অলঙ্করণ : শিঞ্জনা দে, কেজি বিভাগ, অ্যাবট শিশু হল
সকাল সকাল মায়ের ডাকে টুপুরের ঘুম ভেঙে গেল, কিন্তু মায়ের স্কুল পাঠানোর তো কোনও তাড়াই নেই। বাড়ির বড়রা এত সকাল সকাল টিভি নিয়েই ব্যস্ত। অগত্যা টুপুর নিজেই স্কুলের জামাটা যেই পরতে যাবে অমনি মা চেঁচিয়ে বলে, ‘টুপুর আজ থেকে স্কুলে যাবে না৷’
থতমত টুপুর বলল, ‘কেন মা? আমি তো তোমার সব কথা শুনেছি… বন্ধুদের সাথে দেখা হবে কীভাবে?’
‘আরে বাবা, শুনছিস না স্কুল তো বন্ধ, কোনও বন্ধুই স্কুলে যাবে না৷’
‘আমি পার্কেও যাব না?’
‘না মা, কোথাও যাবে না, একটা অচেনা দৈত্য আমাদেরকে আক্রমণ করেছে, তাই এখন আমাদের বাড়িতেই থাকতে হবে৷’
মন খারাপ করে টুপুর ছাদে চলে গেল। ভেবেছিল সামনেই সামার ক্যাম্পে কত মজা করবে, ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় নাটকে নাম দিয়েছিল। মণি মিসের পরিচালনায় কত্ত মজা করবে ভেবেছিল। এখন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। মুড়ি মাখার বাটিটা হাতে নিয়ে নাড়তে নাড়তে ছাদে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। একটু বাদে দেখে দু তিনটে পায়রা এসে মুড়িগুলো খাচ্ছে। হঠাৎ কী মনে করে টুপুর দৌড়ে নীচে নেমে দুটো বাটি নিয়ে আবার ছাদে এল। মাকে লুকিয়ে চাল, গম, মিশিয়ে একটা বাটিতে ভরে ছাদের ছাওয়া ঘেরা জায়গায় রেখে দিল…আর একটা বাটিতে জল। কয়েকটা গমের দানা নিয়ে একটা তুলোয় মুড়ে ভিজিয়ে রাখল। সায়েন্স ক্লাসে রীতা মিস এটাই সেদিন শিখিয়েছিল। ভালোই হবে সেই পরীক্ষাটা একবার নিজে নিজেই করে নেওয়া যাবে।
পরদিন ভোরবেলায় পাখিদের কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙতেই টুপুর দৌড়ে ছাদে উঠে দেখে পায়রা চড়ুই শালিখ আরও কত রঙের পাখি ভিড় করে ওই বাটি থেকে দানা খাচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই পাখিগুলো ওর এত ন্যাওটা হয়ে গেল যে হাত থেকেই দানা খেতে শুরু করে দিল। এর মধ্যেই তুলোয় মুড়ে রাখা গমের দানা থেকে ছোট্ট ছোট্ট চারা বেরিয়েছে দেখে টুপুরের সে কী আনন্দ। চুপি চুপি বাবাকে ছাদে নিয়ে গিয়ে চারাগুলোকে দেখাল। ওর বাবাই গমের চারাগুলোর সাথে কতকগুলো ফুলের চারাও টবে বসিয়ে দিল। রোজ সকালে টুপুর পাখিদের জল, দানা দেবার সময় টবের গাছগুলোতেও জল দেয়। গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে হাওয়ার সাথে দোলে, রঙিন ফুল ফোটে, গন্ধ ছড়ায়, ছোট ছোট পাখিরা সরু সরু ডালে বসে। এখন লেখাপড়া করতে ভালো না লাগলেই টুপুর হাতে কিছু দানা নিয়ে ছাদে উঠে আসে, আর সাথে সাথে বন্ধু পাখিগুলো ডানা ছড়িয়ে উড়ে আসে, ওকে ঘিরে ধরে। গাছের হাওয়া, ফুলের গন্ধ, পাখির ডাকে মন খারাপ নিমেষে কেটে গিয়ে টুপুরের নিজেকে মুক্ত মনে হয়।
* গল্প (Short Story) – বন্দিমুক্তি (Bandi Mukti) : মনশ্রী দে (Monosree De), লেখিকা
থতমত টুপুর বলল, ‘কেন মা? আমি তো তোমার সব কথা শুনেছি… বন্ধুদের সাথে দেখা হবে কীভাবে?’
‘আরে বাবা, শুনছিস না স্কুল তো বন্ধ, কোনও বন্ধুই স্কুলে যাবে না৷’
‘আমি পার্কেও যাব না?’
‘না মা, কোথাও যাবে না, একটা অচেনা দৈত্য আমাদেরকে আক্রমণ করেছে, তাই এখন আমাদের বাড়িতেই থাকতে হবে৷’
মন খারাপ করে টুপুর ছাদে চলে গেল। ভেবেছিল সামনেই সামার ক্যাম্পে কত মজা করবে, ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় নাটকে নাম দিয়েছিল। মণি মিসের পরিচালনায় কত্ত মজা করবে ভেবেছিল। এখন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। মুড়ি মাখার বাটিটা হাতে নিয়ে নাড়তে নাড়তে ছাদে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। একটু বাদে দেখে দু তিনটে পায়রা এসে মুড়িগুলো খাচ্ছে। হঠাৎ কী মনে করে টুপুর দৌড়ে নীচে নেমে দুটো বাটি নিয়ে আবার ছাদে এল। মাকে লুকিয়ে চাল, গম, মিশিয়ে একটা বাটিতে ভরে ছাদের ছাওয়া ঘেরা জায়গায় রেখে দিল…আর একটা বাটিতে জল। কয়েকটা গমের দানা নিয়ে একটা তুলোয় মুড়ে ভিজিয়ে রাখল। সায়েন্স ক্লাসে রীতা মিস এটাই সেদিন শিখিয়েছিল। ভালোই হবে সেই পরীক্ষাটা একবার নিজে নিজেই করে নেওয়া যাবে।
পরদিন ভোরবেলায় পাখিদের কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙতেই টুপুর দৌড়ে ছাদে উঠে দেখে পায়রা চড়ুই শালিখ আরও কত রঙের পাখি ভিড় করে ওই বাটি থেকে দানা খাচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই পাখিগুলো ওর এত ন্যাওটা হয়ে গেল যে হাত থেকেই দানা খেতে শুরু করে দিল। এর মধ্যেই তুলোয় মুড়ে রাখা গমের দানা থেকে ছোট্ট ছোট্ট চারা বেরিয়েছে দেখে টুপুরের সে কী আনন্দ। চুপি চুপি বাবাকে ছাদে নিয়ে গিয়ে চারাগুলোকে দেখাল। ওর বাবাই গমের চারাগুলোর সাথে কতকগুলো ফুলের চারাও টবে বসিয়ে দিল। রোজ সকালে টুপুর পাখিদের জল, দানা দেবার সময় টবের গাছগুলোতেও জল দেয়। গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে হাওয়ার সাথে দোলে, রঙিন ফুল ফোটে, গন্ধ ছড়ায়, ছোট ছোট পাখিরা সরু সরু ডালে বসে। এখন লেখাপড়া করতে ভালো না লাগলেই টুপুর হাতে কিছু দানা নিয়ে ছাদে উঠে আসে, আর সাথে সাথে বন্ধু পাখিগুলো ডানা ছড়িয়ে উড়ে আসে, ওকে ঘিরে ধরে। গাছের হাওয়া, ফুলের গন্ধ, পাখির ডাকে মন খারাপ নিমেষে কেটে গিয়ে টুপুরের নিজেকে মুক্ত মনে হয়।
* গল্প (Short Story) – বন্দিমুক্তি (Bandi Mukti) : মনশ্রী দে (Monosree De), লেখিকা