ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড ও মিডলটন মারে।।
দারিদ্র ও অসুস্থতা থেকে পালাতে ক্যাথেরিন আশ্রয় নিতেন এক কল্পনার জগতে। কল্পনায় তার নিজের বাড়ি ছিল, ছিল বাচ্চা, পুতুল আরও কত কি। তাদের নামও ছিল। মাঝে মাঝে তার মনে হত একটা বাচ্চা থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হত। মারেকে দোষারোপ করতেন বাচ্চা না হওয়ার জন্য। তার নিজের অতীত যে এ জন্য দায়ী সেটি মনেই করতেন না। মারে ক্যাথেরিনের অতীত সম্পর্ক ও মৃত শিশুর সম্পর্কে জানতেন না। এছাড়া নিজের মধ্যেই থাকতেন বলে এ নিয়ে কিছু বলেননি। তবে পরবর্তীকালে ক্যাথেরিনের মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করেনও কয়েকটি সন্তানের পিতা হয়েছিলেন।
সাহিত্যিক হিসেবেও বুদ্ধিতে ক্যাথেরিন তার চেয়ে অনেক উঁচুতে। এটা প্রতি নিয়ত বুঝতেন মারে। তাই পুরোপুরি আত্মমগ্ন থাকতেন নিজের পড়াশুনার জগতে। স্বার্থপরের মতো থাকতেন, যদিও স্বামী-স্ত্রী তারা। সংসারের সমস্ত কাজই ছিল ক্যাথেরিনের। কোথাও বেড়াতে গেলে প্লান করতেন মারে আর সব আয়োজন এবং কাজ ছিল ক্যাথেরিনের।
সাহিত্যিক হিসেবেও বুদ্ধিতে ক্যাথেরিন তার চেয়ে অনেক উঁচুতে। এটা প্রতি নিয়ত বুঝতেন মারে। তাই পুরোপুরি আত্মমগ্ন থাকতেন নিজের পড়াশুনার জগতে। স্বার্থপরের মতো থাকতেন, যদিও স্বামী-স্ত্রী তারা। সংসারের সমস্ত কাজই ছিল ক্যাথেরিনের। কোথাও বেড়াতে গেলে প্লান করতেন মারে আর সব আয়োজন এবং কাজ ছিল ক্যাথেরিনের।
খুব অল্প সময় ই তারা সুখে কাটিয়েছেন। ১৯১৬ এর শুরুর কয়েকটি মাস। আসলে দু’জনে তখন একটু ভালো আয় করতেন। একটা বাড়িও হয়েছিল সে সময়। ক্যাথেরিন কিন্তু বিবাহ সম্মন্ধে সারাজীবন বেশ আশাবাদী ধারণা পোষণ করতেন। তা সত্বেও আবার প্রেমে পড়েন এবং মারেকে ছেড়ে ফ্রান্সিস কারকোর জন্য ফ্রান্সে পাড়ি দেন। কারকো ফরাসি সৈন্য দলে নাম লিখিয়েছিলেন। তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য ক্যাথেরিন অস্থির হয়ে ওঠেন। যুদ্ধের মধ্যে মহিলাদের যাওয়া নিষিদ্ধ, এমন দুর্গম অঞ্চল দিয়ে পৌঁছে যান সেখানে। মাত্র তিনদিনেই তার কারকো সম্বন্ধে ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হল। মোহভঙ্গ হয়ে ফিরে এলেন। যার ওপর নির্ভর করতে চেয়েছিলেন, দেখলেন সেও মারের মতোই স্বার্থপর। ক্যাথেরিন যেভাবে মারেকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইতেন তেমনটি মারে চাইতেন না। তার ওপর চির রুগ্ন বলে এবং তাকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১১: ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড ও মিডলটন মারে: এক আশ্চর্য বিবাহিত সম্পর্ক
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০১: খামখেয়ালির গিরীন্দ্রনাথ
সবচেয়ে বড় লড়াই ছিল যক্ষা রোগের বিরুদ্ধে। যক্ষা তখন মারন রোগ। কোনও সুনির্দিষ্ট ধারণাও ছিল না এ রোগ সম্বন্ধে। সংক্রামক ব্যাধি বলে জানতো অনেকে। মারের থেকে আলাদা থাকার চেয়ে ও একসঙ্গে থাকার কষ্ট অনেক বেশি হয়ে উঠল। ক্যাথেরিনকে এক হোটেল এর ঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয় তার এই রোগের জন্য। সেখানকার ঘর রোগের সংক্রমন মুক্ত করার জন্য টাকাও দিতে হয়েছিল। ক্যাথেরিনের প্রচণ্ড কাশি, সঙ্গে ঝলকে ঝলকে রক্ত। সামনে নাকে মুখে রুমাল চেপে বসে আছেন মারে। ক্যাথেরিন লিখলেন, “If he could only for a minute, serve me,help me,give himself up…”
মারে এলিজাবেথ বিবেস্ক নামে এক বিবাহিতা মহিলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। এলিজাবেথ ও ক্যাথেরিনের অসুস্থতা নিয়ে কটূক্তি করেন, “a sick woman…How dared she try to hold him?”
মারে এলিজাবেথ বিবেস্ক নামে এক বিবাহিতা মহিলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। এলিজাবেথ ও ক্যাথেরিনের অসুস্থতা নিয়ে কটূক্তি করেন, “a sick woman…How dared she try to hold him?”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯১: নুনিয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৫: ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এবং চলচ্চিত্র
১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে দ্বিতীয়বার ফুসফুস থেকে রক্তক্ষরণ হয়। প্লুরিসি ধরা পরে। এক ব্রিটিশ ডাক্তার তাকে খুব নিয়ম-নিষ্ঠ ভাবে থাকতে ও অন্য আবহাওয়ায় বছর খানেক কাটাতে উপদেশ দেন। তাহলে যদি বা বাঁচতে পারেন। কিন্তু কোনওটাই ক্যাথেরিন করলেন না। তার ধূমপানের নেশা ছাড়লেন না। কোনও সানেটরিয়ামেও গেলেন না। ১৯১৮ থেকে ১৯২৩ তার অসুখ উত্তরোত্তর বাড়তে লাগল। চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর ভরসা হারিয়ে ক্যাথেরিন অতীন্দ্রিয়বাদের দিকে ঝুঁকলেন। আত্মা অবিনশ্বর। শরীর থেকে আলাদা। তাই শরীরকে উপেক্ষা করার অভ্যাস আয়ত্ত করায় ব্যগ্র হলেন। শিষ্য হলেন গুর্ডজেফের। কঠোর পরিশ্রম, স্বল্প আহার, দীনহীন ভাবে জীবন যাপন করতে লাগলেন।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
একে দুরারোগ্য ব্যাধি, তার ওপর চরম শারীরিক অত্যাচার। গুর্ডজেফ ক্যাথেরিনের জন্য প্রাচীন এক পদ্ধতিতে রোগ উপশমের ব্যবস্থা করলেন। এক পশুশালার ওপরে পাটাতন করে তার বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পশুর বাতাস গায়ে লেগে সুস্থ হবেন। তার মতো মানুষের মৃত্যু হতে পারে না, আত্মা অবিনশ্বর এসব বোঝানো হল। মারে দেখতে এলেন। ক্যাথেরিন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কাশির দমক। কাশির সাথে ঝলকে ঝলকে রক্ত বমি। বললেন, “I believe I ‘m going to die”. একটু পরেই বিছানায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন। বয়েস মাত্র চৌত্রিশ।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৫: টাকা না থাকলে নির্ধন ব্যক্তির বন্ধুও শত্রু হয়
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৪: শ্রীমার গৃহী ভক্তদের সন্ন্যাসদীক্ষা
সুদর্শন মারে ক্যাথেরিনের স্বামী হিসেবে ব্যর্থ। না পেরেছেন তাকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে, না তার জীবনের কোনও অসময়ে সঙ্গী হয়ে সহযোগিতা করেছেন। তার শিশুসুলভ অবাস্তব কল্পনার ভুল ভাঙানোরও চেষ্টা করেননি। নির্লিপ্ত, উদাসীন এক স্বামী। অসহায় ক্যাথেরিনের স্বামীকে পাঠানো কবিতাই তার বিবাহিত জীবনের সার কথা—
Someone came to me and said
Forget, forget that you have been wed.
Who’s your man to leave you be
Ill and cold in a far country?
Who’s the husband-who’s the stone
Could leave a child like you alone?
Forget, forget that you have been wed.
Who’s your man to leave you be
Ill and cold in a far country?
Who’s the husband-who’s the stone
Could leave a child like you alone?
* ড. দুর্গা ঘোষাল (Durga Ghoshal), প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, গভর্নমেন্ট কলেজ।