শুক্রবার ৯ মে, ২০২৫


শুরু হল হল খোঁজ। ধৃতিমান একটু দোদুল্যমান, কোথা থেকে শুরু করবে? কীভাবে শুরু করবে? আর কোন অর্ডারে যাবে? ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের বয়স অনুযায়ী বুড়ি থেকে ছুঁড়ি নাকি ছুঁড়ি থেকে বুড়ি? কথাটা ভেবেই চমকে উঠল বাবু, ভাগ্যিস এখনও মন দেখতে পাওয়ার কোনও যন্ত্র বের হয়নি। মার্কিন চলচ্চিত্রকার ক্রিস্টোফার এডোয়ার্ড নোলান তাঁর বিখ্যাত ছবি ‘ইনসেপশন’-এ দেখিয়েছেন মানুষের স্বপ্ন বা নিজস্ব চিন্তা মনে মনে জেনে ফেলা সম্ভব। শুধু তাই নয়, কোনও একটা বিষয় কারও মনের মধ্যে চুকিয়ে দেওয়াও যায়। এটা সায়েন্স ফিকশন কিন্তুই স্বপ্ন বা কল্পনা তো বাস্তব হয়। ভিঞ্চির লিওনার্দো হেলিকপ্টার বা সাবমেরিন কল্পনা করেছিলেন, ছবি এঁকেছিলেন। পরবর্তীতে তাই সত্যি হয়ে গিয়েছে। যদি এমন হতো তবে আর যার সুবিধে বা অসুবিধে হোক রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা বিস্তর বিপদে পড়তেন। আর এজ সেমিং-এর অপরাধে আমাদের বাবু সোশ্যাল মিডিয়ায় গালি খেত। তবে একটা সুবিধে বাবুর ফেসবুক নেই।
ধৃতিমান বেছে নিল শেষ থেকে শুরু। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় এই নামে মঞ্চসফল নাটক করেছিলেন পরে তা থেকে ছবি হয়েছিল। একেবারে শুরুতেই অভিনেত্রী প্রতিমা চৌধুরী! ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে মানে বছর পাঁচেক আগে বাংলাছবির এই নায়িকার বয়েস ছিল ৩৭-৩৮ এখন তিনি ৪২-৪৩। একটি বা দুটি ছবিতে নায়িকা চরিত্রের অভিনয় করেছিলেন কিন্তু সেগুলোর কোনওটাই সে রকম পরিচিতি পায়নি। পুরনো বাংলা ছবির স্লটে দূরদর্শনে বা কোনও বাংলা স্যাটেলাইট চ্যানেলে কখনও-সখনও দেখানো হয় সেসব ছবি। এ যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে তার নাম বললে তারা হয়তো চিনতেও পারবেন না। যাইহোক তারপরে বহু ছবিতেই পার্শ্বচরিত্রে তাঁকে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭১: গুগলি/৬

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯o: ছাতারে

একটা সময় গ্রামেগঞ্জের অনুষ্ঠানে চিত্রতারকাদের একটা ডিমান্ড ছিল। তারপর বড় বড় স্যাটেলাইট চ্যানেলের নানান নাচগানের অনুষ্ঠানে মুখ দেখাতে গিয়ে সেই চাহিদা আজ আর নেই। শুধু বক্স অফিসে নামী-দামি হিরো বা হিরোইনের নামে এখনও ভিড় হয়। সেই সময়তেই এক কলেজের সোশ্যাল অনুষ্ঠানে প্রতিমা চৌধুরীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলতারই পরিচিত একজনের সূত্রে। উঠতি ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে সেখানে মৃদুল সাহা উপস্থিত ছিল। আনার সময় আলাদা আলাদা গাড়িতে গেলেও ফেরবার সময় মৃদুল আর প্রতিমা একই গাড়িতে ফিরেছিল। প্রতিমাকে নামিয়ে দিয়ে মৃদুলের বাড়ি যাবার কথা। প্রতিমা মৃদুলকে বাড়িতে চা খাওয়ার নেমন্তন্ন করে নামিয়ে নিল।

প্রতিমা দত্ত থেকে প্রফেসর বিশ্বদীপ চৌধুরীকে বিয়ে করে প্রতিমা চৌধুরী। দু’জনের কোনও সন্তানাদি ছিল না। বিশ্বদীপ চৌধুরী পড়াশোনার জগতের মানুষ। বিদেশের নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো যোগাযোগ ছিল। মোটামুটি প্রতিমার সঙ্গে একটা রফা করে বিশ্বদীপ বছরের বেশির ভাগ সময়টা বিদেশেই থাকতেন। প্রতিমা জানতে পেরেছিল যে, সুইডেনে তার এক বান্ধবী রয়েছে। প্রতিমা বাধা দেয়নি, কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রোজগারের একটা অংশ তার কাছে আসে আর প্রতিমার জীবনযাত্রা নিয়ে বিশ্বদীপের কোনও মাথাব্যথা নেই।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১৯: নাগজাতক— অকৃতজ্ঞ সেই লোকটা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?

ধৃতিমান শুনতে শুনতে ভাবছিল আজকাল এই ধরনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা খুব শোনা যায় বটে। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে এটা তারা দু’জনেই মেনে নিয়েছিলেন মানে তারা সময়ের থেকে হয়তো একটু বেশি এগিয়ে ছিলেন। প্রতিমার বন্ধুদের তালিকায় ছবি প্রডিউসার ফাইন্যান্সের এক্সিবিটার ছিলই তার সঙ্গে সদাগরি অফিসের বড় সাহেবরাও ছিল। মৃদুল এসে খেলোয়াড়ের অভাব পূর্ণ করল।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’

এত সহজে প্রতিমা সব কিছু বলতে রাজি হয়নি। প্রথম চার পাঁচ দিন নানাভাবে এড়িয়ে গিয়েছে তারপর ফোন তোলেনি। ছবির জগতে যুক্ত থাকার সুবাদে ধৃতিমান তার বাড়ির ঠিকানা জানতো। একদিন একেবারে সকালবেলায় সাড়ে আটটার সময় তার বাড়ি গিয়ে হাজির। প্রতিমা প্রথমে অবাক এবং পরে রুষ্ট হলেন। এমন কি অভদ্রতা করে ফ্ল্যাটের দরজাটুকু খুললেন কিন্তু সামনের সেফটি ডোরটা বন্ধই থাকল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৫: সরজমিনে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৩: শরৎকুমারী স্নানাগারের সামনে বসে সারাক্ষণই সাজতেন

সামনের ছোট্ট গরাদওয়ালা দরজার নিরাপদ দূরত্ব থেকেই ধৃতিমান নিচু গলায় প্রতিমার সম্মান বজায় রেখে জানালো সে কলকাতা পুলিশের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছে ক্রিকেটার মৃদুল সাহার মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত করছে। নানান সূত্র থেকে প্রতিমা চৌধুরী নামটা মৃদুলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। তারা এটাও জানে যে প্রতিমার সঙ্গে মৃদুলের যোগাযোগ ছিল ৫ বছর আগে আজকে নয়। তদন্তের স্বার্থে সে কথা বলতে চায়। এই তদন্ত এড়িয়ে গেলে প্রতিমার ক্ষতি বই লাভ হবে না। প্রতিমা সেফটি ডোর খুলে ধৃতিমানকে ভেতরে ডিকেছিলেন। চা খাইয়ে জানিয়েছিল সকালের দিকে বাড়িতে কাজের লোক থাকে, দুপুরের সময়টা সে একদম খালি। তখন যদি ধৃতিমান আসতে পারে। ধৃতিমান সময় করে একদিন দুপুরে এসেছিল।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content