কার্লভার্ট, কিছু ফুটব্রিজের পরে যে অনির্ণেয় পথরেখা শেষমেষ এই বেশ বলে পথে নামায়, পথেই ভাসায় আর এনে ফেলে এমন এক মহাসমুদ্রের পাশে যেখানে এক ক্ষ্যাপা পরশপাথর খুঁজে ফেরে, অথবা এমন কোনও দিকশূন্যপুরে যেখানে তার সকল নিয়ে বসে আছে এক বিরহী উন্মাদ যক্ষ, কোন্ সর্বনাশের আশায়!
ক্যাবলা? বিদ্রোহী? রণক্লান্ত?
সেইদিনের মেদুর তপনহীনঘন বর্ষণের আচ্ছন্ন অকালে, আগতপ্রায় অমানিশার রাতে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পারবে তো আমাদের “দাদা”রা, নিমেষে তুড়ি মেরে বলতে পারবে তো “শাট্ আপ ক্যাবলা!”
‘মৃত্যবে ত্বাং দদামীতি’, যমের বাড়ি যাও।
তুমি ক্যাবলা, তাছাড়া “জানার কোনও শেষ নাই /জানার চেষ্টা বৃথা তাই”
বীরপুরুষ যখন রক্ত মেখে ঘেমে এসে জানাচ্ছে লড়াই থেমে গেছে তখন চিরকালীন দাদারা কী বলছে?
“দাদা বলত, ‘কেমন করে হবে,
খোকার গায়ে এত কি জোর আছে।’’
পাড়ার লোক যাই বলুক, দাদা বলবেই, “তোমার খুকি কিচ্ছু বোঝে না মা, তোমার খুকি ভারি ছেলেমানুষ।”
জীবনের হাইওয়ে, এঁদো গলি, বাই লেন, হাই রোড, আপার সার্কুলার, লোয়ার সার্কুলার আর বাইপাশ পার হতে হতে যতো ইউটার্ন আর সিগন্যাল মেনে না মেনে, কিছু কার্লভার্ট, কিছু ফুটব্রিজের পরে যে অনির্ণেয় পথরেখা শেষমেষ এই বেশ বলে পথে নামায়, পথেই ভাসায় আর এনে ফেলে এমন এক মহাসমুদ্রের পাশে যেখানে এক ক্ষ্যাপা পরশপাথর খুঁজে ফেরে, অথবা এমন কোনও দিকশূন্যপুরে যেখানে তার সকল নিয়ে বসে আছে এক বিরহী উন্মাদ যক্ষ, কোন্ সর্বনাশের আশায়!
ক্যাবলা? বিদ্রোহী? রণক্লান্ত?
সেইদিনের মেদুর তপনহীনঘন বর্ষণের আচ্ছন্ন অকালে, আগতপ্রায় অমানিশার রাতে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পারবে তো আমাদের “দাদা”রা, নিমেষে তুড়ি মেরে বলতে পারবে তো “শাট্ আপ ক্যাবলা!”
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২: চলমান সুন্দরবন
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৬: নারীবিদ্বেষ— অসুখ নাকি রাজনীতি
তাড়া খেতে খেতে রুকু হঠাত্ থমকে দাঁড়ায়। বড় হলঘরটা ছাড়িয়ে মাঠের ছাতিম গাছটার নীচে গিয়ে হঠাৎ পিছন ফেরে। যে ছেলে চারটে দৌড়ে আসছিল ধূমকেতুর গতিতে তারাও কেমন থমকায়। একজন খিলখিলিয়ে ওঠে, “কী রে গোবর গণেশ! তোর ব্যাগটা নিয়ে আজ ফিরতে পারবি তো? যদি তোর মাথাটা ঠুকে দিই গাছটায়, নালিশ করতে পারবি আর মহাদেব স্যারের কাছে?”
আরেকজন বলে, দে না দুটো কানের পাশে। উঁচু ক্লাসের দাদাদের নামে নালিশ…
মুখের কথা শেষ হয় না। রুকু হাতের মুঠো পাকিয়ে বলে, “এসো, এসো একবার, মেরে দেখো না আমায়, মারো… তারপর দেখবে কী হয়…”
ছেলেগুলো কেমন হকচকিয়ে যায়, এমনতরো প্রতিরোধ নতুন ঠেকছে কেমন!!
পটলডাঙার প্যালারাম থাকলে বলে উঠতো কি— “এর পরে আর কি বসে থাকা চলে? বসে থাকা চলে এক মুহূর্তও? আমি পটলডাঙার প্যালারাম তক্ষুনি লাফিয়ে উঠলুম। গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে বললুম: পটলডাঙা—
টেনিদা, হাবুল সেন আর ক্যাবলা সমস্বরে সাড়া দিলে : জিন্দাবাদ”
ঋণ স্বীকার
● শিরোনাম বাংলা ব্যান্ড ভূমি-র গান থেকে।
● কঠোপনিষদ
● কৃপণ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (খেয়া কাব্যগ্রন্থ)
● বীরপুরুষ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
● অচলায়তন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
● সুবর্ণলতা: আশাপূর্ণা দেবী
● টেনিদা: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
আরেকজন বলে, দে না দুটো কানের পাশে। উঁচু ক্লাসের দাদাদের নামে নালিশ…
মুখের কথা শেষ হয় না। রুকু হাতের মুঠো পাকিয়ে বলে, “এসো, এসো একবার, মেরে দেখো না আমায়, মারো… তারপর দেখবে কী হয়…”
ছেলেগুলো কেমন হকচকিয়ে যায়, এমনতরো প্রতিরোধ নতুন ঠেকছে কেমন!!
পটলডাঙার প্যালারাম থাকলে বলে উঠতো কি— “এর পরে আর কি বসে থাকা চলে? বসে থাকা চলে এক মুহূর্তও? আমি পটলডাঙার প্যালারাম তক্ষুনি লাফিয়ে উঠলুম। গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে বললুম: পটলডাঙা—
টেনিদা, হাবুল সেন আর ক্যাবলা সমস্বরে সাড়া দিলে : জিন্দাবাদ”
ঋণ স্বীকার
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।