মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি: অঙ্কনা চৌধুরী।

আলাস্কার এই সব অসুবিধার সম্পর্কে আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। এই সমস্ত কিছুকে চোখের সামনে দেখবো বলেই আমার আলাস্কা আসার এতো ইচ্ছা। চিরাচরিত আরামের মধ্যে বেশিদিন একটানা থেকে আমি কোনওদিনই খুব একটা শান্তি পাইনি। বারবার বেরিয়ে পড়েছি অজানার উদ্দেশ্যে। কখনও আমাজনের গহন অরণ্যে ঢুকে পড়েছি শুধু দু’ একজন আদিবাসীর সঙ্গে, কখনও আবার রহস্যময় অজানা-অচেনা অন্য কোনও দেশে খোলা আকাশের তলায় রাত কাটিয়েছি কোনও হোটেল কাছারি কিচ্ছু না নিয়ে। আর কিছু না হলে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলা যেমন স্কাই ড্রাইভিং, বাঞ্জি জাম্পিং এ সবের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছি শান্তি। সেই কারণেই তো উইসকনসিনের বিগত তিন বছরের এত সুন্দর আরামের জীবনে ইতি টেনে এ বার লক্ষ্য চেনা নদীর ধারে অচেনা এই শহর, ফেয়ারব্যাঙ্কস।
আর একটা কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, জীবনে আমি বেশ কিছু সফল ব্যক্তিত্ত্বের কথা জেনেছি, পড়েছি, বা কিছু ক্ষেত্রে তাদের সান্নিধ্যে এসেছি; যাঁরা কিনা এই আলাস্কায় এসেছিলেন এবং বিভিন্ন ভাবে এই অঞ্চলের বিবিধ পরিস্থিতিকেই দায়ী করেন তাঁদের সফলতার কারণ হিসেবে। কখনও সেটা এখানকার বিপরীত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার লড়াই করতে করতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার কারণেই হোক, আবার কখনও বা সেটা এমন অদ্ভুত পরিবেশে সকলের থেকে দূরে থাকতে থাকতে নিজের জীবনের একটা অন্য রকম মানে খুঁজে পাওয়ার কারণেই হোক—আলাস্কা তাঁদের সফলতার পিছনে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে বলেই তাঁরা বিশ্বাস করেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৩২: আলাস্কায় কিন্তু কলকাতার মতো এত বড় বড় শপিংমল নেই, আবার যত্রতত্র গাড়ি সারানোর ব্যবস্থাও নেই

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫১: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—পশুর, ধুধুল ও হাবল

অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই, এই ব্যাপারটা অভিজ্ঞতা করার ইচ্ছাও আমার মধ্যে ষোলোআনা ছিল। প্রচলিত সুযোগ-সুবিধার কিছুটা ত্যাগ করে, একটু কষ্ট করে জীবনে যদি আরও একটু বেশি সফল হওয়া যায় তাহলে সেটা একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি? আর আমার ক্ষেত্রে তো এখানে বেতন, গবেষণার সুযোগ-সুবিধা, অর্থাৎ আমার কর্মক্ষেত্রে যা কিছু আকাঙ্ক্ষিত, সবই অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি। তাহলে তো আপত্তি থাকার আর সত্যিই কোনও প্রশ্ন নেই।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: মহাভারতের প্রেক্ষাপটে তৈরি টানটান ক্রাইম সিরিজ মৎস্যকাণ্ড

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯০: সাহেবের বেশ না-পরে ফিরেছিলেন সাহেবের দেশ থেকে

আর একটু কৌতুকের ছলে বলতে গেলে ব্যাপারটা এরকম ভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়— আলাস্কায় এই চাকরির প্রথম খবর আসার আগে থেকেই পুরোদমে আমার বিবাহের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পুত্রদায়গ্রস্ত আমার মা-বাবা মরিয়া হয়ে উঠেছেন আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য। আমার হবু ধর্মপত্নীর সঙ্গে তত দিনে কথাবার্তাও হয়ে গিয়েছে, কোভিড-১৯ এর পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমি দেশে গিয়ে তার সঙ্গে শুভ বিবাহ সম্পন্ন করব।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৫: অরু দত্ত— এক অভিশপ্ত গান্ধর্বী

ইতিমধ্যে আমার মা-বাবা আমার হবু ধর্মপত্নীকে বলেও দিয়েছে, বিয়ের পরে সে যেন কিছুতেই আমাকে ওই সব অ্যাডভেঞ্চার একেবারেই না করতে দেয়। অর্থাৎ কিনা, সাংসারিক জীবনের সাতপাকে বিবাহ-পূর্ব জীবনের অভিযান সব প্রায় বন্ধ হয়ে এলো বলে। আমাজনেও আর যাওয়া হবে না, রাস্তার ধারে রাতও আর কাটানো হবে না। মানে এককথায় সব অ্যাডভেঞ্চার বন্ধ। কাজেই এমন একটা জায়গা দরকার যেখানে কিনা জীবনটাই বেশ অ্যাডভেঞ্চারের মতো। তাহলে আর কেউ কিছু বলতে পারবে না। অতএব যেকোনও দিক থেকে বিচার করলে এই আলাস্কাই হল আমার হাতের সামনে থাকা অন্ধের যষ্টি, আমার গন্তব্য, আমার নিয়তি… সবকিছু।—চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

Skip to content