অলঙ্করণ: সৌমি দাসমণ্ডল।
টোটো থেকে যিনি প্রথমে নামলেন, তিনি একজন প্রৌঢ় মানুষ। তারপর দুজন দেহাতি মহিলা একটি অল্পবয়সী ছেলেকে ধরে নামাল। ছেলেটির রোগাভোগা শরীর। দেখে মনে হচ্ছে, বয়স বড়জোর সতেরো-আঠারো হবে। অপুষ্টির কারণে পেটটা বেরিয়ে এসেছে। দেখে মনে হবে যেন পোয়াতি। সবশেষে নামল একজন দড়ির মতো পাকানো চেহারার পুরুষ। মাথাভর্তি কাঁচাপাকা দীর্ঘ চুল ঘাড়ের উপরে লোটানো। টোটোচালক টোটো বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে কিছু একটা বলল ফিসফিস করে। প্রৌঢ় মাথা নাড়লেন। টোটোচালক একটু সরে গিয়ে সম্ভবত বিড়ি ধরালো। বাকিরা এগিয়ে আসতে লাগল এদিকেই।
প্রৌঢ়টি প্রথম এগিয়ে এসে সত্যব্রতকে নমস্কার করে বিশুদ্ধ বাংলায় বললেন, “নমস্কার ডাক্তারবাবু। আমি রথীন রায়চৌধুরী। স্থানীয় গোড়বান্ধ্যা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক।”
গোবিন্দ নমস্কার ঠুকে বলল, “পেন্নাম মাস্টারবাবু। আর ইউ ওকে?”
রথীনবাবু তার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বললেন, “গোবিন্দ যে। আমি ঠিক আছি। তুমি ভালো আছো তো?” তারপর সত্যব্রতর দিকে তাকিয়ে বললেন, “স্থানীয় লোকেরা আমাকে সকলে ‘মাস্টারবাবু’ বলেই ডাকে। বিপদে-আপদে আমার পরামর্শ নেয়। আজও তাদের কারণেই আমার এই হেলথ সেন্টারে আসা।”
প্রৌঢ়টি প্রথম এগিয়ে এসে সত্যব্রতকে নমস্কার করে বিশুদ্ধ বাংলায় বললেন, “নমস্কার ডাক্তারবাবু। আমি রথীন রায়চৌধুরী। স্থানীয় গোড়বান্ধ্যা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক।”
গোবিন্দ নমস্কার ঠুকে বলল, “পেন্নাম মাস্টারবাবু। আর ইউ ওকে?”
রথীনবাবু তার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বললেন, “গোবিন্দ যে। আমি ঠিক আছি। তুমি ভালো আছো তো?” তারপর সত্যব্রতর দিকে তাকিয়ে বললেন, “স্থানীয় লোকেরা আমাকে সকলে ‘মাস্টারবাবু’ বলেই ডাকে। বিপদে-আপদে আমার পরামর্শ নেয়। আজও তাদের কারণেই আমার এই হেলথ সেন্টারে আসা।”
সত্যব্রত প্রতিনমস্কার করে বলল, “সে তো আমাদের সৌভাগ্য যে আপনি হেলথ সেন্টারে আসবার কথা ভেবেছেন। সকলে তো চার্চের হসপিটালেই ছোটে। মানছি, সেখানে অনেক অত্যাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ আছে, আমাদের সরকারি হেলথ সেন্টারে তা নেই। তবু সবসময় তো আর যন্ত্রপাতি দিয়ে কিছু হয় না। আমাদের অভিজ্ঞতারও তো কিছু দাম আছে। সেটাই এখানকার লোকে কেন যে বুঝতে চায় না, জানি না!”
রথীনবাবু কাষ্ঠহাসি হাসলেন। বললেন, “দেখুন, আসল কথাটা হল, এই হেলথ সেন্টারের অনেক আগে থেকেই চার্চের হসপিটালটাই ছিল কাছাকাছি অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র চিকিৎসার জায়গা। ফলে ওর ব্যাপারে সকলে যতটা ওয়াকিবহাল, আপনার এই হেলথ সেন্টারের ব্যাপারে ততটা নয়। তাছাড়া এখানকার দেহাতি মানুষদের অনেকের বাড়ির ছেলেমেয়েরাই চার্চের স্কুলে পড়ে। অনেকে আবার চার্চের নিজস্ব ওয়ার্কশপে হাতের কাজ শেখে। তাছাড়া ওরা অনেকেই ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান। রবিবারের উপাসনার দিন যদি কখনও চার্চে যান, তাহলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। অতএব ওদের পক্ষে চার্চের হাসপাতালে যাওয়াটাই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। রাগ করবেন না।”
বিব্রত হয়ে সত্যব্রত বলল, “না না, রাগের কথা নয়। এমনিই বললাম। এখন বলুন আপনাকে কী সাহায্য করতে পারি?”
রথীনবাবু কাষ্ঠহাসি হাসলেন। বললেন, “দেখুন, আসল কথাটা হল, এই হেলথ সেন্টারের অনেক আগে থেকেই চার্চের হসপিটালটাই ছিল কাছাকাছি অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র চিকিৎসার জায়গা। ফলে ওর ব্যাপারে সকলে যতটা ওয়াকিবহাল, আপনার এই হেলথ সেন্টারের ব্যাপারে ততটা নয়। তাছাড়া এখানকার দেহাতি মানুষদের অনেকের বাড়ির ছেলেমেয়েরাই চার্চের স্কুলে পড়ে। অনেকে আবার চার্চের নিজস্ব ওয়ার্কশপে হাতের কাজ শেখে। তাছাড়া ওরা অনেকেই ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান। রবিবারের উপাসনার দিন যদি কখনও চার্চে যান, তাহলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। অতএব ওদের পক্ষে চার্চের হাসপাতালে যাওয়াটাই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। রাগ করবেন না।”
বিব্রত হয়ে সত্যব্রত বলল, “না না, রাগের কথা নয়। এমনিই বললাম। এখন বলুন আপনাকে কী সাহায্য করতে পারি?”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক,পর্ব-১১: নাথানিয়্যাল গোবিন্দ সোরেনের গল্প
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮: রামচন্দ্রের কৈশোর, ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র: এক অনন্য উত্তরণ
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-২: এখানে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, বাণিজ্যনীতি এবং বৈদেশিক নীতির চর্চা করা হয়েছে
রথীনবাবুর সঙ্গীরা ততক্ষণে তাঁর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিকে দেখিয়ে তিনি বললেন, “আমাকে না। সাহায্য করতে হবে এই ছেলেটিকে। এর নাম বুধন মাহাতো। এ অবশ্য চার্চের স্কুলে পড়ে না। আমাদের স্কুলেই পড়ে। তবে চার্চের ফাদার একে খুব ভালোবাসেন। প্রায়শই বুধন তাঁর কাছে যায়। চার্চের ওয়ার্কশপে তাদের নিজস্ব স্কুলে যারা পড়ে কিন্তু লেখাপড়ায় মাথা তেমন পরিষ্কার নয়, তাদেরকে ওয়ার্কশপে নানারকম হাতের কাজ শেখানো হয়। বুধন আজ এক বছর হল সেখানে যাচ্ছিল, ফাদারই সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু আজ মাসখানেক হল ও সেখানে যেতে পারেনি। মানে যেতে চাইছে না। সেই জন্যই ইচ্ছে থাকলেও ওর পরিবারের লোকজন সেখানে ওকে নিয়ে যেতে পারেনি। অথচ এমন একটা অদ্ভুত অসুখ হয়েছে বুধনের যে, দিনের পর দিন হাসিখুশি ছেলেটা একেবারে শয্যা নিয়েছে!”
সত্যব্রত ছেলেটির দিকে তাকাল। এই মুহূর্তে সে কোনওরকমে পাশের দুজন মহিলার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে আর থেকে থেকে গোঙাচ্ছে। ওকে বেডে শুইয়ে দেখতে হবে। অপুষ্টি থেকে গ্যাসট্রিক আলসার হতে পারে। এই অঞ্চলে মানুষদের ফেলে ছড়িয়ে খাওয়া তো দূর, রোজকার প্রয়োজনীয় খাবারটুকুই জোটা দুষ্কর। সে গোবিন্দকে বলল, “গোবিন্দ, তুমি নার্স দিদিদের গিয়ে খবর দাও। তাঁরা আসুন, এঁদের একটু হেল্প করুন। এখনই ছেলেটিকে বেডে নিয়ে যেতে হবে। ছেলেটি তো দেখছি যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছে। দেখি আগে। দরকার পড়লে ইঞ্জেকশন দিতে হবে।”
পাকানো দড়ির মতো লোকটি হাতজোড় করে বলল, “ডাগদারসাহেব, কত রুপেয়া দিতে হবে? আমরা খুব গরিব, বেশি টাকা লাগলে তো দিতে পারব না!”
সত্যব্রত অবাক হল, “টাকা? টাকা কেন লাগবে? এটা তো সরকারি হেলথ সেন্টার। এখানে তো ট্রিটমেন্ট ফ্রি।”
সত্যব্রত ছেলেটির দিকে তাকাল। এই মুহূর্তে সে কোনওরকমে পাশের দুজন মহিলার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে আর থেকে থেকে গোঙাচ্ছে। ওকে বেডে শুইয়ে দেখতে হবে। অপুষ্টি থেকে গ্যাসট্রিক আলসার হতে পারে। এই অঞ্চলে মানুষদের ফেলে ছড়িয়ে খাওয়া তো দূর, রোজকার প্রয়োজনীয় খাবারটুকুই জোটা দুষ্কর। সে গোবিন্দকে বলল, “গোবিন্দ, তুমি নার্স দিদিদের গিয়ে খবর দাও। তাঁরা আসুন, এঁদের একটু হেল্প করুন। এখনই ছেলেটিকে বেডে নিয়ে যেতে হবে। ছেলেটি তো দেখছি যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছে। দেখি আগে। দরকার পড়লে ইঞ্জেকশন দিতে হবে।”
পাকানো দড়ির মতো লোকটি হাতজোড় করে বলল, “ডাগদারসাহেব, কত রুপেয়া দিতে হবে? আমরা খুব গরিব, বেশি টাকা লাগলে তো দিতে পারব না!”
সত্যব্রত অবাক হল, “টাকা? টাকা কেন লাগবে? এটা তো সরকারি হেলথ সেন্টার। এখানে তো ট্রিটমেন্ট ফ্রি।”
আরও পড়ুন:
উৎসবের উষ্ণতায় শারুল-শিমুল
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৭: কোরবা হয়ে সাতরেঙ্গা
দশভুজা: সেই ষোলো মিনিটের দূরত্ব কোনওদিন পূরণ হয়নি
শুনে লোকটা কেমন হতভম্বের মতো মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। রথীনবাবু মৃদু হাসলেন। তারপর বললেন, “হেলথ সেন্টারে লোক না আসার যে কারণটা আপনাকে বলতে গিয়েও বলতে বেধেছে, সেই কারণটা হল এটা। আপনার আগে যে যে-দুজন ডাক্তারবাবু এখানে ছিলেন, তাঁরা রোগী দেখতে হলে আলাদা ফি নিতেন। সেটা আপনার-আমার কাছে তেমনকিছু না হলেও এদের মতো গরিবগুর্বো মানুষদের কাছে অনেক। এই গোবিন্দ সব জানে। আপনিই জিজ্ঞাসা করুন। সেই কারণেই কেউ এমুখো হয় না! আজ আপনার মুখে অন্য কথা শুনে মারুতি, বুধনের বাবা, অবাক হয়েছে। তবে আপনি যে আগের ডাক্তারদের মতো নয়, বুঝতে পারলাম। ভালো লাগল।”
সত্যব্রত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে গোবিন্দের দিকে তাকাতেই সে মাথা নিচু করল। তার অর্থ মাস্টারবাবু যে-কথাগুলি বললেন, তা যথার্থ। বিষয়টা সে পরে দেখবে ভেবে কড়া গলায় বলল, “দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও। বললাম না নার্সদিদিদের ডেকে দিতে। এঁরা আর কতক্ষণ পেশেন্টকে নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন?”
গোবিন্দ সঙ্গে সঙ্গে বলল, “এই ছেলেটিকে বেডে নিয়ে যেতে হবে তো? নার্সদিদিদের ডাকার কী দরকার? আমি একা নিজেই নিয়ে যেতে পারব।” বলে উত্তরের তোয়াক্কা না করে কোলপাঁজা করে অবলীলায় তুলে নিল ছেলেটিকে। তারপ এগিয়ে গেল নির্দিষ্ট কক্ষের দিকে।
সেদিকে যেতে যেতেই সত্যব্রত বলল, “কিন্তু এর সমস্যাটা কী? সেটা কি আপনারা খুলে বলবেন?”
“ওরা কি আর গুছিয়ে বলতে পারবে ডাক্তারবাবু? আমি যতটা জানি বলছি। বাকিটা না হয় ওরা বলবে”, বললেন রথীনবাবু।
“আচ্ছা বেশ, তাই হোক।”
সত্যব্রত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে গোবিন্দের দিকে তাকাতেই সে মাথা নিচু করল। তার অর্থ মাস্টারবাবু যে-কথাগুলি বললেন, তা যথার্থ। বিষয়টা সে পরে দেখবে ভেবে কড়া গলায় বলল, “দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও। বললাম না নার্সদিদিদের ডেকে দিতে। এঁরা আর কতক্ষণ পেশেন্টকে নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন?”
গোবিন্দ সঙ্গে সঙ্গে বলল, “এই ছেলেটিকে বেডে নিয়ে যেতে হবে তো? নার্সদিদিদের ডাকার কী দরকার? আমি একা নিজেই নিয়ে যেতে পারব।” বলে উত্তরের তোয়াক্কা না করে কোলপাঁজা করে অবলীলায় তুলে নিল ছেলেটিকে। তারপ এগিয়ে গেল নির্দিষ্ট কক্ষের দিকে।
সেদিকে যেতে যেতেই সত্যব্রত বলল, “কিন্তু এর সমস্যাটা কী? সেটা কি আপনারা খুলে বলবেন?”
“ওরা কি আর গুছিয়ে বলতে পারবে ডাক্তারবাবু? আমি যতটা জানি বলছি। বাকিটা না হয় ওরা বলবে”, বললেন রথীনবাবু।
“আচ্ছা বেশ, তাই হোক।”
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৭: গরমে পান্তা ভাত কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা করে?
অতঃপর রথীনবাবু যা বললেন, তা যেমন অভিনব, তেমনি অবিশ্বাস্য।
বুধনের বয়স বছর চোদ্দ। সে গোড়বান্ধ্যা হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে আর্টস নিয়ে পড়ে। লেখাপড়ায় আহামরিও নয়, আবার খুব খারাপও বলা যায় না। মাধ্যমিক পাশ করেছে এক চান্সেই। এখন স্কুলে পড়ার পাশাপাশি সপ্তাহে দু’ দিন বিকেলে চার্চের ওয়ার্কশপে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ শিখতে যায়। বুধনদের গ্রাম থেকে ওয়ার্কশপ যেতে মাঝে পড়ে আর-একটি গ্রাম, তারপর ভুলাউলির মাঠ, যার পরেই শুরু হয়েছে জঙ্গল। জঙ্গলের গা ঘেঁষে পিচ রাস্তা চলে গিয়েছে। তা ধরে গেলে চার্চে পৌঁছতে মিনিট চল্লিশ লাগে।
তবে বুধনের মতো আরও অনেকেই শর্টকাট হবে বলে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যে পায়ে চলা রাস্তা আছে, তা ধরেই যায়। বুধনের আগে সাইকেল ছিল না। ইদানীং চার্চ থেকে তাকে একখানা পুরানো সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ফাদার। ফলে তার অনেকটা সুবিধা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার তার ওয়ার্কশপ থাকে। শুক্রবার বিকেলে, শনিবার দুপুরে। শুক্রবার সে স্কুলের অনুমতি নিয়েই লাস্টের ক্লাসের আগে বেরিয়ে যায়। আর শনিবার হাফ ছুটি বলে কোন অসুবিধাই হয় না।
বছরখানেক আগের কথা, হঠাৎ একদিন সে এসে বলে, জঙ্গলের রাস্তা ধরে সে আর যাবে না। ওখানে কিছু একটা আছে! হয়তো, ওই ওয়ার্কশপে সে আর যেতেই পারবে না!—চলবে
বুধনের বয়স বছর চোদ্দ। সে গোড়বান্ধ্যা হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে আর্টস নিয়ে পড়ে। লেখাপড়ায় আহামরিও নয়, আবার খুব খারাপও বলা যায় না। মাধ্যমিক পাশ করেছে এক চান্সেই। এখন স্কুলে পড়ার পাশাপাশি সপ্তাহে দু’ দিন বিকেলে চার্চের ওয়ার্কশপে ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ শিখতে যায়। বুধনদের গ্রাম থেকে ওয়ার্কশপ যেতে মাঝে পড়ে আর-একটি গ্রাম, তারপর ভুলাউলির মাঠ, যার পরেই শুরু হয়েছে জঙ্গল। জঙ্গলের গা ঘেঁষে পিচ রাস্তা চলে গিয়েছে। তা ধরে গেলে চার্চে পৌঁছতে মিনিট চল্লিশ লাগে।
তবে বুধনের মতো আরও অনেকেই শর্টকাট হবে বলে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যে পায়ে চলা রাস্তা আছে, তা ধরেই যায়। বুধনের আগে সাইকেল ছিল না। ইদানীং চার্চ থেকে তাকে একখানা পুরানো সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ফাদার। ফলে তার অনেকটা সুবিধা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার তার ওয়ার্কশপ থাকে। শুক্রবার বিকেলে, শনিবার দুপুরে। শুক্রবার সে স্কুলের অনুমতি নিয়েই লাস্টের ক্লাসের আগে বেরিয়ে যায়। আর শনিবার হাফ ছুটি বলে কোন অসুবিধাই হয় না।
বছরখানেক আগের কথা, হঠাৎ একদিন সে এসে বলে, জঙ্গলের রাস্তা ধরে সে আর যাবে না। ওখানে কিছু একটা আছে! হয়তো, ওই ওয়ার্কশপে সে আর যেতেই পারবে না!—চলবে
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel) – পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।