
কাকোলূকীযম্
মানুষ জটিল প্রাণী। মনস্তাত্ত্বিকেরা বলেন, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুসুলভ একজন মানুষ হতে পারেন, তবুও কিছু মানুষ থাকবেনই, যাই হোক না কেন, তারা আপনাকে অপছন্দ করবেন। হতেও পারে আপনাকে অপছন্দ করবার তাদের হয়তো যথেষ্ট কারণও পারে, আবার সব ক্ষেত্রে যে কারণ লাগে তাও নায়। তাই এটা স্বাভাবিক এই জগতে প্রত্যেক মানুষেরই শত্রু আছে। অজাতশত্রু এইটা একটা ধারণা মাত্র। বাস্তবে তা হয় না। তাই এই জগতে চলতে গেলে বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যে কীভাবে ফাটল তৈরি হয় বা তৈরি করা যায় এবং কীভাবে নতুন নতুন বন্ধু সংগ্রহ করতে হয় বা সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কিভাবে বজায় রাখতে হয়। এইসব নিয়ে আলোচনা করার পর, বিষ্ণুশর্মা এখন প্রত্যক্ষ রাজনীতির বিষয়কে অবলম্বণ করে গল্পের জাল বুনতে শুরু করলেন।
তবে এই শত্রুতার পেছনে প্রকৃত কোনও স্বভাবগত কারণ আছে কি না, তা নিয়ে যদিও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ বাস্তবে কাক ও প্যাঁচার মধ্যে এমন কোনও মারাত্মক দ্বন্দ্ব দেখা যায় না। প্যাঁচা দিনে অন্ধ আর কাক রাতে দেখে না—এই বৈপরীত্যটাই হয়তো রূপকের বীজ। এই শত্রুতার রূপকটি মহাভারতের সৌপ্তিকপর্বের মধ্যে সম্ভবতঃ প্রথম আমরা দেখতে পাই। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষে দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা একটি বিশাল বটগাছে নিশ্চিন্তে বসবাসকারী অনেক কাকদেরকে রাত্রির অন্ধকারে এক প্যাঁচার হাতে মরতে দেখে রাতের আঁধারেই পাণ্ডব শিবিরে হামলা চালান। সেখানে অশ্বত্থামার দুরভিসন্ধিকে সুস্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মহাভারতকার বলেছেন—
ছদ্মনা তু ভবেত্ সিদ্ধিঃ শত্রূণাঞ্চ ক্ষযো ভবেত্।। (সৌপ্তিকপর্ব, ৩/৪৮)

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৫: মিত্রপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিলে সযত্নে তার সদ্ব্যবহার করতে হয়

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৩: মা সারদার সঙ্গে সরলাদেবীর কাশীভ্রমণ
এই ঘটনাটিই পরে পঞ্চতন্ত্রের কাকোলূকীযম্ অংশের মূল কাহিনির উত্স হয়েছে বলে মনে হয়। আমাদের বক্তব্য হল, এই কাক ও প্যাঁচার মধ্যে শত্রুতাটার ধারণাটি যে পঞ্চতন্ত্রেরই প্রথম কথিত হয়েছে, তা নয়। বরং এর পূর্বেও নানা রূপক ও আপ্তবাক্যে এই দ্বন্দ্ব ব্যবহৃত হয়েছে এবং পঞ্চতন্ত্রের মধ্যে তা সংগৃহীত হয়েছে মাত্র।
চিরাচরিত পদ্ধতিতে শিশু রাজপুত্রদের আকর্ষিত করতে তন্ত্রের শুরুতেই একটি সূচনা শ্লোকের অবতারণা করেন পঞ্চতন্ত্রকার—
দগ্ধা গুহাং পশ্য উলূকপূর্ণাং কাকপ্রণীতেন হুতাশনেন।। (কাকোলূকীযম্, ০১)
এই তন্ত্রের মূল বক্তব্য এবং উদ্দেশ্যটি কিন্তু এই শ্লোকের মধ্যেই আছে। এই তন্ত্রের মাধ্যমে পঞ্চতন্ত্রকার তাঁর রাজনীতির পাঠ নিতে আসা শিশুরাজপুত্রদের শেখাতে চলেছেন যে, এমন কাউকে কখনই বিশ্বাস করা উচিত নয় যে আগে শত্রু ছিল, কিন্তু এখন হঠাৎ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই গুহাটির দিকে তাকিয়ে শিক্ষা নিতে হবে, যেটি একসময় সমস্ত পেঁচাদের আবাসস্থল ছিল, কিন্তু এখন তা সবটাই কাকেদের লাগানো আগুনে পুড়ে গিয়েছে।

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৬: পরাগপাখি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১১: বিপদ যখন আসে
কাকেদের সেই বৃক্ষদুর্গের কিছু দূরেই পর্বতের গুহার মধ্যে একটি গিরিদুর্গ বানিয়ে, পেঁচাদের রাজা অরিমর্দন, যিনি শত্রুদের অনায়াসে পরাজিত করতে পারেন, তিনি বাস করতেন। সমগ্র উলূক পরিবার নিয়ে তারা পাহাড়ের ভিতরে একটি নিরাপদ গুহায় দুর্গের ভিতরে বাস করতেন।

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৬: সিলেটে দেখা মণিপুরী নাচ কবির নৃত্য ভাবনাকে উস্কে দিয়েছিল

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৪: গ্রীষ্মকালে আলাস্কা সত্যিই অচেনা এক দেশ
এবং এছাড়াও…।
যে ব্যক্তি শুরুতেই শত্রু বা কোন রোগকে সমূলে বিনষ্ট করে, সেই রোগ যতই কঠিন হোক বা সে শত্রু যতই মহাবল হোক না কেন, সেই ব্যক্তির কোনও ক্ষতি করতে পারে না।
বৃক্ষদুর্গের অধিবাসী তার প্রজাদের দিনের পর দিন পেঁচাদের হাতে এইভাবে নির্বিচারে হত্যা হতে দেখে বায়সরাজ মেঘবর্ণ খুবই উদ্বিগ্ন হলেন এবং কিভাবে এর প্রতিকারের হতে পারে তার জন্য সে তার মন্ত্রী পরিষদের একটি জরুরি সভা ডাকলেন। আচার্য কৌটিল্যও বলেন, “মন্ত্রপূর্বাঃ সর্বারম্ভাঃ”। যে কোনও ব্যাপারেই রাজার কর্তব্য হল তার মন্ত্রীদের সঙ্গে যথাযথ মন্ত্রণা করে তবেই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া।

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৯: আধুনিক যুগে দাবানলের ফলে বনদহনের সঙ্গে খাণ্ডব বনদহনের সাদৃশ্য আছে কী?
