ছবি: সংগৃহীত।
সিন্নি, পর্ব-১
যাঁরা আজীবন কলকাতা শহরে থেকেই জীবন কাটাবার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা ঠিক পড়াশোনা বা চাকরির জন্য পশ্চিমবঙ্গের দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজনের জীবনযাত্রা উপলব্ধি করতে পারেন না। তাঁদের দৈন্যন্দিন যুদ্ধটা বুঝতেই পারেন না যাঁদের দিনের প্রায় অর্ধেক সময়টাই যাতায়াতের পথে চলে যায়। পড়াশোনা বা কাজের ধকলের সঙ্গে সঙ্গে যাতায়াতের ক্লান্তি তাঁদের জীবনটাকে অনেক কঠিন করে তোলে। তা সত্ত্বেও জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে করতে তারা যখন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তখন বাধ্য হয়ে কাজের তাগিদে জীবনের সম্ভাব্য সুখ খুঁজে নিতে তাঁদের শহরে পাড়ি জমাতে হয়। এটা ঠিক পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নয়। এটা তাগিদ। এর মূল কারণ, আমাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাটা ভীষণভাবে শহরকেন্দ্রিক। শহরতলিতে থাকা মানুষজন শহরের হয়তো কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে যাঁরা থাকেন তাদের এই না পাওয়ার বৈষম্যকে মেনে নিতে হয়। আর সেখানেই শহর গ্রামের মধ্যে একটা অলিখিত দ্বন্দ্ব চলে আসে।
সম্ভবত এই স্কুলে পড়ার ফলেই ধৃতিমানের ভাবনা-চিন্তা আর পাঁচজনের থেকে একটু আলাদাভাবে তৈরি হতে শুরু হল। আরও প্রভাব ছিল। ধৃতিমানের বাবার শেখর চৌধুরী সাধারণ রেলকর্মী ছিলেন। রানাঘাট স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে বসতেন শেখর। চাকরিতে বিশাল কেউকেটা না হলেও অসম্ভব সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন শেখর। খুব ভালো ছবি আঁকতেন এবং ছবি তুলতেন। তাঁর যৌবনটা ফিল্ম-ক্যামেরার যুগ তাঁর নিজের কাছে ছবি ডেভেলপ করার প্রাথমিক যন্ত্রপাতি ছিল। সেই সলিউশন ভেজানোর ট্রে সেই স্ট্যান্ড আর বাবা-মায়ের পুরনো অ্যালবামটা বাবু সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। চৌধুরী বাড়ি ছেড়ে কলকাতা শহরে আসার সময় নিজের সামান্য জামাকাপড় বইপত্রের দুটো ব্যাগ আর বুবুর খাঁচা এই ছিল তার সম্বল। বাবু কেন ছেড়ে এসেছিল হরচন্দ্রপুরের চৌধুরী বাড়ি সেটা হয়তো আমরা ক্রমশ জানতে পারবো।
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২১: সংযুক্তা হঠাৎ চমকে দেখল ভিতরে ঢুকছেন শ্রুতি সেন
এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৩: ত্রিপুরা সমৃদ্ধিতে রাজা বিজয় মাণিক্যের ভূমিকা অপরিসীম
তবে হালে বঙ্গবাসীর উচ্চারণ দোষে বাংলা ভাষার গুষ্টির তুষ্টিপুজো হয়ে গিয়েছে। “আনুগত্যতার” মতো হাঁসজারু শব্দ আজকাল আখচার শুনতে পাওয়া যায় ছাপা শব্দ হলে শিক্ষিত সাংবাদিক সম্পাদকেরা তাকে বদলে দেন কিন্তু মিডিয়া বাইট হলে কান কামড়ে ধরা ভুল বাংলা বা কবরে শেক্সপিয়ারকে পাশ ফিরিয়ে দেওয়া ভুল ইংরেজি আর বদলাবার কোন উপায় থাকে না। তবে টেলিভিশনের পর্দাতেও যে সমস্ত ভুল বানানের বাংলা পরিবেশিত হয় তা দেখে যথেষ্ট চোখ কটকট করে। কি আর করা যাবে? নব্য প্রজন্মের যে “বাংলাটা ঠিক আসে না”।
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫০: অর্ধশতাব্দী ছুঁলো ‘অমানুষ’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৬: কল্যাণী—অন্দরমহলের সরস্বতী
বেহালায় একই পরিবারে চারজন মৃত সিন্যিতে কী ছিল?
ধৃতিমানের যা স্বভাব খবরটা নিয়ে মাথা ঘামানোর আগে সে আলমারির মাথায় রাখা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ নামালো। খুব সাবধানে বই খুলতে হয় অনেক পুরনো। একসময় বই বাঁধানোর অনেক দোকান ছিল। আর যারা বই বাঁধাতেন তাদের মধ্যে একটা ন্যূনতম শিক্ষা থাকতো। বাঁধানো বইটা যাতে ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করা যায় সেদিকে নজর রাখতেন তাঁরা এখন সে বই বাঁধানোর দোকানও নেই আর শিক্ষাদীক্ষা তো চৌপাঠ হয়ে গিয়েছে। বাংলা বানানের “মেড ইজি বিপ্লব” পরবর্তী সময়ে বানানেরও আধুনিক-পুরাতন ঘটে গিয়েছে। তবে ধৃতিমান সনাতন বানানে বিশ্বাসী।
ধৃতিমানের একটা গর্ব ছিল য ফলা হবে না সঠিক বানানটা সিন্নি হবে। হরিমাধব খুলে দেখল সে যা জানতো তার বাইরে অনেকটা অজানা ছিল। শিরনি, শিরনি, সিরনি নানান কিছু হতে পারে তবে সিন্যি কোনওভাবেই নয়।
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৫: ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৮: অভিভাবিকা মা সারদা
—সুপ্রভাত স্যর।
—আপনার প্রভাত হয়েছে কিনা আমি একটু সন্দেহে ছিলাম, বলা তো যায় না কাল রাতে হয়তো সত্যজিতের অভিযান রিভাইস করেছেন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
সিনেমাপ্রিয় গোয়েন্দা কর্তা জানেন সিনেমা নির্দেশক ও সত্যানুসন্ধানী ধৃতিমান চৌধুরী তার প্রিয় এবং দেবতার আসনে রাখা বিশ্ববন্দিত স্রষ্টা সত্যজিত রায়ের পুরনো সিনেমা বারবার দেখে।
—বুবু শুতে দেয় না স্যর! রাত হলেও ঠিক সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় বলুন
—টিভি বন্ধ!
—না, মিউট করা। খবরটা দেখেছি! কিন্তু কেস তো সলভড! সিন্নি!
—ওটা মিডিয়ার রতনলালরা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছে তৈরি হয়ে একট ক্যাব নিয়ে চলে আসুন আমি হেডকোয়ার্টারে অপেক্ষা করছি আজ আমি যাব।