রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


কেটলমোরেন ড্রাইভ।

ইতিমধ্যে আমার এক বন্ধুও লিখে পাঠাল যে, সেও আসবে এদিকে রং দেখার জন্য। সপ্তাহান্তে ছুটি কাটিয়ে ফিরে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই ‘ফল-ব্রেক’ বলে একটি ছুটি দেওয়ার চল আছে। সপ্তাহের শেষে সেই ছুটির দিনটাকে যোগ করে দিলেই তিন চারদিন টানা ছুটি পাওয়া যায়। এখানে এটাই রীতি। সব ছুটি সপ্তাহের শেষে শনি রবিবারের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয় যাতে লোকজন ‘লং-উইকএন্ড’ উপভোগ করতে পারে। সেরকমই ফল-ব্রেকের লং উইকএন্ড-এ আমার বন্ধু চলে এল বৃহস্পতিবার রাতেই। ম্যাডিসন বিমানবন্দর থেকে তাকে তুলে নিয়ে এলাম। আগে থেকে কিছুই পরিকল্পনা করা হয়নি। বেশি পরিকল্পনা করার কোনও মানেও হয় না কারণ ফল কালার দেখতে পাওয়া অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে।
প্রথমত ওই ওয়েবসাইটে দেখতে হবে যে, রাজ্যের কোন অঞ্চলে তখন ‘ফল কালার পিক’ চলছে অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি রং এসেছে। দ্বিতীয়ত দেখতে হয় ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা। কারণ ফল কালার পিক-এর মধ্যে যদি একবার জোরে ঝড়বৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে একদিনেই সব পাতা ঝরে যাবে। আর সেখানে পৌঁছে ‘ঝরা পাতার স্মৃতি’ আর শুকিয়ে যাওয়া গাছের ‘পাঁজর ফাটানো হাসি’ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না। আর তৃতীয়ত যেদিন বেড়াতে যাব সেদিনকার মেঘলা আবহাওয়ার সম্ভাবনা। যথাযথ সূর্যের আলো না পড়লে ওই উজ্জ্বল রং বোঝা যায় না।

আমার বন্ধু যে সপ্তাহে এসে পৌঁছল তখন ফল সবে সবে ঢুকছে। অর্থাৎ রাজ্যের উত্তরে জায়গাগুলোতে তখন ফল কালার পিক। বৃহস্পতিবার রাতে বসেই সব ঠিক করে ফেললাম। যে পরের দিন প্রথমেই যাওয়া হবে ডোর কাউন্টি। তারপর সেখানে সম্ভব হলে কোনও হোটেলে একটি ঘর নিয়ে থেকে যাওয়া যাবে আবার পরের দিন অন্য কিছু জায়গা ঘুরে চলে আসা হবে।

হোলিহিল গির্জা, মিলওয়াকি।

আরও পড়ুন:

বাইরে দূরে: উৎসব-মুখর মথুরা: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ব্রজভূমি দর্শন /১

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-২২: শরীরচর্চা: জোড়াসাঁকো থেকে শান্তিনিকেতন

ডোর কাউন্টি এই রাজ্যের তথা গোটা দেশেরই সবচাইতে জনপ্রিয় ফল কালার গন্তব্যগুলির মধ্যে একটা। এটি গ্রিন বে এবং লেক মিশিগানের মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি উপদ্বীপ বা পেনিনসুলা। মানে এর তিনদিকে জল আর একদিকে উইসকনসিন রাজ্যের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। রাস্তা ধরে এখানে চলে যাওয়া যায় একদম উপদ্বীপের মাথায়। আমার বাড়ি থেকে এর দূরত্ব প্রায় আড়াইশো মাইল মতো। গাড়িতে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা।

পরের দিন ভোর থাকতে উঠে পড়লাম দুজনে। ছ’টার মধ্যে প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে, আমার বাড়ির পাশের দোকান থেকে এক পেয়ালা করে করা কফি নিয়ে, গাড়ি হাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। আমার বহু দিনের জমে থাকা সাধ অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। তবে ফল কালারের রূপ দেখার জন্য সাড়ে চার ঘন্টা অপেক্ষা করতে হল না। মিলওয়াকি ছাড়াতেই রঙের ছিটে ফোঁটা দেখা দিতে শুরু করল। আর যত উত্তরে যেতে লাগলাম বাড়তে লাগল তার ঘনত্ব, তার প্রাণবন্ততা।
আরও পড়ুন:

পুজোয় ত্বকের জেল্লায় সবাইকে চমকে দিতে এইগুলি মেনে চলুন

হোমিওপ্যাথি: গাল জুড়ে এক রাশ ব্রণ? মুক্তি পেতে এগুলি মেনে চলছেন তো?

উইসকনসিনের রাস্তায় কোনওখানে।

আমার বন্ধুর দিকে চেয়ে দেখলাম যে সে আর কথা বলার পর্যায়ে নেই। জানলায় চোখ লাগিয়ে, হাঁ করে গিলছে বাইরের প্রকৃতিকে। বোধ করি খোলা চোখে দিবা স্বপ্নের পর্যায়ে চলে গেছে রঙের বিহ্বলতায়। আমিও হয়তো চলে যেতাম। নেহাত গাড়িতে চালকের আসনে বসে সে বিলাসিতার উপায় নেই। তবুও ক্রুজ কন্ট্রোলে গাড়ির গতি স্থির করে স্টিয়ারিং ধরে শুধু বসে রইলাম। দু’ তিনবার ডাকার পরে সে সাড়া দিল। অনুরোধ করলাম কিছু ফটো তোলার জন্য। দু’ একটি তোলার পরেই তার সাফ কথা, ফটো তুলে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না, এতে প্রকৃতিকে ভালো ভাবে উপভোগ করা যায় না। কী আর করা। হক কথা। বিতর্কের অবকাশ নেই। কাজেই আমার গাড়ির সানরুফের মধ্যে দিয়ে চুইয়ে পড়া সূর্যের আলোর মধ্যে দুজনে বসে বসে দেখতে লাগলাম বাইরের প্রকৃতিকে। শেষ এক ঘণ্টা মতো আর কেউ কারও সঙ্গে কোনও কথা বলিনি। — চলবে

* ফল কালারের রূপ-মাধুরী (Wisconsin Fall Color : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content