অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
কাপাডিয়া বললেন, “দেখুন, আমি নানা ঘাটের জল খেয়ে এখানে এসে ভিড়েছি। এই জায়গাতেও যে বেশি দিন স্টে করব, তা কিন্তু নয়। সিল না লাগলে অন্য কোথাও ভালো অফার পেলে নির্দ্বিধায় চলে যাব। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, মালিক আমাকে বেওসার তিরিশ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার করেছেন। আমার নিজের পুঁজি তেমন তো কিছু ছিল না। আমি মালিক বনতে চাইওনি। মালিক নিজে থেকে জোর করে করে দিলেন। বললেন, নিজের ভাগ না থাকলে বেওসাকে অপরের মনে হবে, তখন ধেয়ান দুসরা সিকে চলে যাবে। তা কথাটা ভুল কিছু বলেননি। আমিও এই বেওসার মালিক। তবে এই কথাটা যেন আখানকার কোন কর্মচারী না জানে। তাহলে তারা আর আমাকে মানবে না। মালিক থাকতে ম্যানেজারের কথা কে শোনে? আর আমার ফ্যামিলির ব্যাপারে সব তো বললাম। হাজারিবাগে আছে তারা। এখানেও এসেছে এক বার। মালিককে পুছ করেই এনেছিলাম। অফ সিজনে। তা এত নির্জন জংলি জায়গা তাদের ভালো লাগবে কেন? দু’দিন যেতে না যেতেই হাজারিবাগ ফিরে গিয়েছে। আজ ফোনে সব জানাতে আমার ওয়াইফ বলল কী, সব ছোড়কে ঘর ওয়াপস আ যাও! সত্যি, আজ প্রথম আমার মনে হচ্ছে, এখানে থাকতে থাকতে বেঘোরে প্রাণটা না গেলেই বাঁচি!”
শাক্য বলল, “আপনি কী প্রাণের আশঙ্কা করছেন মিঃ কাপাডিয়া?”
“করছি না কীভাবে বলি মিঃ সিংহ! যে দু’জন মারা গেল, তারা তো কেউ মরে যাওয়ার জন্য এখানে আসেনি! একজন এসেছিল পাপী পেটের দায়ে, আর একজন মৌজ-মস্তি করতে এসেছিল। কিন্তু কী হল? কালাদেও তাদের টেনে নিল, কোয়ি ভুলচুক হয়, তাও মানা যায়, কিন্তু তাদের কী দোষ তাও তারা জানতে পারল না! নাহ্, আমি ভাবছি এই নৌকরি আমি করব না, ছেড়ে দেব। তাতে যা হয় হোক। দু’দিন পরে ঠিক আর একটা কোন নৌকরি জুটে যাবে!”
“আমি বলছি, এখনই আপনি কোন হঠকারি সিদ্ধান্ত নেবেন না। দেখুন না, কী হয়। তদন্ত তো চলছে। আচ্ছা, এই রায়বাবুকে কি আগে থেকেই চিনতেন? যার দরুন চাকরিটা আপনিই পেয়েছিলেন, উপরন্তু তিরিশ শতাংশের শেয়ার…?”
“কী বলছেন আপনি সিংহবাবু! নিউজ পেপারে অ্যাড দেখে দস্তুর মতো অ্যাপ্লাই করেছিলাম, ইন্টারভিউও হয়। তারপর শর্ট লিস্টেড পাঁচ জনের মধ্যে আমার নাম নির্বাচিত হয়, ফলে আমিই চাকরিটা পাই।”
“ইন্টারভিউ কোথায় হয়েছিল?”
“কলকাতায়?” বলেই কাপাডিয়া বললেন, “কী ব্যাপার কী আপনার মিঃ সিংহ? আপনি কি আমাকেই সাসপেক্ট করছেন? মানে আমি নিজেই নিজের পায়ে কুড়ুল মারবার ফন্দি করেছি? আরে ভুলে যাবেন না, আমি চাই বা না-চাই, এই রিসর্টের তিরিশ শতাংশের শেয়ার আমার নামে। এর ক্ষতি মানে আমারও বড়সড় ক্ষতি!”
শাক্য তাঁর কথার জবাব দিল না। সুদীপ্ত বলল, “আঃ! কাপাডিয়া, আপনি অযথা কথা বলে আমাদের সময় নষ্ট করছেন!”
“করছি না কীভাবে বলি মিঃ সিংহ! যে দু’জন মারা গেল, তারা তো কেউ মরে যাওয়ার জন্য এখানে আসেনি! একজন এসেছিল পাপী পেটের দায়ে, আর একজন মৌজ-মস্তি করতে এসেছিল। কিন্তু কী হল? কালাদেও তাদের টেনে নিল, কোয়ি ভুলচুক হয়, তাও মানা যায়, কিন্তু তাদের কী দোষ তাও তারা জানতে পারল না! নাহ্, আমি ভাবছি এই নৌকরি আমি করব না, ছেড়ে দেব। তাতে যা হয় হোক। দু’দিন পরে ঠিক আর একটা কোন নৌকরি জুটে যাবে!”
“আমি বলছি, এখনই আপনি কোন হঠকারি সিদ্ধান্ত নেবেন না। দেখুন না, কী হয়। তদন্ত তো চলছে। আচ্ছা, এই রায়বাবুকে কি আগে থেকেই চিনতেন? যার দরুন চাকরিটা আপনিই পেয়েছিলেন, উপরন্তু তিরিশ শতাংশের শেয়ার…?”
“কী বলছেন আপনি সিংহবাবু! নিউজ পেপারে অ্যাড দেখে দস্তুর মতো অ্যাপ্লাই করেছিলাম, ইন্টারভিউও হয়। তারপর শর্ট লিস্টেড পাঁচ জনের মধ্যে আমার নাম নির্বাচিত হয়, ফলে আমিই চাকরিটা পাই।”
“ইন্টারভিউ কোথায় হয়েছিল?”
“কলকাতায়?” বলেই কাপাডিয়া বললেন, “কী ব্যাপার কী আপনার মিঃ সিংহ? আপনি কি আমাকেই সাসপেক্ট করছেন? মানে আমি নিজেই নিজের পায়ে কুড়ুল মারবার ফন্দি করেছি? আরে ভুলে যাবেন না, আমি চাই বা না-চাই, এই রিসর্টের তিরিশ শতাংশের শেয়ার আমার নামে। এর ক্ষতি মানে আমারও বড়সড় ক্ষতি!”
শাক্য তাঁর কথার জবাব দিল না। সুদীপ্ত বলল, “আঃ! কাপাডিয়া, আপনি অযথা কথা বলে আমাদের সময় নষ্ট করছেন!”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫২: অতীতের কয়েক পৃষ্ঠা
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৮: পুরীতে ‘নির্জন সৈকতে’র শুটিংয়ে একসঙ্গে চার চারটি শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলেন ছায়া দেবী
কাপাডিয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “আমি জাস্ট আমার দিল কী বাত এক্সপ্রেস করছিলাম স্যার!”
“আচ্ছা, আপনার ইন্টারভিউ কলকাতায় হয়েছিল বলছেন, কোথায় হয়েছিল?” শাক্য জিজ্ঞাসা করল।
“শিয়ালদার কাছে একটা হোটেলে। দু’জন ছিলেন, রায়বাবু অ্যান্ড হিজ পিএ! রায়বাবুকে বার তিনেক মিট করেছি। বেশিরভাগ সময়েই তো বিদেশে থাকেন। ওখানেও কী বেওসা আছে। তবে পিএ ভদ্রমহিলা একবার এখানে এসেছিলেন। সম্ভবত মুসলিম, হিজাব পহেনকে থাকেন!”
“রায়বাবু?”
“বাঙালি। তবে ধরম কী তা জানি না। খ্রিস্টান হতে পারে, হিন্দুও। আবার মুসলিম হলেও হতে পারেন!”
শাক্য হাসল, “বাঃ! আপনি একেবারে ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’ কেস করে তুললেন। যেভাবে বললেন, তাতে রায়বাবুকে আমার পরমহংস বলে মনে হচ্ছে। তা আপনার রায়বাবুকে জানিয়েছেন আজকের মিসহ্যাপের কথা?”
“আজ্ঞে, মেসেজ করেছি। এখনও সিন করেননি। কবে খেয়াল হবে সিন করবেন। তবে ম্যাড্যামকে সেন্ট করেছি। জানি না রিপ্লাই দিয়েছেন কি না!”
“ম্যাডাম?”
“পিএ-এর কথা বলছি।”
“রায়বাবুর তাহলে এই ব্যবসার প্রতি তেমন মন নেই বলুন? তা না হলে এত দূরে আছেন, এখন তো মেসেজেরই যুগ। তা তিনি যদি দিনের পর দিন মেসেজ সিন না করেন, ব্যাবসা তো শিগগিরই লাটে উঠবে!”
“আজ্ঞে, ম্যাডাম সিন করেন। রিপ্লাই দিতে দেরিও করেন না। এতক্ষণে হয়তো রিপ্লাই করেও দিয়েছেন। তবে কিছুদিন আগে বলছিলেন, স্ক্যানডিনেভিয়া না কোথায় থাকবেন, এই বছর হয়তো আর ইন্ডিয়াতে আসা হবে না। ওখানে বড় একটা বিজনেস ডিলের কথা চলছে।”
“ওহ্!” সুদীপ্ত প্রতিক্রিয়া দিল।
“আচ্ছা, আপনার ইন্টারভিউ কলকাতায় হয়েছিল বলছেন, কোথায় হয়েছিল?” শাক্য জিজ্ঞাসা করল।
“শিয়ালদার কাছে একটা হোটেলে। দু’জন ছিলেন, রায়বাবু অ্যান্ড হিজ পিএ! রায়বাবুকে বার তিনেক মিট করেছি। বেশিরভাগ সময়েই তো বিদেশে থাকেন। ওখানেও কী বেওসা আছে। তবে পিএ ভদ্রমহিলা একবার এখানে এসেছিলেন। সম্ভবত মুসলিম, হিজাব পহেনকে থাকেন!”
“রায়বাবু?”
“বাঙালি। তবে ধরম কী তা জানি না। খ্রিস্টান হতে পারে, হিন্দুও। আবার মুসলিম হলেও হতে পারেন!”
শাক্য হাসল, “বাঃ! আপনি একেবারে ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’ কেস করে তুললেন। যেভাবে বললেন, তাতে রায়বাবুকে আমার পরমহংস বলে মনে হচ্ছে। তা আপনার রায়বাবুকে জানিয়েছেন আজকের মিসহ্যাপের কথা?”
“আজ্ঞে, মেসেজ করেছি। এখনও সিন করেননি। কবে খেয়াল হবে সিন করবেন। তবে ম্যাড্যামকে সেন্ট করেছি। জানি না রিপ্লাই দিয়েছেন কি না!”
“ম্যাডাম?”
“পিএ-এর কথা বলছি।”
“রায়বাবুর তাহলে এই ব্যবসার প্রতি তেমন মন নেই বলুন? তা না হলে এত দূরে আছেন, এখন তো মেসেজেরই যুগ। তা তিনি যদি দিনের পর দিন মেসেজ সিন না করেন, ব্যাবসা তো শিগগিরই লাটে উঠবে!”
“আজ্ঞে, ম্যাডাম সিন করেন। রিপ্লাই দিতে দেরিও করেন না। এতক্ষণে হয়তো রিপ্লাই করেও দিয়েছেন। তবে কিছুদিন আগে বলছিলেন, স্ক্যানডিনেভিয়া না কোথায় থাকবেন, এই বছর হয়তো আর ইন্ডিয়াতে আসা হবে না। ওখানে বড় একটা বিজনেস ডিলের কথা চলছে।”
“ওহ্!” সুদীপ্ত প্রতিক্রিয়া দিল।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১১: স্বর্ণকুমারী দেবী— ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী
শাক্য বলল, “আচ্ছা মিঃ কাপাডিয়া, অনিবাবুকে দেখে কী রকম মনে হয়েছিল আপনার?”
“কীরকম মনে হবে? বেশ মজাদার মানুষ। মস্তি করতে ভালোবাসেন। পার্টির প্রস্তাব নিয়ে তিনিই আমার কাছে এসেছিলেন, সঙ্গে আর্য বাবু, মানে যিনি মিসিং আছেন, তিনি ছিলেন। তবে কথা বলছিলেন অনিলবাবুই। আর্যবাবু চুপ করে বসেছিলেন। ওনার চোখের পাওয়ার খুব বেশি, ফলে সারাক্ষণ মোটা কাঁচের ঘোলাটে চশমা পরে থাকেন। বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কার দিকে তাকিয়ে আছেন !”
শাক্য উঠে বসল, “কী বললেন, আর্য বেশি পাওয়ারওয়ালা মোটা কাঁচের চশমা পরেন?”
সুদীপ্ত অবাক হল, বেশি পাওয়ারের চশমা পরা কী অপরাধ না কি? বিচিত্র তো এই গোয়েন্দা শাক্য সিংহ! এত নাম শুনেছে সে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওভাররেটেড।
কাপাডিয়া জবাব দিল, “হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম এমনিই। তাতে তিনিই বললেন, তাঁর চোখের পাওয়ার খুব বেশি, ফলে প্রায় সবসময়েই তাঁকে চশমা পরে থাকতে হয়!”
“স্ট্রেঞ্জ!” শাক্য আপনমনে বলল। কথাটা সকলের কানে গেল বলে মনে হয় না।
সুদীপ্ত বলল, “আচ্ছা মিঃ কাপাডিয়া, আপনাদের রিসর্টে সব মিলয়ে কর্মচারী ক’জন?”
কাপাডিয়া বললেন, আজ্ঞে একজন কুক হ্যায় রসুই কে লিয়ে, আর একজন হেল্পার। একজন সাফসুতরা করত, রুম্-বয়ের কাজও করত, সুবল—সে তো আর নেই। মালি আছে একজন। তারই আঠারো-উনিশ বছরের ছেলেটি এখন রুম্-বয়ের কাজ করে, তবে বেশিদিন নয়। কিছুদিন, এই ধরুন মাস চারেক হল। তবে বেশ চটপটে ছেলে। পড়া-লিখা ভি জানে থোড়া বহুত। এই লাইনে দাঁড়িয়ে যাবে!”
সুদীপ্ত বলল, “তার মানে মোট পাঁচ জন ছিল। সুবল নেই। তার মানে চারজন আছে। এত কম লোক নিয়ে কাজ চলে?”
কাপাডিয়া বলল, “না না, লোকাল লোক দু’জন আসে। তারা অবশ্য ঠিকে কাজের লোক। সকালে আসে, বিকেলে কাজ করে চলে যায়। সন্ধ্যের পর তারা থাকে না।”
শাক্য বলল, “আশা করি তারা সকলেই আছে। আই মিন সুবল ছাড়া?”
“হ্যাঁ। সকলেই আছে। তবে আমার মনে হয় না, তারা কিছু জানে বলে। সবাই অভাবী মানুষ। কাজের ধান্দায় এতদূরে পড়ে আছে। খামোকা খুনজখম করে নিজেদের পেতে লাথি মারবে কেউ এমন বুরবাক নয়! আমার রিকোয়েস্ট তদন্তের নামে এমন কিছু করবেন না, যাতে তারা কাজ ছেড়ে চলে যায়। তাহলে খুব বিপদে পড়ব। মালিকের কাছে জবাবদিহি আমাকেই করতে হবে। এই রিসর্টকে অনেক কিছু করে দাঁড় করাতে হয়েছে। ব্লগারদের দিয়ে রিভিউ লিখে দিনের পর দিন প্রোমোশনের কাজ করতে হয়েছে! তার পরেও যদি এই অবস্থা দাঁড়ায়…!” আশঙ্কা ও আক্ষেপের সুর ঝরে পড়ল কাপাডিয়ার গলায়।
“পেটের দায়ের পরেও আরো কিছু দায় থেকে যায় মি.কাপাডিয়া। আর কী বললেন, এই রিসর্টকে দাঁড় করানোর জন্য পেইড ব্লগারদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল?”
“আজ্ঞে, কিন্তু সেটা অপরাধ নয় কোন, আজকাল এই বিজনেসে সকলেই এর সাহায্য নেয়!”
“হ্যাঁ, আমি জানি। আমি জানতে চাইছি, কোন ব্লগারকে আপনি অ্যাপয়েন্ট করেছিলেন মনে আছে?”
“আজ্ঞে, আমি তো করিনি! রায়বাবুর চেনা লোক সম্ভবত, ম্যাডামের অন্তত চেনা লোক। ওনারা নিজেরাই ওই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমার কাজ রেজিস্টারি বুক ঠিক রাখা, রিসর্টের কাজকর্ম ঠিকভাবে চলছে কি না তার তদারক করা—বাকি সব কিছু ওনারাই সামলে নেন!”
“কীরকম মনে হবে? বেশ মজাদার মানুষ। মস্তি করতে ভালোবাসেন। পার্টির প্রস্তাব নিয়ে তিনিই আমার কাছে এসেছিলেন, সঙ্গে আর্য বাবু, মানে যিনি মিসিং আছেন, তিনি ছিলেন। তবে কথা বলছিলেন অনিলবাবুই। আর্যবাবু চুপ করে বসেছিলেন। ওনার চোখের পাওয়ার খুব বেশি, ফলে সারাক্ষণ মোটা কাঁচের ঘোলাটে চশমা পরে থাকেন। বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কার দিকে তাকিয়ে আছেন !”
শাক্য উঠে বসল, “কী বললেন, আর্য বেশি পাওয়ারওয়ালা মোটা কাঁচের চশমা পরেন?”
সুদীপ্ত অবাক হল, বেশি পাওয়ারের চশমা পরা কী অপরাধ না কি? বিচিত্র তো এই গোয়েন্দা শাক্য সিংহ! এত নাম শুনেছে সে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওভাররেটেড।
কাপাডিয়া জবাব দিল, “হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম এমনিই। তাতে তিনিই বললেন, তাঁর চোখের পাওয়ার খুব বেশি, ফলে প্রায় সবসময়েই তাঁকে চশমা পরে থাকতে হয়!”
“স্ট্রেঞ্জ!” শাক্য আপনমনে বলল। কথাটা সকলের কানে গেল বলে মনে হয় না।
সুদীপ্ত বলল, “আচ্ছা মিঃ কাপাডিয়া, আপনাদের রিসর্টে সব মিলয়ে কর্মচারী ক’জন?”
কাপাডিয়া বললেন, আজ্ঞে একজন কুক হ্যায় রসুই কে লিয়ে, আর একজন হেল্পার। একজন সাফসুতরা করত, রুম্-বয়ের কাজও করত, সুবল—সে তো আর নেই। মালি আছে একজন। তারই আঠারো-উনিশ বছরের ছেলেটি এখন রুম্-বয়ের কাজ করে, তবে বেশিদিন নয়। কিছুদিন, এই ধরুন মাস চারেক হল। তবে বেশ চটপটে ছেলে। পড়া-লিখা ভি জানে থোড়া বহুত। এই লাইনে দাঁড়িয়ে যাবে!”
সুদীপ্ত বলল, “তার মানে মোট পাঁচ জন ছিল। সুবল নেই। তার মানে চারজন আছে। এত কম লোক নিয়ে কাজ চলে?”
কাপাডিয়া বলল, “না না, লোকাল লোক দু’জন আসে। তারা অবশ্য ঠিকে কাজের লোক। সকালে আসে, বিকেলে কাজ করে চলে যায়। সন্ধ্যের পর তারা থাকে না।”
শাক্য বলল, “আশা করি তারা সকলেই আছে। আই মিন সুবল ছাড়া?”
“হ্যাঁ। সকলেই আছে। তবে আমার মনে হয় না, তারা কিছু জানে বলে। সবাই অভাবী মানুষ। কাজের ধান্দায় এতদূরে পড়ে আছে। খামোকা খুনজখম করে নিজেদের পেতে লাথি মারবে কেউ এমন বুরবাক নয়! আমার রিকোয়েস্ট তদন্তের নামে এমন কিছু করবেন না, যাতে তারা কাজ ছেড়ে চলে যায়। তাহলে খুব বিপদে পড়ব। মালিকের কাছে জবাবদিহি আমাকেই করতে হবে। এই রিসর্টকে অনেক কিছু করে দাঁড় করাতে হয়েছে। ব্লগারদের দিয়ে রিভিউ লিখে দিনের পর দিন প্রোমোশনের কাজ করতে হয়েছে! তার পরেও যদি এই অবস্থা দাঁড়ায়…!” আশঙ্কা ও আক্ষেপের সুর ঝরে পড়ল কাপাডিয়ার গলায়।
“পেটের দায়ের পরেও আরো কিছু দায় থেকে যায় মি.কাপাডিয়া। আর কী বললেন, এই রিসর্টকে দাঁড় করানোর জন্য পেইড ব্লগারদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল?”
“আজ্ঞে, কিন্তু সেটা অপরাধ নয় কোন, আজকাল এই বিজনেসে সকলেই এর সাহায্য নেয়!”
“হ্যাঁ, আমি জানি। আমি জানতে চাইছি, কোন ব্লগারকে আপনি অ্যাপয়েন্ট করেছিলেন মনে আছে?”
“আজ্ঞে, আমি তো করিনি! রায়বাবুর চেনা লোক সম্ভবত, ম্যাডামের অন্তত চেনা লোক। ওনারা নিজেরাই ওই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমার কাজ রেজিস্টারি বুক ঠিক রাখা, রিসর্টের কাজকর্ম ঠিকভাবে চলছে কি না তার তদারক করা—বাকি সব কিছু ওনারাই সামলে নেন!”
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৩: সারদা মায়ের দার্শনিক দৃষ্টি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৯: কবির ভালোবাসার পশুপাখি
“বাহ্! যাক্, সুবলের শরীর-স্বাস্থ্য কেমন ছিল?”
“ভালোই। অসুখ-বিসুখে পড়তে দেখিনি এখানে যতদিন হল এসেছিল। এমনকি পেট খারাপও নয়। বাজার-হাটের দিকে ওই তো যেত। সব কাজ নিখুঁতভাবে সামলে নিত। একটাই দোষ বলতে পারেন, পার্টির কাছে টিপস্টা একটু বেশি চাইত। ওটাই ওর দুর্বলতা। তা আমি দেখেও দেখতাম না। বেওসায় সব কিছু দেখতে নেই। কিছু কিছু অন্যায়ের সময় চোখ বন্ধ করে থাকতে হয়। তা না হলে বেওসা চলে না ! তাছাড়া, সুবল টিপস্ বেশি নিলেও সেটা জমা পড়ত এক জায়গায়। সপ্তাহান্তে তা সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হত। সুবল কখনও এই নিয়ে আপত্তি তোলেনি। কর্মচারীদের সকলে তাকে এই কারণে পছন্দও করত। সে এখানে মাত্রই মাস তিনেক হল জয়েন করেছিল। কিন্তু তার কাজ নিখুঁত ছিল বলে আমার বড় ভরসা হয়ে উঠেছিল। রায়বাবুকেও রিপোর্ট পাঠিয়েছিলাম, তাতে তিনি তৃতীয় মাসেই তার স্যালারি কিছু বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।”
“ওর বাড়ি কোথায়? বিবাহিত?”
“নদীয়ার কোথাও। শুনেছি, বিবাহ করেছিল, কিন্তু বউয়ের সঙ্গে বনিবনা নেই!”
“তাহলে তার ডেথের ব্যাপারে কাউকে জানাবেন না?”
“যখন জয়েন করেছিল, তখন একটা ঠিকানা আর আধারকার্ডের কপি দিয়েছিল, সেই ঠিকানাতেই জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর ওর ফোনে যদি বাড়ির নাম্বার থাকে। নিশ্চইয়ই আছে। তবে ফোন তো এখন পুলিশ সিজ করেম নিয়েছে। তা অফিসার যদি জানিয়ে দেন সেখান থেকে নাম্বার নিয়ে… !” বলে কাপাডিয়া সুদীপ্তের দিকে তাকালেন।
সুদীপ্ত ঘাড় নাড়ল। জানিয়ে দেবে সে।
“আর যদি কুছ পুছতাছ বাকি না থাকে, আমি এবার যাই? সকাল থেকে রসুইয়ের সারা কাম পড়ে। বোর্ডারদের ব্রেকফাস্ট অবধি সার্ভ করা হয়নি আজ। এখন লাঞ্চের জোগাড় যদি না করি, তাহলে প্রবলেম হয়ে যাবে!”
“এত বেলায় এখন লাঞ্চের ব্যবস্থা করবেন? বিকেল গড়িয়ে যাবে তো লাঞ্চ খেতে?”
“আজ্ঞে না, অন্য হোটেল থেকে কাহাব্র আনানোর ব্যবস্থা করেছি। এই অবস্থায় কুকের উপর ভরসা করিনি !”
শাক্য চমৎকৃত হল। সত্যিই পাকা বিজনেসম্যান কাপাডিয়া। রায়বাবু যোগ্য লোককেই তিরিশ শতাংশের শেয়ার হোল্ডার করেছেন।—চলবে।
“ভালোই। অসুখ-বিসুখে পড়তে দেখিনি এখানে যতদিন হল এসেছিল। এমনকি পেট খারাপও নয়। বাজার-হাটের দিকে ওই তো যেত। সব কাজ নিখুঁতভাবে সামলে নিত। একটাই দোষ বলতে পারেন, পার্টির কাছে টিপস্টা একটু বেশি চাইত। ওটাই ওর দুর্বলতা। তা আমি দেখেও দেখতাম না। বেওসায় সব কিছু দেখতে নেই। কিছু কিছু অন্যায়ের সময় চোখ বন্ধ করে থাকতে হয়। তা না হলে বেওসা চলে না ! তাছাড়া, সুবল টিপস্ বেশি নিলেও সেটা জমা পড়ত এক জায়গায়। সপ্তাহান্তে তা সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হত। সুবল কখনও এই নিয়ে আপত্তি তোলেনি। কর্মচারীদের সকলে তাকে এই কারণে পছন্দও করত। সে এখানে মাত্রই মাস তিনেক হল জয়েন করেছিল। কিন্তু তার কাজ নিখুঁত ছিল বলে আমার বড় ভরসা হয়ে উঠেছিল। রায়বাবুকেও রিপোর্ট পাঠিয়েছিলাম, তাতে তিনি তৃতীয় মাসেই তার স্যালারি কিছু বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।”
“ওর বাড়ি কোথায়? বিবাহিত?”
“নদীয়ার কোথাও। শুনেছি, বিবাহ করেছিল, কিন্তু বউয়ের সঙ্গে বনিবনা নেই!”
“তাহলে তার ডেথের ব্যাপারে কাউকে জানাবেন না?”
“যখন জয়েন করেছিল, তখন একটা ঠিকানা আর আধারকার্ডের কপি দিয়েছিল, সেই ঠিকানাতেই জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর ওর ফোনে যদি বাড়ির নাম্বার থাকে। নিশ্চইয়ই আছে। তবে ফোন তো এখন পুলিশ সিজ করেম নিয়েছে। তা অফিসার যদি জানিয়ে দেন সেখান থেকে নাম্বার নিয়ে… !” বলে কাপাডিয়া সুদীপ্তের দিকে তাকালেন।
সুদীপ্ত ঘাড় নাড়ল। জানিয়ে দেবে সে।
“আর যদি কুছ পুছতাছ বাকি না থাকে, আমি এবার যাই? সকাল থেকে রসুইয়ের সারা কাম পড়ে। বোর্ডারদের ব্রেকফাস্ট অবধি সার্ভ করা হয়নি আজ। এখন লাঞ্চের জোগাড় যদি না করি, তাহলে প্রবলেম হয়ে যাবে!”
“এত বেলায় এখন লাঞ্চের ব্যবস্থা করবেন? বিকেল গড়িয়ে যাবে তো লাঞ্চ খেতে?”
“আজ্ঞে না, অন্য হোটেল থেকে কাহাব্র আনানোর ব্যবস্থা করেছি। এই অবস্থায় কুকের উপর ভরসা করিনি !”
শাক্য চমৎকৃত হল। সত্যিই পাকা বিজনেসম্যান কাপাডিয়া। রায়বাবু যোগ্য লোককেই তিরিশ শতাংশের শেয়ার হোল্ডার করেছেন।—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।