শনিবার ৯ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

 

অডিয়ো ক্লিপ (পর্ব-১০)

শ্রাদ্ধের কাজ মিটে বাড়ি ফাঁকা হল ফোন চার্জিং কমপ্লিট হল। ততক্ষণে শ্রেয়া এসে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা একটি হলে বসলাম। ফোন অন হতে পরপর মেসেজ আসার শব্দ, একসময় থমকাল। নীলাঞ্জন আমার দিকে তাকালেন। আমি ইশারায় বললাম ভয়েস মেসেজ চেক করতে। মেসেজ পাওয়া গেল, ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দিন সন্ধেবেলায়, ৫টা ১৬ মিনিটে আসা ভয়েস মেসেজ। চলন্ত গাড়ির শব্দ।

—আমি অফিস থেকে একটা নিউজ কভার করতে বেরিয়েছিলাম।
কিন্তু রাস্তাতেই একটা অদ্ভুত লিড পেয়েছি। ব্রেকিং নিউজ, যাকে বলে ধামাকা। কিন্তু ব্যাপারটা স্মুথ নয়। আমার সিক্স সেন্স বলছে, রিক্স আছে। আমি বালিঘাট স্টেশন ছাড়িয়ে বালি হল্ট স্টেশনের কাছে নিশ্চিন্দিপুর অগ্রণী সংঘ ক্লাবের কাছাকাছি কোন একটা জায়গায় যাচ্ছি। যদি রাত সাড়ে সাতটা আটটার মধ্যে আমি তোমাকে ফোনব্যাক না করি বা মেসেজ না করি তাহলে ধরে নিও অ্যাম ইন ট্রাবল! মেসেজ শোনার পর ডিলিট করে দিও। পরে সব বলছি।

মেসেজটা দু’বার তিনবার শোনার পর নীলাঞ্জন মাথা নিচু করে বসে রইল। মেসেজের সময় ৫টা ১৬ মিনিট আর সিসিটিভি কভারেজ অনুযায়ী দূর্ঘটনা ঘটেছে ঠিক দশ মিনিট পর, ৫টা ২৬ মিনিট থেকে ৫টা ২৮ মিনিটের মধ্যে। ঘরের অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে প্রথম কথা বলে উঠলেন শ্রেয়া—
—তার মানে, সুচেতা কোথায় যাচ্ছিলেন সেই খবরটা যে বা যারা এই খুনের পেছনে রয়েছেন তারা আগেই জেনে গিয়েছিল। আর তাই বালি হল্ট স্টেশন বা বালিঘাট স্টেশনেরও অনেক আগে বাড়ির ব্রিজের উপরেই অ্যাটাকটা হয়।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪৩: বাবুর সম্বল ছিল বুবু ও বুবুর খাঁচা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬২: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— সুখদর্শন ও হুড়ো

এই কথার সূত্র ধরেই আমি নীলাঞ্জনকে বললাম—
—সুতরাং আপনার আক্ষেপের কোনও কারণ নেই। এই ভয়েস মেসেজটা তখন শুনলেও আপনি কোনওভাবেই সুচেতাকে ফেরাতে পারতেন না! থমথমে মুখ তুলে তাকালেন নীলাঞ্জন রায়।
এমন সাজানো সংসার ছেড়ে যখন সুচেতার আচমকা অন্তর্ধানের কথা ভাবছিলাম তার মধ্যে শ্রেয়া পেন-ডায়রি নিয়ে তৈরি হয়ে গিয়েছেন।
—মিস্টার রায়, আমি জানি আপনি একটা মেন্টাল স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আমরা আর দেরি করতে পারব না। কয়েকটা জরুরি প্রশ্ন আপনাকে করব। জানার চেষ্টা করব, সুচেতার শত্রু কে বা কারা?
নীলাঞ্জন একটুক্ষণ চোখটা বুঝিয়ে রাখল, তারপর চোখ খুলে বলল—
—হ্যাঁ, আমি তৈরি! তবে আমার মনে হয় না সুচেতার কোন শত্রু ছিল!
—আপনার এই মনে হওয়াটা বোধহয় ঠিক না! আমরা যারা পাবলিক ডিলিংসের কাজ করি যেমন আমি পুলিশে আছি কেউ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে। কেউ কোনও সরকারি কাজ করেন সুচেতা মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। আমাদের কাজের সততা থেকে আইন মেনে চলার সুবাদে কাউকে কাউকে বিপদে পড়তে হয়। সে বিপদ কারও ক্ষেত্রে কম কারও ক্ষেত্রে বেশি তাই আমাদের নিজেদের অজান্তেই আমরা অনেক অজ্ঞাত শত্রু তৈরি করে ফেলি। আমরা কেউই অজাতশত্রু নই! বিম্বিসার পুত্র স্বয়ং অজাতশত্রুরও শত্রু ছিল!
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৫: পতন আসন্ন হলেই সবার বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়

দশভুজা, পর্ব-৩৬: মৃণালিনী— রবি ঠাকুরের স্ত্রী-র লেখকসত্তা

নীলাঞ্জন আনমনে এই পরিবেশে অদ্ভুতভাবে হেসে ওঠে। আমি অবাক হয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকালাম শ্রেয়া হয়তো বা একটুখানি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে। সেটা গোপন করার মতো মেয়ে শ্রেয়া নন।
—হাসছেন কেন? ভুল বললাম? অজাতশত্রুর বাবার নাম বিন্দুসার নাকি বিম্বিসার?
—নানা আপনার কথায় হাসিনি, কিছু মনে করবেন না। আপনি ঠিকই বলেছেন বিম্বিসার। আসলে সুচেতার এটা খুব ফেভারিট প্রশ্ন, সম্রাট অশোকের বাবার নাম বিম্বিসার না বিন্দুসার?
একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীলাঞ্জন বললেন—
—স্মৃতির সময়জ্ঞান নেই। ভুল সময়ে ভুল কথা মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬০: শ্রীমার রামেশ্বরম যাত্রা

বলুন—
—কোনওদিন কখনও কথাপ্রসঙ্গে সুচেতা জানিয়েছিলেন যে সে এমন কোনও কাজ করছে যাতে তার বিপদের সম্ভাবনা আছে।
—না! ও কখনও বলেনি। বরং আমি ওকে বলতাম যে তুমি এত রকমের দুর্নীতির পর্দাফাঁস করো অল্প হলেও কিছু সংখ্যক মানুষ তো তোমার উপর চলে যাচ্ছে, মানছি তোমার একটা বিরাট ফ্যানবেস আছে। কিন্তু সমস্যা হলে তো আর ফ্যানেরা বাঁচাবে না।
আমি প্রশ্ন করলাম—
—সুচেতা কি বলতেন?
—কিছু না! হাসত। বল তো সাংবাদিকতা ছেড়ে দেবো বলছো?
আমরা দু’জনের কেউই এটা নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবিনি আর আমার বিশ্বাস যে ওর কাছেও যদি কোনওরকম থ্রেটকল বা ওয়ার্নিং কিছু আসতো, যেকোনও ভাবে। ও সেটা নিশ্চিত আমার সঙ্গে শেয়ার করতো।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

আমার মনে হল তাহলে কী ঘটেছিল, শ্রেয়া কী ভাবছেন?
—তাহলে কি এই গুরুত্বপূর্ণ লিড পাওয়াটা, আচমকা? কোনও প্ল্যান
ছাড়া? সুচেতা নিজেও এমনটা ভাবেননি? কী মনে হয়?
হঠাৎ নীলাঞ্জনের মোবাইল বেজে উঠল, নীলাঞ্জন ফোনের ডিসপ্লে আমার দিকে ঘুরিয়ে দেখালেন? নামটা দেখে আমি অবাক!—চলবে।
 

সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২৯ আগস্ট, ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content