ছবি: প্রতীকী।
বাথটাব (পর্ব-৮)
জাপানে পোমোডোরো নামে এক পদ্ধতিতে বলা হয়। একটানা মনস্থির করে ২৫ মিনিট কাজ করো, তারপর পাঁচমিনিট মনকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নাও। আবার কাজ শুরু করো। বাবু সেটাকেই একটু বদলে নিজের মতো করে নিয়েছে। ওর কাজে সাংঘাতিক মনঃসংযোগ করতে হয়, সেটা একটানা অনেকটা সময় হতে পারে। আজই যেমন সন্ধে থেকে ঘড়িতে ছয় ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখন রাত বারোটা। ট্যাক্সিতে ফিরতে ফিরতে এই তদন্তর থেকে মনকে একদম সরিয়ে নিতে বাবু এই সব ভাবছিল।
এখন সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপে বাজারে ট্রেনে অটোরিক্সায় শোনা খিস্তিখাস্তার ছিটে ছড়ানো থাকে। যুগের চাহিদা। প্রেমিক অভ্যাসবশত প্রেমিকার সঙ্গেও নোংরা খিস্তি মেশানো ভাষায় কথা বলে। দর্শকেরা আধুনিকতার চাহিদা মেনে সপরিবারে উপভোগ করেন। টিভিতে দেখানো হলে রক্ষে; টুঁইটুঁই করে শব্দ করে সেইসব মজাদার গুরুত্বপূর্ণ টকঝাল মিষ্টি সংলাপ বাদ পড়ে। টিভিতে তো বিনি পয়সার ভোজ! এক দু’খানা চাকুমচুকুম পদ বাদ পড়া স্বাভাবিক! কিন্তু পয়সা খরচা করে সিনেমা বা ওটিটিতে ওয়েব সিরিজ দেখতে গেলে এ সব দেখা যায় শুনে মন ভাল করা যায়। খবরের কাগজে তো ছাপা যায় না, এখনও বিজ্ঞাপনে এসব সংলাপ লিখে প্রচার করার মতো আধুনিক হইনি বোধহয়!
এখন সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংলাপে বাজারে ট্রেনে অটোরিক্সায় শোনা খিস্তিখাস্তার ছিটে ছড়ানো থাকে। যুগের চাহিদা। প্রেমিক অভ্যাসবশত প্রেমিকার সঙ্গেও নোংরা খিস্তি মেশানো ভাষায় কথা বলে। দর্শকেরা আধুনিকতার চাহিদা মেনে সপরিবারে উপভোগ করেন। টিভিতে দেখানো হলে রক্ষে; টুঁইটুঁই করে শব্দ করে সেইসব মজাদার গুরুত্বপূর্ণ টকঝাল মিষ্টি সংলাপ বাদ পড়ে। টিভিতে তো বিনি পয়সার ভোজ! এক দু’খানা চাকুমচুকুম পদ বাদ পড়া স্বাভাবিক! কিন্তু পয়সা খরচা করে সিনেমা বা ওটিটিতে ওয়েব সিরিজ দেখতে গেলে এ সব দেখা যায় শুনে মন ভাল করা যায়। খবরের কাগজে তো ছাপা যায় না, এখনও বিজ্ঞাপনে এসব সংলাপ লিখে প্রচার করার মতো আধুনিক হইনি বোধহয়!
একটা সময় প্রায় ৮০ ভাগ সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজে অবিরাম পরকীয়া নষ্টামো খুনধর্ষণ গালিগালাজ চলতেই থাকতো! হালে শতকরা হিসেবে সেটা একটু কম হয়েছে। কিন্তু যেসব পরিচালক/পরিচালিকারা এই একটা বিষয়ই আত্মস্থ করতে পেরেছেন তাদের তো নিজেদের বদলানো সম্ভব নয়! একদিকে কল্পলোক থেকে নানান ধারায় পরকীয়া নষ্টামো খুনধর্ষণ গালিগালাজের নিত্য নতুন আমদানি ঘটবে। কারণ সৃষ্টি হল সমাজের দর্পণ। যা ঘটছে তারই বাস্তব চিত্র ছোট বা বড় পর্দায় চিত্রায়িত হচ্ছে। আবার একই সঙ্গে আমরা বলব সমাজে ঘুণ ধরে গিয়েছে, পচন ধরে গিয়েছে, মানুষের মন বিকৃত হয়ে গিয়েছে, অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ যেন এক ঘূর্ণাবর্ত!
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৮: খলনায়িকার ধার্মিক পুত্র?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ
এত সুনিশ্চিতভাবে আধুনিক লোকজন ধৃতিমানের এই মতামত শুনলে ফেসবুকের পাতায় পাতায় তাকে সেকেলে জ্যাঠামশাই অবাস্তব কথাবার্তা এইসব বলে বাপবাপান্ত করে ছাড়বে। এই ভয়ে সে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম কোথাও নিজের অস্তিত্ব রাখেনি। হোয়াটসঅ্যাপে সামান্য কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কাজের সূত্রে। ভালো সিনেমা খুঁজতে বা সিনেমা সংক্রান্ত বিশ্বখ্যাত পরিচালকদের সাক্ষাৎকার দেখতে বা বিশেষ কোন বিষয়ে জানার থাকলে ইউটিউব খোলে। রাজনৈতিক নেতাদের কচকচি বা ইউটিউবার বিশেষজ্ঞদের মতামত মোবাইলে এলেই নট ইন্টারেস্টেড বাটন টিপে দেয়। কিন্তু আজ হঠাৎ করে এক ইউটিউবারের একটা ভিডিওতে তার চোখ আটকে গেল।
প্রায় মধ্য রাতে বুবুর যাতে ঘুম না ভাঙ্গে তাই অতি সাবধানে দরজায় চাবি খুলতে খুলতে বাবু ভাবছিল আজ যদি সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটক বেঁচে থাকতেন তাঁরা আজকালকার এই সমস্ত অনাসৃষ্টি দেখে ঠিক কি বলতেন? সম্ভবত বাকরুদ্ধ হয়ে যেতেন । কিছুই বলতে পারতেন না তাই ঈশ্বর তাঁদের নিজের কোলে নিশ্চিন্ত আশ্রয় দিয়েছেন।
হোটেলে অতটা সময় কাটানোর পর ডেস্ক ম্যানেজার ধৃতিমান না চাইলেও তাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে রেস্তোরাঁয় ডিনার করিয়ে দিল। ধৃতিমান বিল মেটাতে জোরাজুরি করার আগেই তিনি দেখিয়ে দিলেন সিস্টেমে এই অর্ডারটা কম্প্লিমেন্টারি শো করছে। ইচ্ছে থাকলেও পেমেন্ট করা যাবে না।
প্রায় মধ্য রাতে বুবুর যাতে ঘুম না ভাঙ্গে তাই অতি সাবধানে দরজায় চাবি খুলতে খুলতে বাবু ভাবছিল আজ যদি সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটক বেঁচে থাকতেন তাঁরা আজকালকার এই সমস্ত অনাসৃষ্টি দেখে ঠিক কি বলতেন? সম্ভবত বাকরুদ্ধ হয়ে যেতেন । কিছুই বলতে পারতেন না তাই ঈশ্বর তাঁদের নিজের কোলে নিশ্চিন্ত আশ্রয় দিয়েছেন।
হোটেলে অতটা সময় কাটানোর পর ডেস্ক ম্যানেজার ধৃতিমান না চাইলেও তাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে রেস্তোরাঁয় ডিনার করিয়ে দিল। ধৃতিমান বিল মেটাতে জোরাজুরি করার আগেই তিনি দেখিয়ে দিলেন সিস্টেমে এই অর্ডারটা কম্প্লিমেন্টারি শো করছে। ইচ্ছে থাকলেও পেমেন্ট করা যাবে না।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান
দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম
রাতে দই খাওয়া অন্যদের শরীরের পক্ষে ভালো না হলেও সেটা না খেলে বাবুর শরীরের ক্ষতি হয়। আমরা বাইরে দেখতে একরকম হলেও শরীর ও মনের ভেতরটা একেবারে নিজেদের মতো আলাদা আলাদা। বাবু অনেক ছোটবেলায় মায়ের কাছে দুধ থেকে দই পাততে শিখে নিয়েছিল! ভাগ্যিস! মা তো সেই ছোটবেলাতেই তাকে ছেড়ে গেছেন। পুরনো আমলের কাঠের পাল্লাওয়ালা মোটা মোটা রড দেওয়া লম্বা লম্বা বড় জানলা। একেবারে প্রায় মেঝে পর্যন্ত।ওপর নিচে দুটো পাল্লা খুলে চেয়ারে বসে রডের ফাঁক দিয়ে পা দুটো বার করে দিলে আহা কী আরাম! বারান্দা থাকলে সেটা পরিষ্কার করার ঝামেলা থাকতো। কিন্তু এই জানালাগুলো ঘরে বসেই বারান্দার আমোদ দেয়।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
আবার মাথার মধ্যে সেই ইউটিউব ভিডিওটা ঘুরছে। কানে হেডফোন গুঁজে শুনতে শুরু করলো ধৃতিমান। চমকে উঠল প্রতিবেদন শুনে। সঙ্গত কারণেই এখন বিপদ বাঁচিয়ে চলতে ইউটিউবাররা শিখে গিয়েছেন। তাই কারও নাম না বলে ইন্টারনেটে পাওয়া নানান ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি ও স্কেচ দিয়ে বিষয়টা স্পষ্ট করা হয়েছে। কোন এক উঠতি নায়িকার সঙ্গে শহরের এক বিখ্যাত ডাক্তারবাবুর ঘনিষ্ঠ সংযোগের কথা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন
একেবারে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ আইন বাঁচানো পোস্ট একেবারও খুনের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। হঠাৎ করে এই মধ্যরাতে হোয়াটসঅ্যাপ নোটিফিকেশন। পাঠিয়েছে শ্রেয়া! মেয়েটা কি ঘুমোয় না? এই একই ভিডিও শেয়ার করে শ্রেয়া নিচে লিখেছে, “যতদূর জানতে পেরেছি কৌশিকী দত্তগুপ্তের সঙ্গে বিখ্যাত হার্ট স্পেশালিস্ট ডক্টর সুরজিৎ ব্যানার্জির কথাই বলা হয়েছে”! ধৃতিমান মুহূর্তের মধ্যে গুগল করে জেনে নিল। শহরের অত্যন্ত সফল হার্ট স্পেশালিস্ট ডাঃ সুরজিৎ ব্যানার্জী সম্বন্ধে। তাঁর বয়স ৬৫। অন্যদিকে কৌশিকীর বয়স সাড়ে ২২। ডাক্তার ব্যানার্জীর সঙ্গে সিনেমার কোন যোগাযোগ নেই তাহলে কৌশিকী তার তিন কুড়ি বয়সের ডাক্তারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন কেন? —চলবে।
কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।