শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি সৌজন্যে: সত্রাগ্নি

 

ঘোমটা (ক্রমশঃ)

ভবানী পাল কয়েকবার সুষমা করের সঙ্গে বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে কথা বলেছে, কিন্তু সুষমার ছেলে এবং বৌমা পল্লব আর বিউটির সঙ্গে ভবানী পালের আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। এই ব্যাপারটা আবার কাকুকে সন্দেহ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এটা তো হতেই পারে যে পল্লব বা বিউটির সঙ্গে এই যে ঝগড়াটা সেটা পুরোপুরি বাইরের লোকের সামনে একটা নাটক। পল্লব এবং বিউটির সঙ্গেই ষড়যন্ত্র করে বাড়ির বারান্দার থেকে কাকু নেমে এসে খুনটা করে গিয়েছেন।
ইদানীং বুবুর সঙ্গে এ নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি। সকালবেলায় চা খেতে খেতে এসব নিয়ে ভাবছিল বাবু। হঠাৎ কানের এল বুবুর গম্ভীর কণ্ঠস্বর—
—কী বুঝছিস বাবু? কী বুঝছিস? কেস এগোলো?
—নারে বুবু, একটু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
—তাল গোল তাল গোল।
—ছেলে বৌমা কাকু কাকিমা প্রত্যেকের মোটিফ রয়েছে। মলিনার কোন মোটিভ আছে বলে আমার মনে হয় না কিন্তু জড়িয়ে গেছে ফলে এখনও বেল পায়নি।
বুবু কাটা রেকর্ড এর মতো বলতে থাকে।
—এখনও বেল পায়নি এখনও বেল পায়নি। শ্রেয়া কী করছে? শ্রেয়া কী করছে?
—শ্রেয়া কী করবে চেষ্টা করছে। জানিস বুবু আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে কিন্তু যতক্ষণ না গ্লুকোমিটারের টেস্ট স্ট্রিপ-এর রেজাল্ট আসছি আমি ঠিক সিওর হতে পারছি না।
কথাটা শেষ হবার আগেই মোবাইলে শ্রেয়ার ফোন আসে। বেজে ওঠে সোনার কেল্লা সিনেমার ক্যামেল রাইড থিম।
—হ্যাঁ, শ্রেয়া।
—একটা সাংঘাতিক ক্লু পাওয়া গিয়েছে।
—কী?

টেস্ট স্ট্রিপে পয়জন ছিল। এতোটুকু সময় নষ্ট না করে ধৃতিমান চৌধুরী দ্রুত পৌঁছল গোয়েন্দা কর্তা ভৈরব চক্রবর্তীর অফিসে। গ্লুকোমিটারের টেস্ট স্ট্রিপে যে বিষ পাওয়া গেছে সেটা বিষাক্ত পদ্মগোখরো সাপের ভয়ংকর বিষ।
—স্যার সবকটা আনিউসড স্ট্রিপে কি একই বিষ পাওয়া গিয়েছে?
—না, ওই প্যাকেটে প্রায় ৩৫ টার মতো ফ্রেশ স্ট্রিপ ছিল। ওরা প্রায় দশটার মতো টেস্ট করেছে।
—স্যার বাকি ২৫ টার টেস্ট করাটা খুব দরকার।
শ্রেয়া বলে।
—কিন্তু ধৃতিমান ডেড বডিতেও একই বিষ পাওয়া গেছে কিন্তু কনসেনট্রেশনটা কম
ধৃতিমান প্রায় লাফিয়ে ওঠে।
—দ্যাটস ইট! এটার জন্যই আমি অন্য সবকটা স্ট্রিপের টেস্ট করাতে বলছি।
ফরেনসিকে ফোন করতে করতেই ভৈরব চক্রবর্তী জানতে চাইলেন।
—তোমার হান্চটা কোথায়? একজ্যাক্টলি ঠিক কী মনে হচ্ছে?
—আমি।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু, পর্ব-৭: বাড়ি লিখে দেওয়া নিয়ে ছেলে-বৌমার সঙ্গে প্রায়শই অশান্তি হতো

দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-১: তিনকন্যা

ফরেনসিকের লাইনটা পেয়ে গিয়ে হাত তুলে ভৈরব চক্রবর্তী ধৃতিমানকে থামান।
—মফিজুল তোমরা কি গ্লুকোমিটারের প্যাকের বাকি স্ট্রিপগুলো টেস্ট করছো?
—ভেরি গুড। সবকটা রেজাল্ট পেতে কতটা সময় লাগবে? কনফিউশন?
কনফিউশন শব্দটা শুনে বাবু তার স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করল। হাতটা বাড়িয়ে ভৈরব চক্রবর্তীর কাছে ফোনটা চাইল চোখে মুখে একটু কথা বলার জন্য অনুরোধ।
—মফিজুল ধরো! তোমার বন্ধু ধৃতিমান কথা বলতে চাইছে।
—হ্যালো, কি খবর দোস্ত?
মফিজুল শব্দের অর্থ হলো বন্ধু বা পরম বন্ধু। সেই জন্যই ধৃতিমান এবং মফিজুল পরস্পর পরস্পরকে দোস্ত বলে সম্বোধন করে।
—আমার আগেই মনে হয়েছিল তুমি সবকটা স্ট্রিপের টেস্ট করাতে চাইবে। কিন্তু কয়েকটা স্ট্রিপের রেজাল্ট ম্যাচ করছে না – তাই রিপিট করছি।
—এক্সেলেন্ট!
—তার মানে?
—সব টেস্ট স্ট্রিপে এক পয়জন না-ও থাকতে পারে – এটাই আমার সন্দেহ ছিল। যে কোন পয়জন হতে পারে।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৬: স্বপ্নে আমার মনে হল

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৪: শ্যামপুকুরে ঠাকুর

—আর একটা ব্যাপার একটু আনিউস্যুয়াল। গ্লুকোমিটারে লাস্ট ডেটার প্রায় ১২টা নো ডেটা এরর।
—দ্যাটস গ্রেট! এটাই হবার কথা। পয়জন থাকার জন্যে টেস্ট স্ট্রিপে ইন্টারফেয়ারেন্স হবে।
বাকি ২৫টা স্ট্রিপের ১০টায় আরসেনিক পাওয়া গেল। ৮টায় সাপের বিষ আর ৭টায় সায়ানাইড। শ্রেয়া যে আলাদা স্ট্রিপ জমা করেছিল সেটা ইউসড। তাতে সুষমা করের ব্লাড স্যাম্পেল মিলেছে। সেই স্ট্রিপে সায়ানাইড ছিল। এরর আসায় সুষমা একটার পর একটা টেস্ট স্ট্রিপে আঙুলের রক্তের স্পর্শ করেছে আর প্রতিবার বিষের মাত্রা বেড়েছে। কিন্তু ১২টা ভুল রেজাল্টের ১টা মাত্র স্ট্রিপ পাওয়া গেল। বাকি ১১টা কে সরিয়ে নিল? খুনি নিজে? নাকি অন্য কেউ? অনেকগুলো প্রশ্ন।

পল্লব এবং বিউটি সাস্কেসন সার্টিফিকেটের জন্যে কাউসিন্সলরের কাছে যাতায়াত করছে খবরটা পাকা। কিন্তু এটা তো আইনি পদ্ধতি। অপরাধ নয়। বারবার একটা জায়গায় এসে তদন্তটা থমকে যাচ্ছে। শ্যামলালের ঘুংঘট! ভাবিজি জানালা দিয়ে ঘুংঘট পরে তাকিয়ে ছিলেন কেন? তারমানে ঘোমটা পাড়া মহিলা সুষমা কর ছিলেন না। যে ছিল সে তার পরিচয় গোপন করার জন্য সুষমা করের শাড়ি ব্যবহার করেছিল। সে খুনি কিংবা খুনির সহায়ক। সে এসেছিল ব্যবহার করার টেস্ট স্ট্রিপগুলো সরানোর জন্য। হয়তো ফেরার তড়িঘড়ি ছিল তাই বাক্সের মধ্যে ফ্রেশ যে টেস্ট স্ট্রিপেও যে পয়জন মেশানো ছিল সেই সূত্রটা খেয়াল রাখতে পারেনি। যেভাবে ঘুমের ওষুধ মেশানো মিষ্টি মলিনা যে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিয়েছে সেটাও সে ভাবতে পারেনি।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর

এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-২: ইতিহাসে অসম

এই সূত্রগুলো পাবার পর মলিনার উপর থেকে সন্দেহের বোঝাটা হালকা করা গেছে। তার জামিনের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একদিন ছাড়া একদিন তাকে থানায় গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসতে হবে। পল্লব এবং বিউটি নিয়ম মত ১২ দিনের শ্রাদ্ধ করার কথা ঠিক করেছিল। কিন্তু সুষমা করের মৃত্যুটা বিষ দিয়ে খুন এ খবরটা চাউর হবার পরে তারা চার দিনে কাজ সেরেছে।

হঠাৎ শ্রেয়া মলিনার কাছ থেকে পাওয়া একটা দারুণ খবর দিল। সুষমা কর ভাবতেন গ্লুকোমিটারে টেস্ট করেন বলে তাঁর ডায়াবিটিস কন্ট্রোলে থাকে। আসলে ব্লাড গ্লুকোজ কন্ট্রোলে আছে না নেই সেটা জানতে এই টেস্ট সেটা তিনি বুঝতেন না। এর মধ্যে একদিন টেস্টের পাতা শেষ হয়ে যেতে খুব রাগারাগি করছিলেন।
 

সুষমা কর হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৩

* হ্যালো বাবু! (Hello Babu) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ২য় খণ্ড।

Skip to content