অলঙ্করণ: সৌমি দাসমণ্ডল।
নিজের কেবিনে পৌঁছে শাক্য প্রথমে দু’ কাপ কড়া কফির অর্ডার দিল ক্যান্টিনে। পাভেল একটু আগের ধমক খেয়ে কিছুটা গম্ভীর। তবে শাক্য জানে, একটু পরেই আবার আগের মতো এমন ইয়ার্কি-ঠাট্টা করতে শুরু করে দেবে যে মনেই হবে না খানিক আগে এমন গম্ভীর ভঙ্গিতে নাকের কাছে চশমা নামিয়ে এনে ফাইল দেখছিল। অনেক তথ্য একেজি ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছেন তাঁর নিজস্ব সোর্স মারফৎ। সেগুলি ফাইল বন্দি আছে তিনটি আলাদা আলাদা ফোল্ডারে। ফোল্ডারগুলির উপর এক, দুই, তিন লেখা।
শাক্য ফাইল নম্বর এক নিল, পাভেলকে এগিয়ে দিল দ্বিতীয় ফাইলটা। বলল, “আমরা দুজনেই কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে সব ফাইল পড়বো। এখন আমি এক নম্বর ফাইল পড়ছি, আর তুমি পড়ছো দুই নম্বর। এরপর আমি দুই নাম্বার পড়বো, তুমি পড়বে এক। এইভাবে সব তথ্য তুমি আমি দুজনে খুঁটিয়ে পড়ে আলোচনা করবো। মনে রাখতে হবে, আমরা গল্পের গোয়েন্দা নই যে ফাইল পড়েই একেবারে ক্লু পেয়ে গেলাম আর রহস্য ভেদ হয়ে গেল। এমন হতেই পারে যে, ফাইলগুলি পড়ে কোন কিছু উদ্ধার করা গেল না। পণ্ডশ্রম হল। কিন্তু হোক। একেজি একটা সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। সেটা হল, এই কেসটা সলভ করতে হলে, অনেক “ইতিহাস-ভূগোল” জানতে হবে! আমার মাথায় কথাটা ঘুরছে জানো!”
পাভেল বলল, ”সে ঠিক আছে। আমরা দু’ জনেই একই তথ্য পড়ে নানা দিক দিয়ে ভাবলেই হয়তো কিছু পাবো। না-ও পেতে পারি। এ তো খড়ের গাদায় সূঁচ খুঁজে বেড়ানো। কিন্তু একেজি স্যার যা বলেছেন, সে তো কথার কথা। ও নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কিছু আছে কি?”
শাক্য বলল, “তুমি বুঝতে পারছো না পাভেল, আমাদের আগে স্যার ফাইলগুলি নিশ্চয়ই পড়েছেন এবং সামথিং স্মেল পেয়েছেন অপরাধের। এটা যদি অলৌকিক ঘটনা বলে স্যার মনে করতেন, তাহলে আমাদের ডেকে এত ঘটা করে ফাইল দেখতে বলতেন না। মনে হয়, ফাইলগুলি পড়ে তিনি তাঁর নিজস্ব একটা চিন্তাসূত্র খুঁজে পেয়েছেন!”
“তাহলে আমাদের আবার এর মধ্যে জড়ানো কেন?”
“যাচাই করে নেওয়ার জন্য। তাঁর পক্ষে সবসময় সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব না। সারা রাজ্যের মাথাব্যথা তাঁকে সামলাতে হয়। অতএব তিনি আমাদের পাঠাতে চাইছেন। প্রথম কথা হল, এতে আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে; দ্বিতীয় কথা হল, আমরা আরও বেশি ইনফরমেশন কালেক্ট করে ওনাকে দিলে উনি একটা সমাধানসূত্রের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন। তৃতীয়ত, কালদেওর মিথকে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাহলে এটা একটা অপরাধ, যা মানুষের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে বলেই যে তাঁর বিশ্বাস, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন কায়দা করে। যাই হোক, এস পড়তে শুরু করা যাক।”
শাক্য ফাইল নম্বর এক নিল, পাভেলকে এগিয়ে দিল দ্বিতীয় ফাইলটা। বলল, “আমরা দুজনেই কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে সব ফাইল পড়বো। এখন আমি এক নম্বর ফাইল পড়ছি, আর তুমি পড়ছো দুই নম্বর। এরপর আমি দুই নাম্বার পড়বো, তুমি পড়বে এক। এইভাবে সব তথ্য তুমি আমি দুজনে খুঁটিয়ে পড়ে আলোচনা করবো। মনে রাখতে হবে, আমরা গল্পের গোয়েন্দা নই যে ফাইল পড়েই একেবারে ক্লু পেয়ে গেলাম আর রহস্য ভেদ হয়ে গেল। এমন হতেই পারে যে, ফাইলগুলি পড়ে কোন কিছু উদ্ধার করা গেল না। পণ্ডশ্রম হল। কিন্তু হোক। একেজি একটা সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। সেটা হল, এই কেসটা সলভ করতে হলে, অনেক “ইতিহাস-ভূগোল” জানতে হবে! আমার মাথায় কথাটা ঘুরছে জানো!”
পাভেল বলল, ”সে ঠিক আছে। আমরা দু’ জনেই একই তথ্য পড়ে নানা দিক দিয়ে ভাবলেই হয়তো কিছু পাবো। না-ও পেতে পারি। এ তো খড়ের গাদায় সূঁচ খুঁজে বেড়ানো। কিন্তু একেজি স্যার যা বলেছেন, সে তো কথার কথা। ও নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কিছু আছে কি?”
শাক্য বলল, “তুমি বুঝতে পারছো না পাভেল, আমাদের আগে স্যার ফাইলগুলি নিশ্চয়ই পড়েছেন এবং সামথিং স্মেল পেয়েছেন অপরাধের। এটা যদি অলৌকিক ঘটনা বলে স্যার মনে করতেন, তাহলে আমাদের ডেকে এত ঘটা করে ফাইল দেখতে বলতেন না। মনে হয়, ফাইলগুলি পড়ে তিনি তাঁর নিজস্ব একটা চিন্তাসূত্র খুঁজে পেয়েছেন!”
“তাহলে আমাদের আবার এর মধ্যে জড়ানো কেন?”
“যাচাই করে নেওয়ার জন্য। তাঁর পক্ষে সবসময় সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব না। সারা রাজ্যের মাথাব্যথা তাঁকে সামলাতে হয়। অতএব তিনি আমাদের পাঠাতে চাইছেন। প্রথম কথা হল, এতে আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে; দ্বিতীয় কথা হল, আমরা আরও বেশি ইনফরমেশন কালেক্ট করে ওনাকে দিলে উনি একটা সমাধানসূত্রের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন। তৃতীয়ত, কালদেওর মিথকে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাহলে এটা একটা অপরাধ, যা মানুষের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে বলেই যে তাঁর বিশ্বাস, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন কায়দা করে। যাই হোক, এস পড়তে শুরু করা যাক।”
“কিন্তু কফিটা আসুক আগে। মাথাটা ধরে গেল। কোথায় অফিস থেকে বেরিয়ে একটু বারে গিয়ে দু’ পেগ টেনে বাড়ি ফিরবো, তা না…! শেষবেলায় বিরক্তিকর কেস হাতে ধরিয়ে দিলেন স্যার!” বলে সে শ্রাগ করল হতাশার ভঙ্গিতে।
“তাহলে তুমি চলে যাও আজ। আমি ফাইলগুলি শেষ না হওয়া অবধি আজ অফিসেই থাকবো।”
তড়াক করে সজাগ হয়ে উঠল পাভেল, “পাগল না কি? চাকরি থাকবে? আর আমি চলে গেলে তুমি একা কাজ দেখিয়ে এই সুবাদে পরে একেবারে সি.পি হয়ে ওঠো আর কী! ওটা হতে দিচ্ছি না! গুলি মারো তোমার কফি!” বলে হুমড়ি খেয়ে দ্বিতীয় ফাইলখানা পড়তে শুরু করে দিল।
তার ওই নাটুকেপনা দেখে মৃদু হেসে শাক্য ফাইল নাম্বার ওয়ান টেনে নিল।
এই ফাইলটি গোড়ার দিকের ফাইল। এর থেকে একটা পেপার কাটিং পড়ে শুনিয়েছিলেন একেজি, যেটা বেরিয়েছিল ‘অরণ্যবার্তা’ নামের একটি স্থানীয় দৈনিকে; সেটা ফাইলের গোড়াতেই রাখা আছে। এর পরে আরও কয়েকটি স্থানীয় খবরের কাগজের কাটিং সঙ্গে কোন কোন পত্রিকা থেকে নেওয়া, তার উল্লেখ। খবরগুলির সবগুলিই যে গ্রহণযোগ্য বা গুরুত্বপূর্ণ, এমন নয়। এরই মধ্যে একটা খবরের দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষিত হল। সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল যে সংবাদপত্রে, সেটি সাপ্তাহিক। নাম— সাপ্তাহিক জাগরণ। পনেরোতম বর্ষ চলছে। অন্য সমস্ত সংবাদপত্রের মতো এখানেও কালাদেওর কিস্সা লেখা রয়েছে, তবে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে। তার পরেই খবরের ইন্টারেস্টিং অংশ। কালেদেওর ইতিহাস! ফিচারধর্মী লেখা। লিখেছেন ভবানীপ্রসাদ রায় নামের কোনও সাংবাদিক। কয়েক কলাম জুড়ে লেখাটি ছাপা হয়েছে। চার পাতার কাগজে লেখাটির সম্পূর্ণ অংশ প্রথম পাতার পাশাপাশি তৃতীয় পাতাতেও স্থান করে নিয়েছে, তাও শেষ হয়নি, ‘আগামী সংখ্যায় সমাপ্য’ বলে ছাপা হয়েছে। যদিও আগামী সংখ্যার কোনও কাটিং ফাইলে নেই।
তাহলে কী লেখাটি ধারাবাহিকভাবে ছাপার কথা থাকলেও আর ছাপা হয়নি? না কি একেজি-র সোর্স আর বিষয়টির ফলোআপ করে নি। ফলে ফাইলে সাপ্তাহিক জাগরণের পরবর্তী সংখ্যার কাটিং নেই? আচ্ছা, সোর্স যতগুলি কাগজের কাটিং সংগ্রহ করেছে, তার বাইরে উক্ত জেলা থেকে আর কোনো পত্রিকা বা খবরের কাগজ প্রকাশিত হয় না? সবগুলি সংগ্রহ করতে পেরেছে একেজি-র সোর্স? শাক্য ঠিক করল, কালকেই সে তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরে ফোন করে সন্ধান নেবে বিষয়টা। একটা লিস্ট যদি তারা পাঠায়, যেখানে জেলা থেকে এই মুহূর্তে যে-যে পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে, স্থানীয় সংবাদপত্র বেরুচ্ছে, তার সবগুলির নাম সেখানে থাকবে, যাতে তাদের তদন্ত করতে সুবিধা হয়। কেন যেন তার মনে হচ্ছে, এই কেসে সাংবাদিকরা তার তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে।
“তাহলে তুমি চলে যাও আজ। আমি ফাইলগুলি শেষ না হওয়া অবধি আজ অফিসেই থাকবো।”
তড়াক করে সজাগ হয়ে উঠল পাভেল, “পাগল না কি? চাকরি থাকবে? আর আমি চলে গেলে তুমি একা কাজ দেখিয়ে এই সুবাদে পরে একেবারে সি.পি হয়ে ওঠো আর কী! ওটা হতে দিচ্ছি না! গুলি মারো তোমার কফি!” বলে হুমড়ি খেয়ে দ্বিতীয় ফাইলখানা পড়তে শুরু করে দিল।
তার ওই নাটুকেপনা দেখে মৃদু হেসে শাক্য ফাইল নাম্বার ওয়ান টেনে নিল।
এই ফাইলটি গোড়ার দিকের ফাইল। এর থেকে একটা পেপার কাটিং পড়ে শুনিয়েছিলেন একেজি, যেটা বেরিয়েছিল ‘অরণ্যবার্তা’ নামের একটি স্থানীয় দৈনিকে; সেটা ফাইলের গোড়াতেই রাখা আছে। এর পরে আরও কয়েকটি স্থানীয় খবরের কাগজের কাটিং সঙ্গে কোন কোন পত্রিকা থেকে নেওয়া, তার উল্লেখ। খবরগুলির সবগুলিই যে গ্রহণযোগ্য বা গুরুত্বপূর্ণ, এমন নয়। এরই মধ্যে একটা খবরের দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষিত হল। সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল যে সংবাদপত্রে, সেটি সাপ্তাহিক। নাম— সাপ্তাহিক জাগরণ। পনেরোতম বর্ষ চলছে। অন্য সমস্ত সংবাদপত্রের মতো এখানেও কালাদেওর কিস্সা লেখা রয়েছে, তবে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে। তার পরেই খবরের ইন্টারেস্টিং অংশ। কালেদেওর ইতিহাস! ফিচারধর্মী লেখা। লিখেছেন ভবানীপ্রসাদ রায় নামের কোনও সাংবাদিক। কয়েক কলাম জুড়ে লেখাটি ছাপা হয়েছে। চার পাতার কাগজে লেখাটির সম্পূর্ণ অংশ প্রথম পাতার পাশাপাশি তৃতীয় পাতাতেও স্থান করে নিয়েছে, তাও শেষ হয়নি, ‘আগামী সংখ্যায় সমাপ্য’ বলে ছাপা হয়েছে। যদিও আগামী সংখ্যার কোনও কাটিং ফাইলে নেই।
তাহলে কী লেখাটি ধারাবাহিকভাবে ছাপার কথা থাকলেও আর ছাপা হয়নি? না কি একেজি-র সোর্স আর বিষয়টির ফলোআপ করে নি। ফলে ফাইলে সাপ্তাহিক জাগরণের পরবর্তী সংখ্যার কাটিং নেই? আচ্ছা, সোর্স যতগুলি কাগজের কাটিং সংগ্রহ করেছে, তার বাইরে উক্ত জেলা থেকে আর কোনো পত্রিকা বা খবরের কাগজ প্রকাশিত হয় না? সবগুলি সংগ্রহ করতে পেরেছে একেজি-র সোর্স? শাক্য ঠিক করল, কালকেই সে তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরে ফোন করে সন্ধান নেবে বিষয়টা। একটা লিস্ট যদি তারা পাঠায়, যেখানে জেলা থেকে এই মুহূর্তে যে-যে পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে, স্থানীয় সংবাদপত্র বেরুচ্ছে, তার সবগুলির নাম সেখানে থাকবে, যাতে তাদের তদন্ত করতে সুবিধা হয়। কেন যেন তার মনে হচ্ছে, এই কেসে সাংবাদিকরা তার তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১: জয়রামবাটির আদরের ছোট্ট সারু
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৫: হিচককের লন্ডন, হিচককের সিরিয়াল কিলার
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১০: আচমকা নাকে এলো সেই অদ্ভুত পোড়া গন্ধটা
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৭: মদ না খেলে ফ্যাটি লিভার হয় না?
অতএব, যে যে সাংবাদিক এই খবরটি সংগ্রহ করেছেন, বিশেষ করে ফলোআপ করেছেন, তাঁদের নাম উক্ত দপ্তর থেকে পেলে শাক্যর পক্ষে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হবে এবং শাক্য যা মনে করছে, তাতে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা খুব দরকার। কালদেও মিথের আড়ালে আর কিছু আছে কি না, কিংবা কালাদেওর অলৌকিক শক্তি বা মহিমাই একের পর এক চার-চারটি মৃত্যুর জন্য দায়ী, তা জানতে হলে সাংবাদিকদের তার অবশ্য দরকার।
তবে সব ক’টি মৃত্যুর একই ধরণ দেখে ‘সিরিয়াল কিলারে’র কথাও মনে হচ্ছে তার। কিন্তু যদি সত্যিই কোনও সিরিয়াল কিলার থেকে থাকে, তাহলে সে নিশ্চয়ই চার-চারটি সাকসেসফুল মার্ডারের পর থেমে থাকবে না। একের পর এক খুন তাকে করতেই হবে। সেক্ষেত্রে শাক্য অবাক হবে না, যদি তাদের অকুস্থলে পৌঁছনোর আগে আরও একটি বা দু’টি একই ধরণের মার্ডার হয়! হাতে সময় নেই, দ্রুত ফাইলগুলি পড়ে একটা পথ যদি পাওয়া যায়, সেই রাস্তাতেই এগিয়ে যেতে হবে তাকে আর পাভেলকে।
চিন্তিত মুখে সামনের দিকে তাকালো শাক্য। পাভেল এক মনে ফাইলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে। খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে সে পড়ে যাচ্ছে একের পর এক খবর, কাটিং, অন্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য। ক্যান্টিনের ছেলেটি এসে দু’ কাপ কফি রেখে গেল টেবিলে। আস্তে করে জিজ্ঞাসা করল, আর কিছু লাগবে কি না! শাক্য “না” বলে তাকে বিদায় দিয়ে পাভেলকে বলল, “নাও, তোমার কফি এসে গিয়েছে।”
তবে সব ক’টি মৃত্যুর একই ধরণ দেখে ‘সিরিয়াল কিলারে’র কথাও মনে হচ্ছে তার। কিন্তু যদি সত্যিই কোনও সিরিয়াল কিলার থেকে থাকে, তাহলে সে নিশ্চয়ই চার-চারটি সাকসেসফুল মার্ডারের পর থেমে থাকবে না। একের পর এক খুন তাকে করতেই হবে। সেক্ষেত্রে শাক্য অবাক হবে না, যদি তাদের অকুস্থলে পৌঁছনোর আগে আরও একটি বা দু’টি একই ধরণের মার্ডার হয়! হাতে সময় নেই, দ্রুত ফাইলগুলি পড়ে একটা পথ যদি পাওয়া যায়, সেই রাস্তাতেই এগিয়ে যেতে হবে তাকে আর পাভেলকে।
চিন্তিত মুখে সামনের দিকে তাকালো শাক্য। পাভেল এক মনে ফাইলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে। খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে সে পড়ে যাচ্ছে একের পর এক খবর, কাটিং, অন্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য। ক্যান্টিনের ছেলেটি এসে দু’ কাপ কফি রেখে গেল টেবিলে। আস্তে করে জিজ্ঞাসা করল, আর কিছু লাগবে কি না! শাক্য “না” বলে তাকে বিদায় দিয়ে পাভেলকে বলল, “নাও, তোমার কফি এসে গিয়েছে।”
আরও পড়ুন:
গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাধা, ‘চলমান পাঠাগার’ তাঁর পরিচয়!
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৬: আমার হৃদয় কাঁপে পরিস্থিতির চাপে
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৮: মনে পড়ে পঞ্চমের কণ্ঠে শোলে ছবির সেই বিখ্যাত ‘মেহবুবা মেহবুবা…’ গানটি?
পাভেল আনমনা ভঙ্গিতে জবাব দিল “হুঁ”, তারপর ডুবে গেল ফাইলে।
শাক্য ফাইলটা পড়তে শুরু করবে, এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল। দিদি। নিশ্চয়ই সে বাড়ি ফিরেনি জেনে চিন্তা করছে। তার বোঝা উচিত ছিল, ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের পুলিশ-গোয়েন্দার উপরেও একজন গোয়েন্দাগিরি করে। তার সহকারীটি খোদ শাক্যর বাড়িতেই অধিষ্ঠান করছেন। দিদিকে কোনওমতে এড়ানো যাবে না। হয় সে ফোনের পর ফোন করেই যাবে, নচেত চলেও আসতে পারে ক্যাব বুক করে। অতএব ফোন তুলে চাপা গলায় বলল, “কী হল?”
“প্রশ্নটা তো আমারই করার কথা! তুই করছিস যে বড়?” দিদির গলার স্বর গম্ভীর।
“আরে ব্যস্ত আছি, সেই জন্যই বললাম।” শাক্য ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
“তুই বাড়ি ফিরিসনি কেন? কোথাও বারে বসে মদ গিলছিস না কি তিলজলায় বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যুর যে খবর সন্ধ্যে থেকে দেখিয়েই যাচ্ছে, সেখানে ছুটেছিস?”
দিদির সব দিকেই নজর। কোথাও কোন রহস্যজনক ঘটনার খবর পড়লে বা দেখলে সে নিজেই নিজের মতো করে তদন্ত করে এবং কোনও সূত্র-প্রমাণ ছাড়াই “অনুমান” নামক ইনট্যুইশনের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। কয়েকবার মিলেও গিয়েছে বলে শাক্যর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কমেছে।
শাক্য ফাইলটা পড়তে শুরু করবে, এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল। দিদি। নিশ্চয়ই সে বাড়ি ফিরেনি জেনে চিন্তা করছে। তার বোঝা উচিত ছিল, ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের পুলিশ-গোয়েন্দার উপরেও একজন গোয়েন্দাগিরি করে। তার সহকারীটি খোদ শাক্যর বাড়িতেই অধিষ্ঠান করছেন। দিদিকে কোনওমতে এড়ানো যাবে না। হয় সে ফোনের পর ফোন করেই যাবে, নচেত চলেও আসতে পারে ক্যাব বুক করে। অতএব ফোন তুলে চাপা গলায় বলল, “কী হল?”
“প্রশ্নটা তো আমারই করার কথা! তুই করছিস যে বড়?” দিদির গলার স্বর গম্ভীর।
“আরে ব্যস্ত আছি, সেই জন্যই বললাম।” শাক্য ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
“তুই বাড়ি ফিরিসনি কেন? কোথাও বারে বসে মদ গিলছিস না কি তিলজলায় বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যুর যে খবর সন্ধ্যে থেকে দেখিয়েই যাচ্ছে, সেখানে ছুটেছিস?”
দিদির সব দিকেই নজর। কোথাও কোন রহস্যজনক ঘটনার খবর পড়লে বা দেখলে সে নিজেই নিজের মতো করে তদন্ত করে এবং কোনও সূত্র-প্রমাণ ছাড়াই “অনুমান” নামক ইনট্যুইশনের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। কয়েকবার মিলেও গিয়েছে বলে শাক্যর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কমেছে।
আরও পড়ুন:
রিভিউ: দ্য নাইট ম্যানেজার: দেশীয় সংস্করণে চোখে চোখ রেখে লড়েছেন আদিত্য, অনিল, শাশ্বত ও শোভিতা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৭: কবিকন্যার সঙ্গে নগেন্দ্রনাথের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও কবির সঙ্গে ঘটেনি
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪১: কান্না হাসির দোল দোলানো ‘একটি রাত’
শাক্য বলল, “আরে না, ডিপার্টমেন্টেই আছি। লাস্ট মোমেন্টস-এ একেজি স্যার একটা জটিল ইন্টারেস্টিং তদন্তের ফাইল তুলে দিলেন। খুব জরুরি বিষয়। হয়তো আমায় দিন কয়েকের জন্য কলকাতার বাইরে যেতে হতে পারে!”
“কোথায়?” দিদির গলায় স্পষ্ট কৌতূহল।
“বাড়ি ফিরে বলবো। ফাইলটা পড়ে নিই।”
“আজ রাতে তাহলে হরি-মটর! বাড়ি ফিরছিস না?”
“বলতে পারছি না!”
“তোদের ডিপার্টমেন্টের দৈন্যদশা দেখলে দুঃখ হয় আমার। এক তুই-ই আছিস যে কি না তদন্ত করতে পারে, আর সকলের মাথা মোটা ? আর জটিল কেস তো সিনিয়ার অফিসারদেরই দেখার কথা ! তোকেই পায় সবাই ?”
দিদি রাগছে। রাগের কারণ, তার কলকাতা ছেড়ে বাইরে যাওয়া। সে বাইরে গেলে দিদি অকারণে উদ্বিগ্ন হয়। সে আপাততো দিদিকে ঠান্ডা করার জন্য বলল, “আচ্ছা, ও-সব বিষয় থাক। এখন রাখ। দেখি, তাড়াতাড়ি ফাইলটা পড়ে উদ্ধার করতে পারলে বাড়ি ফিরে মধ্যরাতে ডিনারটা সারতে পারবো!”
“আচ্ছা। রাখছি তবে। আমি কিন্তু মধ্যরাত অবধি জেগে বসে থাকবো। তুই ফিরলি কি না জেনে তারপর ঘুমাতে যাবো!” বলে শাক্য বাধা দেওয়ার আগেই ফোনটা কেটে দিল দিদি।
শাক্য আর কী করে? আর বেশি দেরি না করে সে টেনে নিল সাপ্তাহিক জাগরণের কাটিং—কালাদেওর ইতিহাস! —চলবে।
“কোথায়?” দিদির গলায় স্পষ্ট কৌতূহল।
“বাড়ি ফিরে বলবো। ফাইলটা পড়ে নিই।”
“আজ রাতে তাহলে হরি-মটর! বাড়ি ফিরছিস না?”
“বলতে পারছি না!”
“তোদের ডিপার্টমেন্টের দৈন্যদশা দেখলে দুঃখ হয় আমার। এক তুই-ই আছিস যে কি না তদন্ত করতে পারে, আর সকলের মাথা মোটা ? আর জটিল কেস তো সিনিয়ার অফিসারদেরই দেখার কথা ! তোকেই পায় সবাই ?”
দিদি রাগছে। রাগের কারণ, তার কলকাতা ছেড়ে বাইরে যাওয়া। সে বাইরে গেলে দিদি অকারণে উদ্বিগ্ন হয়। সে আপাততো দিদিকে ঠান্ডা করার জন্য বলল, “আচ্ছা, ও-সব বিষয় থাক। এখন রাখ। দেখি, তাড়াতাড়ি ফাইলটা পড়ে উদ্ধার করতে পারলে বাড়ি ফিরে মধ্যরাতে ডিনারটা সারতে পারবো!”
“আচ্ছা। রাখছি তবে। আমি কিন্তু মধ্যরাত অবধি জেগে বসে থাকবো। তুই ফিরলি কি না জেনে তারপর ঘুমাতে যাবো!” বলে শাক্য বাধা দেওয়ার আগেই ফোনটা কেটে দিল দিদি।
শাক্য আর কী করে? আর বেশি দেরি না করে সে টেনে নিল সাপ্তাহিক জাগরণের কাটিং—কালাদেওর ইতিহাস! —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel) – পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।