ছবি: প্রতীকী।
বাবলি হয়ত প্রণয়ের মানসিকতার একপিঠ দেখতে পেয়েছিল প্রণয়ের মনের অন্য অন্ধকার দিকটা যে এতো ভয়ংকর হতে পারে সে ভাবেনি। ১৮৮৬ সালে স্কটিশ লেখক রবার্ট লুইস স্টিভেনশন সারা বিশ্বে সাড়া জাগানো উপন্যাস স্ট্রেঞ্জ কেস অফ ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড লিখেছিলেন। এই কাহিনীতে গাব্রিয়েল জন অ্যাটারসন নামে লন্ডনের এক আইনজ্ঞ তার অনেক দিনের বন্ধু ডক্টর হেনরি জেকিল ও এডোয়ার্ড হাইড নামের একজন খুনির মধ্যে কিছু অদ্ভুত সাদৃশ্যের সন্ধান পেলেন।
সেই কল্পনাই মোটামুটি ৭০/৮০ বছর পর ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার বা ডিআইডি হিসেবে মানুষের জীবনে সত্যি হয়ে গেল। কেউ এক বিশেষ মানসিক বৈকল্যের জন্য তার অজান্তেই এমন কিছু ঘটনা ঘটাচ্ছেন, যেটা হয়তো ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। তিনি সে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে আর এই ঘটনার কোন স্মৃতি তাঁর মধ্যে থাকছে না। স্প্লিট পার্সোনালিটির রোগী না হলেও প্রণয়ের মধ্যে সুনিশ্চিত ভাবে একটা অস্বাভাবিক মানসিক সমস্যা ছিল। সেই তীব্র রাগের উৎস হল অক্ষমতাজনিত দূর্বলতায় পেছিয়ে পড়ার হতাশা। সেই হতাশা থেকেই বুবুকে বেনজির অপমান করেছিল প্রণয়। কিন্তু শেষমেষ তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এবারও সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল অরুণাভ’র ওপর।
আরও পড়ুন:
বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৪১: ছবি
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৩: চোর-ডাকাতও যদি দান-ধ্যান করে, তবে লোকে ‘তাকে’-ও ভগবানের মতোই শ্রদ্ধা করে
পুজোর ঠিক পর কালীপুজোর রাতে জনপ্রিয় টেলিভিশন তারকা অরুণাভ বসু আচমকা উধাও হয়ে গেলেন। ভাইফোঁটার পর চালু ধারাবাহিকের শুটিং শুরু। ডেলিসোপের ব্যাংকিং মানে জমা এপিসোড-এর সংখ্যা খুব বেশি থাকে না । তারপর পুজোর ছুটির কারণে ভাঁড়ারে টানাটানি সমস্ত শিল্পীরা শুটিংয়ে এসেছেন অথচ অরুণাভ আসেনি, তার ফোনের সুইচড অফ। পুজোয় কোথাও বেড়াতে গেলেও নামি অনামী সকল অভিনেতা স্টুডিওপাড়ায় শুটিং চালু হলেই চলে আসেন। তাদের জগৎটা খুব বেশি বড় নয়। তাই নিজেদের মধ্যে বিজয়ার প্রীতি শুভেচ্ছা বিনিময় এটা একটা বহুদিনের রীতি। কলকাতা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে নয়নয় করে অরুণাভর প্রায় পাঁচবছর অভিনয় করা হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৩: সুন্দরবনের পাখি—কোঁচ বক
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭০: ভানুপিসি ও শ্রীমার ভক্ত
এ সব ব্যাপারে সে ভীষণ পার্টিকুলার এবং প্রফেশনালও বটে। কাজ ভুলে পুজোর ছুটিতে বেপাত্তা হয়ে যাবার মতো ছেলে অরুণাভ নয়। কলকাতায় একটা অ্যাপার্টমেন্টে অরুণাভও একাই থাকে। সকাল থেকে রাত শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই বলা ভালো ঘুমোতে যাওয়া আর সামান্য কটা ছুটির দিন বাড়ি থাকে। পুলিশ দিল্লিতে তাঁর বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জেনেছে – অরুনাভ কালীপুজোর দিন রাতেই তাঁর মায়ের সঙ্গে শেষ টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। কলকাতা ছেড়ে তাঁর কোথাও যাবার কথা নেই। একজন জনপ্রিয় টেলিভিশন প্রযোজকের বাড়িতে কালীপুজো হয়। অরুণাভ কথা দিয়েছিলেন সেই পূজোতে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু যাননি।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
বাবলি খবরটা পাওয়ার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছে। এক অরুণাভর কোন ক্ষতি হলো কিনা? আর দুই কোনভাবে কোনও সূত্র ধরে এই ঘটনা তার কাছে পৌঁছে যাবে কিনা?
অরুণাভ যথেষ্ট জনপ্রিয় টেলিভিশন তারকা শাসকের বিরুদ্ধে ছোটখাটো সরকারি ত্রুটিবিচ্যুতিতেই রাস্তায় শুয়ে পড়া বিরোধীদের হাতে বা খবরের কাগজের কাছেওপুজোর পরে কোনও হাতেগরম ইস্যু নেই। তখনও এত নিউজ চ্যানেল বা ইউটিউবারের রমরমা ছিল না। তাই সকলে মিলে সঙ্গত কারণেই অরুণাভ অন্তর্ধান রহস্য সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।পুলিশের উপর চাপ বাড়ছে প্রথম দুটো তিনটে দিন সরকার ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও ক্রমে নজর দিতে হল।
মায়ের পরিচিত একসময়ের চিত্রসাংবাদিক তখন একটি সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক। আমার মা মানে চিত্রতারকা সুরঙ্গমা সেনগুপ্ত বহুদিন সিনেমার পর্দা থেকে দূরে থাকলেও যে সামান্য কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার মধ্যে এই বুলুদা মানে সাংবাদিক বলেন্দ্র চাকী অন্যতম! নববর্ষ বিজয়া ক্রিসমাস বা হ্যাপি নিউইয়ার করতে ইনি ফোন করতেন। বাবার সঙ্গেও খুব হৃদ্যতা ছিল তাঁর। আসলে আমরা যে সময় বড় হয়েছি সেই সময় মানুষের সভ্যতা ভদ্রতা আচার-আচরণে চুইংগামের মত স্বার্থ লেগে থাকত না। আমরা যখন বুড়ো হলাম দেখলাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আচার-আচরণ স্বার্থের তেলে এমন চুপচুপ করছে যে তার গায়ে সভ্যতা ভদ্রতার গঙ্গাজলের ছিটেফোঁটা ছুঁতেই পারছে না।
অরুণাভ যথেষ্ট জনপ্রিয় টেলিভিশন তারকা শাসকের বিরুদ্ধে ছোটখাটো সরকারি ত্রুটিবিচ্যুতিতেই রাস্তায় শুয়ে পড়া বিরোধীদের হাতে বা খবরের কাগজের কাছেওপুজোর পরে কোনও হাতেগরম ইস্যু নেই। তখনও এত নিউজ চ্যানেল বা ইউটিউবারের রমরমা ছিল না। তাই সকলে মিলে সঙ্গত কারণেই অরুণাভ অন্তর্ধান রহস্য সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।পুলিশের উপর চাপ বাড়ছে প্রথম দুটো তিনটে দিন সরকার ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও ক্রমে নজর দিতে হল।
মায়ের পরিচিত একসময়ের চিত্রসাংবাদিক তখন একটি সিনেমা পত্রিকার সম্পাদক। আমার মা মানে চিত্রতারকা সুরঙ্গমা সেনগুপ্ত বহুদিন সিনেমার পর্দা থেকে দূরে থাকলেও যে সামান্য কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার মধ্যে এই বুলুদা মানে সাংবাদিক বলেন্দ্র চাকী অন্যতম! নববর্ষ বিজয়া ক্রিসমাস বা হ্যাপি নিউইয়ার করতে ইনি ফোন করতেন। বাবার সঙ্গেও খুব হৃদ্যতা ছিল তাঁর। আসলে আমরা যে সময় বড় হয়েছি সেই সময় মানুষের সভ্যতা ভদ্রতা আচার-আচরণে চুইংগামের মত স্বার্থ লেগে থাকত না। আমরা যখন বুড়ো হলাম দেখলাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আচার-আচরণ স্বার্থের তেলে এমন চুপচুপ করছে যে তার গায়ে সভ্যতা ভদ্রতার গঙ্গাজলের ছিটেফোঁটা ছুঁতেই পারছে না।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৩: প্রফুল্লময়ী— একটি বইয়ের লেখক এবং একটি জীবন ভরা ডিপ্রেশন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
যাই হোক সেই বুলুদা বিজয়াতে ফোন করেছিলেন তবু ভাইফোঁটার দুদিন বাদে তাঁর ফোন পেয়ে মা বেশ অবাক হলেন। ঠাট্টা করে বলে উঠলেন—
—বুলুদা এবার বুঝতে পারছি তুমি বুড়ো হয়েছো!
—কেন কেন? আমি তো কুচকুচে কালো টেলিফোন থেকে ফোন করছি তোর কাছে কি সাদা টেলিফোন হয়ে বাজছে ।
—না! সাহিত্যিক অমলকান্তি আমার স্বামী আমার টেলিফোনের রং
সবুজ বেছেছেন!
—বাহ, আমার খেয়াল আছে বিজয়া হয়ে গিয়েছে! কিন্তু আমি একটা অন্যব্যাপারে ফোন করছি একটু সিরিয়াস।
বহুদিনের চিত্র সাংবাদিক দাপুটে ফিল্ম ম্যাগাজিনের সম্পাদক তাঁর কাছে খবরের নানা সোর্স। সেখান থেকেই তিনি শুনেছেন টেলিভিশন তারকা অরুনাভ বসুর সঙ্গে তার দিল্লির কলেজজীবন সূত্রে কারো একজনের পরিচয় রয়েছে যিনি বসুন্ধরা ভিলার বাসিন্দা।—চলবে।
—বুলুদা এবার বুঝতে পারছি তুমি বুড়ো হয়েছো!
—কেন কেন? আমি তো কুচকুচে কালো টেলিফোন থেকে ফোন করছি তোর কাছে কি সাদা টেলিফোন হয়ে বাজছে ।
—না! সাহিত্যিক অমলকান্তি আমার স্বামী আমার টেলিফোনের রং
সবুজ বেছেছেন!
—বাহ, আমার খেয়াল আছে বিজয়া হয়ে গিয়েছে! কিন্তু আমি একটা অন্যব্যাপারে ফোন করছি একটু সিরিয়াস।
বহুদিনের চিত্র সাংবাদিক দাপুটে ফিল্ম ম্যাগাজিনের সম্পাদক তাঁর কাছে খবরের নানা সোর্স। সেখান থেকেই তিনি শুনেছেন টেলিভিশন তারকা অরুনাভ বসুর সঙ্গে তার দিল্লির কলেজজীবন সূত্রে কারো একজনের পরিচয় রয়েছে যিনি বসুন্ধরা ভিলার বাসিন্দা।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com