অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
“আসতে পারি ?”
“আরে আসুন আসুন উন্মেষা, আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি। বসুন।” সুদীপ্ত বলল।
শাক্য আর সুদীপ্ত যেখানে বসে আছে, সেখানে একটা মাঝারি মাপের টেবিল পাতা। উল্টো দিকে দু’ খানি চেয়ার রাখা। কক্ষটি আয়তনে বেশ ছোট, তবে দুটি জানালা থাকায় আলোর অভাব নেই। যদিও জানালা দুটির কাঁচের শার্সি এখন বন্ধ। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। কাপাডিয়া অতি দ্রুত ঝেড়ে মুছে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ইন্টারোগেশন রুমের। আবার কায়দা করে সম্ভবত অফিসঘরের ডেস্ক থেকে একখানা ফুলদানিও এনে রেখেছেন, তাতে শীতশেষের গোলাপ ও চন্দ্রমল্লিকা শোভা পাচ্ছে। রিসর্টে ঢোকবার মুখে শাক্য দেখেছে, এখানে মূল পথের দু’ পাশে অনেকখানি জায়গা জুড়ে ফুলের বাগান, তাতে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া ইত্যাদি ফুল ফুটে বাগান আলো হয়ে আছে। নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়, তা বোঝাই যায়। ট্যুরিস্ট পার্টিকে আকর্ষণ করবার জন্য এমন সাজানো গোছানো ডেস্টিনেশন প্লেসের যে দরকার, তা জানে শাক্য।
উন্মেষার বয়স তিরিশের আশেপাশে, রূপ ঝলসে দিত এককালে তা বেশ বোঝা যায়। এখনও যে টুকু অবশিষ্ট আছে টলি-বলির অনেক নায়িকাকে ঘায়েল করার পক্ষে যথেষ্ট। তবে চেহারার মধ্যে কোথাও একটা সুক্ষ্ম বেদনা ছড়িয়ে আছে। ফলে একটু ভারিক্কি লাগে। প্রসাধন নেই তেমন। তবে আসবার আগে সম্ভবত দামি কোন পারফিউম ব্যবহার করেছেন, ঢোকবার সঙ্গে সঙ্গে তার স্নিগ্ধ গন্ধ ঘরটাকে জাপটে ধরল। খুব ধীরে ধীরে উন্মেষা এসে বসলেন সামনের চেয়ারে। তাঁকে আর বলতে হয়নি, উল্টোদিকের চেয়ারে গোয়েন্দা ও পুলিশ বসে আছে, অতএব জেরার জন্য তাঁকে মুখোমুখি বসতে হবে, এ-যেন জানা কথাই। ভালো করে তাঁকে দেখল শাক্য। এমনিতে সব ঠিক আছে, কেবল চোখ দুটি কেমন যেন ছলোছলো মনে হল তার। এখানে আসার আগে কাঁদছিলেন কী উন্মেষা? কেন? অনিলের শোকে? না কি অন্য কোন কারণে?
ইতিপূর্বে শাক্যই প্রশ্ন করে এসেছে মূলত, ফলে সুদীপ্ত চুপ করে ছিল। শাক্যও। সে বুঝে নিতে চাইছিল উন্মেষাকে। কিছু কিছু মানুষ আছেন, ব্যক্তিত্বই যাঁদের আসল সৌন্দর্য। শাক্যর মনে হচ্ছিল, উন্মেষা সেইরকম একজন। রূপ তিনি পেয়েছেন জন্মগতভাবে, কিন্তু সেই রূপ ঝলসে উঠেছে তাঁর ব্যক্তিত্বের গুণে। কিছু কিছু মানুষকে দেখলে সমীহের ভাব জাগে, উন্মেষাকে দেখলেও কারুর কারও তেমন ভাব জাগতে পারে, সন্দেহ নেই।
“আরে আসুন আসুন উন্মেষা, আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি। বসুন।” সুদীপ্ত বলল।
শাক্য আর সুদীপ্ত যেখানে বসে আছে, সেখানে একটা মাঝারি মাপের টেবিল পাতা। উল্টো দিকে দু’ খানি চেয়ার রাখা। কক্ষটি আয়তনে বেশ ছোট, তবে দুটি জানালা থাকায় আলোর অভাব নেই। যদিও জানালা দুটির কাঁচের শার্সি এখন বন্ধ। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। কাপাডিয়া অতি দ্রুত ঝেড়ে মুছে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ইন্টারোগেশন রুমের। আবার কায়দা করে সম্ভবত অফিসঘরের ডেস্ক থেকে একখানা ফুলদানিও এনে রেখেছেন, তাতে শীতশেষের গোলাপ ও চন্দ্রমল্লিকা শোভা পাচ্ছে। রিসর্টে ঢোকবার মুখে শাক্য দেখেছে, এখানে মূল পথের দু’ পাশে অনেকখানি জায়গা জুড়ে ফুলের বাগান, তাতে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া ইত্যাদি ফুল ফুটে বাগান আলো হয়ে আছে। নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়, তা বোঝাই যায়। ট্যুরিস্ট পার্টিকে আকর্ষণ করবার জন্য এমন সাজানো গোছানো ডেস্টিনেশন প্লেসের যে দরকার, তা জানে শাক্য।
উন্মেষার বয়স তিরিশের আশেপাশে, রূপ ঝলসে দিত এককালে তা বেশ বোঝা যায়। এখনও যে টুকু অবশিষ্ট আছে টলি-বলির অনেক নায়িকাকে ঘায়েল করার পক্ষে যথেষ্ট। তবে চেহারার মধ্যে কোথাও একটা সুক্ষ্ম বেদনা ছড়িয়ে আছে। ফলে একটু ভারিক্কি লাগে। প্রসাধন নেই তেমন। তবে আসবার আগে সম্ভবত দামি কোন পারফিউম ব্যবহার করেছেন, ঢোকবার সঙ্গে সঙ্গে তার স্নিগ্ধ গন্ধ ঘরটাকে জাপটে ধরল। খুব ধীরে ধীরে উন্মেষা এসে বসলেন সামনের চেয়ারে। তাঁকে আর বলতে হয়নি, উল্টোদিকের চেয়ারে গোয়েন্দা ও পুলিশ বসে আছে, অতএব জেরার জন্য তাঁকে মুখোমুখি বসতে হবে, এ-যেন জানা কথাই। ভালো করে তাঁকে দেখল শাক্য। এমনিতে সব ঠিক আছে, কেবল চোখ দুটি কেমন যেন ছলোছলো মনে হল তার। এখানে আসার আগে কাঁদছিলেন কী উন্মেষা? কেন? অনিলের শোকে? না কি অন্য কোন কারণে?
ইতিপূর্বে শাক্যই প্রশ্ন করে এসেছে মূলত, ফলে সুদীপ্ত চুপ করে ছিল। শাক্যও। সে বুঝে নিতে চাইছিল উন্মেষাকে। কিছু কিছু মানুষ আছেন, ব্যক্তিত্বই যাঁদের আসল সৌন্দর্য। শাক্যর মনে হচ্ছিল, উন্মেষা সেইরকম একজন। রূপ তিনি পেয়েছেন জন্মগতভাবে, কিন্তু সেই রূপ ঝলসে উঠেছে তাঁর ব্যক্তিত্বের গুণে। কিছু কিছু মানুষকে দেখলে সমীহের ভাব জাগে, উন্মেষাকে দেখলেও কারুর কারও তেমন ভাব জাগতে পারে, সন্দেহ নেই।
উন্মেষা অবশ্য নীরবতার সামনে উশখুশ করছিল। পুরুষের রূপমুগ্ধতার ভাষা তার অজানা নয়। কিন্তু উল্টোদিকের পুলিশের ইউনিফর্ম পরা অফিসার বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাশের সাদা পোশাকের অফিসারটি, সে অনুমান করে নিল, ইনিই লালবাজার থেকে আসা গোয়েন্দা হবেন। কারণ, আগের দিন রাতে পুলিশ অফিসারকে পার্টিতে আসতে দেখেছিলেন, ইনি ছিলেন না সেখানে। এই গোয়েন্দা অফিসারের বেশ কন্দর্পকান্তি চেহারা। দেখেই বোঝা যায় নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, যেটা এই রাজ্যের অধিকাংশ পুলিশ করেন না, ইনি ব্যতিক্রম। গোয়েন্দা অফিসারটির নাম সে জানে না, তবে তিনি এখন তার দিকে তাকিয়ে আছেন কোনও পুরুষের কামুক দৃষ্টি দিয়ে নয়, জরিপ করার মর্মভেদী তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে, যেন পড়ে ফেলতে চাইছেন তার মনের সবটুকু। শিউরে উঠল সে। কিন্তু বাইরে প্রকাশ করল না। তার দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণার ইতিহাস এই মানুষটির পক্ষে ওই দৃষ্টি দিয়েও অনুমান করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই রকম দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ চুপচাপ বসেও থাকা যায় না। ফলে কিছুটা দ্বিধা নিয়েই উন্মেষা বলল, “বলুন, কী জানতে চান?”
সুদীপ্ত শাক্যর দিকে তাকাল। শাক্য তাকিয়ে আছে উন্মেষার দিকে। একসময় নিজেই নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, “উন্মেষা, আপনি কি কোনও কারণে আপসেট? কাঁদছিলেন?”
উন্মেষা, এমনকি সুদীপ্তও ভেবেছিল প্রশ্ন আসবে অন্য দিক থেকে, যেমন—অনিলকে আপনি কতদিন থেকে চেনেন, তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ঠিক কেমন—এইরকম আর কী! কিন্তু শাক্য সেই পথে হাঁটলই না। তার পুছতাছের ধরণ সম্পূর্ণ পৃথক।
শাক্য প্রশ্নটা করে তাকিয়েছিল এক দৃষ্টে। উন্মেষা স্বাভাবিকভাবেই বিহ্বল বোধ করছেন দেখে সে মনে মনে কৌতুক অনুভব করল। তখনও উত্তর এল না দেখে আবারও প্রশ্ন করল শাক্য, “বলুন? আপনি কী কাঁদছিলেন?”
সুদীপ্ত শাক্যর দিকে তাকাল। শাক্য তাকিয়ে আছে উন্মেষার দিকে। একসময় নিজেই নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, “উন্মেষা, আপনি কি কোনও কারণে আপসেট? কাঁদছিলেন?”
উন্মেষা, এমনকি সুদীপ্তও ভেবেছিল প্রশ্ন আসবে অন্য দিক থেকে, যেমন—অনিলকে আপনি কতদিন থেকে চেনেন, তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ঠিক কেমন—এইরকম আর কী! কিন্তু শাক্য সেই পথে হাঁটলই না। তার পুছতাছের ধরণ সম্পূর্ণ পৃথক।
শাক্য প্রশ্নটা করে তাকিয়েছিল এক দৃষ্টে। উন্মেষা স্বাভাবিকভাবেই বিহ্বল বোধ করছেন দেখে সে মনে মনে কৌতুক অনুভব করল। তখনও উত্তর এল না দেখে আবারও প্রশ্ন করল শাক্য, “বলুন? আপনি কী কাঁদছিলেন?”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪৬: প্রচ্ছন্ন হুমকি
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-১১: ধৃতিমান চৌধুরীর মোবাইল সোনার কেল্লার ক্যামেল রাইডের সুরে বেজে উঠল
উন্মেষা এবার চোখ নামাল, তারপর ধরা গলায় বলল, “আসলে, ব্যাপারটা এত শকিং। অনিল আমাদের সেই কলেজ জীবনের বন্ধু। কতদিনের পরিচয়। মাঝে অবশ্য দেখাসাক্ষাৎ ছিল না, বেশ কিছুদিন যোগাযোগও ছিল না। বিয়ের পর আমি সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখন তো জানি না, ভাগ্য আমার প্রতি প্রসন্ন নয়, ফলে হাজব্যাণ্ডের চলে যাওয়াটা ছিল আমার কাছে আকস্মিক একটা ঘটনা। সেই অবস্থাতেই অনিলই আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিকোয়েস্ট পাঠায় আর আমি অ্যাকসেপ্ট করি। তার পরেই ওর সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয়।
আমাদের এই ট্যুরে আসা বন্ধুবান্ধবদের কারও সঙ্গেই আমার অন্তত মাঝে অনেকদিন কোন যোগাযোগ ছিল না। অনিলই আলাদা একটা গ্রুপ খুলে আমাদের সেখানে আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, যাতে আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে পারি। আমিও স্বামীকে হারিয়ে একাকীত্বে ভুগছিলাম। কলেজ জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে আবার কথাবার্তা হওয়ায় নিজেকে হালকা ফিল করতে শুরু করি। তখনও আমি চাকরিতে জয়েন করিনি। ওঁর আনন্যাচারাল ডেথের ফলে ইন্স্যুরেন্সের থেকে যে টাকাটা পেয়েছিলাম, সেটা ভারতীয় মুদ্রায় নেহাৎ কম নয়। অন্তত আমার একার পক্ষে যথেষ্ট। তা-ও অনিলই আমাকে ইনসিস্ট করে একটা জব করার জন্য, আমি না কি কাজে ব্যস্ত থাকলে দুঃখ একাকীত্ব ভুলে থাকতে পারবো। তার কথাতেই এদিক-ওদিক অ্যাপ্লাই করে শ্রীবাস্তব ফুড চেনের একটি ব্রাঞ্চে জব পাই। তবে আমি অফিসিয়াল কাজ করি। ফুড মলের কোনও কাউন্টারে বসতে হয় না! যাই হোক, যার জন্য জীবনের এক কঠিন সময়কে পার করতে পেরেছি, তার এই ভাবে চলে যাওয়া…” কথা শেষ করতে না পেরে কেঁদে ফেলল উন্মেষা।
শাক্য শান্ত স্বরে বলল, “বুঝতে পারছি ওঁর চলে যাওয়াটা সত্যিই খুব শকিং আপনার কাছে। আচ্ছা আপনি কি মনে করেন যে, কালাদেও বলে কেউ ওঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী?”
“কালাদেও? ও হ্যাঁ, ওই গল্পটা শুনেছি, কিন্তু বিশ্বাস করিনি। দেহাতের মানুষ কত কিছু কল্পনা করে, সেগুলি সব গাঁজাখুরি! এও তেমন কিছু হবে!”
“তাহলে আপনি বলছেন, হয় স্যুইসাইড, নয় মার্ডার। আর মার্ডার হলে নিশ্চয়ই একজন মানুষ অপরাধীই তা করেছে, কালাদেও নামক কোন গল্পের চরিত্র নয় ?”
“স্যুইসাইড? অনিল স্যুইসাইড করেছে তাহলে?” চমকে উঠে বলল উন্মেষা।
“না, আমি একবারও সেটা বলিনি। আমি কেবল আমার অনুমানের কথা বলেছি। আসল সত্যটা জানা যাবে পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসার পর। তবে, আপনি ওর স্যুইসাইড করার কথাটা শুনে চমকে উঠলেন কেন? আপনি কী জানতেন অনিল স্যুইসাইড করতে পারে?”
“দেখুন”, অনেকখানি দ্বিধা নিয়ে বলল, “অনিল একটি মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির হাওড়া ব্রাঞ্চের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে এতক্ষণে নিশ্চয়ই সে-কথা জেনেছেন। কিন্তু সম্প্রতি আমাকে সে বলছিল, এই চাকরিটা এ বার ছেড়ে দেবে। তার নির্দিষ্ট জোনে বিক্রিবাটা কমছিল কোম্পানির, সেই সমস্ত ব্যর্থতার সব দায়ভার না কি কোম্পানি তার উপর চাপাচ্ছে। অথচ সে না কী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের বোঝাবার। শেষ পর্যন্ত না তাকে স্যুইসাইড করতে হয়!”
“কবে বলেছিল এই কথা আপনাকে?”
আমাদের এই ট্যুরে আসা বন্ধুবান্ধবদের কারও সঙ্গেই আমার অন্তত মাঝে অনেকদিন কোন যোগাযোগ ছিল না। অনিলই আলাদা একটা গ্রুপ খুলে আমাদের সেখানে আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, যাতে আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে পারি। আমিও স্বামীকে হারিয়ে একাকীত্বে ভুগছিলাম। কলেজ জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে আবার কথাবার্তা হওয়ায় নিজেকে হালকা ফিল করতে শুরু করি। তখনও আমি চাকরিতে জয়েন করিনি। ওঁর আনন্যাচারাল ডেথের ফলে ইন্স্যুরেন্সের থেকে যে টাকাটা পেয়েছিলাম, সেটা ভারতীয় মুদ্রায় নেহাৎ কম নয়। অন্তত আমার একার পক্ষে যথেষ্ট। তা-ও অনিলই আমাকে ইনসিস্ট করে একটা জব করার জন্য, আমি না কি কাজে ব্যস্ত থাকলে দুঃখ একাকীত্ব ভুলে থাকতে পারবো। তার কথাতেই এদিক-ওদিক অ্যাপ্লাই করে শ্রীবাস্তব ফুড চেনের একটি ব্রাঞ্চে জব পাই। তবে আমি অফিসিয়াল কাজ করি। ফুড মলের কোনও কাউন্টারে বসতে হয় না! যাই হোক, যার জন্য জীবনের এক কঠিন সময়কে পার করতে পেরেছি, তার এই ভাবে চলে যাওয়া…” কথা শেষ করতে না পেরে কেঁদে ফেলল উন্মেষা।
শাক্য শান্ত স্বরে বলল, “বুঝতে পারছি ওঁর চলে যাওয়াটা সত্যিই খুব শকিং আপনার কাছে। আচ্ছা আপনি কি মনে করেন যে, কালাদেও বলে কেউ ওঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী?”
“কালাদেও? ও হ্যাঁ, ওই গল্পটা শুনেছি, কিন্তু বিশ্বাস করিনি। দেহাতের মানুষ কত কিছু কল্পনা করে, সেগুলি সব গাঁজাখুরি! এও তেমন কিছু হবে!”
“তাহলে আপনি বলছেন, হয় স্যুইসাইড, নয় মার্ডার। আর মার্ডার হলে নিশ্চয়ই একজন মানুষ অপরাধীই তা করেছে, কালাদেও নামক কোন গল্পের চরিত্র নয় ?”
“স্যুইসাইড? অনিল স্যুইসাইড করেছে তাহলে?” চমকে উঠে বলল উন্মেষা।
“না, আমি একবারও সেটা বলিনি। আমি কেবল আমার অনুমানের কথা বলেছি। আসল সত্যটা জানা যাবে পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসার পর। তবে, আপনি ওর স্যুইসাইড করার কথাটা শুনে চমকে উঠলেন কেন? আপনি কী জানতেন অনিল স্যুইসাইড করতে পারে?”
“দেখুন”, অনেকখানি দ্বিধা নিয়ে বলল, “অনিল একটি মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির হাওড়া ব্রাঞ্চের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে এতক্ষণে নিশ্চয়ই সে-কথা জেনেছেন। কিন্তু সম্প্রতি আমাকে সে বলছিল, এই চাকরিটা এ বার ছেড়ে দেবে। তার নির্দিষ্ট জোনে বিক্রিবাটা কমছিল কোম্পানির, সেই সমস্ত ব্যর্থতার সব দায়ভার না কি কোম্পানি তার উপর চাপাচ্ছে। অথচ সে না কী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের বোঝাবার। শেষ পর্যন্ত না তাকে স্যুইসাইড করতে হয়!”
“কবে বলেছিল এই কথা আপনাকে?”
আরও পড়ুন:
মুভি রিভিউ: চলচ্চিত্র নয়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের চিত্রকাব্য— উড়োজাহাজ
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৭: তীর্থদর্শন
উন্মেষা বলল, “এই তো, বেশিদিন আগে নয়। এখানে আসার সপ্তাহ দু’য়েক আগে। তবে তার কথাটা তখন সিরিয়াসলি নিইনি। বরং বুঝিয়েছি, ব্যবসায়ে লাভ-লোকসান কাজের অঙ্গ। ওই নিয়ে বেশি না ভেবে নিজের আপগ্রেডেশনের জন্য যা যা করা দরকার, সেটাই করতে। আর এমনিতেও ও কোম্পানি বদলাত। অনেক ভালো ভালো কোম্পানির অফার ছিল। কিন্তু ওর যেখানে মন বসে যায়, তা ও সহজে ছাড়তে চাইত না। ফলে এই কোম্পানিকেও ছাড়তে দ্বিধা করছিল। ওদিকে ভালো ভালো অফারগুলি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। কোম্পানিগুলি তো আর ওর জন্য বসে থাকবে না!”
“ঠিক বলেছেন। তাহলে বলতে হয়, পেশাগত চাপ সহ্য করতে না পেরে অনিল আত্মহত্যাই করেছেন। দেখা যাক, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কী বলে।” শাক্য অন্য প্রশ্ন তোলে, “কাল আপনি পার্টিতে এসেছিলেন?”
“এসেছিলাম, কিন্তু বেশিক্ষণ থাকিনি!”
“কেন?”
“আমাদের টিমে আর্য বলে একজন এসেছিল। সে অঞ্জনের দামি বাইক নিয়ে কাছেই কোন গ্রামে স্টোরি করতে গিয়েছিল। সেখানে পৌঁছে খবর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে কোন খবর তো দেয়ই নি, উল্টে তার মোবাইল স্যুইচড্ অফ বলছে। অঞ্জনের বাইকটা খুব শখের এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দাম। ও ওটা কারও হাতে দিতেই চায় না। কিন্তু আমি অনুরোধ করেছিলাম বলেই ও আর্যকে দিয়েছিল। তবে বলে দিয়েছিল যাতে আর্য আস্তে চালায়। কিন্তু…”
“আপনি কী জানেন, অঞ্জনের সেই নিরুদ্দিষ্ট বাইক কাছেই লোকাল এক জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে?”
“হোয়াট?” লাফিয়ে উঠল প্রায় উন্মেষা।
“বসুন বসুন। অত উত্তেজিত হবেন না। অঞ্জনকে কিন্তু আমরা এই তথ্য দেইনি। ওটা যে অঞ্জনের বাইক, সে ব্যাপারেও এখনও পুলিশ নিশ্চিত নয়। তবে অত দামি বাইক এই অঞ্চলে আর কারও নেই বলেই পুলিশ আমায় জানিয়েছে, অতএব ওই বাইক অঞ্জনেরই!”
“কিন্তু, কিন্তু”, উন্মেষাকে বিহ্বল দেখায়, সে সুদীপ্তকে দেখিয়ে বলে যে, “এই অফিসার যে কাল আমাদের আজ সকালে থানায় গিয়ে কালকে যে বাইক অ্যাকসিডেন্ট করেছে, আর যাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, সে-সবের সনাক্তকরণের জন্য হাজির হতে বলেছিলেন; তাহলে সেই বাইকটা কার? আর আর্য কেন অঞ্জনের দামি বাইকটা নিয়ে গিয়েও সেটা জঙ্গলে লুকিয়ে রাখবে? আর একটা অন্য বাইক সে কোথায় পেল? ওই বাইকে চড়ে সে কোথায় যাচ্ছিল?”
“আরে”, শাক্য হাসল, “আমার মনে হচ্ছে আপনিই ইনভেস্টিগেটিং অফিসারা আর আমরা এসেছি সন্দেহভাজন হিসেবে!”
“স্যরি, আমি আসলে আমার মনে তৈরি হওয়া প্রশ্নগুলিকে একজায়গায় জড়ো করছিলাম। আমার জন্য অঞ্জনের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমি মরমে মরে যাবো!”
“ইট’স্ ওকে। আমরা ফিল করতে পারছি আপনার গিল্টির কারণটুকু। কিন্তু এখন বাইকের চেয়েও তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—আর্য কোথায়? কাল যার মুণ্ডহীন লাশ পাওয়া গিয়েছে সে-ই আর্য কি না। আজ আপনারা মর্গে গিয়ে সনাক্ত করার পর সে-বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারবো। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অনিল কীভাবে মারা গেলেন? তৃতীয়, যদি দেখা যায় কাল যে অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি পাওয়া গিয়েছে, সেটি আর্যর না হলে আর কার? কে তবে সেই হতভাগ্য, যাকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল?”
“ঠিক বলেছেন। তাহলে বলতে হয়, পেশাগত চাপ সহ্য করতে না পেরে অনিল আত্মহত্যাই করেছেন। দেখা যাক, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কী বলে।” শাক্য অন্য প্রশ্ন তোলে, “কাল আপনি পার্টিতে এসেছিলেন?”
“এসেছিলাম, কিন্তু বেশিক্ষণ থাকিনি!”
“কেন?”
“আমাদের টিমে আর্য বলে একজন এসেছিল। সে অঞ্জনের দামি বাইক নিয়ে কাছেই কোন গ্রামে স্টোরি করতে গিয়েছিল। সেখানে পৌঁছে খবর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে কোন খবর তো দেয়ই নি, উল্টে তার মোবাইল স্যুইচড্ অফ বলছে। অঞ্জনের বাইকটা খুব শখের এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দাম। ও ওটা কারও হাতে দিতেই চায় না। কিন্তু আমি অনুরোধ করেছিলাম বলেই ও আর্যকে দিয়েছিল। তবে বলে দিয়েছিল যাতে আর্য আস্তে চালায়। কিন্তু…”
“আপনি কী জানেন, অঞ্জনের সেই নিরুদ্দিষ্ট বাইক কাছেই লোকাল এক জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে?”
“হোয়াট?” লাফিয়ে উঠল প্রায় উন্মেষা।
“বসুন বসুন। অত উত্তেজিত হবেন না। অঞ্জনকে কিন্তু আমরা এই তথ্য দেইনি। ওটা যে অঞ্জনের বাইক, সে ব্যাপারেও এখনও পুলিশ নিশ্চিত নয়। তবে অত দামি বাইক এই অঞ্চলে আর কারও নেই বলেই পুলিশ আমায় জানিয়েছে, অতএব ওই বাইক অঞ্জনেরই!”
“কিন্তু, কিন্তু”, উন্মেষাকে বিহ্বল দেখায়, সে সুদীপ্তকে দেখিয়ে বলে যে, “এই অফিসার যে কাল আমাদের আজ সকালে থানায় গিয়ে কালকে যে বাইক অ্যাকসিডেন্ট করেছে, আর যাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, সে-সবের সনাক্তকরণের জন্য হাজির হতে বলেছিলেন; তাহলে সেই বাইকটা কার? আর আর্য কেন অঞ্জনের দামি বাইকটা নিয়ে গিয়েও সেটা জঙ্গলে লুকিয়ে রাখবে? আর একটা অন্য বাইক সে কোথায় পেল? ওই বাইকে চড়ে সে কোথায় যাচ্ছিল?”
“আরে”, শাক্য হাসল, “আমার মনে হচ্ছে আপনিই ইনভেস্টিগেটিং অফিসারা আর আমরা এসেছি সন্দেহভাজন হিসেবে!”
“স্যরি, আমি আসলে আমার মনে তৈরি হওয়া প্রশ্নগুলিকে একজায়গায় জড়ো করছিলাম। আমার জন্য অঞ্জনের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমি মরমে মরে যাবো!”
“ইট’স্ ওকে। আমরা ফিল করতে পারছি আপনার গিল্টির কারণটুকু। কিন্তু এখন বাইকের চেয়েও তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—আর্য কোথায়? কাল যার মুণ্ডহীন লাশ পাওয়া গিয়েছে সে-ই আর্য কি না। আজ আপনারা মর্গে গিয়ে সনাক্ত করার পর সে-বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারবো। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অনিল কীভাবে মারা গেলেন? তৃতীয়, যদি দেখা যায় কাল যে অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি পাওয়া গিয়েছে, সেটি আর্যর না হলে আর কার? কে তবে সেই হতভাগ্য, যাকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল?”
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-৫: বরাক পাড়ে জঙ্গিয়ার গীত
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৬: কবির অসুখ-বিসুখ
উন্মেষা ভয়ার্ত গলায় বলল, “অফিসার, আমি কোনওদিন এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি। আমার যে ভারি ভয় করছে! কী যে ভুল করলাম এখানে এসে!”
শাক্য বলল, “এখানে আসার প্ল্যান শুনলাম আপনার? আপনিই কোনও ট্র্যাভেল ব্লগ থেকে এই জায়গার কথা পান, তারপর সবাইকে বলেন এবং সকলে মিলে তখন ঠিক হয় যে, এখানে শর্ট ট্যুরে আসা হবে। ঠিক বলছি তো?”
“না, সম্পূর্ণ না। অনিল আমাকে প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা স্টোরি দেখায়, যেখানে পিশাচ পাহাড় ট্যুরিজমের সম্পর্কে বলা ছিল। রিলসও দেখেছিলাম পরে। আমি নানা জায়গায় অনুসন্ধান করতে করতে এই জায়গাটা সম্পর্কে জানতে পারি। অনিল কথাটা গ্রুপে তোলে আর সকলে রাজি হয়ে যায়। এটাই আসল কথা!”
“কিন্তু অঞ্জন যে বলছিলেন, এখানকার সিলেকশন আপনার!”
“মোটেই না। ওর খেয়াল নেই। তা ছাড়া ও তো আমাদের বন্ধুদের গ্রুপেও নেই, ও জানবে কী ভাবে? আর আমি তো আসতেই চাইনি প্রথমে। আসলে আমি কিছুটা সংস্কার মেনে চলি। বিয়ের আগে অঞ্জনের সঙ্গে এখানে আসা নিয়ে আমার মনে গভীর সংশয় ছিল। বিষয়টা কেউ জানুক বা না-জানুক, মানুক বা না-মানুক, এটা তো সত্যি যে, আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি! অবশ্য আমি অঞ্জনকে বলতে সে আমার উপর কোনওদিন শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গ হতে চেয়ে জোর করেনি। সে এই ব্যাপারে অন্তত আমার ক্ষেত্রে পারফেক্ট জেন্টেলম্যান!”
“আচ্ছা, আপনার হাজব্যান্ড কোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন?”
উন্মেষা অবাক হয়ে বলল, “কেন? এই কেসের সঙ্গে সেই কত কাল আগে মৃত মানুষটির কী সম্পর্ক?”
“না এমনি! জাস্ট কৌতূহল বলতে পারেন।
“একটা আইটি কোম্পানিতে। ও হার্ডওয়্যারে বলতে গেলে এক্সপার্ট ছিল। কোম্পানি সেই জ্ঞানটাই এক্সপ্লোর করতে চেয়েছিল। কিন্তু…” —চলবে।
শাক্য বলল, “এখানে আসার প্ল্যান শুনলাম আপনার? আপনিই কোনও ট্র্যাভেল ব্লগ থেকে এই জায়গার কথা পান, তারপর সবাইকে বলেন এবং সকলে মিলে তখন ঠিক হয় যে, এখানে শর্ট ট্যুরে আসা হবে। ঠিক বলছি তো?”
“না, সম্পূর্ণ না। অনিল আমাকে প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা স্টোরি দেখায়, যেখানে পিশাচ পাহাড় ট্যুরিজমের সম্পর্কে বলা ছিল। রিলসও দেখেছিলাম পরে। আমি নানা জায়গায় অনুসন্ধান করতে করতে এই জায়গাটা সম্পর্কে জানতে পারি। অনিল কথাটা গ্রুপে তোলে আর সকলে রাজি হয়ে যায়। এটাই আসল কথা!”
“কিন্তু অঞ্জন যে বলছিলেন, এখানকার সিলেকশন আপনার!”
“মোটেই না। ওর খেয়াল নেই। তা ছাড়া ও তো আমাদের বন্ধুদের গ্রুপেও নেই, ও জানবে কী ভাবে? আর আমি তো আসতেই চাইনি প্রথমে। আসলে আমি কিছুটা সংস্কার মেনে চলি। বিয়ের আগে অঞ্জনের সঙ্গে এখানে আসা নিয়ে আমার মনে গভীর সংশয় ছিল। বিষয়টা কেউ জানুক বা না-জানুক, মানুক বা না-মানুক, এটা তো সত্যি যে, আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি! অবশ্য আমি অঞ্জনকে বলতে সে আমার উপর কোনওদিন শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গ হতে চেয়ে জোর করেনি। সে এই ব্যাপারে অন্তত আমার ক্ষেত্রে পারফেক্ট জেন্টেলম্যান!”
“আচ্ছা, আপনার হাজব্যান্ড কোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন?”
উন্মেষা অবাক হয়ে বলল, “কেন? এই কেসের সঙ্গে সেই কত কাল আগে মৃত মানুষটির কী সম্পর্ক?”
“না এমনি! জাস্ট কৌতূহল বলতে পারেন।
“একটা আইটি কোম্পানিতে। ও হার্ডওয়্যারে বলতে গেলে এক্সপার্ট ছিল। কোম্পানি সেই জ্ঞানটাই এক্সপ্লোর করতে চেয়েছিল। কিন্তু…” —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।