শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


 

সিন্নি: পর্ব-৬

মফিজুলের ফোনটা আসুক এটা মনেপ্রাণে চাইছিল বাবু। ফেলুদার টেলিপ্যাথির মতো। আসলে কারও কারও সঙ্গে ভাবনার তালমিলটা মিলে যায়। রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি ম্যাচের মতো। আশেপাশে নানা রকম বিচিত্র শব্দতরঙ্গ। তার মধ্যে সঠিক জায়গাটা ঠিকঠাক খুঁজে পেলে, খুঁজতে থাকা রেডিয়ো স্টেশন মিলে যায়। এতদিন নানা ধরনের তদন্তে মফিজুলের সঙ্গে ভাবনার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছে ধৃতিমান। আসলে জীবনের অনেককিছুর মতোই রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রেও চটজলদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ভীষণ জরুরি। এই যেমন এই গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটা। যার জন্য সে এখন ভীষণভাবে মফিজুলের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে সেটা বাবুর নজরে আসেনি তা নয়। কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছে। মস্তিষ্কে ব্যাপারটা ফ্ল্যাগ করেনি। মফিজুল আর বাবুর চিন্তা ধারাটা অনেকটা একই রকম। তাই সেটা কি মফিজুলেরও নজর এড়িয়ে যাবে?
চটপট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে শুদ্ধ বাংলায় বলে প্রত্যুৎপন্নমতি। আজকের প্রজন্মের কাছে যথেষ্ট খটমট বাংলা উচ্চারণ কেন কী দাঁতে ব্যাথা হতে পারে।

এই বিষয়ে ভৈরব চক্রবর্তী ধৃতিমানকে একটা খুব সুন্দর গল্প শুনিয়েছিলেন। সংগৃহীত কিন্তু ঈশপের হিতোপদেশ কাহিনির মতো একসঙ্গে অনেক কিছুর সমাধান। হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রের মকরোধ্বজ নাক্সভমিকার সঙ্গে বেশ মিল আছে।

একজন খুব বিপদে পড়ে একজন সাধুর কাছে গেলেন। সাধু মন দিয়ে তার সমস্যার কথা শুনলেন। তারপর বললেন যে বাছা আমাদের এই আশ্রমের বাইরে একটা লম্বা গোলাপবাগান আছে। তুমি পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে আর দু’ধারে সার সার গোলাপ গাছে গোলাপ ফুল ফুটে থাকতে দেখবে। যে ফুলটি তোমার সেরা মনে হবে সেটি তুলে এনে আমার পরম ঈশ্বরের পায়ে দেবে। শর্ত একটাই এবং সততার সঙ্গে সেই শর্তটা মেনে চলতে হবে। তুমি যে গোলাপের সারিটি টপকে যাবে পরে আবার সেই সারিতে ফিরে এসে ফুল নিতে পারবে না তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। তোমার বিচারে সেরা ফুল বেছে নেওয়ার পর আর তুমি কোনও ফুল তুলতে পারবে না।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২৬: রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে বাবু

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৫: সুন্দরবনের প্রকৃত ম্যানগ্রোভ ও ম্যানগ্রোভ-সহযোগীরা

লোকটি বাগানে গেলেন। বেশ খানিক পর ঘর্মাক্ত হয়ে হাতে একটি গোলাপ ফুল নিয়ে এসে সাধুর আরাধ্য দেবতার পায়ে দিলেন। কিন্তু তার মুখে খুশি নেই ম্রিয়মাণ। সাধু বুঝতে পারলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন—
—এটি কি বাগানের সেরা ফুল?
লোকটি মাথা নিচু করে জবাব দিলেন—
— আজ্ঞে না মহারাজ। বেশি বাছাবাছি করতে গিয়ে সবচেয়ে ভালো ফুলটি হাতছাড়া হয়ে আমার পিছনে পড়ে গেল। সেটা ছেড়ে আরও ভালো ফুলের খোঁজে তখন আমি এগিয়ে গিয়েছি, পুরো বাগান শেষ হয়ে গেল দেখে নিরুপায় হয়ে এটাই নিয়ে এসেছি।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২০: মানকুমারী বসু—সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল রত্ন!

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৫: ভূপেনবাবুর ভূত

সাধু স্মিত হেসে বললেন—
—আশা করি তুমি তোমার সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছো। জীবনে সঠিক জিনিস খুঁজে পেতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তোমার সামনে যে সঠিক পথ সঠিক সমাধান সঠিক উপাদান সঠিক মানুষ রয়েছে তাকে ফেলে আরও সেরা কিছু খুঁজতে গেলে বিভ্রান্তি বাড়ে। সবকিছুর মধ্যেই সুন্দর রয়েছে। ঈশ্বর তোমার সামনে যা দিয়েছেন তার থেকে তোমার দেখা সেরাটি বেছে নিয়ে আনন্দে থাকো। নিজের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে শেখো। বেশি দোনোমোনো করতে গেলে বা সবকিছুর মধ্যে খুঁত খুঁজে বেড়ালে কখনও মনে শান্তি পাবে না। ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন। একরকম দেখতে হলেও আঙুলের ছাপের মতোই দুটি ভিন্ন মানুষের মন ভিন্ন ভিন্ন। একরকম নয়। তাই দুটি মানুষের পছন্দে ভিন্নতা থাকা খুব স্বাভাবিক। তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব থাকলেও পছন্দ মিলবে না।খুব স্বাভাবিক। তাই নিজের পছন্দকে নির্ভাবনায় বেছে নাও। ভেবো, তুমি নও, ঈশ্বরই তোমায় সেই মতি দিয়েছেন তাই তুমি সেই পথ সেই উপাদান সেই সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছো। এতে তোমার সর্বদা অস্থির আত্মা ধীরস্থির শান্ত হবে। তুমি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে গঠনমূলক কাজে সাফল্য পাবে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬০: আধুনিক ভারতীয় রাজনীতির চালচিত্রে কি দশরথ ও কৈকেয়ীর ছায়া?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৫: যখন ‘ওরা থাকে ওধারে’

তবে এসবের অনেক আগেই ধৃতিমান মফিজুলের ফোনটা ধরেছিল ফোন ছাড়ার পরে এই চিন্তাগুলো মাথায় এসেছিল।
—হ্যাঁ।
—বলো বস! সিড়ির রেলিং-এর কাঠের হাতল তো?

ওপ্রান্ত থেকে মফিজুলের বলা এই সামান্য কয়েকটা শব্দ ধৃতিমানের বুকের মধ্যে থেকে হাজার কেজির পাথরটা যেন এক নিমেষে সরিয়ে দিল।
—খুব ভয়ে ছিলাম মফিজুল যদি তুমি মিস করে যাও। থ্যাংক ইউ সো মাচ।
—এটাতো ডিভিডেন্ট।
—মানে
—মানে একটা বোনাস আছে।
—বোনাস? কি রকম!
—সিন্নিতে কোনও বিষ পাওয়া যায়নি।
—সেকি? তাহলে?
—খুব কড়া ঘুমের ওষুধ ছিল। বেঞ্জোডায়াজেপাইন।
—তার মানে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো?
—চলবে।
 

ঘোষ পরিবার হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content