পর্ব-১৫: সারদা দাদার থেকে চিল্পিঘাটি
ভোরামদেব মন্দির চত্বর থেকে বেড়িয়েই পুষ্প সরোবর লেক, বোটিং করা যায়। এই লেকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মৈকাল পর্বতের ঘন ছায়া এবং গভীর জঙ্গলের ছায়া। তার মাঝখানে সূর্যের আলো পড়ে ঝকঝক করতে থাকে লেক। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভাবে জলের উৎস ওই লেক, খুব সুন্দর পরিবেশ। শুধু এই লেকের পারে বসেই আপনি কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারেন কারণ ভারতের অন্য যেকোনও জায়গায় এই ধরনের লেকের পাশে আপনি যত ট্যুরিস্ট পাবেন এখানে তার এক কণাও পাবেন না।
এমনকি স্থানীয় অধিবাসীরাও খুব কম সংখ্যক আসেন। ফলে একটা নির্জনতা, নিশ্চিন্তি আপনি এখানে পেতে পারেন। এখান থেকে বেড়িয়ে পাহাড়ের পথ ধরে দূর দূরবর্তী গ্রামগুলোর পাশ দিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন সারদাদাদার ড্যামে। লাল মাটির পথ এবং ছবির মতো পৃষ্টভূমি নিয়ে পাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে আছে সারদা দাদার ড্যাম। দূর থেকে দেখলে মনে হবে একখণ্ড নীল কাপড় আপনার সামনে কেউ ফেলে রেখেছে।
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৪: কাওয়ার্ধা পরিভ্রমণ
গল্প: ১৫ অগস্ট, ২২০৫
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১২: দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ঢুকে পড়লাম নিকটবর্তী একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে
আশ্চর্য লক্ষ্যণীয় এই ড্যামে প্রবেশের রাস্তায় প্রচুর গাছ, কিন্তু ড্যামের চারপাশে একদমই গাছ নেই, ফলে এই ড্যামে যাবার সবথেকে ভালো সময় খুব সকাল কিংবা সূর্য ডোবার কাছাকাছি সময়। কিন্তু জায়গাটি এত নির্জন এবং স্থানীয় কোনও দোকান পাট কিছুই নেই এমনকি লোকজনের যাতায়াতও খুব কম, সুতরাং বিকেলের দিকে যাওয়াটা এই মুহূর্তে খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যদি না ছত্তিসগড় ট্যুরিজম সেখানে কোনওরকম ব্যবস্থা করেন। একটু কষ্ট করেই রোদের তেজ আপনাকে সকালে কিংবা বিকেলের দিকেই যেতে হবে, যখনই যাননা কেন তীব্র রোদকে সহন করে ড্যামের পাশে গিয়ে বসে থাকতে পারেন। বোটিংএর ব্যবস্থা আছে, লেকের মাঝখানে চলে গিয়ে পেছনের পাহাড়গুলো দেখতে পারেন। সেখান থেকে দূরে মৈকাল পর্বতের শ্রেণিগুলো দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: ‘পুরুষ মানুষের কাজে হাত দিলে এমনই হবে, মহিলাদের এসব সাজে না’
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৮: রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতেন, সাঁতার শেখাতেন
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬: রামচন্দ্রের আবির্ভাব ও বসুন্ধরাকন্যা সীতার অনুষঙ্গ
সারদা দাদার ড্যাম থেকে ফেরার পথে আমার বাহন চালক চিল্পিঘাটের একটি টাওয়ারের কাছে প্রায় জোর করে বলল—‘উঠে দেখুন কী আছে?” উঠে গিয়ে মৈকাল পর্বতের নানা ভাগ এবং দূরে সারদা দাদার ড্যাম দেখতে পেলাম, সে এক অপূর্ব দৃশ্য। কিন্তু তার থেকেও অপূর্ব এক অনুভূতি হল, সেখানে গিয়ে দেখি দু’ জন স্থানীয় মহিলা বসে আছেন। ওয়াচ টাওয়ারে বসে তাঁরা কী করছেন? জানার কৌতূহল থেকে প্রশ্ন করলাম। একটি মেয়ে, বেশ বলিয়ে-কইয়ে, বলল— “ফোন করতে এসেছি।”
আরও পড়ুন:
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১২: স্ট্যানলি ম্যাথুজ— একজন কিংবদন্তি, লড়াই আবেগ আর মেহনতী জনতার বন্ধু
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৬: পঞ্চম-সভার তিন রত্ন বাসু-মনোহারী-মারুতি
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৫: শরীর ফিট রাখতে রোজ ভিটামিন টনিক খাচ্ছেন?
আমি জিজ্ঞাসা করলাম—“এখানে কেন? বাড়িতে নয় কেন?” ৩ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি কিন্ত সেখানে কোনওরকম টাওয়ার নেই। ফলে এখানে এসে তাদের পরিবারের লোকেরা মানে তাদের স্বামীরা যারা সকলেই প্রায় সেনাবাহিনীতে কাজ করে তাদের সঙ্গে কথা বলে। কথা প্রসঙ্গে জানাল তারা সকলেই দক্ষিণ ছত্তিসগড়ের বাসিন্দা, দান্তেয়ারা ও জগদ্লপুরের বাসিন্দা, বিয়ের পরে এখানে এসেছে। জিজ্ঞাসা করলাম— “শ্বশুরবাড়ি এখানে?”, বলল— “না, পাহাড়ের পাদদেশে বেশ কিছু জমি সস্তায় পেয়েছে। ফলে তারা সেখানে বসতি স্থাপন করে। চাষবাস করে নিজেদের অন্ন-সংস্থান করছে।
অদ্ভুত জীবনযাপন, স্বামী যখন ছুটিতে ফিরে আসে, তখন তারাও এই মাটির বাড়িগুলো বন্ধ করে ফিরে যায় তাদের মূল বাসস্থান দান্তেয়ারা বা জগদলপুর। কিন্তু বাদবাকি সময় চিল্পিঘাটিতে মহিলারা চাষবাস করে কিন্তু বিষয়টি ভাবতে খুব ভালো লাগল যে, বাড়ির পুরুষটি যখন সেনাবাহিনীতে কাজ করছে তখন তাদের স্ত্রীরা তারাও জীবনে কঠোর পরিশ্রম করছে অচেনা জায়গায়, অচেনা মানুষদের সাথে লড়াই করে প্রতি মুহূর্তে জীবিকা অর্জন করছে।
এখান থেকে আবার ফিরে গেলাম বৈগা রিসর্টে। ওয়াচ টাওয়ারে দাড়িয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা মিশ্রিত আকাশে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ই চারপাশে আলো জ্বলে উঠল। হালকা হিমেল হাওয়া আর দেশি মুরগীর স্থানীয় স্বাদ উপভোগ করতে করতে প্রস্তুতি নিলাম চিল্পিঘাটিকে বিদায় জানাবার। নতুন ভোরে নতুন পথ।—চলবে
এখান থেকে আবার ফিরে গেলাম বৈগা রিসর্টে। ওয়াচ টাওয়ারে দাড়িয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা মিশ্রিত আকাশে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ই চারপাশে আলো জ্বলে উঠল। হালকা হিমেল হাওয়া আর দেশি মুরগীর স্থানীয় স্বাদ উপভোগ করতে করতে প্রস্তুতি নিলাম চিল্পিঘাটিকে বিদায় জানাবার। নতুন ভোরে নতুন পথ।—চলবে
* চেনা দেশ অচেনা পথ (Travel Offbeat): লেখক— অর্পিতা ভট্টাচার্য (Arpita Bhattacharya), অধ্যাপিকা, বাংলা বিভাগ, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। শৈলীবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমান আগ্রহ ও কাজ ভ্রমণ-সাহিত্য, ইকো-ট্যুরিজম, কালচার ট্যুরিজম, স্মৃতিকথা নিয়ে। এছাড়াও মুক্তগদ্য চর্চা ভালো লাগার জায়গা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ এবং ৫০ টিরও বেশি প্রবন্ধ। সম্পাদনা করেছেন একটি বই এবং ধারাবাহিক সম্পাদনা করেন রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টারের জার্নাল।
বাইরে দূরে
লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com