
ছবি: প্রতীকী।
অডিয়ো ক্লিপ, পর্ব-৫
ধৃতিমান চৌধুরী নামটা শোনা লাগছে। নীলাঞ্জনের বড্ড ভুলোমন, কিন্তু এটা স্পষ্ট মনে আছে এই নামটা সে সুচেতার কাছেই শুনেছে। হ্যাঁ, ধৃতিমান চৌধুরী পেশায় একজন নাট্য ও চিত্র পরিচালক এবং নেশায় গোয়েন্দা। দুর্দান্ত কম্বিনেশন। শ্রেয়া বসু মেয়েটা চটপট করে কথা বলে ধৃতিমানবাবু কথা বলেন না চুপ করে তাকিয়ে থাকেন। ধৃতিমান অল্প হেসে হাত মেলালেন। বললেন—
—এই মুহূর্তে আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। এখন আর আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। এটা পুলিশের তরফ থেকে একটা নিয়মমাফিক প্রশ্নোত্তর। দুদিন বাদে ম্যাডাম কেমন থাকবেন জানি না। তবে এই আচমকা ট্রমাতে তখন হয়তো আপনি একটু অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।
শ্রেয়া, একটু দূরে সরখেলের সঙ্গে কথায় ব্যস্ত। সম্ভবত ওই লরিটাকে ট্রেস করার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। ধৃতিমান সেই অবসরে নীলাঞ্জনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।
—ঘটনাটা শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব দুঃখ পেয়েছি। সারা বাংলার মানুষের মতো আমিও সাদা রাস্তা কালো গাড়ির একজন গুণমুগ্ধ দর্শক। সুচেতা ম্যাডামের কোনও এপিসোডস বাদ দিই না। টিভিতে দেখা না হলে রাতে সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশ্যই দেখে নিই।
নীলাঞ্জনের বাড়ি, অফিসের ঠিকানা ফোন নম্বর এসব নিয়ে ঘন্টাখানেক বাদে শ্রেয়া ধৃতিমান চলে গেলেন। যাবার আগে শ্রেয়া বাসু ও ধৃতিমান চৌধুরীর ফোন নম্বর রেখে গেলেন ওঁরা।
—ঘটনাটা শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব দুঃখ পেয়েছি। সারা বাংলার মানুষের মতো আমিও সাদা রাস্তা কালো গাড়ির একজন গুণমুগ্ধ দর্শক। সুচেতা ম্যাডামের কোনও এপিসোডস বাদ দিই না। টিভিতে দেখা না হলে রাতে সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশ্যই দেখে নিই।
নীলাঞ্জনের বাড়ি, অফিসের ঠিকানা ফোন নম্বর এসব নিয়ে ঘন্টাখানেক বাদে শ্রেয়া ধৃতিমান চলে গেলেন। যাবার আগে শ্রেয়া বাসু ও ধৃতিমান চৌধুরীর ফোন নম্বর রেখে গেলেন ওঁরা।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৩৮: তড়িঘড়ি জিপ ড্রাইভ করে নীলাঞ্জনের কাছে পৌঁছলেন দুঁদে গোয়েন্দা শ্রেয়া

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৫: সঙ্গীত অনুরাগিণী মা সারদা
আরও একটু রাতে এলেন নিউজ টিভির পূর্বাঞ্চলীয় ক্ষেত্রের সর্বময়কর্তা ববি সিং ধীলোঁ। সাদা ধবধবে অডি গাড়ি থেকে নামলেন সুটেড-বুটেড ববি সিং, সঙ্গে চারজন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। অডির সামনে থেকে একজন আর সঙ্গে স্করপিও গাড়ি থেকে নামলেন আরও চারজন। তাঁর মধ্যে সশস্ত্র তিন সুরক্ষাকর্মী আর একজন স্যুটপরা মাঝবয়সী লোক, তাঁর নামটা জানা নেই। তবে সবার কাছেই তিনি দুবেজি। ববি সিং-এর ছায়াসঙ্গী ব্যক্তিগত সচিব। সুচেতার কাছে এই দুবেজির সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছে নীলাঞ্জন।
রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী ছাড়া বিনা পয়সার সুরক্ষা ভারতে আর কেউ পান না। কলকাতা পুলিশের সেরকম কোনও রেট চার্ট না থাকলেও মহারাষ্ট্র পুলিশ প্রায় বছর পাঁচের আগে থেকেই পুলিশি সুরক্ষার জন্য সেলিব্রিটিদের কাছ থেকে মোটা টাকা ধার্য করতেন। একজন কনস্টেবলের জন্যই মাসে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা। আর বোম্বেতে সেলিব্রিটির ছড়াছড়ি তাই সেখানে সুরক্ষাব্যবস্থার যথেষ্ট চাহিদা। তাই আজকাল বেসরকারি সুরক্ষাকর্মীর কদর অনেক বেশি।
রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী ছাড়া বিনা পয়সার সুরক্ষা ভারতে আর কেউ পান না। কলকাতা পুলিশের সেরকম কোনও রেট চার্ট না থাকলেও মহারাষ্ট্র পুলিশ প্রায় বছর পাঁচের আগে থেকেই পুলিশি সুরক্ষার জন্য সেলিব্রিটিদের কাছ থেকে মোটা টাকা ধার্য করতেন। একজন কনস্টেবলের জন্যই মাসে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা। আর বোম্বেতে সেলিব্রিটির ছড়াছড়ি তাই সেখানে সুরক্ষাব্যবস্থার যথেষ্ট চাহিদা। তাই আজকাল বেসরকারি সুরক্ষাকর্মীর কদর অনেক বেশি।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩১: হেমন্তবালা দেবী— রবি ঠাকুরের পত্রমিতা

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৭: গাড়ি থেকে নেমেই ছবি বিশ্বাস বললেন, ‘তোদের ছবির নামই তো পথে হল দেরি’
ববি সিং সরাসরি হাসপাতালের মধ্যে চলে গেলেন সঙ্গে গেলেন তাঁর রক্ষীরা, খানিক পরেই বেরিয়ে এলেন তিনি। বালি থানার সরখেল বাবু তখনও ছিলেন – তাঁর সঙ্গে কথা বললেন দুবেজি – তারপর নীলাঞ্জনের কাছে এগিয়ে যান। শুদ্ধ হিন্দিতে বললেন, বিপদের এই সময়ে নীলাঞ্জন যেন কখনই নিজেকে একা না ভাবে। নিউজ টিভি ম্যানেজমেন্ট এবং স্বয়ং ববি সিং ধীলোঁ সুচেতা ও নীলাঞ্জনের পাশে আছে। হাসপাতালে সুচেতার চিকিৎসার সমস্ত খরচাপাতি নিউজ টিভির তরফ থেকে করা হবে। এখনই তাকে শিফট করা যাবে না, কিন্তু একটু স্টেবল হলেই সুচেতাকে শহরের কোনও নামী নার্সিংহোমে বা প্রয়োজন হলে দিল্লির এইমসে নিয়ে যাওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় যে ড্রাইভার-এর মৃত্যু হয়েছে, রাখাল দাস সে ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। নিউজ টিভি ক্যান্টিনে রাখালের স্ত্রীর চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে, তার পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বও নিউজ টিভি নিয়েছে। নীলাঞ্জন এড়িয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু দুবেজির অনুরোধেই তাকে একবার ববি সিংয়ের মুখোমুখি হতে হল।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—বন লেবু ও টাগরি বানি
সামনাসামনি দাঁড়িয়ে মনে হল লোকটার শরীর থেকে জ্যোতি বের হচ্ছে, অদ্ভুত একটা মিষ্টি গন্ধ। কোন দেশের কত দামি পারফিউম জানা নেই। অত্যন্ত নরম একটা হাত করমর্দন করল, গম্ভীর গলায় তিনি বললেন—
—বি ব্রেভ! উই উইল ডু হোয়াটএভার পসিবল!
আজকের সন্ধেটা জীবনটা বদলে দিয়েছে। সন্ধে হবার আগে পর্যন্ত যখন সে বাড়ি ফিরছে ততক্ষণ স্বাভাবিক ছিল নীলাঞ্জন। মানে তার নিজস্ব কমফোর্ট জোনে ছিল—”ভুলোমন নীলাঞ্জন”।
এই দুর্দান্ত লিরিক্যাল বিশেষণে সুচেতা তাকে ডাকে। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর যখন সরখেলবাবুর ফোনটা এল তারপর থেকে নীলাঞ্জনের ছন্দ হারিয়ে গিয়েছে। মানে আর পাঁচজনের সামনে স্বাভাবিক আচরণ করছে ঠিকই, তবে এটাই তার অস্বাভাবিকতা। সবকাজ ঠিকঠাক করা সব জিনিস ঠিকঠাক গুছিয়ে আনাটা নীলাঞ্জনের জীবনে ছন্দহীনতা। সে একটার পর একটা ভুল করবে গন্ডগোল করবে চেকবুক হারাবে বারবার ভুল পাসওয়ার্ড টাইপ করে অ্যাকাউন্ট লক করে ফেলবে আর সেটাকে ম্যানেজ করে ভুল শুধরে বা সম্ভাব্য সমাধান দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবে সুচেতা। মুখোমুখি অথবা টেলিফোনে অথবা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ একপ্রস্থ বকাবকি করবে, এটাই হল ভুলোমন নীলাঞ্জনের স্বাভাবিকতা। সেই জায়গাটা যেন সন্ধের পর থেকে হারিয়ে গিয়েছে।
—বি ব্রেভ! উই উইল ডু হোয়াটএভার পসিবল!
আজকের সন্ধেটা জীবনটা বদলে দিয়েছে। সন্ধে হবার আগে পর্যন্ত যখন সে বাড়ি ফিরছে ততক্ষণ স্বাভাবিক ছিল নীলাঞ্জন। মানে তার নিজস্ব কমফোর্ট জোনে ছিল—”ভুলোমন নীলাঞ্জন”।
এই দুর্দান্ত লিরিক্যাল বিশেষণে সুচেতা তাকে ডাকে। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর যখন সরখেলবাবুর ফোনটা এল তারপর থেকে নীলাঞ্জনের ছন্দ হারিয়ে গিয়েছে। মানে আর পাঁচজনের সামনে স্বাভাবিক আচরণ করছে ঠিকই, তবে এটাই তার অস্বাভাবিকতা। সবকাজ ঠিকঠাক করা সব জিনিস ঠিকঠাক গুছিয়ে আনাটা নীলাঞ্জনের জীবনে ছন্দহীনতা। সে একটার পর একটা ভুল করবে গন্ডগোল করবে চেকবুক হারাবে বারবার ভুল পাসওয়ার্ড টাইপ করে অ্যাকাউন্ট লক করে ফেলবে আর সেটাকে ম্যানেজ করে ভুল শুধরে বা সম্ভাব্য সমাধান দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবে সুচেতা। মুখোমুখি অথবা টেলিফোনে অথবা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ একপ্রস্থ বকাবকি করবে, এটাই হল ভুলোমন নীলাঞ্জনের স্বাভাবিকতা। সেই জায়গাটা যেন সন্ধের পর থেকে হারিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২: অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া দুলিছে যেন?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১৩: অদ্বিতীয় সম্রাট
এমন কী ঘটনা ঘটল যাতে কে বা কারা সুচেতাকে মার্ডার অ্যাটেম্পট করবে? সুচেতা কি এমন কিছু রিভিল করছিল, এমন একটা গভীর গোপন ঘটনাকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার কাজে হাত দিয়েছিল যেটা তাকে এই ভয়ংকর বিপদের মুখোমুখি ঠেলে দিল?
খুব ইচ্ছে করছিল একটা ড্রিংক বানিয়ে সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এর ছ’ তলার বারান্দায় চুপ করে বসে থাকতে, কিন্তু সুচেতা মানা করে। তাই ফ্রিজে বহুদিন পড়ে আছে জনি ওয়াকার ব্লু লেবেল ব্রেন্ডেড স্কচ হুইস্কির অর্ধেকের বেশি। বোম্বে থেকে এক বন্ধু এসে প্রেজেন্ট করেছিল। গত কালীপুজোর রাতে সুচেতার অনুমতি নিয়ে ঋষভ, মৃদুল আর নীলাঞ্জন ভাগাভাগি করে খেয়েছিল। বাকিটা পড়ে আছে। মৃদুল বলেছিল ৭৫০ এমএল-এর একটা বোতলের দাম প্রায় সাড়ে বারো হাজার টাকা। তার মানে ৩০ এমএল এর একটা স্মল পেগের দাম ৫০০ টাকা। মদের দাম নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎই তার মাথার মধ্যে বিদ্যুতের মতো একটা বিষয় খেলে গেল, সরখেল বলেছিলেন সুচেতা তাদের গাড়িটা ডানলপ থেকে বালিঘাট স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল, সন্ধেবেলা তো ওর বাড়ি ফেরার কথা তাহলে উল্টোদিকে যাচ্ছিল কেন? নাকি সরখেল ভুলভাল ইনফরমেশন দিল?
এত রাতে ভদ্রলোককে ফোন করে বিরক্ত করাটা উচিত হবে না। হোক না পুলিশ! তবু তো কারও স্বামী, কারও বাবা, কারও ছেলে। —চলবে।
খুব ইচ্ছে করছিল একটা ড্রিংক বানিয়ে সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এর ছ’ তলার বারান্দায় চুপ করে বসে থাকতে, কিন্তু সুচেতা মানা করে। তাই ফ্রিজে বহুদিন পড়ে আছে জনি ওয়াকার ব্লু লেবেল ব্রেন্ডেড স্কচ হুইস্কির অর্ধেকের বেশি। বোম্বে থেকে এক বন্ধু এসে প্রেজেন্ট করেছিল। গত কালীপুজোর রাতে সুচেতার অনুমতি নিয়ে ঋষভ, মৃদুল আর নীলাঞ্জন ভাগাভাগি করে খেয়েছিল। বাকিটা পড়ে আছে। মৃদুল বলেছিল ৭৫০ এমএল-এর একটা বোতলের দাম প্রায় সাড়ে বারো হাজার টাকা। তার মানে ৩০ এমএল এর একটা স্মল পেগের দাম ৫০০ টাকা। মদের দাম নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎই তার মাথার মধ্যে বিদ্যুতের মতো একটা বিষয় খেলে গেল, সরখেল বলেছিলেন সুচেতা তাদের গাড়িটা ডানলপ থেকে বালিঘাট স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল, সন্ধেবেলা তো ওর বাড়ি ফেরার কথা তাহলে উল্টোদিকে যাচ্ছিল কেন? নাকি সরখেল ভুলভাল ইনফরমেশন দিল?
এত রাতে ভদ্রলোককে ফোন করে বিরক্ত করাটা উচিত হবে না। হোক না পুলিশ! তবু তো কারও স্বামী, কারও বাবা, কারও ছেলে। —চলবে।
সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২৫ জুলাই, ২০২৪।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।