শনিবার ১ মার্চ, ২০২৫


বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে চক্রবর্তী সাহেবের কাছ থেকে আবার একটা জরুরি ফোন এসেছিল বাড়ির একতলার রাজ এসটিডিতে। মৃতদেহের ময়না তদন্তে ড্রাগ ওভারডোজ পাওয়া গিয়েছে। খেলোয়াড়দের শরীরে ডোপ টেস্ট করে দেখা হয় যে তারা শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোনওরকম নিষিদ্ধ দ্রব্যের সাহায্য নিচ্ছে কিনা।
‘DOPE’-র আক্ষরিক কথাটা হল ‘Data On Personal Equipment’। দেখা হয়, শরীরে এমন কোনও রাসায়নিক রয়েছে, যা ডোপামিন (Dopamine)-এর আধিক্য ঘটিয়েছে। ডোপামিন একটি বেশ জটিল হরমোন, যা ব্রেনকে চনমনে সংকেত দেয়। এ সব বিস্তারিত জ্ঞানের সবটাই চক্রবর্তী সাহেবের সৌজন্যে। এই ডোপ টেস্টে স্যাম্পেলে পাঁচটি টেস্ট করা হয় দেখা হয় ইয়াবা, গাঁজা, ভাং, মারিজুয়ানা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, মরফিন, এক্সট্যাসি, MDMA বা মলি কোনও মাদকের বা বিশেষ কোনও সাময়িক শক্তিবর্ধক স্টেরয়েডের প্রভাব রয়েছে কিনা!
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৯: বুলবুলি

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৬: এক সন্ধ্যায় মা সারদার বলা ভূতের গল্প

জানা গেল, অ্যালকোহলের সঙ্গে মরফিন, এক্সট্যাসি, MDMA ধরণে মাদক অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে গেলে মৃত্যু ঘটতে পারে। এখন প্রশ্ন হল মৃদুল সাহা সেদিন এই ড্রাগ নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় নিয়েছিল নাকি সিলেক্টারদের সামনে বিশাল কিছু একটা করে দেখানোর জন্য চাপের মুখে ড্রাগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। মৃদুল যে ড্রাগ নিত এটা ময়দানের আনাচে-কানাচে শোনা গিয়েছে শুধু ড্রাগ নেবার কারণে তাকে ড্রাগ ওভারডোজে খুন করা হয়েছে এটা প্রমাণ করা খুব শক্ত।
আরও পড়ুন:

ঈশ্বর কী সাড়া দেন তামিলে, সংস্কৃতে?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৪: খরগোশ ও কচ্ছপ

সব শুনে চক্রবর্তী সাহেব বললেন—
—ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। তখন তো আমাদের অ্যানুয়াল পরীক্ষা ডিসেম্বরেই হয়ে যেত নতুন বছরে নতুন ক্লাস। পুজো অক্টোবর হয় সেপ্টেম্বর ছুঁয়ে নয় নভেম্বর ছুঁয়ে, তা পুজোর ছুটি শুরু হবার আগে কয়েকটা সাবজেক্টের পরীক্ষা হয়ে যেত। ভারি ভারি সাবজেক্ট যেমন ইংরেজি অংক এরা সব ডিসেম্বরে থাকতো। ২৫ ডিসেম্বর এর আগে রেজাল্ট বেরিয়ে একরাশ খুশি। বড়দিন থেকে শুরু করে ১লা জানুয়ারি, সার্কাস ম্যাজিক পিকনিক চিড়িয়াখানা প্লানেটরিয়াম… পরীক্ষাতে ভালো করতেই হবে সেটা তো সকলের ক্ষেত্রেই একটা নিয়ম হাফ ইয়ারলি এক্সাম খানিকটা নেট প্র্যাকটিস বা ছোটখাট প্র্যাকটিস ম্যাচ। নিজেকে আন্দাজ করার জন্য গলদ ঠিক কোনখানটায়? কোনখানে মেরামত করতে হবে? অ্যানুয়াল পরীক্ষা তো ভারত পাকিস্তানের ফাইনাল! পুজোর আগে যে পরীক্ষাগুলো হতো ক্লাস এইট-এর আগে সেখানে সংস্কৃত দিয়ে শুরু হতো। আর সংস্কৃততে আমার কোথায় বিসর্গ কোথায় অনুর্স্বর আর কোথায় ম-এ হসন্ত আমার সব গন্ডগোল হয়ে যেতে, আপনার ক্ষেত্রে মশায় শুরুতেই সংস্কৃত পড়ে গিয়েছে—
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৬: এক সন্ধ্যায় মা সারদার বলা ভূতের গল্প

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৭: উত্তরণ-অবতরণ শেষে স্বপ্নের ‘সূর্যতোরণ’

বলে একটা আসর জমাটি হোহো করে হাসি দিলেন! জমজমাট আড্ডাবাজ মানুষ কি করে যে পুলিশের বড়কর্তা হলেন সেটা ধৃতিমান পরেও অনেকবার ভেবেছে। একবার বলেই ফেলেছিল চক্রবর্তী সাহেবকে।
—এটা আমার সেই হ্যারি পটারের ইনভিজিবিলিটি ক্লোক! মনে আছে তো?
—হ্যাঁ স্যার, এটা পেভেরেল ভায়েদের ছোটোজন ইগ্নোটাসের এটা গায়ে চাপিয়ে হ্যারি পটার হগোয়ার্টসের অলিন্দে অদৃশ্য হয়ে ঘুরে বেড়াতো।
—একজ্যাক্টলি! চারদিকে খুনখারাপি রাহাজানি তার ওপর স্টেট ইন্টেলিজেন্স চাপ, হাসি ঠাট্টা আড্ডা সিনেমা দেখা এগুলো আমার চাপের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে ঘুরে বেড়াবার ইনভিজিবিলিটি ক্লোক। নাও নো মোর ফাজলামি কাম টু দ্য পয়েন্ট, হোয়াট উইল বি ইওর নেক্সট স্টেপস।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০২: ভরতের মতো একমুখী লক্ষ্যে এগিয়ে চলা কী সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১২: দারুণ এক গগনবিহারী খেলনা বানিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ

চক্রবর্তী সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করেই ধৃতিমান শুরু করল মৃদুল সাহার সুঁড়িখানার সাক্ষী সাকিদের দিয়ে। তালিকা বেশ লম্বা। এবং তাতে বয়সেরও বাধবিচার নেই। মৃদুল তার ১৮-১৯ বছর থেকে ময়দানে খেলছে, তার আগে ১৬ বছর থেকে স্কুল ক্রিকেট খেলেছে। এখন ২৭ টপকে ২৮ বছর বয়স নেহাৎ কচি খোকাটি নয়, কিন্তু তার বদলে বদলে যাওয়া বান্ধবীদের বয়সের রেঞ্জটা ১৭ থেকে ৩৭ এবং তাঁরা ভিন্ন পেশায় যুক্ত। সিরিয়াল অভিনেত্রী, টালিগঞ্জের ফিচার ছবির সেকেন্ড হিরোইন বিবাহ বিচ্ছিন্না এক গায়িকা, মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে না চাওয়া মোটা হয়ে যাওয়া এক নায়িকা- মডেল দুনিয়ার নতুন সেন্সেশন। কর্পোরেট সংস্থার ডাকাবুকো এইচ আর-কে নেই সেই তালিকায়? —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content