অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
নুনিয়াকে দেখে সত্যব্রত মনে মনে পুলকিত হলেন। মেয়েটি তাঁকে দেখেনি। তার চেহারা মলিন, চুল উস্কোখুস্কো, নিজের মাপের চেয়ে বেঢপ মাপের একটা লম্বা ঝুলের জামা পরেছে। দেখে মনে হচ্ছে গ্রাউন, আসলে ফ্রক। সম্ভবত চার্চে অনেকে পুরানো জামাকাপড় দান করে, সেখান থেকেই নুনিয়াকে দেওয়া হয়েছে ওটা। তবে ফ্রকটা পুরানো হলেও দামি। যে দান করেছে, সে বেশ পয়সাওলা ঘরের। সাধারণত এই জাতীয় জিনিস যে-কেউ কেনে না বা কিনতে পারে না, আর একবার কিনলে সহজে দান করে দেওয়ার কথা ভাবে না। ফ্রকের উপর একখানা উলের তৈরি জ্যাকেট পরেছে সে, সামনের অংশ যদিও বোতাম আটকানো নেই। সে জ্যাকেটের অবস্থাও তথৈবচ।
সত্যব্রত একবার পিছনের দিকে তাকালেন। পিছনের করিডোর ফাঁকা। ফাদার আন্তোনিও বলছিলেন, তাঁর জরুরি কাজ আছে, তাঁকে এক্ষুনি বেরোতে হবে। অতএব তিনি নিশ্চয়ই ভিতরে ব্যস্ত আছেন। বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যদিও যাজকদের ভিতরে-বাইরের সাজে পার্থক্য কিছু নেই, ফাদারের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম হবে না। আশেপাশে ইতস্তত লোকজন যাচ্ছে-আসছে। তাদের অনেকেই যে পেশেন্ট বা পেশেন্ট পার্টি বোঝাই যাচ্ছে। চার্চের নিজস্ব একটা মেডিকেল স্টোর আছে, সেখান থেকে যেমন কিছু ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তেমনই স্বল্প মূল্যেও কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। এছাড়া সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের একটা প্রজেক্ট পেয়েছেন তাঁরা। সেখান থেকেও জীবনদায়ী কিছু ওষুধ নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যায়।
সত্যব্রত একবার পিছনের দিকে তাকালেন। পিছনের করিডোর ফাঁকা। ফাদার আন্তোনিও বলছিলেন, তাঁর জরুরি কাজ আছে, তাঁকে এক্ষুনি বেরোতে হবে। অতএব তিনি নিশ্চয়ই ভিতরে ব্যস্ত আছেন। বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যদিও যাজকদের ভিতরে-বাইরের সাজে পার্থক্য কিছু নেই, ফাদারের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম হবে না। আশেপাশে ইতস্তত লোকজন যাচ্ছে-আসছে। তাদের অনেকেই যে পেশেন্ট বা পেশেন্ট পার্টি বোঝাই যাচ্ছে। চার্চের নিজস্ব একটা মেডিকেল স্টোর আছে, সেখান থেকে যেমন কিছু ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তেমনই স্বল্প মূল্যেও কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। এছাড়া সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের একটা প্রজেক্ট পেয়েছেন তাঁরা। সেখান থেকেও জীবনদায়ী কিছু ওষুধ নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যায়।
এর আগে একদিন এসে সত্যব্রত সেই স্টোর দেখে গিয়েছেন। ভালো ব্যবস্থা। লোকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ওষুধ কিনছে, কোনও গোলমাল নেই, চেঁচামেচি নেই। এটা কলকাতায় হলে মারপিট, কালোবাজারি, দাদাগিরি—সব শুরু হয়ে যেত। এখানকার মানুষ এখানকার পরিবেশের মতোই শান্ত-ধীর-সমবায়ী। জীবনের গতি অনেক মন্থর। মনেই হয় না একবিংশ শতকে পৌঁছে গিয়েছে মানুষের সভ্যতা। তবে আপাত শান্ততা আবার ভয়ংকরও। সমুদ্রের যে অংশ যত শান্ত, সে-অংশ তত গভীর। অনেকসময় জীবনের এই শান্ততা আসলে একটা ভয়ংকর অস্থিরতার প্রাক্-অবস্থা। কালাদেওর জাগরণ, বুধন মাহাতর অদ্ভুত কেস কি তারই লক্ষণ? কোনও ভয়াবহ কিছু কী ঘটোতে চলেছে? তা না-হলে এত হত্যা, এত বীভৎস ঘটনা একের পর এক কেন ঘটছে এখানে? এত আশঙ্কা কেন জাগছে বুকের মধ্যে?
অচেনা লোকটি কিছুক্ষণ আগে বলে গেছে, সে অপেক্ষা করবে। এখানে চারিদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। চার্চে এত সুরক্ষার ব্যবথা কেন, তা সত্যব্রত বুঝলেন না। অবশ্য এই জাতীয় প্রতিষ্ঠান অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এত অর্থ দাতব্য হিসেবে পায় যে, কীভাবে খরচ করবে বুঝে উঠতে পারে না। সেক্ষেত্রে সিসিটিভি লাগানো সামান্য ব্যাপার। কিন্তু সিসিটিভি যদি থাকেও, সেখানে যদি তাঁরা দেখেন যে, সত্যব্রত নুনিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন, তাহলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হবে? তিনি তো নুনিয়াকে জেরা করতে চাইছেন না। বুধনের ব্যাপারে কিছু জানতে চাইছেন মাত্র। তাহলে এত রাখঢাক গুড়গুড় কেন? আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন সত্যব্রত। তারপর দ্রুইত এগিয়ে গেলেন নুনিয়ার দিকে।
অচেনা লোকটি কিছুক্ষণ আগে বলে গেছে, সে অপেক্ষা করবে। এখানে চারিদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। চার্চে এত সুরক্ষার ব্যবথা কেন, তা সত্যব্রত বুঝলেন না। অবশ্য এই জাতীয় প্রতিষ্ঠান অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এত অর্থ দাতব্য হিসেবে পায় যে, কীভাবে খরচ করবে বুঝে উঠতে পারে না। সেক্ষেত্রে সিসিটিভি লাগানো সামান্য ব্যাপার। কিন্তু সিসিটিভি যদি থাকেও, সেখানে যদি তাঁরা দেখেন যে, সত্যব্রত নুনিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন, তাহলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হবে? তিনি তো নুনিয়াকে জেরা করতে চাইছেন না। বুধনের ব্যাপারে কিছু জানতে চাইছেন মাত্র। তাহলে এত রাখঢাক গুড়গুড় কেন? আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন সত্যব্রত। তারপর দ্রুইত এগিয়ে গেলেন নুনিয়ার দিকে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪৩: চিকন কালা বড়ই জ্বালা
এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-২: ইতিহাসে অসম
নুনিয়া মাথা নিচু করে হাঁটছিল। সে কোনও কারণে আনমনা ছিল। তার চলার ছন্দ শিথিল। পা ফেলছিল যেন মেপে মেপে। আশেপাশে চার্চের কেউ ছিল না, থাকলে কী হত তা সত্যব্রত জানেন না। তবে নুনিয়াকে অনেকেই যে পছন্দ করেন না, তা ফাদার আন্তোনিওর কথা শুনে বোঝা যায়। আর এই সময় নুনিয়ার থাকার কথা হোস্টেলে। সেখানে সে ধূলিধূসরিত পায়ে বাইরে থেকে ফিরছে, এটা নিশ্চয়ই চার্চের নিয়মকানুনের বিরুদ্ধে? এর জন্য নুনিয়াকে শারীরিক মারধোর না হোক, মানসিক লাঞ্ছনা করতেই পারেন এঁরা। অনেক সময় শরীরের মার তত আঘাত দেয় না, যতটা মানসিক ভাবে আঘাত পেলে লাগে। নুনিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল, এই ছোট বয়সেই সে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। অবশ্য তার সঙ্গে যা ঘটেছিল, তা যে-কোনও মানুষকে তার স্বাভাবিক স্থিতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
“নুনিয়া?”
নুনিয়া চমকে উঠেছিল। সত্যব্রত কখন যে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, সে টেরও পায় নি। সত্যব্রত বুঝলেন, চার্চে কেউ নুনিয়ার নাম উচ্চারণ করলে মেয়েটি ভয় পায়। সম্ভবত তার নাম এভাবে করা হয়, যখন তাকে শাস্তি দেওয়া হয় কিংবা দমন-পীড়ন করা হয়। ফলে অন্যের মুখে নিজের নাম আচমকা শুনেই সে চমকে উঠেছে।
“নুনিয়া?”
নুনিয়া চমকে উঠেছিল। সত্যব্রত কখন যে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, সে টেরও পায় নি। সত্যব্রত বুঝলেন, চার্চে কেউ নুনিয়ার নাম উচ্চারণ করলে মেয়েটি ভয় পায়। সম্ভবত তার নাম এভাবে করা হয়, যখন তাকে শাস্তি দেওয়া হয় কিংবা দমন-পীড়ন করা হয়। ফলে অন্যের মুখে নিজের নাম আচমকা শুনেই সে চমকে উঠেছে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?
নুনিয়া প্রথম ডাকে সাড়া দিল না দেখে সত্যব্রত দ্বিতীয়বার দাকলেন, “নুনিয়া?”
নুনিয়া পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাল। চিনতে পেরেছে কি তাঁকে? সত্যব্রত নিশ্চিত হতে চাইলেন, “নুনিয়া। আমাকে চিনতে পারছ?”
নুনিয়া তাকিয়ে থাকল।
সত্যব্রত বললেন, “চিনতে পারছ না আমায়?”
এ বার নুনিয়া একদিকে মাথা কাত করে জানাল, চিনতে পারছে সে। কিন্তু মুখে কোনও কথা বলল না।
সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে বল তো?”
“হেলথ সেন্টারের ডাক্তারবাবু!” নুনিয়ার গলা শুনে মনে হল তার ঠান্ডা লেগেছে।
“ঠিক বলেছ। গুড গার্ল। চকোলেট দেবো তোমায়। হেলথ সেন্টারে যেও কেমন, তখন দেবো। কিনে রাখবো তোমার জন্য। এখন তো নেই, থাকলে দিতাম।”
“দরকার নেই। আমি চকোলেট খাই না। আর ফাদার না অনুমতি দিলে আমি হেলথ সেন্টারে যেতে পারব না!”
“ফাদারের প্রতি তোমার এত টান? এই যে তুমি বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছ, ফাদার কিছু বলেন না? তুমি ফাদারকে আগে থেকে জানাও? অনুমতি নাও?”
“ফাদার সব জানেন। রোজ আমি ফাদারকে পরের দিন কী করব বলে যাই। না-জানার কী আছে?” নুনিয়ার গলায় সামান্য অসহিষ্ণুতার সুর।
“তুমি রাগ করছ নুনিয়া? আমি কিন্তু ওই ভাবে বলতে চাইনি!”
“আমি রাগ করি না। সবাই আমার উপরেই রাগ করে!” নুনিয়ার গলা আশ্চর্য রকম শান্ত।
“ফাদারও করেন?”
“ফাদার করেন না। ফাদার ভালোবাসেন।”
“নুনিয়া, তুমি কী আমাকে বুধন মাহাতোর ব্যাপারে কিছু হেল্প করবে?”
সত্যব্রত হাঁটছেন আর থেকে থেকে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কথা বলে চলেছেন। এখনও কেউ দেখেনি, দেখলে যে কী আছে তাঁর কপালে কে জানে?
“বুধন!” কেমন দিশেহারা শোনায় নুনিয়ার গলা, “ভাই তো মরে গিয়েছে!”
নুনিয়া পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাল। চিনতে পেরেছে কি তাঁকে? সত্যব্রত নিশ্চিত হতে চাইলেন, “নুনিয়া। আমাকে চিনতে পারছ?”
নুনিয়া তাকিয়ে থাকল।
সত্যব্রত বললেন, “চিনতে পারছ না আমায়?”
এ বার নুনিয়া একদিকে মাথা কাত করে জানাল, চিনতে পারছে সে। কিন্তু মুখে কোনও কথা বলল না।
সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে বল তো?”
“হেলথ সেন্টারের ডাক্তারবাবু!” নুনিয়ার গলা শুনে মনে হল তার ঠান্ডা লেগেছে।
“ঠিক বলেছ। গুড গার্ল। চকোলেট দেবো তোমায়। হেলথ সেন্টারে যেও কেমন, তখন দেবো। কিনে রাখবো তোমার জন্য। এখন তো নেই, থাকলে দিতাম।”
“দরকার নেই। আমি চকোলেট খাই না। আর ফাদার না অনুমতি দিলে আমি হেলথ সেন্টারে যেতে পারব না!”
“ফাদারের প্রতি তোমার এত টান? এই যে তুমি বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছ, ফাদার কিছু বলেন না? তুমি ফাদারকে আগে থেকে জানাও? অনুমতি নাও?”
“ফাদার সব জানেন। রোজ আমি ফাদারকে পরের দিন কী করব বলে যাই। না-জানার কী আছে?” নুনিয়ার গলায় সামান্য অসহিষ্ণুতার সুর।
“তুমি রাগ করছ নুনিয়া? আমি কিন্তু ওই ভাবে বলতে চাইনি!”
“আমি রাগ করি না। সবাই আমার উপরেই রাগ করে!” নুনিয়ার গলা আশ্চর্য রকম শান্ত।
“ফাদারও করেন?”
“ফাদার করেন না। ফাদার ভালোবাসেন।”
“নুনিয়া, তুমি কী আমাকে বুধন মাহাতোর ব্যাপারে কিছু হেল্প করবে?”
সত্যব্রত হাঁটছেন আর থেকে থেকে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কথা বলে চলেছেন। এখনও কেউ দেখেনি, দেখলে যে কী আছে তাঁর কপালে কে জানে?
“বুধন!” কেমন দিশেহারা শোনায় নুনিয়ার গলা, “ভাই তো মরে গিয়েছে!”
আরও পড়ুন:
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-২: একলা চলো রে…
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৬: রবীন্দ্রনাথ চা নয়, প্রতিদিন সকালে কফি খেতেন
আহা রে! মনটা খারাপ হয়ে গেল নুনিয়ার আক্ষেপোক্তি শুনে। বুধনের মৃত্যু মেয়েটিকে গভীর ভাবে স্পর্শ করেছে, বোঝাই যায়। করাটাই স্বাভাবিক। বেঁচে থাকার শেষ কিছু দিন নুনিয়াই তো ছিল তার সর্বক্ষণের খেলার সঙ্গী।
সত্যব্রত বললেন, “সেই সেই মরে যাওয়া তো নর্মাল ডেথ নয়। তুমি জানো সেটা। তুমি কি চাও না, ভাই কীভাবে মারা গেল তা জানতে?”
নুনিয়া চুপ করে থাকল।
“কী হল, বল? চাও না?”
“আমি তো জানি কীভাবে মারা গিয়েছে!” নুনিয়া ম্রিয়মান গলায় উত্তর দিল।
“মানে ? তুমি জানো?”
“হ্যাঁ, যেদিন মারা গেছে সেদিনই জানি!”
“মানে কবে?”
“যেদিন হেলথ সেন্টারে সেই ছেলেটি ভর্তি হল, তার ওয়ান উইক আগে !”
“হোয়াট?” প্রায় চেঁচিয়ে উঠছিলেন সত্যব্রত। তিনি খুব অবাক হয়ে গিয়েছেন। এই মেয়েটি এক সপ্তাহ আগেই জানে যে, বুধন আর নেই! তা সত্ত্বেও কাউকে বলে নি কিছু। কেন ?
“তুমি জানতে ? তাহলে কাউকে বলনি কেন?”
নুনিয়া চুপ করে থাকল। কোন জবাব দিল না।
“নুনিয়া?”
নুনিয়া এবারেও নিশ্চুপ। সত্যব্রত প্রশ্নটা অন্যভাবে করলেন, “ওটা বাদ দাও। তাহলে যে ছেল্টি বুধন নাম নিয়ে হেলথ্ সেন্টারে ভর্তি হয়েছিল, সে যে বুধন নয়, তুমি জানতে?”
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল নুনিয়া।
“তাহলে কেন গিয়েছিলে তাকে দেখতে? আমি যখন তাকে চেক-আপ করছিলাম তুমি জানালা দিয়ে তাকে দেখছিলে, সেটা আমি দেখেছি।”
“ও কে আমি সেটা বুঝতে চাইছিলাম। বুধনের মতো খানিকটা, কিন্তু বুধন নয়!”
চমকে উঠলেন সত্যব্রত। মেয়েটা তাহলে সেদিনই সত্যিটা জানত? তাহলে নুনিয়া যা জানে, সেই সত্যটা রথীনবাবু জানতেন না তা কীভাবে সম্ভব? বুধনের বাবা-মা তাঁর বিশেষ পরিচিত, আর তিনি কি না নকল বুধনকে দেখে চিনতে পারলেন না? অথচ এই বাচ্চা মেয়েটি তাকে চিনতে পারল? এই ব্যাপারটা তাঁর কি রকম অবিশ্বাস্য লাগছে!
“নুনিয়া, তুমি রথীনবাবুকে চেনো?”
নুনিয়া জবাব দেওয়ার আগেই কে একজন চেঁচিয়ে উঠল, “অ্যাই নুনিয়া, তুই ডাগতার বাবুর সঙ্গে কী এত কথা বুলছিস রে?”
নুনিয়া চমকে উঠল। সত্যব্রতও।—চলবে।
সত্যব্রত বললেন, “সেই সেই মরে যাওয়া তো নর্মাল ডেথ নয়। তুমি জানো সেটা। তুমি কি চাও না, ভাই কীভাবে মারা গেল তা জানতে?”
নুনিয়া চুপ করে থাকল।
“কী হল, বল? চাও না?”
“আমি তো জানি কীভাবে মারা গিয়েছে!” নুনিয়া ম্রিয়মান গলায় উত্তর দিল।
“মানে ? তুমি জানো?”
“হ্যাঁ, যেদিন মারা গেছে সেদিনই জানি!”
“মানে কবে?”
“যেদিন হেলথ সেন্টারে সেই ছেলেটি ভর্তি হল, তার ওয়ান উইক আগে !”
“হোয়াট?” প্রায় চেঁচিয়ে উঠছিলেন সত্যব্রত। তিনি খুব অবাক হয়ে গিয়েছেন। এই মেয়েটি এক সপ্তাহ আগেই জানে যে, বুধন আর নেই! তা সত্ত্বেও কাউকে বলে নি কিছু। কেন ?
“তুমি জানতে ? তাহলে কাউকে বলনি কেন?”
নুনিয়া চুপ করে থাকল। কোন জবাব দিল না।
“নুনিয়া?”
নুনিয়া এবারেও নিশ্চুপ। সত্যব্রত প্রশ্নটা অন্যভাবে করলেন, “ওটা বাদ দাও। তাহলে যে ছেল্টি বুধন নাম নিয়ে হেলথ্ সেন্টারে ভর্তি হয়েছিল, সে যে বুধন নয়, তুমি জানতে?”
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল নুনিয়া।
“তাহলে কেন গিয়েছিলে তাকে দেখতে? আমি যখন তাকে চেক-আপ করছিলাম তুমি জানালা দিয়ে তাকে দেখছিলে, সেটা আমি দেখেছি।”
“ও কে আমি সেটা বুঝতে চাইছিলাম। বুধনের মতো খানিকটা, কিন্তু বুধন নয়!”
চমকে উঠলেন সত্যব্রত। মেয়েটা তাহলে সেদিনই সত্যিটা জানত? তাহলে নুনিয়া যা জানে, সেই সত্যটা রথীনবাবু জানতেন না তা কীভাবে সম্ভব? বুধনের বাবা-মা তাঁর বিশেষ পরিচিত, আর তিনি কি না নকল বুধনকে দেখে চিনতে পারলেন না? অথচ এই বাচ্চা মেয়েটি তাকে চিনতে পারল? এই ব্যাপারটা তাঁর কি রকম অবিশ্বাস্য লাগছে!
“নুনিয়া, তুমি রথীনবাবুকে চেনো?”
নুনিয়া জবাব দেওয়ার আগেই কে একজন চেঁচিয়ে উঠল, “অ্যাই নুনিয়া, তুই ডাগতার বাবুর সঙ্গে কী এত কথা বুলছিস রে?”
নুনিয়া চমকে উঠল। সত্যব্রতও।—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।