ছবি: প্রতীকী।
বাথটাব (পর্ব-৬)
সিসিটিভি ক্লিপিং দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল ধৃতিমান। একটা বাচ্চা মেয়ে গ্যাস-বেলুন নিয়ে লবিতে ঢুকল। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অন্যমনস্ক বাচ্চাটির হাত থেকে আচমকা গ্যাস-বেলুন উঠে গিয়ে সিলিঙের একটা ক্যামেরাকে আড়াল করল, ঠিক সেই সময়ে অন্যক্যামেরায় দেখা গেল পিছনের একজন লম্বা লোক হাত উঁচু করে লাফ দিয়ে গ্যাস বেলুনের দড়িটা ধরে ফেলে বেলুনটা নামিয়ে দিল। কিন্তু এই দৃশ্যের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা মূহুর্ত ধৃতিমানের মগজে যেন ধাক্কা দিয়ে গেল।
একজন আগন্তুক এলেন। পুজোরসময় ঠান্ডা থাকে না তবে আজকাল সারাবছর হুডি পরে থাকাটা একটা ফ্যাশন। কোভিডের পর অনেকেই নাকে মাস্ক ব্যবহার করেন। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আবার মাস্ক না ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তাঁরা মনে করেন অকারণে মাস্ক ব্যবহারে অক্সিজেন শরীরে কম যায়। এই লোকটির মাথায় হুডির টুপি নাকে মাস্ক চোখে গগলস কোনও লোক। সে বাচ্চাটিকে টপকে গিয়ে ফিরে তাকিয়ে সিলিং-এ আটকে যাওয়া গ্যাস-বেলুন দেখল কিন্তু তখনও মুখ দেখা গেল না। কিন্তু এরপর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও একে আর দেখা গেল না। মানে হুডিপরা নাকে মাস্ক চোখে গগলসকোণ লোক। নানান ফ্লোরের করিডরের ভিডিও বা লবি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন ভিডিয়োতেই এমন কেউ নেই।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৬: সুযোগ্য প্রশাসকের মৃত্যুর অভিঘাত
গল্পবৃক্ষ, পর্ব-৩: ভাবিয়া করিও কাজ
ধৃতিমানের হঠাৎ সুজাতা মুখার্জি হত্যা রহস্যের দায়ী সেই লরির কথা মনে পড়ল। রাস্তার সিসিটিভিতে লরির নাম্বার প্লেট ধরা পড়েনি। নম্বর প্লেটে কিছু একটা আড়াল ছিল। পরে যে সিসিটিভি ফুটেজ ছিল তাতে অসংখ্য একই ধরনের লরির ভিড়ে ঘাতক লরি মিশে গিয়েছিল। গাড়ির ‘FASTag’ RFID বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন থেকে সেই ঘাতক লরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল।
এখানে ঠিক একই রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে। ইচ্ছে করে হোটেলে ঢোকার সময় আর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় চেহারার আমূল পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে যাতে আলাদা করে কাউকে চিহ্নিত করা না যায়। হোটেলে আসা বা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়া অসংখ্য মানুষের মধ্যে যদি খুনি থেকেও থাকে তাকে চিহ্নিত করতে পোশাক চেহারা কিছু তো একটা লাগবে।
এখানে ঠিক একই রকম ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে। ইচ্ছে করে হোটেলে ঢোকার সময় আর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় চেহারার আমূল পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে যাতে আলাদা করে কাউকে চিহ্নিত করা না যায়। হোটেলে আসা বা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়া অসংখ্য মানুষের মধ্যে যদি খুনি থেকেও থাকে তাকে চিহ্নিত করতে পোশাক চেহারা কিছু তো একটা লাগবে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬২: মঠ-মন্দির তৈরি করার চিন্তা বেশি করলে প্রকৃত ধর্মচর্চা থেকে মানুষ দূরে চলে যায়
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৯: শ্রীমার সন্তানস্নেহ
চোখের গগলস পরা কাউকে ভেতরে কেউ দেখেছেন বলে আলাদা করে কেউ মনে করতে পারছেন না। গগলস খুলে ফেলতে পারেন বা ফটোক্রোমাটিক চশমা হলে রোদের গগলস বিনা রোদে সাধারণ চশমায় বদলে যাবে। এ বার চশমা পরা বা না-পরা অসংখ্য মানুষেরা হোটেলের ভেতরে ঘুরেছেন। নানান ইভেন্ট হয়েছে সেখানে নিমন্ত্রিত বা আয়োজক হতে পারেন। ইভেন্টের কারিগরি বা ঠিকাকর্মী হতে পারেন। কৌশিকী দত্তগুপ্তর দুতিনটে ফটোসেশন ছিল। বিজ্ঞাপনের ফটো এবং ভিডিও শুট হয়েছে। সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য ইউনিট মেম্বাররা ছিলেন।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭১: সুন্দরবনের পাখি: সবুজ বক
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
হঠাৎ সিকিউরিটি রুমে ডিউটিরত সুরক্ষাকর্মী ভয়ে ভয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুললেন। শুটিঙের জন্য লাইট বা সেটের সরঞ্জাম সরাসরি পিছনের লনে এসেছে ভ্যানে করে। কিছু গেস্ট হোটেলের ভেনু ব্যবহার করেন কিন্তু ক্যাটারিং এনেছেন নিজের পছন্দের তাদের ক্যাটারিঙের জিনিশপত্র সরাসরি লনে এসেছে ম্যাটাডোর করে। সেখানে যারা এসেছেন তাদের তো কারও সিসিটিভিতে ভিতরে আসার ছবি নেই।
আবার সম্ভাব্য সমাধানের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে যুক্তি দিয়ে গড়ে তোলা তদন্তের সিঁড়ি যেন হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু বাবুর নয় নয় করে অনেকগুলো বছর হয়ে গেল। সে জানে অনুমান নির্ভর তদন্তে এটা ঘটে। এ ভাবেই হঠাৎ একটা প্রামাণ্য সূত্রের গাঁথনি পেলেই ভেঙ্গেপড়া ইঁটের ইমারত আবার জ্যান্ত হয়ে লাফ দিয়ে ওঠে।
আবার সম্ভাব্য সমাধানের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে যুক্তি দিয়ে গড়ে তোলা তদন্তের সিঁড়ি যেন হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু বাবুর নয় নয় করে অনেকগুলো বছর হয়ে গেল। সে জানে অনুমান নির্ভর তদন্তে এটা ঘটে। এ ভাবেই হঠাৎ একটা প্রামাণ্য সূত্রের গাঁথনি পেলেই ভেঙ্গেপড়া ইঁটের ইমারত আবার জ্যান্ত হয়ে লাফ দিয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪২: যোগমায়া দেবী—এক প্রতিবাদী নারী
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
খুনির হোটেল কর্মীর ছদ্মবেশে কৌশিকীর হোটেল রুমে ঢোকার পরের ছবি দেখা যায়নি। কেন? সিসিক্যামেরা গ্যাসবেলুন দিয়ে আড়াল করা হয়েছিল। কে আড়াল করল? আততায়ী বা সম্ভাব্য খুনি তো তখন কৌশিকীর রুমে ঢুকে গিয়েছে! তাহলে কি তারা দু’জন? না একজন? খুনি কি কোনওভাবে তার অপরাধের আরেকজন সঙ্গী রাখার অহেতুক ঝুঁকি নেবে? একা থাকলে খুনি কী ভাবে এটা করতে পারে? —চলবে।
কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।