মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


কলকাতায় বৃষ্টি

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

খুব যে পরিশ্রম করছেন তেমনটা নয়। তবুও কাজ থেকে ফিরেই বেশ ক্লান্ত লাগছে। ক্লান্তির চোটে আগামীকাল কী পরবেন বা কিছু কাজও এগিতে রাখতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ি ফিরে রান্না করতেও ভালো লাগে না। ঘনিষ্ঠরা বন্ধুরা বলেছেন, এমন অবস্থার জন্য নাকি এই আবহাওয়ার দায়ী! তীব্র দহনের জন্য ঘুম কম হচ্ছে। তেমন কিছু খেতেও ইচ্ছে করছে না। আবার মাঝে মধ্যে আমাদের পরিপাকতন্ত্রও বিগড়চ্ছে। এই সব কিছুর জন্যিই হয়তো বেশি ক্লান্ত লাগছে। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন, মহিলাদের এই অতিরিক্ত ক্লান্তির জন্য ‘পিসিওএস’-এর হাতও থাকতে পারে।
 

‘পিসিওএস’ ঠিক কী?

পিসিওএস অর্থাৎ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম। মহিলাদের কাছে এর চেনা উপসর্গ হল অনিয়মিত ঋতুস্রাব, বাড়তি ওজন, মুখে রোমের আধিক্য ইত্যাদি। পিসিওএস-এ ভুগলে হরমোনের ভারসাম্য কিছুটা বিগড়ে যায়। আবার এর প্রভাব পড়ে ডিম্বস্ফোটনের ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে বন্ধ্যত্ব ডেকে আনতে পারে এই পিসিওএস।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৬: যন্ত্রণাদগ্ধ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রাঁচিতে পেয়েছিলেন সান্ত্বনার প্রলেপ

কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়েছে কি না বুঝবেন কী করে? চোখ, পা, ত্বকের এই সব লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হন

 

পিসিওএস-এর সঙ্গে কি ক্লান্তির সম্পর্ক আছে?

‘পিসিওএস’-এ ভুগলে দেহে হরমোনে মারাত্মক হেরফের দেখা দেয়। এর জেরে আমাদের নিত্যদিনের শারীরবৃত্তীয় নানা কাজকর্মে তার প্রভাব পড়ে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোন আমাদের বিপাকক্রিয়া ভালো রাখতে সাহায্য করে। কাজ করার শক্তি বা এনার্জির জন্যেও এই হরমোনের খুব দরকারি। এই হরমোনের মাত্রার ঘটতিতে ক্লান্ত বোধ করা স্বাভাবিক। আবার, এই হরমোনের তারতম্যের জন্য ঘুমও কম হতে পারে। মনে রাখতে হবে, ক্লান্তি কাটাতে হলে রাতে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা দরকার। আর এই পরিমাণ ঘুম না হলে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ মহিলাদের টেস্টোস্টেরন এবং কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলেও শরীর দুর্বল লাগতে পারে।

আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৮: স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়

জাপানি রেইকি কী? এই থেরাপি কীভাবে রোগ নিরাময় সাহায্য করে?

 

পিসিওএস-এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় কী?

সব সময়ই চেষ্টা করতে হবে যাতে মানসিক চাপ না বাড়ে। অর্থাৎ উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। উদ্বেগ কাটাতে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গানও শুনতে পারেন। রোজদিন সকালে ব্যায়াম বা যোগাভ্যাস করতে পারলে ভালো হয়। বাড়িতে যদি পোষ্য থাকে, তার সঙ্গেও সময় কাটাতে পারেন। সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান এড়াতেই হবে। আর যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৬: সুন্দরবনের লৌকিক চিকিৎসায় ম্যানগ্রোভ—হরগোজা ও কেয়া

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২১: গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী—এক শক্তির গল্প

বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে, কম শর্করা যুক্ত প্রাতঃরাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত ওটমিল, কলা এবং গোটা গমের রুটির মতো খাবারগুলি খুবই উপযোগী। কারণ এই খাবারগুলির গ্লাইসেমিক সূচক বেশ কম। যে সব খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে সেগুলি ধীর গতিতে শক্তি নির্গত করে। এই ধরনের খাবার পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
 

পিসিওএস-এর ডায়েট টিপস

সকালে যা যা খাবেন তার মধ্যে অর্ধেকটা জুড়েই থাকুক স্যালাড ও সব্জি। বাকি অর্ধেকে সমান সমান থাকুক প্রোটিন ও শর্করা।
চিনির বদলে অন্য বিকল্প ব্যবহার করুন। যেমন মধু, গুড় বা ম্যাপ্‌ল সিরাপ ইত্যাদি।
বেশি করে ফল খান। সাধারণ শর্করার থেকে প্রাকৃতিক শর্করা কম ক্ষতিকর।
বিভিন্ন ধরনের সব্জি রাখুন খাদ্য তালিকায়। এগুলি এক দিকে যেমন বিপাকে সহায়তা করে, তেমনই বিভিন্ন উপকারী ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের জোগান বজায় রাখে।
যাঁরা সকালে ভাত খান, তাঁরা সাধারণ চালের বদলে ঢেঁকি ছাটা চাল ব্যবহার করতে পারেন।


Skip to content