শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যে বিজয় সেতুপতি ও ক্যাটরিনা কাইফ।

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: থ্রিলার
ভাষা: হিন্দি ও তামিল
প্রযোজনা: রমেশ তৌরানি, জয়া তৌরানি, স্নজ্য রাউতরায়, কেওল গর্গ
মূল কাহিনি: ফ্রেডেরিক দার্ডের উপন্যাস বার্ড ইন আ কেজ (Le Monte-charge)
কাহিনি চিত্রনাট্য সংলাপ: শ্রীরাম রাঘবন, অরিজিত বিশ্বাস, তমোজিৎ দাস,
পূজা লাধা সুর্তি, অনুকৃতি পাণ্ডে
নির্দেশনা: শ্রীরাম রাঘবন
অভিনয়: ক্যাটরিনা কাইফ, বিজয় সেতুপতি, সঞ্জয় কাপুর, টিনু আনন্দ, বিনয়
পাঠক, রাধিকা আপ্তে প্রমুখ
সময়সীমা: ১৪৪ মিনিট
দেখা যাবে: নেটফ্লিক্স


‘এক হাসিনা থি’ ছবির প্রায় দু’দশক পর জনতার মধ্যে মিশে থাকা সম্পূর্ণ অপরিচিত এক মহিলার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি তুলে ধরেছেন এই সময়ের চর্চিত চিত্র পরিচালক শ্রীরাম রাঘবন। সুন্দরী এই মহিলা একা নন। তিনি একটি বাচ্চা মেয়ে অ্যানির মা এবং তাঁকে দেখামাত্র দর্শকের মনে নানান প্রশ্নের শুরু। এ ছবি তখনকার, যখন মুম্বই ছিল বম্বে। ক্রিসমাসের আগের রাত আলোয় আলো রিগ্যাল সিনেমার চত্বর। সেখানে এক রেস্তরাঁ। কাকতালীয়ভাবে ছবির মূল পুরুষ ও স্ত্রী চরিত্রের দেখা হয়ে গেল সেখানে। ক্যাটরিনা কাইফ এবং দক্ষিণের অভিনেতা বিজয় সেতুপতি। একেবারেই না-ভাবা একটু জুটিকে বাজি ধরে নির্দেশক শ্রীরাম রাঘবন ‘মেরি ক্রিসমাস’ নামের এই থ্রিলার ছবিটি বানিয়েছেন। এই ছবিটি জনপ্রিয় ফরাসি লেখক ফ্রেডেরিক দার্ডের উপন্যাস ‘বার্ড ইন আ কেজ’ অবলম্বনে। মূলত একটি রাত ও পরের দিনের এক টানটান গল্প।
দীর্ঘদিন পরে বম্বে ফিরেছেন অ্যালবার্ট (বিজয় সেতুপতি)। এরমধ্যে তার মায়ের মৃত্যু ঘটে গিয়েছে। মায়ের স্মৃতি থেকে তৈরি হওয়া হতাশা কাটিয়ে উঠতে বিজয় নিজেকে ক্রিসমাসের উৎসবে ব্যস্ত রাখতে রাস্তায় বের হল। রেস্তরাঁয় নেহাতই ঘটনাপ্রবাহে মারিয়া (ক্যাটরিনা কাইফ) নামের এক সুন্দরী মহিলা ও তার বাচ্চা মেয়ে অ্যানির সঙ্গে দেখা। মা ও মেয়ের সঙ্গে রয়েছে একটা বেঢপ বড়সড় টেডি বেয়ার। উৎসবের এমন মুহূর্তে মহিলার স্বামী বা মেয়েটির বাবা কিন্তু সঙ্গে নেই।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: বড়পর্দায় সোনাক্ষী-হুমার জোড়া ধামাকা ‘ডবল এক্সএল’

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪১: সুন্দরবনে বাঘে-মানুষে সংঘাত

অ্যালবার্ট, ছবির দর্শকের মতোই মহিলার ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন উপলব্ধি করে। আবার কাকতালীয়ভাবেই মারিয়া, টেডি বেয়ার-সহ তার মেয়ে এবং আলবার্ট একই ছবি দেখতে সিনেমা হলে যায়। প্রায় কাছাকাছি সিটে বসে পড়ে আর ক্রমশ মারিয়ার রূপের আগুনে পতঙ্গের মতো অপ্রতিরোধ্যভাবে আকৃষ্ট হয় অ্যালবার্ট। তাই মারিয়া যখন তাকে এই উৎসবের রাতে নিজের বাড়িতে ডাকে তখন অ্যালবার্ট রাজি হয়ে যায়।

নাঃ! এরপর আর কোনও কাহিনি উল্লেখ নয়, বলে দিলে থ্রিল্রার ছবির সবটা মাটি।

চিত্রনির্মাতা রাঘবন তাঁর চলচ্চিত্রে স্বঘোষিত দীক্ষগুরু আলফ্রেড হিচককের মতোই দর্শককে সম্ভাবনার ধন্ধে ফেলে বিভ্রান্ত করতে পছন্দ করেন। ঠিক কোন ক্লু’টা পরিচালক আগেভাগেই দিয়েছিলেন কিন্তু দৃশ্যভাবনার অসাধারণ ম্যাজিকে দর্শক সেটা ধরতে পারেননি, সেটা খুঁজতেই চিত্রমোদীরা হিচককের ছবি বারবার দেখেন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৭: তিনটি মেয়ের তিনটি কলম!

১৯১৫ সনে গ্রিফিথের পৃথিবী বিখ্যাত ছবি বার্থ অফ আ নেশন থেকে ২০১০ সালে ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্সেপশন, প্যারালাল এডিটিং ছবিকে ছিপছিপে টানটান মেধহীন চেহারা দিয়েছে। গল্পবলার ন্যারেটিভের ধরণে নানান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এ ছবিটিতেও তার ব্যবহার সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিত। ২০১৪ নোলানের ইন্টারস্টেলার ছবিতে রয়েছে ইক্লিপ্টিক্যাল এডিটিং -এর অসাধারণ নিদর্শন। সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণে যেমন সূর্য বা চন্দ্রের কিছুটা অংশ দেখা যায় কিছুটা অংশ অন্ধকারে চলে যায়, ঠিক তেমনভাবেই একটি সম্পূর্ণ দৃশ্য থেকে কিছু নির্দিষ্ট অংশকে তুলে নেওয়া হয় এবং সেগুলিকে গল্পের প্রয়োজনে পরে ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৯: ইন্দুমতী ও সুরবালা

ঠাকুরবাড়িতে দোলে আসত নাচিয়ে, নাচের তালে তালে হত আবিরের আলপনা

এই সময়ের রহস্য রোমাঞ্চধর্মী ছবি বা সিরিজে এই ধরনের সম্পাদনা খুব ব্যবহার হয়ে থাকে। মেরি ক্রিসমাস ছবিতেও এই ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। চিত্রসম্পাদনা পূজা লাধা সূর্তি। আর বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, পূজা এই ছবির কাহিনিবিন্যাসেও যোগ দিয়েছেন। টোটাল ফুটবলে যেমন স্টপার গিয়েও গোল করে আসেন। খানিকটা তেমন ব্যাপার, টোটাল ফিল্ম।

ছবিতে গানের ব্যবহার খুব আকর্ষণীয়, তেমনি আকর্ষণীয় ছবির শিল্পনির্দেশনা এবং অবশ্যই শব্দ পরিকল্পনা বা সাউন্ড ডিজাইনিং। আকর্ষণীয় সংলাপ। ক্যাটরিনা এবং বিজয় সেতুপতি দু’জনেই অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করেছেন। সম্ভবত এই প্রথম ক্যাটরিনা কাইফ এমন একটি আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ কিন্তু অত্যন্ত জটিল একটি চরিত্রের আত্মাকে ধারণ করেছেন।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content