শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

যুধিষ্ঠিরের সিদ্ধান্ত—দ্রৌপদী পঞ্চ পাণ্ডবের ধর্মপত্নী হবেন। যুধিষ্ঠিরের স্থির প্রত্যয়, ন মে বাগনৃতং প্রাহ নাধর্ম্মে ধীয়তে মতিঃ। তাঁর কথা মিথ্যা হবার নয়, তার বুদ্ধিও ধর্মবিরুদ্ধ নয়। যুধিষ্ঠিরের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মা কুন্তী সম্পূর্ণভাবে একমত। জননীর নির্দেশ—অর্জিত সামগ্রী পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে নাও। দ্রুপদরাজ পড়েছেন ধর্মসঙ্কটে। তাঁর যুক্তি— অধর্ম্মোঽয়ং মম মতো বিরুদ্ধো লোকবেদয়োঃ। ন হ্যেকা বিদ্যতে পত্নী বহূনাং দ্বিজসত্তম।। যুধিষ্ঠিরের সিদ্ধান্ত লৌকিক রীতির বিপরীত ও বৈদিক অনুমোদনবিরোধী।এক পত্নী বহুজনের হতে পারে না। সেখানে উপস্থিত, পাণ্ডবদের পরমাত্মীয়, প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ মহর্ষি বেদব্যাস। তিনি উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে, যুধিষ্ঠিরকেই সমর্থন করলেন। পাঞ্চালরাজকে প্রবোধ দিয়ে বললেন, অনৃতান্মোক্ষ্যসে ভদ্রে! ধর্ম্মশ্চৈব সনাতনঃ। মহাশয়, আপনি মিথ্যাচারের ভাবনা থেকে মুক্ত হোন। এটিই সনাতন ধর্ম। মহর্ষি, একান্ত আলাপচারিতায় রাজাকে ডেকে নিলেন, তাঁর নিজের বক্তব্যের সমর্থনে, এক কাহিনির অবতারণা করলেন।

প্রাচীনকালে, নৈমিষারণ্যে যমরাজের পৌরোহিত্যে এক যজ্ঞ আয়োজিত হল। যমের লক্ষ্য কিন্তু মানুষদের প্রাণহরণ নয়। ফলে, কালক্রমে মৃত্যুহীন মানুষেরা সংখ্যায় বহু হলেন। চন্দ্র, ইন্দ্র, বরুণ, কুবের, সাধ্যগণ, রুদ্রগণ, বসুগণ, দুজন অশ্বিনীকুমার, বিশ্বস্রষ্টা ব্রহ্মা এবং অন্য দেবতারা উপস্থিত হলেন সেখানে। দেবতারা সকলে,মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধিহেতু ভয়ানক ভীত ও উদ্বিগ্ন হয়ে,সুখের প্রত্যাশায় সৃষ্টিকর্ত্তা ব্রহ্মার শরণ নিলেন। ব্রহ্মা অভয় দিলেন, লৌকিক মানুষ হতে দেবতাদের ভীতি কেন? দেবতারা যে অমর। মর্তের মানুষ হতে তাঁদের এই ভয় অমূলক। দেবতাদের এই অস্থিরতার কারণ হল, মরণশীল মানুষ ও অমরত্বের অধিকারী দেবতাদের মধ্যে কোনও বিশেষ পার্থক্য আর নেই। মর্ত্তা অমর্ত্তাঃ সম্ভূতা ন বীশেষোঽস্তি কশ্চন। এই বিশেষ ভেদ সৃষ্টির অনুরোধ নিয়ে,তাঁরা ব্রহ্মার কাছে এসেছেন।

ভগবান ব্রহ্মা জানালেন, যমকৃত যজ্ঞই এর কারণ। এই কারণেই জনসংখ্যাবৃদ্ধি পেয়েছে। যজ্ঞ সমাপনান্তে যম, আবার, মানুষের প্রাণ হরণের কাজে মনঃসংযোগ করবেন। দৈবশক্তির প্রভাবে যমের দৈহিক বলবৃদ্ধি হবে। সেই শারীরিক বল হবে মানুষের মৃত্যুর কারণ। মানুষ, সেই শক্তির কাছে হীনবল হবে। ব্রহ্মার কাছে সমাধানসূত্র জেনে, দেবতারা যজ্ঞস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পথে, গঙ্গাতীরে বিশ্রামের সময়ে, শক্তিশালী দেবতারা, ভাগীরথীতে ভাসমান একটি স্বর্ণকমল দেখলেন। বিস্মিত হলেন দেবতারা। তাঁদের মধ্যে শৌর্যবান ইন্দ্র,গঙ্গার গভীরে গেলেন। সেখানে ইন্দ্র অগ্নিবর্ণা এক নারীকে দেখতে পেলেন। সেই নারী কাঁদছেন। তাঁর বিন্দু বিন্দু চোখের জল থেকে উৎপন্ন হচ্ছে এক একটি স্বর্ণপদ্ম। ইন্দ্র,তাঁর বিলাপের কারণ ও পরিচয় জানতে চাইলেন। রমণীর অশ্রুজলের হেতু কী? রোদিষি কস্য হেতোঃ রমণী, চোখের জলের কারণ জানাতে, ইন্দ্রকে নিয়ে চললেন এক স্থানে। সেই নারীকে অনুসরণ করে ইন্দ্র, সেই স্থানে প্রিয়দর্শন এক যুবককে, সিদ্ধিযোগ্য আসনে বসে, এক যুবতীর সঙ্গে অক্ষক্রীড়ায় মত্ত অবস্থায় দেখলেন। ইন্দ্র, অক্ষক্রীড়ায় গভীর মগ্ন যুবকের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে, সদম্ভে নিজের গর্বিত অবস্থান ঘোষণা করলেন,ওহে পাশা খেলায় ভীষণভাবে মত্ত যুবক, বিশ্ব ভুবন আমার বশে, আমিই তার প্রভু। তমবব্রবীদ্দেবরাজো মমেদং ত্বং বিদ্ধি বিশ্বং ভুবনং বশে স্থিতম্। ঈশোঽহমস্মীতি সমন্যুরব্রবীদ্দৃষ্ট্বা তমক্ষৈঃ সুভৃশং প্রমত্তম্।।
ক্রুদ্ধ শত্রুকে দেখে হেসে উঠলেন সেই দেবকল্প পুরুষ। ধীরে তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকালেন। সেই দৃষ্টি নিরীক্ষণ করে স্তম্ভিত হলেন ইন্দ্র,তাঁর দেহ নিশ্চল হল। ক্রীড়া সমাপনান্তে, যুবক, বিলাপরতা মহিলাকে বললেন, আনীয়তামেষ যতোঽহমারান্নৈনং দর্পঃ পুনরপ্যাবিবেশ। আমার কাছে নিয়ে এস ওকে। যাতে এর আর দর্প না হয়, সেই ব্যবস্থাই আমি করব। তিনি স্পর্শ করা মাত্র ইন্দ্রের অঙ্গ শিথিল হল, তিনি ভূপতিত হলেন। তখন সেই যুবকরূপী উগ্র তেজস্বী মহাদেব তাঁকে বললেন, ইন্দ্র যেন আর কখনও এমন ঔদ্ধত্য প্রকাশ না করেন। দেবাদিদেব আদেশ করলেন, তোমার অপরিমিত শক্তি ও শৌর্য বলে মহাপর্বততুল্য পাথরখানা সরিয়ে ফেলে ছিদ্রপথে প্রবেশ কর। সেখানে আছেন তোমার মতোই রবিতুল্য কান্তিমান কজন পুরুষ। বিবর্ত্তয়ৈনঞ্চ মহাদ্রিরাজং বলঞ্চ বীর্য্যঞ্চ তবাপ্রমেয়ম্। ছিদ্রস্য চৈবাবিশ মধ্যমস্য যত্রাসতে তদ্বিধাঃ সূর্য্যভাসঃ।।

ইন্দ্র সেই মহাগিরিসম গর্ত উন্মোচন করে, দ্যুতিমান আরও চারজনকে দেখতে পেলেন। তাঁদের দেখে খুব বিষণ্ণ হলেন তিনি। মনে আশঙ্কা ঘনাল, তাঁর নিজের দশা এনাদের মতো হবে না তো? কচ্চিনাহং ভবিতা বৈ যথেমে। ক্রুদ্ধ মহাদেব চোখদুটি বিস্ফোরিত করে, ইন্দ্রকে গুহায় প্রবেশ করতে বললেন। কারণ, হে শতক্রতু ইন্দ্র, মূর্খতাহেতু তুমি অবমাননা করেছ আমায়। দরীমেতাং প্রবিশ ত্বং শতক্রতো! যন্মাং বাল্যাদবমংস্থাঃ পুরস্তাৎ। দেবরাজ ইন্দ্র, পরাজয়ের আশঙ্কায়, বায়ু তাড়িত অশ্বত্থ পাতার মতো ত্রাসে, হিমালয়শিখরে, কেঁপে উঠলেন।সহসা বৃষবাহন শিবের এই কথার অভিঘাতে, অঞ্জলিবদ্ধ অবস্থায় কাঁপতে কাঁপতে ইন্দ্র, মহাদেবকে বললেন, অসীম ভুবনের মধ্যে আজ আপনিই প্রথম আমায় অনুগ্রহ করুন। অদ্যাশেষস্য ভুবনস্য ত্বং ভবাদ্যঃ। মহাদেব হেসে প্রত্যুত্তর দিলেন, এমন স্বভাবের মানুষ অনুগ্রহের যোগ্য নন।আগে অহঙ্কার প্রকাশ করেছিলেন বলে এনাদের স্থান হয়েছে যেখানে, সেই গুহায় স্থান হবে ইন্দ্রেরও। কালক্রমে সকলে মানুষরূপে জন্ম নেবেন, শত্রুদের অসহনীয় হয়ে, বহু শত্রু নিধন করে, নিজের নিজের কর্মফলানুসারে আবার ফিরে আসবেন ইন্দ্রলোকে। মহাদেবের বচনানুসারেই এগুলি ঘটবে, এ ছাড়াও নানা কর্তব্য সম্পাদন করবেন এনারা।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৮: খলনায়িকার ধার্মিক পুত্র?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ

পূর্ববর্তী ইন্দ্রদের মতে, দেবলোক হতে ইহলোকে অধঃপতনের ফলে মুক্তিলাভ, দুর্লভ। ধর্ম, বায়ু, ইন্দ্র ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের ঔরসে, জননীর গর্ভে, ইন্দ্ররা জন্ম নেবেন। পূর্ববর্তীদের বক্তব্য শুনে, নবাগত ইন্দ্র মহাদেবের কাছে প্রস্তাব রাখলেন, দেবতাদের কার্যসম্পাদনের নিমিত্ত আমার নিজের উপস্থিতির প্রয়োজন। সেই কারণে আমার শুক্র দিয়ে বরং পঞ্চম ইন্দ্র সৃষ্টি করে পাঠিয়ে দিই। বীর্য্যেণাহং পুরুষং কার্য্যহেতোর্দদ্যামেষাং পঞ্চমং মৎপ্রসূতম্।। পাঁচ ইন্দ্রের নাম, যথাক্রমে বিশ্বভুক্, ভূতধামা, শিবি, শান্তি এবং তেজস্বী। সৎস্বভাবহেতু, পিনাকী শিব, ইন্দ্রের ইচ্ছা পূরণ করলেন। মহাদেব, পৃথিবীতে এই পঞ্চে ইন্দ্রের ভোগ্যরূপে স্বর্গবাসীদের ঈপ্সিতা, স্বর্গলক্ষ্মীকে, স্ত্রী হওয়ার জন্যে আদেশ দিলেন। অপ্রতিম, অনন্ত, অব্যক্ত, জন্মহীন, চির পুরাতন, বিশ্বরূপ, অনন্তমূর্তি নারায়ণ এই বিষয়টি অনুমোদন করলেন।

পঞ্চ ইন্দ্র ও স্বর্গলক্ষ্মী সকলে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করলেন। নারায়ণ তাঁর একটি কালো ও একটি শুক্ল কেশ উৎপাটিত করলেন। সেই কেশ দুটি যদুকুলের দেবকী ও রোহিণীর গর্ভে প্রবেশ করল। শুক্ল কেশটি হলেন বলরাম ও কৃষ্ণবর্ণ কেশ হলেন কৃষ্ণ। যে চারজন ইন্দ্র হিমালয়ের গুহাভ্যন্তরে আবদ্ধ ছিলেন ইহলোকে সেই চারজন হলেন চারজন পাণ্ডব। পরবর্তী শৌর্যশালী ইন্দ্র হলেন সব্যসাচী তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন।পূর্ব বিধানানুসারে স্বর্গলক্ষ্মী হলেন দৈবী রূপের আধার দ্রৌপদী। কিন্তু দৈব প্রভাব ছাড়া সেই নারীর কীভাবে ভূতল হতে,যজ্ঞশেষে উত্থান সম্ভব? যাঁর রূপে, চন্দ্রসূর্যের কান্তির প্রকাশ, যাঁর দেহের সুগন্ধ এক ক্রোশ দূরে হতে বয়ে যায়, এমন সেই নারী।

মহর্ষি বেদব্যাস, পাঞ্চালরাজকে দিব্যদৃষ্টি দান করলেন, যাঁর মাধ্যমে পাণ্ডবদের পূর্ববর্তী ইন্দ্ররূপ দেখা সম্ভব। রাজা দ্রুপদ দিব্যদৃষ্টিবলে পাণ্ডবদের দৈবী রূপ প্রত্যক্ষ করলেন। দেবমূর্তি পাণ্ডবগণ, স্বর্ণ মুকুট ও মালা ধারণ করেছেন, তাঁদের ইন্দ্রতুল্য চেহারা, অগ্নি ও সূর্যসম তাঁদের বর্ণ, স্বর্গীয় ফুলের মালায় সজ্জিত হয়েছেন তাঁরা, এই সুন্দররূপ যুবকেরাই, প্রশস্ত বক্ষ, উর্দ্ধে উত্তোলিত হস্ত পরিমাণ দীর্ঘাকৃতি কুন্তীপুত্র। তাঁদের পরিধানে ধূলীবিহীন স্বর্গীয় বসন ও সুগন্ধী মালা। তাঁরা যেন সাক্ষাৎ ত্রিলোচন শিব, বসুগণ, রুদ্রগণ ও আদিত্যগণের তুল্য, সকল গুণে বিভূষিত। পূর্ববর্তী মনোজ্ঞরূপবিশিষ্ট চার জন ও ইন্দ্রপুত্রকে দর্শন করে, দ্রুপদরাজ তাঁদের অপ্রতিম স্বর্গীয় মায়া উপলব্ধি করে, আনন্দিত ও বিস্মিত হলেন। শ্রেষ্ঠা, অতিলৌকিক দিব্য রূপবতী, এই দ্রৌপদীর রূপে সাক্ষাৎ চন্দ্র ও অগ্নির তেজের প্রকাশ। দ্রৌপদী রূপ, তেজ ও যশের নিরিখে পাণ্ডবদের যোগ্যা পত্নী, এমন মনে করে, পাঞ্চালরাজ, পরিতৃপ্ত হলেন। সেই আশ্চর্য ঘটনা দেখে অভিভূত রাজা সত্যবতীপুত্র বেদব্যাস এর পা দুটি ছড়িয়ে ধরে বললেন, নৈতচ্চিত্রং পরামর্ষে! ত্বয়ীতি” আপনার পক্ষে এটি আশ্চর্যের কোন ঘটনা নয়।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান

দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম

মহর্ষি, প্রসন্ন মনে, আরও একটি কাহিনির অবতারণা করলেন। এক তপোবনে কোন এক মহর্ষির এক কন্যা ছিল। কন্যাটি সুরূপা কিন্তু তাঁর উপযুক্ত স্বামীর অভাব। সেই কন্যার কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হলেন মহাদেব। তিনি সেই কন্যাকে বরদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন বরদাতা ঈশ্বরকে বার বার বললেন, পতিং সর্ব্বগুণোপেতমিচ্ছামীতি পুনঃ পুনঃ সন্তুষ্ট দেবাদিদেব প্রসন্ন মনে বর দিলেন। পঞ্চ তে পতয়ো ভদ্রে! ভবিষ্যন্তীতি ভদ্রে, তোমার পঞ্চ পতি লাভ হবে। মেয়েটি আবারও মহাদেবকে তুষ্ট করে,বর প্রার্থনা করলেন, একং পতিং গুণোপেতং ত্বত্তোঽর্হামীতি আপনার কাছে গুণবান একটি পতি কামনা করি। সন্তুষ্ট মহাদেব জানালেন, পঞ্চকৃত্বস্ত্বয়োক্তাঽহং পতিং দেহীতি বৈ পুনঃ। ‘পতি দিন’ এই কথাটি, তুমি পাঁচ বার বলেছ। তাই সেটাই হবে। কন্যার মঙ্গল কামনা করে মহাদেব বললেন,জন্মান্তরে অন্য দেহে এ সব ফলপ্রসূ হবে। দ্রুপদ রাজার কন্যা স্বর্গীয় রূপধারিণী ইনি সেই ঋষিকন্যা যিনি পৃষতপৌত্রী দ্রৌপদী, তিনিই পাণ্ডবদের স্ত্রীরূপে নির্দিষ্টা হয়েছিলেন। সেই স্বর্গলক্ষ্মী,পাণ্ডবদের জন্যেই, ঋষিকন্যা হয়ে কঠোর তপস্যার মাধ্যমে, মহাযজ্ঞে, দ্রুপদরাজের কন্যা হয়ে উত্থিত হয়েছিলেন। তিনিই সেই দেবতাদের সেবিতা স্বর্গলক্ষ্মী,পঞ্চ ইন্দ্রের পত্নীরূপে ব্রহ্মা যাঁকে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি পঞ্চ পাণ্ডবদের একমাত্র ধর্মপত্নী। মহর্ষি বললেন, দ্রুপদরাজ, এবার ইচ্ছানুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। দ্রুপদেষ্টঃ কুরুষ্ব

রাজা দ্রুপদ,মহর্ষির কথা শুনে মোহমুক্ত হলেন। ঈশ্বরের দুর্লঙ্ঘ নির্দেশ অগ্রাহ্য করবার সাধ্য কারও নেই। তাই সেই বিধান মেনে নেওয়াই, যুক্তিযুক্ত হবে। রাজার উপলব্ধি হল, অদৃষ্টের বাঁধন শিথিল করা যায় না। নিজের চেষ্টায় কিছুই করা যায় না। একটি বর লাভের জন্যে একটি (লক্ষ্যভেদরূপ) কারণ রেখেছিলাম, এখন সেটিই (বিবাহের নিমিত্ত)বহু বর এনে দিল। দিষ্টস্য গ্রন্থিরনিবর্ত্তনীয়ঃ স্বকর্ম্মণা বিহিতং নেহ কিঞ্চিৎ। কৃতং নিমিত্তং হি বরৈকহেতোস্তদেবেদমুপপন্নং বহূনাম্।। কৃষ্ণা দ্রৌপদী পূর্বজন্মে যেমন বলেছিলেন,হে ভগবান আমায় অনেক পতি দেওয়া হোক। ভগবান সেই মতো বর দিয়েছেন। ভগবান, এ বিষয়ে, পরম কল্যাণ হবে কোনটিতে, সেটি জানেন। যদি শঙ্কর এমন বিধান দিয়ে থাকেন তবে এ বিষয়ে আমার ধর্ম ও অধর্মের বিচারের দায় নেই। মহাদেব, লৌকিক নিয়ম ভেঙ্গে, কৃষ্ণা পাঞ্চালীকে পঞ্চ পাণ্ডবদের হাতে দিয়েছেন তাহলে তাঁরা যথাবিধি এর পাণি গ্রহণ করুন। যদি চৈবং বিহিতং শঙ্করেণ ধর্ম্মোঽধর্ম্মো বা নাত্র মমাপরাধঃ। গৃহ্ণন্ত্বিমে বিধিবৎ পাণিমস্যা যথোপজোষং বিহিতৈষাং হি কৃষ্ণা।।

মহর্ষি বেদব্যাস এ বিষয়ে দ্রুপদ রাজের সঙ্গে একমত। নায়ং বিধির্মানুষাণাং বিবাহে মানুষের বিবাহে এমন বিধান নেই। দেবাদিদেবের প্রসাদহেতু, পূর্বজন্মের সুকৃতিহেতু স্বর্গলক্ষ্মী, অধুনা দ্রৌপদী হয়ে একদা দেবতাদের অবতার পঞ্চ পাণ্ডবের পত্নী হয়েছেন। দেবতাদের ক্ষেত্রে এমন বিবাহের বিধান আছে, মানুষের ক্ষেত্রে নয়। ব্যাসদেবের অভিমত হল, মনুকথিত ধর্মশাস্ত্রোক্ত বিধান সাধারণ নরনারীর পক্ষে ধর্মসঙ্গত। অন্যেষাং নৃণাং যোষিতাঞ্চ ন ধর্মঃ স্যান্মানবোক্তো নরেন্দ্র! মহর্ষি ও রাজা, কুন্তী, ধৃষ্টদ্যুম্নর সঙ্গে মিলিত হলেন। সিদ্ধান্ত হল,আজ শুভদিন। চন্দ্র, পুত্রোৎপত্তির শুভযোগে অবস্থান করছেন। ব্যাসদেবের অনুরোধ— আজ, প্রথমে যুধিষ্ঠির কৃষ্ণার পাণি গ্রহণ করুন। অদ্য পৌষ্যং যোগমুপৈতি চন্দ্রমাঃ পাণিং কৃষ্ণায়াস্ত্বং গৃহাণাদ্য পূর্ব্বম্। অন্যান্য ভ্রাতারা ক্রমানুসারে দ্রৌপদীর পাণি গ্রহণ করুন। ক্রমেণ পুরুষব্যাঘ্রাঃ!পাণিং গৃহ্ণন্তু পাণিভিঃ।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

পাঞ্চালরাজ যজ্ঞসেন,সপুত্র বরবধূর জন্যে শ্রেষ্ঠ উপহারসামগ্রীর আয়োজন করলেন। সুস্নাতা,কন্যাকে,বহু রত্নসম্ভারে সুসজ্জিতা করা হল। রাজা দ্রুপদ, সুহৃদ, মন্ত্রী, ব্রাহ্মণ, পুরবাসীগণ এবং প্রধান ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে নিয়ে, পরমানন্দে, বিবাহের দর্শনার্থী হয়ে উপস্থিত হলেন। প্রাসাদ সৌধের চত্বর, পদ্ম ও উৎপল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। বলদর্পী রক্ষীপুরুষ ও বিচিত্র রত্নের সমাবেশে নির্মল নক্ষত্রযুক্ত আকাশের শোভা ধারণ করল সেই প্রাসাদ। কুরুবংশীয় যুবক রাজপুত্ররা কুণ্ডলাদি অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে, আকাশের মতো সূক্ষ্ম মহামূল্যবান বসন পড়ে, চন্দনচর্চিত হয়ে, অভিষেক স্নানান্তে, মাঙ্গলিক ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন। মহাবৃষরা যেমন গোষ্ঠে প্রবেশ করে, তেমনই অগ্নিসম তেজোদীপ্ত পুরোহিত ধৌম্যের সঙ্গে, বিধিসম্মত ভাবে, গুরুজনদের অভিবাদন করতে করতে, ক্রমশ তাঁরা সকলে বিবাহ সভায় প্রবেশ করলেন। বেদবিদ্যায় পারঙ্গম পুরোহিত ধৌম্য, মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে যজ্ঞাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন। যুধিষ্ঠির ও কৃষ্ণাকে সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করলেন। বেদজ্ঞ পুরোহিত উভয়কে হাতে হাত ধরে অগ্নি প্রদক্ষিণ করালেন। যুধিষ্ঠির, প্রথমে, ব্রাহ্মণদের ধন, গরু, রত্ন প্রভৃতি দান করলেন। তাঁরা তুষ্ট হলেন। তার পরে অগ্নি সাক্ষী করে যুধিষ্ঠির দ্রুপদকন্যার পাণি গ্রহণ করলেন। পুরোহিত ধৌম্য, অগ্নিসম ঋষিদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে হোম সম্পন্ন করলেন।

পুষ্পবৃষ্টি হল। সুগন্ধ মনোলোভা বায়ু প্রবাহিত হতে লাগল। রাজপুরোহিত, মহানুভব ধৌম্য, যুধিষ্ঠিরের সম্মতি নিয়ে, সমগ্র ব্রাহ্মণ ও শুভানুধ্যায়ীসহ বিদ্যমান, অসীম ধৈর্য্যশালী দ্রুপদরাজের কাছে উপস্থিত হয়ে, আবারও যথার্থ বক্তব্যবিষয়ে অনুরোধ করলেন। তাহলে এখন অন্য রাজপুত্ররা, নিয়মানুসারে,রাজকন্যার পাণি গ্রহণ করুন। গৃহ্ণন্ত্বথান্যে নরদেবকন্যা-পাণিং যথাবন্নরদেবপুত্রাঃ। পুরোহিতকে অভিনন্দন জানালেন রাজা। তাঁকে আদেশ দিলেন, তথা কুরুষ্বেতি তাই করুন। তারপরে পর পর কদিন ধরে ভীম প্রভৃতি অনুত্তমবেশধারী, কুরুবংশের গৌরববর্দ্ধক, মহাবীর, অন্য রাজপুত্ররা, নারীরত্ন দ্রৌপদীর পাণি গ্রহণ করলেন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন

মহানুভব মহর্ষি বেদব্যাস, দ্রুপদ কন্যাকে, অতিলৌকিক অদ্ভুত ও উত্তম কথা বলতেন। যাঁর দরুণ, একেকটি বিবাহদিন অতিক্রান্ত হলে, সুতন্বী দ্রৌপদী কুমারী কন্যা হয়ে যেতেন। শ্বশুরবৎ মাননীয় জ্যেষ্ঠ, যুধিষ্ঠির, হলেন একাধারে স্বামী ও জ্যেষ্ঠ ভাসুর। সর্বকনিষ্ঠ সহদেব পতি ও দেবর দুই-ই হলেন। মধ্যবর্তী তিন পাণ্ডব, ভীমসেন, অর্জুন ও নকুল তিনজনেই হলেন একাধারে পতি,ভাসুর ও দেবর। বিবাহে, প্রত্যেক মহারথ জামাতাকে দ্রুপদরাজ বিবিধ উত্তম ধন এবং শতসংখ্যক রথ দিলেন। প্রত্যেক রথে সোনার ঝালর ও সোনার লাগামযুক্ত চারটি করে ঘোড়া ছিল। আরও দিলেন, এক শত হাতি, যাদের রয়েছে পদ্মাকার শিরোভূষণ, তাদের শৃঙ্গগুলি স্বর্ণমণ্ডিত। সেই সঙ্গে দিলেন, মহামূল্যবান বেশভূষা ও ফুলের মালায় সজ্জিতা যৌবনবতী এক শত দাসী। মহান, দ্রুপদরাজ, অগ্নিসাক্ষ্য করে, পাণ্ডবদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে, সুনয়না দাসী, বহুমূল্য বসন, অলঙ্কার দান করলেন। বিবাহানুষ্ঠান শেষে, ইন্দ্রসম মহাবীর পাণ্ডবরা, প্রভূত রত্নালঙ্কারে বিভূষিতা স্ত্রী লাভ করে, পাঞ্চালরাজ পুরে বিহার করতে লাগলেন।

বিবাহ ধর্মসঙ্গত কিনা এই বিতর্কে, যুধিষ্ঠির দৃঢ়তার সঙ্গে নারীর বহুগামিতা সমর্থন করেছেন কারণ তাঁর নিজের মধ্যে প্রচ্ছন্ন রয়েছে তাঁর নিজের সত্যনিষ্ঠতা ও ধর্মবোধের প্রতি প্রগাঢ় আস্থা। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সেই দৃঢ়তার দীপ্তি। নিজের বিবেকের স্বচ্ছতা, মানুষের আত্মবিশ্বাস ও প্রাণশক্তির নির্যাস। এই স্বচ্ছতার সৌরভ ছড়িয়ে পড়লে সেই ব্যক্তিত্ব,চরিত্র মাধুর্যে, প্রবাদপ্রতিম পুরুষে পরিণত হন। মহাকাব্যের যুধিষ্ঠির ‘ধার্মিক যুধিষ্ঠির’,রামায়ণের রামচন্দ্র হন ‘সত্যনিষ্ঠ রাম’। যুগান্তরেও, তাঁরা সত্যনিষ্ঠতার ও ধার্মিকতার উদাহরণ হয়ে ওঠেন লৌকিক জীবনে। যুধিষ্ঠিরের ধর্মবোধের উৎস তাঁর বিবেকচেতনা। বিবেক চেতনা তাঁকে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত করে পরিবারের সার্বিক কল্যাণচিন্তায় উদ্বুদ্ধ করেছে। বিবাহ শুধু দুটি মানুষের মিলন নয়। বিবাহে নিহিত আছে পরিবারের সার্বিক কল্যাণ। এ চিন্তা বোধ হয় স্মরণাতীত কাল থেকেই ভারতীয়দের সামাজিক যাপনচিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। যুধিষ্ঠিরের বিবাহসিদ্ধান্তে সেই পারিবারিক মঙ্গল চিন্তা নিহিত রয়েছে।

পাণ্ডবদের বিবাহ সমাজনীতির বিরুদ্ধ কি না এই বিতর্কের ইতি টেনেছেন মহর্ষি বেদব্যাস। পৌরাণিক ইতিবৃত্তের মূল বিষয় হল, নারীর বহুপতিলাভের বিষয়টিতে দেবাদিদেব মহাদেবের অনুমোদন। কাহিনিটিতে পঞ্চ পাণ্ডব দেবতাদের প্রতিভূ এবং স্বর্গলক্ষ্মী স্বয়ং দ্রৌপদীরূপে যুগান্তরে আবির্ভূতা হয়েছেন। পাণ্ডবদের অতিলৌকিক রূপ,রাজকীয় আভিজাত্য,বংশপরম্পরায় মর্যাদা প্রভৃতির ফলে দেবতাদের মানবায়ন সম্পূর্ণ হয়েছে। বস্তুত আমরা ব্যতিক্রমী নিয়মভাঙ্গা সামাজিক বেনিয়ম মেনে নিই যখন, তখন,ঘটনার সদর্থকতার আধার চরিত্রগুলিতে দেবতাদের রূপারোপ করে সমাধান খুঁজে নিই। আধ্যাত্মিকতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। তাই অক্লেশে মেনে নিই সম্পূর্ণ নীতিবিরুদ্ধ বিষয়। যেমন মেনে নিলেন, রাজা দ্রুপদ।

ছবি: প্রতীকী।

পাণ্ডবদের মা কুন্তী, স্বামীর অনুরোধে, তিনবার, বৈবাহিক সম্পর্কটুকু নেই, এমন অন্য দেব পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। জন্ম দিয়েছেন যুধিষ্ঠির,ভীম ও অর্জুন,এই তিন পুত্রকে। সে যুগে, বিবাহের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় বংশবৃদ্ধি অর্থাৎ সন্তানলাভ,তবে দেবী কুন্তী বিবাহোত্তর অপরাপর তিন দেবপুরুষের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিলেন। তাই তিনি হয়তো এক পত্নীর সঙ্গে পাঁচ পতির বিবাহে, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় নারীর বহুগামিতা প্রচ্ছন্নভাবে সমর্থন করেছেন। ধার্মিক জ্যেষ্ঠ পুত্রের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাও অবশ্যই এর কারণ। দ্রৌপদী যদিও পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। তবে তিনি স্বয়ংবর সভায় বরমাল্যপ্রার্থী সুতপুত্রকে যে ভাবে ও যে ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সেই স্পষ্ট কণ্ঠ, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রবণতা,পঞ্চ স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিষয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি।বিভ্রান্ত অবস্থায় পঞ্চপতির স্বামিত্বের সান্নিধ্য, না পঞ্চ স্বামীর ছত্রছায়ার নিশ্চিন্ত আশ্রয়,কোনটি তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ করেছিল? তা জানা নেই।তবে,মুষ্টিমেয় ব্যতিক্রম ছাড়া, যে কোনও বিতর্কিত বিষয়ে দৈব সমর্থনের খোঁজ ও সমাধানসূত্র নির্ণয়ের প্রবণতা আজকের ভারতীয় সমাজজীবনেও দৃশ্যমান।

দ্রৌপদী, এক সম্পর্কের জটিল আবর্তে পড়ে, কোন মানসিক অবস্থায় উপনীত হলেন? জানা নেই। জানা নেই, একবার স্বামীর ভূমিকায়, পরের দিন ভাসুর হয়ে জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির,পাণ্ডব ভাইদের যিনি রোল মডেল তিনি একটুও বিচলিত হলেন কি না? আপাত স্থিতধীর মনোজগতে উথালপাথাল সংক্ষোভ জন্মায়নি একবারও? ভাইদের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ভীম ও অর্জুন পতিত্বে নববধূর সখা পর্যায়ের সমতা থেকে বিবাহপরবর্তী দিনে জ্যেষ্ঠত্বের গরিমা লাভ করেছিলেন, তখন কী তাঁদের ব্যবহারে এর প্রকাশ ছিল, নকুল ও সহদেবের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধা ভ্রাতৃবধূ পাঞ্চালীর প্রতি? যেমন অপ্রকাশিত থেকে গেল বিবাহের প্রতিক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত করেছিল যুক্তিনিষ্ঠা বধূ পাঞ্চালীকে?

সম্পর্ক যখন প্রশ্ন চিহ্নের সম্মুখীন হয় তখন তার মহত্ত্ব হয়তো হ্রাস পায়। প্রাত্যহিক জীবনচর্যার অঙ্গ হয়ে, হয়তো সম্পর্কটুকু বেঁচে থাকে মাত্র। তবে অনিচ্ছাকৃত সম্পর্কের বাঁধন, জীবনযুদ্ধের অভিঘাতে শক্তপোক্ত হয়ে সুদৃঢ় হয়, মজবুদ হয়।পঞ্চ পাণ্ডব ও দ্রৌপদীর দাম্পত্য, ভাবি কালে সেটাই প্রমাণ করেছে। ভারতীয়দের ডাল ভাতের গন্ধমাখা দৈনন্দিন জীবনে বহুগামী নারীর পত্নীত্ব ধিকৃত হয়েছে চিরকাল। দ্রৌপদীর তৎকালীন স্বীকৃত বহুগামিতা কিন্তু আজও মান্যতা পায়নি। সমাজতত্ত্বের জটিল ব্যাখ্যায় এই রসায়ন কোনমতেই সম্ভব নয় নিশ্চয়ই।বিবাহোত্তর দ্রৌপদীর কুমারীত্ব লাভ ও পুনর্বিবাহ অনেকটা সান্ত্বনা পুরস্কারের মতো। সাধারণ মনের প্রশ্নে ও সামাজিক বিতর্কিত বিষয়ে দৈব সমাধান সূত্র আবিষ্কার—আধ্যাত্মিক ভারতের একটি দিক। সেই পরম্পরা কী আজও আধুনিক ভরতবংশীয়দের কোনও প্রত্যন্ত অঞ্চলের গৃহকোণের সমস্যার সরল সমাধান নয় কী?—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।

Skip to content