রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


 

উইকেন্ড এসকর্ট

এই নামগুলো জানার আগেই বাবু মানে ধৃতিমান চৌধুরী একটা মারাত্মক তথ্য পেয়ে গেল। আর সেটা পেল বুবুর সাহায্যে। যখনই যা কিছু সূত্র আসে সেগুলো সকালে চায়ের কাপ হাতে বুবু সঙ্গে আলোচনা করে বাবু। বুবু তখন ঠুকরে ঠুকরে কাঠবাদাম খায়।
এই কাঠবাদাম বাংলাটা আজকের বঙ্গ-প্রজন্ম জানেই না। তারা কাঠবাদামকে ইংরেজি নামে মানে আমন্ড নামেই চেনে। হিন্দিভাষীরা একেই বলেন বাদাম আর আমাদের বাদাম বা চিনেবাদামকে বলেন মুঙফলি। আচ্ছা চিনেবাদামের উৎপত্তিস্থল কিন্তু আমেরিকা, মেস্কিকো। ভারত, চিন, জাপানে পরে এর চাষাবাদ হয়েছে।

কখনও কথা প্রসঙ্গে হয়তো বাবু বলেছিল যে, তল্লাশি করতে গিয়ে সে রিসর্টের সেই ঘর থেকে একটা ছোট্ট চকচকে হলোগ্রাফিক স্টিকার পেয়েছিল। তারপর নানারকম ঘটনা ঘটেছে। স্টিকারের কথাটা বাবুর মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। সেদিন সকালে কাঠবাদামের ঠোক্কর দিতে দিতে হঠাৎ বুবু ‘বাবু স্টিকার বাবু স্টিকার’ বলে চেঁচাতে লাগল। এ সব চিৎকার চেঁচামেচির খানিক পরেই বুবু বলতে থাকবে, ‘চেঁচাচ্ছিস কেন? কিরে? চেঁচাচ্ছিস কেন?’

বাবু বুবুর কথা স্পষ্ট বুঝতে পারে। তাই তার ‘স্টিকার’ শব্দটা বুঝতে তার এতটুকু ভুল হয়নি। চায়ের কাপটা রেখে সে তড়িঘড়ি ড্রয়ার খুলে ছোট্ট বাক্সের মধ্যে সযত্নে রাখা হলোগ্রাফিক স্টিকারটা বের করল। সেই হলোগ্রাফিক স্টিকার, যাতে লেখা ‘এইচএমবিএস’। শ্রেয়া বলেন, বুবু আমন্ড খায় বলে ওর এত বুদ্ধি। এতে এল-কার্মিটাইন, রাইবোফ্ল্যাভিন আর ফিনাইলালাইন আছে, যা মস্তিষ্ককোষের পুষ্টিসাধন করে। ঠিক কথা। আগেকার দিনে মধ্যবিত্ত বাড়িতে এসব আমন্ড, পিস্তা, আখরোট খাওয়ার চল ছিল না। এখন তো ঘরে ঘরে ছেলেপুলেদের নিয়ম করে এ সব খাওয়ানো হয়। তাই এখনকার ছেলেপুলের তুলনায় তাদের বুদ্ধি কম ছিল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১৯: অবশেষে পুলিশ জানতে পারে নিখিলকে কারা উইকেন্ড এসকর্ট সরবরাহ করত

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-১: রাজমালা ও ইতিহাসের আলোকে ত্রিপুরা

যাই হোক মনে যখন পড়েছে তখন এই হলোগ্রাফিক্স স্টিকারের একটা সুরাহা করতে হবে। মাথায় ছিল না, তাই এটার ব্যাপারে চক্রবর্তী সাহেব, দত্ত বা শ্রেয়া বাসুকে কিছুই বলা হয়নি। হঠাৎ মনে হল, এটা কোনও ওষুধের ফয়েলের অংশ নয় তো? সিওপিডি বা হার্টের কোনও ওষুধ? ঘড়িটা দেখে নিয়ে চট করে একটা ফোন করে বসল ডাঃ কর গুপ্তকে। তিনি যে কার্ডিওলজি স্পেশালিস্ট। অত্যন্ত ভদ্রলোক। এত বিখ্যাত ব্যস্ত মানুষ, কিন্তু তার কথাবার্তা শুনে মনে হয় আপনার এই ফোনের জন্যই যেন তিনি অপেক্ষা করছিলেন।
—হ্যাঁ, মিস্টার চৌধুরী বলুন।
একটি শব্দ উচ্চারণ না করেও পুরোটা শুনলেন। একটু নীরবতা। ডাক্তার কর গুপ্তের বাড়ির পাশ দিয়ে সম্ভবত সাইরেন দিতে দিতে একটা অ্যাম্বুল্যান্স গেল।
—কোথায় পেয়েছেন বললেন?
— রিসর্টের ঘরে। নিখিল সেনের ডেড বডি যে খাটে ছিল ঠিক তার নিচে। কার্পেটের ওপর।
—আই সি। ওষুধের ফয়েলে স্টিকার ঠিক ওভাবে থাকে না। ছোট প্লাস্টিকের কৌটো হলে তার গায়ে লাগানো থাকে বা খোলার ঢাকনার তলায় সাঁটা থাকে। অথেন্টিকেশনের জন্য। ‘এইচএমবিএস’ বললেন না?
—আঁজ্ঞে।
—মিস্টার চৌধুরী আমার খুব চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই স্পট করতে পারছি না। আমাকে একবার হোয়াটসঅ্যাপে ছবিটা তুলে পাঠাতে পারেন। দেখলে হয়তো মনে পড়ে যাবে। ও বাই দ্য ওয়ে,- ছবিটা এমন ভাবে তুলবেন যাতে হলোগ্রাফিক ওয়ার্ডগুলো বোঝা যায়, মানে লাইট পড়ে মার্জ করে না যায়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৯: অনেক যতনে ‘বড়দিদি’-র পর্ব রাখিনু সেথা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৮: সুন্দরবনের ব্যাঘ্র-পরিচয়

নিখিলের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ হয়েছিল, তাদের সকলেই একটি রাতের সঙ্গিনী। চক্রবর্তী সাহেবের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হল, এদের প্রত্যেককে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাটা ঠিক হবে না। প্রথমত, তদন্তের কিনারা না করেই তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে ধাক্কা দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, মিডিয়া এটাকে নিয়ে নানা রকম স্টোরি তৈরি করবে। তাই আমাদের খুব সাবধানে এগোতে হবে। এত ডিটেলস যখন জানা গিয়েছে তখন কে কোন তারিখে ছিলেন সেটা জানাটা খুব জরুরি। ভৈরব চক্রবর্তী ধৃতিমানের কথা মেনে নিলেন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৩: ক্রোধ ও ক্ষমা, কোনটির প্রভাব বেশি? হিংসা ও প্রতিহিংসার ফল কী সুদূরপ্রসারী?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮২: রবীন্দ্রনাথ সাহেব-শিক্ষকদের কাছেও পড়েছেন

এই ভাবেই জানা গেল মৃত্যুর দিন কে ছিল নিখিল সেনের সঙ্গে। মিতুল দে। এজেন্সিকে চাপ দিয়ে আরও জানা গেল যে, আশ্চর্যভাবে এই উইকেন্ড এসকর্টের আগে বা পরে কখনও কোনও উইকেন্ডে কারও সঙ্গিনী হননি। সেটাই প্রথম এবং সেটাই শেষ। অবশ্য প্রথমবারের পরেই একজনের মৃত্যু হয়ে গেল, সেই ভয়ে হয়তো সে আর…এজেন্সি থেকে জানা গেল এসব ক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্ট হয়। অনেকে চেক-আউট টাইম কনফার্ম করলে তার নম্বরে পেমেন্ট চলে যায়। অনেকে চেক-ইন করে অ্যাডভান্স পেমেন্ট নেয়। এই মিতুল দে যদি সেটা তার আসল নাম হয়, যে নম্বর থেকে যোগাযোগ করেছিল সেটার আর কোনও অস্তিত্ব নেই। সিমটা সে নষ্ট করে ফেলেছে। সে চেকিং করেছিল সেটা কনফার্ম করার পরেই এই ঘটনাটা ঘটেছে। ফলে সে কোনও পেমেন্ট নেয়নি। কিন্তু এজেন্সি নিখিল সেনের থেকে পেমেন্ট পেয়েছে। পুরনো নম্বর থেকে সার্ভিস প্রোভাইডিং কোম্পানির কেওয়াইসি রেকর্ড ট্রেস করে জানা গেল এসকর্টের আসল নাম। —চলবে।
 

নিখিল সেন হত্যারহস্য শেষ পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৪ মার্চ ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content