রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


পাঁচজনের মাঝে পঞ্চম হয়ে ওঠা।

 

II নাম্ফাকে বৌদ্ধ বিহার II

বসুন্ধরাকে চুপ করে থাকতে দেখে স্বর্ণময়ী বলে উঠলো,
অপছন্দ হলে বল। খুব কাছেই দোকান। মা-বাবা বসুক। তুমি চলো গিয়ে পাল্টে নিয়ে আসি।

– আমি যাকে পছন্দ করেছি — তার বেছে আনা শাড়ি কি আমার অপছন্দ হতে পারে। খুব পছন্দ হয়েছে।

– ঠিক বলছ?

– হ্যাঁ ঠিক। কিন্তু এতগুলো শাড়ি আনার কি দরকার ছিল স্বর্ণ।

– দেখো তুমি এই মানুষটা ঠিকই। কিন্তু চা-বাগানের সাহেবের সঙ্গে তাঁর মা যাচ্ছেন। তিনি কি এইভাবে একটা শাড়ি নিয়ে যাবেন? তা হয় না। আচ্ছা হাতে একটু সময় আছে — সিঙাড়াটা ভাজিয়ে আনতে তো সময় লাগবে। তুমি আমার সঙ্গে চট করে রান্না ঘরে এস তো।

– আরে বাবা চা আমি করছি তুই এখানে বোস।

– চা করতে যাব না — আমার অন্য কাজ আছে।

এই বলে বসুন্ধরাকে ঘর থেকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেল স্বর্ণময়ী। সঙ্গে নিল একখানা নতুন শাড়ি।
বিনয় এসে কয়েক মুহূর্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। বসুন্ধরাও লজ্জা পেয়ে গিয়েছে। একটু যেন জড়োসড়ো সে। কুঁচি দিয়ে কাঁধে আঁচল ভাঁজে ভাঁজে ফেলে এ ভাবে শাড়ি পরতে বিনয় মাকে কখনো দেখেনি। কয়েক মুহূর্ত অবাক চোখে তাকিয়ে বিনয় বলল,

– এসব কি মা? শাড়িটাও তো নতুন!
আনন্দমোহন আর কণিকা একটু অস্বস্তিতে। দুজনে দুজনের দিকে তাকায় — স্বর্ণময়ী সপ্রতিভ উত্তর দেয়।

– হ্যাঁ আমি এনেছি। কেন এনেছি? এ বিষয়ে আপনার কোনও বক্তব্য থাকলে আপনি আমাকে আলাদা করে বলবেন আমি শুনবো। তবে সেটা সিঙ্গাড়া খাবার পর।
বিনয় আর আপত্তি করতে পারেনি — স্বর্ণ যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছে — বিনয় যদি কাজের প্রয়োজনে সাবেকি ধুতি-শার্ট ছেড়ে — প্যান্ট-শার্ট পরতে পারে — তাহলে বিনয়কান্তি দত্ত-র প্রয়োজনেই তার মায়ের এতোকাল পরা শাড়ি এবং শাড়ি পরার ধরনে বদল আসতে হবে।
সেদিন স্বর্ণর বাবা-মা আর বিনয় যখন বসার ঘরে চা খেতে খেতে তাদের আসাম যাওয়ার বিষয়ে কথা বলছে — সেই সময়ে স্বর্ণময়ী — বসুন্ধরাকে দিয়ে তার চার-চারটে শাড়ি বারবার খুলিয়ে- পরিয়ে অভ্যস্ত করে দিল।

শাড়ি ছাড়াও সেদিন স্বর্ণময়ী আরও একটা জিনিস এনেছিল। গোটা গোটা অক্ষরে নিজের ঠিকানা লেখা – বেশ কয়েকটা পোস্টাল খাম সে বসুন্ধরাকে দিয়ে বলেছিল – চা-বাগানে শুনেছি চলতে- ফিরতেও কাজের লোক সাহায্য করে। তোমার ছেলে তো কাজপাগল লোক। দিনরাত কাজ নিয়ে থাকবে। তোমার সময় কাটবে না। তুমি আমায় নিয়মিত চিঠি দেবে। আমি তোমায় উত্তর পাঠাবো।

স্বর্ণর অনুমান সঠিক। চা-বাগানে পৌঁছবার পর থেকেই বিনয়কান্তি ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সকালবেলায় সামান্য কিছু খেয়ে দেয়ে বাগানের জিপে অফিসে চলে যায় — আবার দুপুর একটা দেড়টায় ফেরে। দুপুরের খাবার খেয়ে খানিক পরে আবার অফিস। ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ন’টা দশটা। খাওয়া-দাওয়ার পর নিজের ঘরে বইপত্তর নিয়ে বসে — অনেক রাত অব্দি পড়াশোনা করে। কি সব লেখালেখি করে। পিটারসন কোম্পানির চা গুদামে যখন বিনয় কাজ শুরু করলো — অফিস থেকে ফিরে — গুহ বাবুদের ব্যবসার হিসেব লেখার কাজ শেষ করে — সবিস্তারে মাকে তার গল্প করত। তেলিপাড়া লেনের বাড়িতে রাতে খাবার পর অফিসের কথা বলতো। কিন্তু যখন তিন-চারদিন রাতে বাড়ি ফিরল না – তারপর থেকেই অফিসের কথা সে ভাবে বলে না। বসুন্ধরা ভাবত একই রকমের কাজ — তাই একই কথা হয়তো আর বলে না। কাশী থেকে ফিরে বিনয় যেন আরো চুপচাপ হয়ে গেল। আগে নিয়ম করে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরতো — তখন প্রায়ই দেরি হতে লাগলো। রবিবার বাড়িতে থাকলেও — শনিবার অফিস থেকে ফেরার সময় মোটা বইপত্তর ফাইল নিয়ে আসতো। গোটা রোববার ফাইলে মুখ গুঁজে বা বইয়ের পাতা থেকে পড়াশোনা লেখালেখি করে কেটে যেত। চা বাগানে আসার পর দায়িত্ব যে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে সেটা তাকে দেখলেই বোঝা যায়। এ তো সেই ম্যাট্রিক ক্লাসের বিনু নয় যে মা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে স্কুলের পড়ার কথা জিজ্ঞেস করবে।

প্রথম যেদিন ওরা বাগানে এল — পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল — খাওয়া-দাওয়া করে ওরা দু’জনেই শুয়ে পড়েছিল — এতটা রাস্তার ধকল খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল — পরদিন বিনয়ের বের হতে হতে একটু বেলাই হল — একেবারে দুপুরের খাওয়া সেরে কাগজপত্র গুছিয়ে বের হতে যাবে — বয়স্ক চক্রধ্বজ একটা কাপড় নিয়ে বিনয়ের পায়ের বুটজুতোটা মুছে দিতে এল। বিনয় চমকে উঠে পা সরিয়ে নিতে — লোকটা ভয় পেয়ে ভাবল কোন ভুল করেছে। কাঁপা গলায় বিনয়ের পায়ের কাছে বসে মাথা নামিয়ে জিজ্ঞেস করল

– ম্যায়নে কোই গলতি কী সাহাব?

বিনয় দু’হাত দিয়ে বয়স্ক চক্রধ্বজের দু’কাঁধ ধরে তাকে নিচের থেকে দাঁড় করিয়ে বলল,
– নেহি! বসেক বড়ি গলতি সে বচ গয়া।

ওখানে আদিবাসীরা হিন্দিটা ভালই বলতো — বাগানের কুলিরা অনেকেই বিহার — উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা মানুষ। বাগানে গিয়ে কাজ করতে হবে জেনেই বিনয়কান্তি নিয়ম করে চা-গুদামে তাঁর পুরোনো সহকর্মী দুই বিহারি দারোয়ানের কাছে হিন্দি বলাটা সড়গড় করে নিয়েছিল। মাত্র মাসখানেক সময় পেয়েছিল — ক্লাইভ রো অফিসে কাজ মিটিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে সে যেত স্ট্র্যান্ড রোডের টি-ওয়্যার হাউসে। দারোয়ান দু’জনের শিফট ডিউটি একজনকে না একজনকে পেয়ে যেতই। তারাও ‘বিনায়বাবু’-কে সাহায্য করতে পেরে দারুণ খুশি। আর তাই রোজ বাড়ি ফিরতে দেরি হ’ত বিনয়ের — বসুন্ধরা সেসব পরে জানতে পেরেছিল। তারাপদবাবু দিনের শেষে বাড়ি ফেরার সময় রোজ বিনয়কে আসতে দেখে বলতেন ‘বিনয় তোমায় হারানো বড় শক্ত — এটাই বোধহয় প্রতিভা’। ম্যাট্রিক পাশ ছেলে ভাষাটা জানত কিন্তু সাহেবদের সঙ্গে সমানে সমানে তরতর করে ইংরিজি বলার জন্যে বিনয়ের কঠিন প্রস্তুতির কথা তো কেবল বসুন্ধরা জানত। বিনয়কান্তি মনেপ্রাণে আজীবন বিশ্বাস করতেন — শুধু প্রতিভা থাকলেই হয় না – কঠিন অধ্যবসায়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে গড়ে নিতেও জানতে হয়। ভাগ্য সুযোগ দেয় কিন্তু দেরি না-করে সঠিক সময়ে উপযুক্ত সু্যোগটা বেছে নিতে হয়।

অবাক চক্রধ্বজের দু’কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে বিনয়কান্তি সেদিন একবার মা’র দিকে তাকিয়ে ছিল — তারপর ফাইলপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে গেল। বিনুকে সেদিন দেখে গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল বসুন্ধরার। পরে চারু, থুয়ারা বসুন্ধরাকে বলেছিল চা-বাগানে অনেক দেশি-বিদেশি সাহেবসুবো আসেন। কিন্তু এমন দেবতার মতো মানুষ তারা কখনো দেখেনি — উন্নতির শিখরে উঠেও বিনয়কান্তি দত্ত জীবনে কোনওদিন কোন মানুষকে, তার মনুষ্যত্বকে অপমান করেননি। কাউকে ছোট করেন নি কখনও। অনেকদিন বাদে তার পুত্রবধু স্বর্ণময়ী তাকে বলেছিল — বিনুর অফিসে কেউ কাউকে স্যার বলে না — বিনয় বিশ্বাস করে না পদমর্যাদার গুণে কেউ কারও প্রভু হতে পারে। তাই বিনয় কান্তি দত্ত — অফিসের সকলের কাছে — বিকেডি। পারিবারিক ব্যবসা তাই ছেলে ভাইপো ভাই সবাই সবাইকে নামের আদ্যক্ষর ধরে ডাকতো । শুধু একজন ছিলেন ব্যতিক্রম — তারক নিয়োগী। তাকে বিনয়কান্তি থেকে অফিসের কর্তাব্যক্তি কর্মচারী সকলেই ‘বাবু’ বলে ডাকত — আর বিনয়কান্তি এবং স্বর্ণময়ী ছাড়া আরও একজনের বসুন্ধরাকে — মা বলে ডাকার অধিকার ছিল — তিনি এই তারক নিয়োগী। স্বর্ণময়ীরা তিন বোন — কোন ভাই ছিল না। ভাইফোঁটার দিন তারক নিয়োগী আসতেন বসুন্ধরা ভিলায় স্বর্ণময়ীর কাছে ফোঁটা নিতে। একটা চূড়ান্ত কর্পোরেট স্ট্রাকচার-এর সঙ্গে — পারিবারিক ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে — পাশাপাশি এনে ট্রেড আর ট্র্যাডিশনকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বিনয়কান্তি।
বসুন্ধরা চা-বাগানের প্রতিদিনের খুঁটিনাটি — এই সব গল্প বাংলোর সবার গল্প সবিস্তারে স্বর্ণকে জানিয়ে একটার পর একটা চিঠি লিখতো। পুহর গিয়ে পোষ্ট অফিসে চিঠি ফেলে আসত — পোস্টাল খাম কিনে আনত — পুহর অফিসে গেলে অফিসের ঠিকানায় আসা বসুন্ধরাকে লেখা স্বর্ণ-র চিঠি নিয়ে আসত।

কোনও কাজ নেই একা একা থাকা এটুকু ছাড়া বসুন্ধরা জীবনে কখনও এত আরামে থাকেনি । স্বর্ণ খুব সুন্দর চিঠি লেখে। চিঠি পড়তে পড়তে মনে হয় সামনে বসে গল্প করছে। বিনু এই চা-বাগানে ঠিক কী কাজে এসেছে — তা নিয়ে ছেলের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি বসুন্ধরার। হঠাৎ একদিন থুয়া’র কাছে শুনল সাহেব নাকি সেদিন — বাগানের কুলিবস্তিতে গিয়েছিল। বিনয়কে এতদিন ধরে দেখছে বসুন্ধরা — কোন কিছুতেই ঘাবড়ে যাওয়ার ছেলে সে নয়। ছেলের মুখের দিকে তাকালেই তার মনের কথা পড়তে পারে বসুন্ধরা। বিনয় যেন কোনও একটা কিছু নিয়ে ভেতরে ভেতরে অনবরত যুদ্ধ করছে। অফিস ছাড়া বাড়িতে যতক্ষণ থাকে — ততক্ষণ মোটা মোটা বই পড়ে খাতায় নোট করে কিংবা পুরনো ফাইল এর পাতা ওল্টায়। একদিন বসুন্ধরা জিজ্ঞেস করেই ফেলল,

– তোর কি হয়েছে বলতো বিনু? কাজের কোনও সমস্যা?

বিনয় চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে বড় কাঁচের জানলা দিয়ে — অন্ধকার পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
– না ঠিক সমস্যা নয়।

– তোর অফিসের কাজের ব্যাপারে আমি সেসব বুঝিও না — আর সে নিয়ে আমি কিছু বলতেও পারব না।

জানলা থেকে মুখ ফিরিয়ে বিনয় সেদিন বসুন্ধরার মুখের দিকে চুপ করে তাকিয়ে ছিল। বসুন্ধরা দাঁড়ায়নি। তবে এটা বুঝেছিল বিনু কিছু বলতে চায় কিন্তু কীভাবে কথাটা শুরু করবে বলবে সেটা বুঝতে পারছে না।

শনিবার রাত্তিরে হঠাৎ বিনু জানাল—
– মা কাল রোববার তোমায় নিয়ে বেড়াতে যাবো। এখানে এসে থেকে ঘরের মধ্যে বসে আছো — কোথাও নিয়ে যাবার সময় পাইনি। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো।

– আমরা যাচ্ছি কোথায়?

– নাম্ফাকে বৌদ্ধ বিহার – বুড়ি-ডিহিং নদীর ধারে।
ঘন সবুজ জঙ্গল ছুঁয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় অফিসের জিপ চলেছে। পাকা হাতে জঙ্গলে জিপ চালিয়ে চলেছে — যে বিনয়কে রোজ অফিসে নিয়ে যায় — সেই ‘দেনপো’ — তাকে আর জিগেস করেনি বসুন্ধরা তবে পরে তার লোকাল গাইড চারুমতীর কাছ থেকে জেনে নিয়েছে — এখানকার ভাষায় ‘দেনপো’ মানে — সত্য। — চলবে

ভক্তি-শ্রদ্ধা-জ্ঞানের আলো।

ছবি সৌজন্য: সত্রাগ্নি
পরের পর্ব আগামী রবিবার

সন্ন্যাসী – ফিরে এলেন। তাঁর হাতে একটা পাথরের ধর্মচক্র। আর একটা স্বর্ণচাঁপা ফুলের পাপড়ি। অবাক বিনয়কান্তির হাতে সেগুলো দিয়ে অসমীয়া ভাষায় বললেন
ইমান চিন্তা ন কৰিব – ভগৱান ভাল কৰিব। ( এতো চিন্তা কোর না – ভগবান ভালোই করবেন)
এই বলে তিনি চোখ বুজে বিড়বিড় করে কিছু মন্ত্রোচ্চারণ করে আবার মন্দিরের গর্ভগৃহের দিকে চলে গেলেন।

* বসুন্ধরা এবং (Basundhara Ebong-Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content