মনে পড়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে প্রবেশ পর্বের কথা। বিভাগে অনেক অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, সকলেই খুব ভালো। সুন্দর পরিবেশ, সঙ্গে শেখার আনন্দ। এগিয়ে চলল দিন। তারপর এল দ্বিতীয় ষাণ্মাসিকের প্রথম ক্লাসের সেই দিনটি—২ জানুয়ারি। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করলেন এক অধ্যাপিকা, আগে তাঁর ক্লাস পাইনি, আমার কাছে একদম নতুন। ব্যক্তিত্বপূর্ণ, গম্ভীর অথচ সাবলীল ভঙ্গিতে সুন্দর পড়ানোর সঙ্গে মিশে থাকা মিষ্টি হাসি। সেইদিনই সম্ভবত আমার কাঁচা মনে একটি দাগ কাটলেন তিনি। যত দিন যায় সেই দাগ একটু একটু করে গাঢ় হতে থাকে। আস্তে আস্তে আমারও সেই কম কথা বলা, ব্যক্তিত্বপূর্ণ অধ্যাপিকার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোলাগার সূত্রপাত। বাইরে থেকে হঠাৎ দেখে একটু রাগী আর কঠিন লাগলেও, আসলে তিনি যে খুব স্নেহশীলা তার আঁচ পাওয়া গেল। যেমন সুন্দর দরদি মন তেমন মিষ্টি হাসি আর ছাত্রী হিসেবে যা আমার সবচেয়ে ভালো লাগার তা হল তাঁর অসাধারণ পড়ানো। কত কঠিন বিষয়ও সহজভাবে বোঝানোর অনায়াস দক্ষতা।
হ্যাঁ, আরও যে গুণাবলিগুলো আমাকে আকৃষ্ট করল তা হল ওনার নিয়মানুবর্তিতা, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ, একাগ্রতা, নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা। আমাকে বেশ স্নেহের চোখেই দেখতেন। এর পর ইউ.জির গণ্ডি পেরিয়ে এম.এ, এম.ফিল—তাও পেরিয়ে পিএইচ.ডি-র আঙিনায় পৌঁছালাম। সময়ের অবিরাম ধারায় নিজের অজান্তেই কখন সেই প্রথম দিনকার ভালোলাগা গভীর ভালোবাসায় রূপান্তরিত হল। এ ভালোবাসা ঠিক যেন মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার মতোই। তাঁরও আমার প্রতি স্নেহ আমার ভালোবাসাকে আরও গভীর করে তুলল। কখন যেন খুব আপন হয়ে উঠলেন। ঠিক মায়ের মতোই। বাস্তব যেন বলল: ‘তুমি তো তাঁর সন্তান নও, নেই কোনও রক্তের সম্পর্ক৷’—কিন্তু অবুঝ মন তখন এসব বাস্তবের অনেক ঊর্ধ্বে উঠে গেছে।
এসবে কর্ণপাত করতেও সে চায় না। আসলে রুক্ষ বাস্তব অপেক্ষা স্নেহ-ভালোবাসার আবেদনই তার কাছে বড়। শুধু স্নেহ-ই দিয়েছেন তাই নয়, প্রয়োজনে শাসনও করেছেন। কখনও তাঁর হঠাৎ রাগ প্রকাশে কষ্ট পেলেও, ভুল বুঝে সরে আসিনি। আসলে আমি তো তাঁকে বুঝি, জানি। মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের দ্বন্দ্বে হৃদয়ই চিরকাল জিতেছে। এমন কোনও ব্যস্ততার দিনও যায়নি, যেদিন আমি ওনার কথা ভাবিনি। মা-এর মতোই তাঁর জন্যও চিন্তা হয়েছে, হয়ও। প্রসঙ্গত জানাই, আমি তাঁর পিএইচডি স্কলার না হয়েও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা অটুট থেকেছে, মনের টানে ছেদ পড়েনি।
অত্যন্ত দক্ষ একজন অধ্যাপিকা হওয়ার পাশাপাশি উনি খুব ভালো একজন মানুষ। পারিবারিক পরিসরেও উনি অনন্যা। নিজের সন্তানের প্রতি তাঁর চিরন্তন ভালোবাসা একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায়। সঙ্গে সমানভাবে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি গভীর বাৎসল্যবোধ। ওনার বাড়িতে গেছি, কত যত্নে রান্না করে খাইয়েছেন—সে ভারী সুন্দর রান্নার স্বাদ। শুধু আমি নই, যে কোনও ছাত্র-ছাত্রীই তাঁর সস্নেহ আতিথেয়তা পেয়েছে। তাঁর সান্নিধ্যে এসে বুঝেছি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক শুধুই বাহ্যিক পাঠ্য বইয়ের জ্ঞান আদান প্রদানে সীমাবদ্ধ নয়—এখানে আছে এক প্রাণের খেলা, এক আত্মিক সম্পর্ক। ছাত্রীর প্রতি তাঁর যেমন স্নেহ-প্রীতি-বাৎসল্য তেমন গুরুর প্রতিও রয়েছে শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধা, ভক্তি ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আজ আমিও এক অধ্যাপিকা, তাঁর কাছে ভালো যা কিছু শিখেছি তা-ই আমার শিক্ষকতার জীবনে সুষ্ঠ প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। বিশ্বাস রাখি গুরু-শিষ্য পরম্পরাতে।
আমার জন্মদাত্রী মা আর প্রিয় অধ্যাপিকা—দুজনেই আমার প্রণম্য, আমার কাছে ঈশ্বরের অমূল্য উপহার। আসলে, প্রথম দিনের সেই মানুষটি আজ আর কেবল আমার অধ্যাপিকা নন, সেই সীমানা ছাড়িয়ে মা-এর মতোই শাসন, বকুনি, দুশ্চিন্তা, ভালোবাসা, স্নেহ, বাৎসল্যে আজ প্রকৃতই তিনি হয়ে উঠেছেন দ্বিতীয় মা। শুধু আমার কাছে নন, হয়তো বা সকল ছাত্রছাত্রীর কাছেই তিনি আর এক মা। জন্ম না দিয়েও ‘মা’ হয়ে ওঠা যায়। তাই বুঝি ‘মা’ শব্দের ব্যঞ্জনায় বিশ্বমায়ের এক উপলব্ধি ধরা পড়ে। জীবনের সব অনুভূতিগুলো যে ধ্বনিতে এসে থমকে যায়—ছোট্ট সেই শব্দ ‘মা’। পৃথিবীর সব মা-ই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন৷
শুভ মাতৃদিবস।
হ্যাঁ, আরও যে গুণাবলিগুলো আমাকে আকৃষ্ট করল তা হল ওনার নিয়মানুবর্তিতা, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ, একাগ্রতা, নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা। আমাকে বেশ স্নেহের চোখেই দেখতেন। এর পর ইউ.জির গণ্ডি পেরিয়ে এম.এ, এম.ফিল—তাও পেরিয়ে পিএইচ.ডি-র আঙিনায় পৌঁছালাম। সময়ের অবিরাম ধারায় নিজের অজান্তেই কখন সেই প্রথম দিনকার ভালোলাগা গভীর ভালোবাসায় রূপান্তরিত হল। এ ভালোবাসা ঠিক যেন মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার মতোই। তাঁরও আমার প্রতি স্নেহ আমার ভালোবাসাকে আরও গভীর করে তুলল। কখন যেন খুব আপন হয়ে উঠলেন। ঠিক মায়ের মতোই। বাস্তব যেন বলল: ‘তুমি তো তাঁর সন্তান নও, নেই কোনও রক্তের সম্পর্ক৷’—কিন্তু অবুঝ মন তখন এসব বাস্তবের অনেক ঊর্ধ্বে উঠে গেছে।
এসবে কর্ণপাত করতেও সে চায় না। আসলে রুক্ষ বাস্তব অপেক্ষা স্নেহ-ভালোবাসার আবেদনই তার কাছে বড়। শুধু স্নেহ-ই দিয়েছেন তাই নয়, প্রয়োজনে শাসনও করেছেন। কখনও তাঁর হঠাৎ রাগ প্রকাশে কষ্ট পেলেও, ভুল বুঝে সরে আসিনি। আসলে আমি তো তাঁকে বুঝি, জানি। মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের দ্বন্দ্বে হৃদয়ই চিরকাল জিতেছে। এমন কোনও ব্যস্ততার দিনও যায়নি, যেদিন আমি ওনার কথা ভাবিনি। মা-এর মতোই তাঁর জন্যও চিন্তা হয়েছে, হয়ও। প্রসঙ্গত জানাই, আমি তাঁর পিএইচডি স্কলার না হয়েও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা অটুট থেকেছে, মনের টানে ছেদ পড়েনি।
অত্যন্ত দক্ষ একজন অধ্যাপিকা হওয়ার পাশাপাশি উনি খুব ভালো একজন মানুষ। পারিবারিক পরিসরেও উনি অনন্যা। নিজের সন্তানের প্রতি তাঁর চিরন্তন ভালোবাসা একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায়। সঙ্গে সমানভাবে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি গভীর বাৎসল্যবোধ। ওনার বাড়িতে গেছি, কত যত্নে রান্না করে খাইয়েছেন—সে ভারী সুন্দর রান্নার স্বাদ। শুধু আমি নই, যে কোনও ছাত্র-ছাত্রীই তাঁর সস্নেহ আতিথেয়তা পেয়েছে। তাঁর সান্নিধ্যে এসে বুঝেছি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক শুধুই বাহ্যিক পাঠ্য বইয়ের জ্ঞান আদান প্রদানে সীমাবদ্ধ নয়—এখানে আছে এক প্রাণের খেলা, এক আত্মিক সম্পর্ক। ছাত্রীর প্রতি তাঁর যেমন স্নেহ-প্রীতি-বাৎসল্য তেমন গুরুর প্রতিও রয়েছে শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধা, ভক্তি ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আজ আমিও এক অধ্যাপিকা, তাঁর কাছে ভালো যা কিছু শিখেছি তা-ই আমার শিক্ষকতার জীবনে সুষ্ঠ প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। বিশ্বাস রাখি গুরু-শিষ্য পরম্পরাতে।
আমার জন্মদাত্রী মা আর প্রিয় অধ্যাপিকা—দুজনেই আমার প্রণম্য, আমার কাছে ঈশ্বরের অমূল্য উপহার। আসলে, প্রথম দিনের সেই মানুষটি আজ আর কেবল আমার অধ্যাপিকা নন, সেই সীমানা ছাড়িয়ে মা-এর মতোই শাসন, বকুনি, দুশ্চিন্তা, ভালোবাসা, স্নেহ, বাৎসল্যে আজ প্রকৃতই তিনি হয়ে উঠেছেন দ্বিতীয় মা। শুধু আমার কাছে নন, হয়তো বা সকল ছাত্রছাত্রীর কাছেই তিনি আর এক মা। জন্ম না দিয়েও ‘মা’ হয়ে ওঠা যায়। তাই বুঝি ‘মা’ শব্দের ব্যঞ্জনায় বিশ্বমায়ের এক উপলব্ধি ধরা পড়ে। জীবনের সব অনুভূতিগুলো যে ধ্বনিতে এসে থমকে যায়—ছোট্ট সেই শব্দ ‘মা’। পৃথিবীর সব মা-ই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন৷
শুভ মাতৃদিবস।