বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর, ২০২৪


মির্জাপুর সিজন ৩।

 

মির্জাপুর সিজন ৩

● কাহিনি বৈশিষ্ট্য: পলিটিক্যাল থ্রিলার (২০১৮, ২০২০ এবং ২০২৪)
● ভাষা: হিন্দি
● কাহিনি চিত্রনাট্য: করণ অংশুমান, পুনিত কৃষ্ণা
● পরিচালনা: করণ অংশুমান, গুরমিত সিং, মিহির দেসাই, আনন্দ আইয়ার
● অভিনয়: পঙ্কজ ত্রিপাঠী, আলি ফজল, দিব্যেন্দু শর্মা, বিক্রান্ত ম্যাসি, রসিকা দুগ্গাল, শ্বেতা ত্রিপাঠী, কুলভূষণ খারবান্দা, শ্রীয়া পিলগাঁওকার, লিলিপুট, বিজয় ভার্মা, ঈশা তলয়ার, আনজাম শর্মা, মেঘনা মালিক প্রমুখ
● ওটিটি রিলিজ: অ্যামাজন প্রাইম
● সিজন প্রতি পর্ব: ৯ / ১০ /১০
● রেটিং: সিজন ১ / ২ ৬.৭৫/১০
● সিজন ৩: ৫.০ /১০

তাজমহলকে ভালো লাগাবার জন্যই তাজমহলের নেশা ছুটিয়ে দেওয়া দরকার। …বিধাতার রাজ্যে ভালো জিনিস অল্প হয় বলেই তা ভালো নইলে সে নিজেরই ভিড়ের ঠেলায় হয়ে যেত মাঝারি। …

এই রকম মন্তব্য যাঁর করা মানায় তিনিই করেছিলেন আজ থেকে ৯৬ বছর আগে প্রবাসী পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত আজও বোধকরি তাঁর অন্যতম আধুনিক সৃষ্টি। না নাটক নয়, উপন্যাস নয়, কাব্যগ্রন্থ—শেষের কবিতায়। মির্জাপুর নিয়ে বলতে গিয়ে আজ আবার তাঁরই কথার উদ্ধৃতি দিতে হল।

অ্যামাজন প্রাইম ভিডিয়ো পরিবেশিত ক্রাইম সিরিজ মির্জাপুর সিজন ১ ও ২ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মির্জাপুর সিজন ৩। এই তিনটি সিজনের মির্জাপুর অন্ধকার জগতের ক্ষমতা দখলের কাহিনি উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর, জৌনপুর, আজমগড়, গাজিপুর, লখনউ, রায়বরেলি, গোরখপুর, এবং বারাণসী জুড়ে ডন আর মাফিয়াদের অন্ধকারজীবন অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা, যৌনতা, তীব্র গালিগালাজ আর নৃশংসতায় ভরা এই সিরিজ প্রাথমিকভাবে জগৎজোড়া ভারতীয়দের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে উঠে এসেছিল।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: আর্টিকল ৩৭০ সাম্প্রতিক জম্মু-কাশ্মীরের চর্চিত ইতিহাস

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৪: লোকশিক্ষক মা সারদা

ভারতীয় সিনেমায় সাধারণত এ ধরনের কুৎসিত ভাষা বা দৃশ্যের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ যথেষ্টভাবে থাকে না। মির্জাপুর সেই অভাব মিটিয়েছিল, না হলে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে গুন্ডারা কী ভাবে একে অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তার বিস্তারিত কাহিনি বারবার বহু হিন্দি দক্ষিণভারতীয় ও নানান প্রাদেশিক ছবিতে আমাদের দেখা হয়ে গিয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে অন্ধকারজগত যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটা ভারতবাসী হিসেবে আমাদের থেকে ভালো কেউ আর জানেন না। তাই নতুনত্ব যদি কিছু থাকে তা ছিল নৃশংসতায়, ভাষায় এবং যৌন আবেদনপূর্ণ দৃশ্য গ্রহণে।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩০: নলিনী দাশ— গণ্ডালুর সৃজনশিল্পী

ওটিটি দর্শকেরা এতদিনে বুঝে গিয়েছেন, বিষয়বস্তু এবং অতিসাহসিকতার ওপর কোথাও একটা অলিখিত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাই প্রথমদিকের ওটিটির ফর্মুলায় যে সহজ বিনোদনের মশালা মেলানো থাকতো তার উগ্রতা বা ঝাঁজ কমাতে হয়েছে। এদিকে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া সিরিজের বাজারদর বাড়ার কারণে কৈ মাছের মতো তাকে হাঁড়ির জলে জিইয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট করে ফুরিয়ে গেলে অনেক টাকার লোকসান। তাই এ যাবৎকালের মহারানি বা পঞ্চায়েতের মতো জনপ্রিয় ওটিটি সিরিজেও গল্পকে ফুরোতে দেওয়া হয়নি পাছে সিজন ৪, ৫ বা ৬ নিয়ে আসার সুযোগ হাত থেকে ফসকে না যায়। মির্জাপুরও তার অন্যথা নয়। গল্পের নটে গাছকে মরতে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বন লেবু ও টাগরি বানি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৫: প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন পরীক্ষায় পাশই করবেন না

কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে দুগোলে ম্যাচ জিততে থাকা দল যে ভাবে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে সময় কাটায়, ঠিক তেমন। অথবা ভোটের আগে রাজনৈতিক নেতারা যেরকম হুংকার ছাড়েন,- ভোটের পর আর সেই হুংকারের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানেও কোনও কোনও চরিত্র বা ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি করেও মাঝপথে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে পরের সিজনে সেই খোলাসুতোর গিঁট জুড়ে নতুন গল্প বোনা যায়।

এই প্রতিবেদন পড়তে থাকা যে দর্শকেরা সিজন ১ এবং ২ দেখেছেন তারা সিজন ৩ দেখলে বুঝতে পারবেন মুন্না চরিত্রটিকে আগের সিজনে শেষ করে দেওয়ার মাসুল গুনতে হয়েছে। কাহিনি চিত্রনাট্যকার এবং অবশ্যই পরিচালককে। পঙ্কজ ত্রিপাঠী যখন কালিন ভাইয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তখন তাঁর এত পরিচিতি এত জনপ্রিয়তা ছিল না। খুব স্বাভাবিকভাবে শিল্পী হিসেবে এখন তার পারিশ্রমিক ও ব্যস্ততা অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। সুতরাং গোটা সিজন ৩ এ সামান্য কয়েক মূহূর্ত আর প্রায় শেষ দৃশ্য ছাড়া তাঁকে ব্যবহার করার সাহস দেখাননি প্রযোজক।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১: ভাঙনের জয়গান গাও

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৩: ‘সুরের পরশে’ তুমি-ই যে শুকতারা

একই কথা প্রযোজ্য বিজয় ভার্মার ক্ষেত্রে, তাঁর চরিত্রের উপস্থিতিও কম। চরিত্রটি পরিণতিহীন হয়ে গিয়েছে। সিজন তিনে বাকি থেকে যাওয়া চরিত্রাভিনেতারা গুণী কিন্তু সিরিজকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য যথেষ্ট ক্ষমতাবান নন। এই সিজনে সংলাপ ও বিশ্লেষণ বেশি। কিন্তু মির্জাপুর কখনই কোনও বিশ্লেষণধর্মী সৃষ্টি নয়, মির্জাপুর তো আর মারিও পুজোর গডফাদার নয়! প্রথম দুই সিজনে যে চমক ছিল তিন নম্বর সিজনে সে চমক বহুল-ব্যবহারে জীর্ণ। শুরুতে রবিঠাকুরের উদ্ধৃতি ধরেই বলা যায় নিজের প্রমাণিত ভালোর ভিড়ে এ বার মির্জাপুর মাঝারি হয়ে গিয়েছে। তবু যাঁরা অ্যাকশন ছবি বা সিরিজ পছন্দ করেন এবং মির্জাপুরের ভক্ত তাঁরা নিশ্চয়ই দেখতে পারেন।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content