বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


চিত্র সৌজন্যে: সত্রাগ্নি

 

কালপুরুষ

তারকবাবু বললেন—
—বিএনএস আপনিই বলেছিলেন, যখন তোমার কারও কাছে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ আর থাকবে না, ঠিক সেদিন তোমার জীবনের নবজন্ম হবে। প্রথম থেকেই আপনার তাগিদ ছিল নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার। অন্যের কাছে নয়। আর আজ বহুদিন সেই প্রয়োজনটুকুও আর পড়ে না। আপনার, আপনার ছেলেদের পুত্রবধূদের ভাই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে আমার যে ক্ষতি আজ হল সেটার পরিমাপ সেটার দুঃখবোধ একান্ত আমাদের নিজেদের। সেটা আজীবন থাকবেও। অন্য কারও সহানুভূতি সেটা এক বিন্দু কমাবেও না বা নতুন করে মনেও করিয়ে দেবে না।

—ঠিক বলেছ। বারবার তুমি আমার দিকনির্দেশ করেছ তারক। সত্যিই তুমি আমার এবং আমার পরিবারে কালপুরুষ, ওরিয়ন। আসলে মায়ের সময় ফুরিয়ে গিয়েছিল, তাই মা আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন। স্বর্ণর সময় ফুরিয়ে গেল সেও চলে গেল। বিধাতা পুরুষকে সামনে পেলে একবার জানতে চাইতাম। আরও কতদিন? আসলে এতগুলো বছরের সম্পর্ক তো, ফস করে মানুষটা দেহে নেই বলে যে একেবারে মিলিয়ে গিয়েছে তাও তো নয়। এই ঘরের আলমারিতে যেখানে স্বর্ণের শাড়ি রাখা আছে সেটা খুললেই তার শাড়িতে দেওয়া দামি পারফিউমেরগন্ধ পাব। ভুলবো কি করে? খেতে বসলে ডাল পোস্ত দেখলে স্বর্ণের কথা মনে পড়বে।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-২৪: বিনয়কান্তির ব্যবহারে কি কোনও অস্বাভাবিকতা দেখতে পেল তারক?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭০: পিতার সমালোচক রাম শুধুই মানুষ, তবু তিনি কেন পুরুষোত্তম?

অমুর কোনও নতুন বই বেরোলে অমু নয়, বাচ্চা মেয়ের মতো স্বর্ণ এসে আমাকে দেখাতো এই দেখো আমাদের অমুর নতুন উপন্যাস। ভুলবো কী করে? তাই সহানুভূতি নয়, দশজন মানুষ আমাকে আজ মনে করিয়ে দেবেন যে আমার স্বর্ণ চলে গিয়েছে। আমায় শক্ত হতে হবে, সে যে আর ফিরে আসবে না এটা আমায় মেনে নিতে হবে। সেটা আমি মনে প্রাণে চাইনি। তাই ঘরবন্দি করে দূর থেকে ওই ভিড়ের মধ্যে স্বর্ণকে খোঁজার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মনে হল এমন একটা কিছু করি যাতে স্বর্ণ খুশি হবে, আর মনে মনে আমায় বাহবা দেবে। তাই তোমায় ডাকলাম। আর আমি জানি যে কোনও অসম্ভব কাজ তোমার সামনে পড়লে তুমি তাকে সম্ভব করে দেবে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৩: মহীয়সী গৃহস্থনারী মা সারদা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৪: জোড়াসাঁকোয় পাগল-যাচাই

সেটা আমাদের জামাই প্রবোধের মৃতদেহ ছাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসাই হোক বা আমাদের বাবুকে তাদের সব বন্ধুর সঙ্গেই লালবাজার থেকে ছাড়িয়ে আনা হোক।

তারকবাবু সম্বন্ধে বাবা একটা কথা প্রায় বলতেন—
—বিরাট ডিগ্রিধারী ডক্টরেট মানুষ। কোনও কিছু নিয়ে পাতার পর পাতা থিওরি আর তত্ত্ব আলোচনায় ভরা থিসিস লিখে ফেলতে পারেন। কিন্তু সঠিক সময় এক বালতি জল সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া, সেটাই হল এক্সিকিউশন। তারকবাবু দুটোই সাংঘাতিক। আর মানুষটা উল্টোদিক থেকে ভাবেন তো! যতটা এক্সিকিউট করতে পারবেন, ততটাই প্ল্যান করেন। পশুরাজ সিংহ নামিদামি ডিগ্রিধারী হান্টিং সাকসেস রেট হল ৩০ পারসেন্ট। দশবার ঝাঁপ মারলে তিনটে শিকার করতে পারেন। হায়না অত্যন্ত অবহেলিত একটি জন্তু। চেহারা কি মানে সিংহের মতো ইম্পরট্যান্ট তো নয়ই। বরং ফেকলু ক্লাস! কিন্তু তার হান্টিং সাকসেস রেট ৭৫ শতাংশ। যা পারবে সেটাই করে। বেকার মিটিং সেমিনারে জ্ঞানদ্গীরন নয়, করে দেখানোর গ্যারান্টি।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৫: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— আমুর ও গোশিঙা

বাবা অদ্ভুত অদ্ভুত বাংলা শব্দ ব্যবহার করতেন যার মধ্যে জ্ঞানদ্গীরন অন্যতম। বাবা বলতেন, যাদের জ্ঞান খুব বেশি তারা জ্ঞান শুধু দান করেই ক্ষান্ত হন না, তাদের জ্ঞানাগ্নেয়গিরির থেকে জ্ঞানদ্গীরন ঘটে। বাবা ঠিক এই জন্যই সভাসমিতি একেবারেই এড়িয়ে চলতেন। কথা বলতে শুরু করলে মুখ দিয়ে কী বেরিয়ে যাবে সেই ভয়ে ঘরের চৌহদ্দির বাইরে কথা খুব একটা বলতেনই না।

এতদিন বাদে লিখতে বসে সুবর্ণর বারবার আর একটা জিনিস মনে হচ্ছে, বিনয়কান্তি তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় একবারেই পাকাজুহুরীর মতো খাঁটি হীরে চিনতে পেরেছিলেন এতে কোনও আশ্চর্য নেই। সংশয়ও নেই। অত বছর আগে তারকবাবু আজকের দিনে ক্লাউডকিচেন, ফ্র্যাঞ্চাইসি কনসেপ্ট ভাবলেন কী করে? অতিথি রান্নাঘরের কাছে পৌঁছতে না পারলে রান্নাঘর অতিথির কাছে পৌঁছে যাবে। সত্যি বাবার কথা আবার বলতে হবে, বাবা বলতেন আমাদের তারক নিয়োগী হলেন ‘আটপৌরে জিনিয়াস’!
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪৩: ইউ এফ ও

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

সিএনএন-এর হেডকোয়ার্টার জর্জিয়ার আটলান্টার সিএনএন সেন্টার-এ কর্মরত রোসিন আর ওর বর জেমস অ্যাডম ছুটি পায়নি। কিন্তু ছোটমেয়ে শ্যাননকে নিয়ে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে ছুটে এসেছিলেন কীরা কাকিমা। আয়ারল্যান্ডের হাসপাতালের মালিকানা বদল হচ্ছে, কীরা কাকিমা হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার সুবাদে তার পক্ষে এই সময়ে আসাটা খুবই শক্ত ছিল। কিন্তু ঘাটের আগের দিন বিকেলে এসে পৌঁছল ওঁরা। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content