বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

বাথটাব (পর্ব-১১)

না, ইউটিউবার সরাসরি ডাক্তার সুরজিত ব্যানার্জির নাম উল্লেখ করেছেন তাঁর মধ্যরাতের ভিডিয়োতে। আর গত ভিডিয়োতে এয়ার টিকিট, রিভার ক্রুজের টিকিট সব জায়গায় ডক্টর লেখার পরের অংশটুকু কালো কালিতে ঢাকা ছিল। আজকের ভিডিয়োতে সেই ডকুমেন্টগুলোতেই আর কোনও রাখঢাক নেই। জ্বলজ্বল করছে ডাঃ সুরজিৎ ব্যানার্জির নাম ও তাঁর লাউডন স্ট্রিটের ফ্ল্যাটের ঠিকানা। ভিডিয়ো শেষ হতেই নিউ টাউনের হোটেল থেকে ফোন। না সেই মহিলা স্টাফ নন। তাঁর বস। ঘটনার দিন যিনি ডিউটিতে ছিলেন। এঁর সঙ্গেও ভালো আলাপ রয়েছে ধৃতিমানের।
—সরি মিস্টার চৌধুরী আমি বোধহয় একটু বেশি রাতে ফোন করে ফেললাম।
—একেবারেই নয়, এখনই আমি কথা বলতে কমফোর্টেবল।
—ও দ্যাটস গ্রেট। আসলে আপনি আমাদের ডেস্কের আর একজন স্টাফ মিস মিতালি বসুর কাছে কিছু ইনফরমেশন চেয়েছিলেন
—হ্যাঁ, হ্যাঁ!
—আমি সেই ব্যাপারেই কথা বলছি।
—আপনি বলুন আমি নামগুলো নোট করে নিই।
—না আসলে একটা এক্সেল ফরম্যাটে ইনফরমেশনটা তৈরি আছে। নাম টাইম অফ এন্ট্রি টাইম অফ এক্সিট। সেটা আমি আপনাকে মেল করতে পারি বা যদি বলেন হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে পারি!
—হোয়াটসঅ্যাপ এই পাঠান। তবে এত ডিটেল দরকার ছিল না
—না, এটাতো বানাতেই হল। এসিপি রণজয় রায়ও চেয়েছেন?
—আচ্ছা? কবে চেয়েছেন?
-আজই! উনি তো এসেছেন! কৌশিকী ম্যাডামের রুমে চেক ইন থেকে ডেথইন্সিডেন্ট পর্যন্তএন্ট্রি-এক্সিটের সব ভিডিয়ো ফুটেজ সিজ করেছেন।
—ওকে! ফাইলটা আপনি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিন। একটা নাম একটু চেক করুন তো!
—জানি স্যার! আছেন। ডক্টর সুরজিত ব্যানার্জী! এসিপি স্যারও জানতে চেয়েছিলেন।

ফোনটা রাখার পর। একটু সময় চুপ করে বসে রইল ধৃতিমান। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এল। নামটা জেনে গিয়েছে। সুতরাং মেসেজটা দেখবার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। তবু ফোনটা টেনে নিয়ে দেখল. হোটেল থেকে ফাইলটা আসেনি।শ্রেয়া বাসু মেসেজ করে জানতে চেয়েছেন—‘জেগে আছেন’। উত্তর গেল ‘আছি’। আবার একটা মেসেজ এল, এটা হোটেল থেকে। অ্যাটাচমেন্ট-সহ। একটা থাম্বস আপ পাঠিয়ে দিল বাবু!
ফোনের রিং টোনের ভলিউমটা একটু কমিয়ে দিল বাবু। শ্রেয়া হয়তো ফোন করবেন। বুবু জেগে যেতে পারে। হয়ত শ্রেয়াও যাতে তার অসুস্থ মায়ের ঘুম না ভেঙে যায় তার জন্য একটু সময় নিয়ে ফোন করছে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৫৮: বাথটাব/১০

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০২: দ্বারকানাথের বেলগাছিয়ার বাগানবাড়ি

কলকাতা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছু কিছু মানুষ এখনও জেগে আছেন। কাজে-অকাজে অনাহারে দুশ্চিন্তায়। শোকে বা সুখে, খুশিতে। প্রথম ফিচার ছবির এগ্রিমেন্ট সাইন করে অ্যাডভান্স পেমেন্ট নেওয়ার দিন বাড়ি ফেরার পর গোটা রাত উত্তেজনায় ধৃতিমান ঘুমোতে পারেনি। এতদিন বাদে তার স্বপ্ন সফল হতে যাচ্ছে। তার চিত্রনাট্য তার ভাবনায় কেউ একজন বিশ্বাস করে টাকা লগ্নি করতে রাজি হয়েছেন। কিশোর বয়সে যে রাতে মাকে পুড়িয়ে ফিরে এসেছিল সেই রাতেও বাবু ঘুমোতে পারেনি। এইমুহূর্তে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে স্নান খাওয়া-দাওয়া সেরে অনেকে বিছানায় আশ্রয় নেবার তোড়জোড় করছেন। আবার এই মুহূর্তেই শোকে পাথর হয়ে রাত জাগছেন দুর্গাপুর স্টিলপ্লান্ট-এর কর্মী সুরঞ্জন দত্তগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৭: রাতচরা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৪: শ্রীমার গৃহী ভক্তদের সন্ন্যাসদীক্ষা

এখন আর অফিস যাবার কথা ভাবতে পারছেন না। এই ঘটনা শোনার পর শোকস্তব্ধ হয়ে কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই কৌশিকীর পোস্টমর্টেম করা হয়েছি। বাবা-মা হিসেবে তারা নিশ্চয়ই কৌশিকী শারীরিক পরিণতির কথা জানতে পেরেছেন। একই সঙ্গে কন্যা হারানোর শোক এবং কলঙ্কের কালিমায় সুরঞ্জনবাবু ও তাঁর শিক্ষিকা স্ত্রীর মধ্যবিত্ত আত্মসম্মান দুমড়েমুচড়ে লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়েছে। চোখ নামিয়ে বলেছেন, দুর্গাপুরে নয় দাহ কাজ কলকাতাতেই করা হবে। পুলিশ আর কৌশিকীর মা-বাবা ছাড়া সেদিন কেউই কৌশিকির প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা জানতেন না।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৪: আমি তাইতে কি ভয় মানি!

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’

আশপাশের অনেকেই সেদিন ছিলেন, সুরঞ্জন ও তাঁর স্ত্রী সারাটা সময় আতঙ্কে থেকেছেন। সাংবাদিক টিভি ক্যামেরা সকলকে এড়িয়ে গিয়েছেন। সকলের সামনে কেউ যদি ফট করে কথাটা তুলে ফেলে। তেমনটা ঘটেনি। কিন্তু দুর্গাপুর ফিরে যাবার পর গত রাতের ভিডিয়ো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গাপুরের ডিএসপি কলোনিতে সকলেই সুরঞ্জন দত্তগুপ্তকে একডাকে চেনেন। কত নতুন লোক এসে তাদের কোয়ার্টার দেখে যেতো। কৌশিকী দুর্গাপুরের বিধাননগরে চার কামরার বিরাট ফ্ল্যাট নিয়েছে। এই ছবি রিলিজ হবার পরেই সেই ফ্ল্যাটে ইন্টেরিয়র হওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৬: আলাস্কার আকাশে অহরহ ব্যক্তিগত বিমান ওঠানামা করে

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৫: ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এবং চলচ্চিত্র

এই সব বলতেই শ্রেয়া বাসু ফোন করেছিলেন খানিক পরে। কাল রাতের ইউটিউবানদের ভিডিয়ো দেখে, শ্রেয়া আজই ভোরবেলা দুর্গাপুর গিয়েছিলেন। ফিরেছেন আজ বেশ রাতে। মা বাবার সঙ্গে নিজের পরিচয় দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। শ্রেয়া বলতে থাকল…।—চলবে।

কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content