শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


সবিতা বসু।

নিরুপমা দেবীর কাহিনি অবলম্বনে শ্রীমতি পিকচারসের ব্যানারে কানন দেবী শুরু করেছিলেন ‘দেবত্র’ ছবির কাজ। সেই ছবির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা কাজের দায়িত্বে ছিলেন কানন দেবীর স্বামী হরিদাস ভট্টাচার্য। কানন দেবী ও হরিদাস ভট্টাচার্যের রিজেন্ট পার্কের বাড়িতে নতুন নতুন যেসব শিল্পীদের কানন দেবী এই ছবির জন্য নিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে কয়েকদিন ওয়ার্কশপ করেছিলেন। জুনিয়র শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী সবিতা বসু।
একদিন ওয়ার্কশপ চলছে হরিদাস ভট্টাচার্য দেখলেন যে, সেই ওয়ার্কশপের মধ্যে সবিতা বসু নেই। তখন তিনি কানন দেবীর এই ঘর, ওই ঘর, সব ঘর খুঁজে দেখলেন সেখানে কোথাও সবিতা বসুকে পেলেন না। অবশেষে তিনি চলে গেলেন তাঁদের বিরাট বাগানে। সেই বাগানে গিয়ে তিনি দেখলেন যে সবিতা বসু বাগানে ঘুরে ঘুরে গাছ, ফুল দেখে বেড়াচ্ছে। কাজে গাফিলতি দিয়ে এই কাজ করছে দেখে তিনি মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে গাছের একটা ডাল ঠাস করে ছুঁড়ে মারলেন সবিতা বসুর গায়ে।

দেবত্র ছবিতে হরিদাস ভট্টাচার্য ও কানন দেবী।

সবিতা প্রথমে বুঝতে পারেননি যে ডালটা এসে পড়ল কোথা থেকে। তারপরে খানিকক্ষণ বাদে তিনি দেখলেন যে অদূর দাঁড়িয়ে আছেন হরিদাস ভট্টাচার্য। তখন হরিদাস ভট্টাচার্য বকুনি দিয়ে বললেন, “তুমি কি এখানে ওয়ার্কশপ করতে এসেছ, নাকি বাগানে বাগানে গাছে গাছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য তুমি এখানে এসেছ? নিজের কাজ সম্পর্কে এতটুকু সতর্ক নও। কী রকম অভিনেত্রী তুমি?”
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৩: কাননদেবী এই প্রথম ক্যারেক্টার রোল করতে নামলেন ‘মেজদিদি’ ছবিতে

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পরব-৩৮: মাছের ডিম বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়! মাছের ডিমের এই অবাক করা গুণের কথা জানতেন?

এতসব বকুনি খেয়ে তটস্থ হয়ে গেলেন সবিতা বসু। আর কখনও তিনি ভুল করেননি। এরপরে তিনি নিয়মিত ওয়ার্কশপ করেছেন এবং মনোযোগ দিয়েই করেছেন। এই ঘটনাটি সবিতা বসু আমাকে জানিয়েছিলেন যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম কলকাতা দূরদর্শনের ক্লোজআপ অনুষ্ঠানে তখন। সেই সময় অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই ছবিটি।
আরও পড়ুন:

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-২: পর্তুগালের ‘কালো চিতা’

শিশুর প্রতিরোধশক্তি কী ভাবে বাড়বেন চিন্তা করছেন? তাহলে ছোট থেকেই এই কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিন

একমাত্র এই ছবিতেই কানন দেবীর সঙ্গে উত্তম কুমার অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অহীন্দ্র চৌধুরী, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, শিপ্রা মিত্র, অনুপ কুমার, গঙ্গাপদ বসু, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, নবদ্বীপ হালদার প্রমুখ শিল্পীরা।
সজনীকান্ত দাসের কথায় কালিপদ সেনের সুরে কানন দেবী এই ছবিতে শেষ গান গেয়েছিলেন। গানটি হল ”আনো মা আনন্দময়ী আনন্দেরই সুর।” ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালের ৮ এপ্রিল রূপবাণী, অরুনা, ভারতী প্রভৃতি প্রেক্ষাগৃহে। ছবিটির বাড়তি আকর্ষণ ছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্র পাঠ।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content