সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


 

মুক্তির তারিখ: ০৫/০২/১৯৫৪

 

প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা, পুরবী ও উজ্জ্বলা

 

উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম: চঞ্চল

উঠতি উত্তম কুমারের আরেকটি মজার ছবি।
ছবিটির বিশেষত্ব হল, সুচিত্রা সেন-কে তৈরির ব্যাপারে যিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুকুমার দাশগুপ্ত-র উত্তম কুমারকে নিয়ে দ্বিতীয় ছবি।
আগেই বলেছি, ১৯৫৪ সাল উত্তম কুমার-র ফিল্মি কেরিয়ারে এমন একটি বছর, যেসময়ে একটা গোটা বছরে একটানা ১১টা ছবি রিলিজ করেছিল। যার মধ্যে ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র মতো বিগ হিট ছিল। উপরন্তু ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-র পর সুচিত্রা সেন-কে নিয়ে একটা জুটি তৈরির চেষ্টায় এ ছবি থেকেই শুরু হয়। মোদ্দাকথা হল, সকালবেলায় সূর্য উঠল আর ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র কাজ শুরু হয়ে গেল বিষয়টা মোটেও তেমন ছিল না।
১৯৫৪ সালে সুচিত্রা-র সঙ্গে মোট ৬টা ছবি রিলিজ করেছিল যার মধ্যেে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ একটা। সৌভাগ্য বশত এ ছবির নির্মাণকৌশল, দর্শকের মনে দাগ কেটেছিল। অন্যেদিকে পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৫৪ সালে সুচিত্রার সঙ্গে তৈরি হওয়া ছয়টি ছবির মধ্যে ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র ক্রমিক সংখ্যায পাঁচ। ‘অগ্নিপরীক্ষা’-র আগে চার চারখানা ছবিতে মানুষ উত্তম-সুচিত্রা-র রসায়ন, প্রত্যযক্ষ করেছেন। অতএব আগামীর সুচিত্রা-উত্তম জুটির ভিত্তিপ্রস্তর মূলক ছবি ছিল ‘ওরা থাকে ওধারে’।
এগারো মাসের যাত্রাপথে এগারোটা ছবির মুক্তির ঘটনা… নিশ্চয়ই প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না সেসময়। প্রযোজক-পরিচালকদের লাইন পড়ে গিয়েছিল উত্তম কুমারের বাড়িতে। এ ব্যাপারে কয়েকটি প্রেক্ষিত নির্মাতাদের মনে কাজ করেছিল।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৪: আশা-নিরাশা ও ভরসার সে এক অন্য ‘মনের ময়ূর’

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৬: ভৃগুবংশে জন্ম নিলেন পরশুরাম— চরুবদলের ভুলে ক্ষত্রতেজ পেলেন তিনি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩১: মাতালের গানে মাতিয়ে দিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

প্রথমত: হাজার উত্থান-পতনের চোখরাঙানিতে উত্তম কুমার নামক লোকটা, মাঠ ছেড়ে চলে যাননি।

দ্বিতীয়ত: নরেশ মিত্র, সন্তোষ সিংহ প্রমুখ দিকপাল মানুষদের শংসাপত্র। মোটকথা একটা সময় এসেছিল যখন উত্তম কুমার নামক হিরোর ব্যচর্থতা, সকলের চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তৃতীয়ত: ছবিতে লাগাতার ব্যোর্থ উত্তম, মঞ্চে ‘শ্যামলী’ নাটকে সাবিত্রীর সাথে চুটিয়ে অভিনয় করছেন। যাঁরা এতদিন উত্তমের মধ্যেত নায়ক হওয়ার সম্ভাবনা খুঁজে পেতেন না তাঁরাই ‘শ্যামলী’তে উত্তমায়িত হচ্ছিলেন। পর্দাতে কেমন লাগে দেখার জন্যখ দলে দলে মানুষ হলমুখী হলেন। সেখানে পাল্লা দিয়ে সুচিত্রার ফটোজনিক অ্যাপিয়ারেন্স, দর্শকদের রতিমেদুর হতে বাধ্যে করছিল।
আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?

দশভুজা: শম্ভু, শম্ভু, শিব মহাদেব শম্ভু, খুদার ইবাদত যাঁর গলায় তাঁর আর কাকে ভয়?

উৎসব-মুখর মথুরা: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ব্রজভূমি দর্শন /২

এরকম একটা পরিবেশকে পাথেয় করে ‘ওরা থাকে ওধারে’ রিলিজ করল। রিলিজের সঙ্গে সঙ্গে হই হই না হলেও ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ল না। বক্স অফিসে ভালোই হিট দিল প্রযোজকের বিনিয়োগ, ঘরে ফিরল।

এবার আসি সামগ্রিক মূল্যায়নে। মাঝারি মানের হিট হলেও উত্তম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। হাতে মঞ্চ এবং ফিল্মের কাজ যা আছে মোটের ওপর সংসারটা চলে যাবে। সংসারে অভাব অনটনে ইতি হলে মনপ্রাণ দিয়ে অভিনয়ে নেমে পড়া যায়। হয়েও ছিল তাই।
দ্বিতীয়ত: আত্মবিশ্বাসে ভর দিয়ে উত্তমের মলিন মুখটা অনেকটাই মিলিয়ে গিয়েছে। তৃপ্তির এক চিলতে হাসি, ঠোঁটের গোড়ায় ঝুলে থাকত। নায়কোচিত চেহারার সঙ্গে আটপৌরে ঘনিষ্ঠতা উত্তমের চোখমুখ দিয়ে ঠিকরে বেরোত। মানুষের খুব পছন্দ ছিল এ দিকটা।

তৃতীয়ত: যে ভুবন ভোলানো হাসি, উত্তমের টিআরপি ছিল তারও সূচনা, এ ছবি থেকেই হয়েছিল।
চতুর্থত: কাহিনীকে মূলধন করে ছবির সহশিল্পী নির্বাচন। হরিধন, তুলসী, ভানু প্রভৃতির সঙ্গে ছবি বিশ্বাসের পাল্লা দিয়ে সেলুলয়েডি মস্তানি, দর্শকদের মজিয়ে রেখেছিল।

পঞ্চমত: একই মাসে আর যে কটি ছবি রিলিজ করেছিল, তার সবকটিই ভক্তিমূলক। ফলে দেশভাগের কাহিনি অবলম্বনে ঘটি-বাঙালের কাজিয়া নিয়ে ছবির বিষয় দর্শকদের নব আনন্দে জাগিয়েছিল বটে। নিটফল ছবি হিট। পয়সা ওশুল।—চলবে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

Skip to content