শনিবার ১৭ মে, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

কিন্তু মৃদুলের উপস্থিতি সত্বেও কৃষ্ণেন্দুর মধ্যে কোন বিকার নেই! সে বম্বেতে চেষ্টা করল! খুব কষ্ট করে ছটা মাস চালানোর পর আবার কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হল। অভিনেতা অভিনেত্রী হিসেবে বোম্বেতে সুযোগটা পেলেও টেকনিশিয়ান হিসেবে বম্বেতে ঢুকতে পারা খুবই শক্ত। কৃষ্ণেন্দু পারলো না কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হল! শ্রেয়সীর সঙ্গে মৃদুলের সম্পর্কের কথা তার কানে এসেছে! কিন্তু কৃষ্ণেন্দু একেবারে অন্যধরনের মানুষ। সে কোনভাবেই শ্রেয়সীর সঙ্গে যোগাযোগও করেনি, জবাবদিহিও চায়নি!
—আমি নিজে কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ করেছি। ওর সম্বন্ধে আমার ভুলধারণার জন্যে আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছি!
—কিছু মনে করবেন না মিস গুপ্তা, তার মানে আপনার সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু বাবুর আবার মিটমাট হয়ে গিয়েছে।
—আপনার তদন্তের জন্য এটা জানা কি খুব প্রয়োজনীয়? হ্যাঁ হয়ে গেছে। আসলে আমি আমার পার্সপেক্টিভ থেকে ভাবছিলাম। কিন্তু আমার কথাতে আমার ব্যবহারে ওর মেল ইগো হার্ট হচ্ছিল এটা বুঝতে পারিনি। লেখার কাজটাই ও পারে, লেখার কাজটা ও ভালোবাসে সেটাই করতে চায়। কিন্তু যেকোনও কারণেই হোক সেখানে এখনও কোন ফল আসেনি, যা এসেছে সেটা যৎসামান্য। ওকে আরও একটু সময় দেওয়া উচিত। সেটা আমি দিচ্ছিলাম না আমার ভুলটা সেখানে। আমি কৃষ্ণেন্দুর কাজকে শ্রদ্ধা করি, ওর জন্য আমি অপেক্ষা করবো।
এতটা শোনার পর ধৃতিমান বেশ কনফিউজড। এই প্রথম ধৃতিমানের অনুসন্ধিৎসু মন বেশ একটু ধন্ধে পড়েছে – মৃদুল সাহার ড্রাগ ওভারডোজ-এ মৃত্যু হয়েছে এটা ধরে নিয়ে লোকাল থানা, ক্লাব-ক্যান্টিনের বাসনপত্র কিছুই সিজ করেনি। মৃদুল জুস খাওয়ার পরেও বেশ খানিকক্ষণ স্বাভাবিক ছিল, মাঠে খেলতে নেমে বল করবার সময় হঠাৎ লুটিয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে পরীক্ষা করে ডাক্তার জানান মৃত্যু হয়েছে,পোস্টমর্টেম করে রক্তে ড্রাগের ওভারডোজ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১০: বনবাসী রামের নিরাসক্ত ভাবমূর্তির অন্তরালে, ভাবি রামরাজ্যের স্রষ্টা দক্ষ প্রশাসক রাম

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৪: ‘মহেশ্বরের অনন্ত ধৈর্য’

অফিসে কথা না বলে ধৃতিমানকে অ্যাস্টর হোটেলে ডেকেছিল একসপ্তাহ আগে প্রমোশন পাওয়া মাল্টিন্যাশানালের চীফ ম্যানেজার শ্রেয়সী গুপ্ত! শ্রেয়সী সরাসরি ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকালো!
—প্রেমে দাগা খেয়ে প্রেমিককে বিষ দিয়ে মারার মত বঙ্কিমি নায়িকা আমি নই! আমার পড়াশোনা আমার কাজের ধরনের সঙ্গে মৃদুল সাহার মতো লেখাপড়া না জানা একজন খেলোয়াড়ের কোনভাবেই মানসিক মিল হওয়ার কথা নয়। আমার সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুর ফ্রিকোয়েন্সি মেলে কৃষ্ণেন্দুর অগাধ পড়াশোনা ভাবনাচিন্তা একেবারে অন্যরকম। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার জীবনে পরিচিতি বা সাফল্য কোনটাই আসেনি। কেউ তার নাম জানে না কেউ তাকে চেনে না তাই কেউ পাত্তাও দেয় না। কিন্তু এতসবের পরেও লোকটার ব্রেন মেটেরিয়াল ওই লোকটারই থাকবে। এইমুহূর্তের খুব নামি নাট্যকার খুব নামি চিত্রনাট্যকার পরিচালক যাঁরা অন্যান্য অনেকগুলো ফ্যাক্টরের জন্য আজকে লাইমলাইটে রয়েছেন তাঁরা কেউই কৃষ্ণেন্দুর কাছ থেকে ওর মস্তিষ্কটা ছিনতাই করতে পারবে না। ওর ভাবনা চুরি করতে পারবে ওর লেখা চুরি করতে পারবে কিন্তু এট দ্য এন্ড অফ দা ডে কৃষ্ণেন্দু, কৃষ্ণেন্দুই থাকবে! হ্যাঁ ওর উপর ভীষণ রাগ হয়েছিল ছেলেমানুষী অভিমান হয়েছিল তাই আমি আমাদের কোম্পানির একটা টায়ার লঞ্চিং প্রোগ্রামে অনেক সেলিব্রেটির মধ্যে একজন ওই মৃদুল সাহাকে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু মৃদুল সাহার প্রোফাইল আমার খুব ভালো করে জানা এই ছেলেটি কার সঙ্গে কি করে বেড়ায় সকালে কার সঙ্গে ঘোরে দুপুরে কার সঙ্গে থাকে রাতে কোথায় যায় সবই জানতাম। আমি চেয়েছিলাম ওর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বাজারে চাউর হলে কৃষ্ণেন্দু আমার কাছে এসে আমাকে চার্জ করবে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭৭: গুগলি/১৩

আনফরচুনেটলি কৃষ্ণেন্দু সেই সময়টায় বোম্বেতে গিয়ে স্ট্রাগল করছিল, চেষ্টা করেছে পারেনি আবার কলকাতায় ফিরে এসেছে! আপনার কথা আমি আগেও শুনেছি আমি আর কৃষ্ণেন্দু আপনার পরিচালনার নাটকও দেখে এসেছি একাডেমিতে। আপনার ছবি দেখা হয়নি কিন্তু রিভিউ পড়েছি। ইদানিং কয়েকটা কেসে আপনার নামও জেনেছি খবরের কাগজ পড়ে। আপনার মতো একজন বুদ্ধিমান লোকের কেন মনে হল, যে আমি আমার এই অত্যন্ত লুক্রেটিভ চাকরিটার মায়া না করে – মৃদুল সাহার মতো একজন প্লেবয়কে খুন করবো?

ধৃতিমান বুঝলো সে এই প্রথম বুদ্ধির দৌড়ে একজন GEN-Z-এর কাছে হেরে গিয়েছে! তার কাছে পুরোটাই পরিষ্কার হয়ে গেল শবনম খুব ভালো করে জানে যে ড্রাগ ওভারডোস করার কোন প্রমাণ পুলিশের হাতে নেই। আর থাকলেও ড্রাগটা যে মৃত মৃদুল সাহা নিজে নেয়নি কেউ মিশিয়ে দিয়েছে সেটা প্রমাণ হবে কী করে?
আরও পড়ুন:

অসমের আলো অন্ধকার, পর্ব-৪৯: পান-সুপারি ছাড়া অসম্পূর্ণ অসমীয়া খাবারের থালি

পর্ব-১৪: আকাশ এখনও মেঘলা

প্রমাণ হবার উপায় আছে সেটার তিনটে পয়েন্ট এক শবনমের বাবা আই-সার্জেন ডাক্তার আলি হোসেন তিনি পুলিশের সঙ্গে কোনো রকম ঝামেলায় জড়িয়ে নিজের এতদিনের পশার ও প্রতিষ্ঠার ক্ষতি করতে চাইবেন না! দুই শবনমের মাঝবয়সী ড্রাইভার শবনম যে এখন কলকাতায় থাকবে না সেটা নিশ্চিত! কিন্তু মাসমাইনের ড্রাইভার নিশ্চয়ই বাড়িতে মজুত থাকবে তাকে তুলে এনে ধমক ধমক দিলে রাজস্থান ক্লাবে কবে কবে শবনম গিয়েছিল এখন আর যায় কিনা আগে কত ঘন ঘন যেত সব জানা যাবে। আর তিন নম্বর হল মৃদুলকে দেওয়া এই ড্রাগটা শবনম যোগাড় করলো কার কাছ থেকে? মাথা ঠান্ডা করে চোখ বোজালেই একটা নাম ভেসে আসে সেটা হল তার বাতিল হওয়া মেসো ফিরোজ!

চক্রবর্তী সাহেব এবং শ্রেয়াকে নিয়ে পুরো জিনিসটা হোয়াইট বোর্ডে বোঝালো ধৃতিমান তারপর জানালো এই প্রথম সে একেবারে গোল খেয়ে গেছে। বা বলা যায় শবনমের গুগলিতে ক্লিন্ বোল্ড হয়ে গেছে! চক্রবর্তী সাহেব কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন!
—ঘাবড়িও না চ্যাম্প, আমাদের টিমে বিরাট কোহলি আছে! গুগলি-ফুগলি দিয়ে কোন লাভ নেই সপাটে বাউন্ডারি টপকে গ্যালারির মাথায় ফেলে দেবে শ্রেয়া টেক অ্যাকশন!
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি

একবেলার মধ্যে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের সেলের দুটো ঘরে ড্রাইভার আর ফিরোজকে তুলে এনে দুটো থাপ্পড় দিতেই তারা গড়গড় করে সব স্বীকার করে ফেলল। এবার কানেক্টিং দ্য ডটসআগেই ডাঃ আলি হোসেনকে পুরো ব্যাপারটা চক্রবর্তী সাহেব সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমাদের হাতে সবরকম প্রমাণ আছে। সুতরাং সারা পৃথিবীর সেরা ল’ইয়ারদের নিয়ে জড়ো করলেও এই খুনের মামলা থেকে শবনমকে বাঁচাতে পারবেন না! শবনমকে বাঁচাবার ইচ্ছেও কারো ছিল না! তার মা বেঁচে থাকলে একটা কথা হতো – কিন্তু তার মাসি এবং তার বাবা দুজনেই শবনমকে নিয়ে জেরবার। শবনম মালদ্বীপ গিয়েছিল এক পয়সাওয়ালা পাঞ্জাবি প্রৌঢ়ের সঙ্গে শ্রেয়ার ধারণা ঠিকই ছিল শবনম কলকাতায় ঢুকবে না —এয়ারপোর্ট থেকে এসে অন্য ফ্লাইট নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে। এয়ারলাইন্স ইন্টেলিজেন্সকে জানানো হয়েছিল। এয়ারপোর্টের ভিতরেই বাগডোগরার ফ্লাইটে চেকিং করার মুহূর্তে শবনমকে অ্যারেস্ট করা হল! ধৃতিমান মনে মনে ভাবল ছোটবেলায় ফুটবলটা খেলেছে কিন্তু ক্রিকেট খেললে গুগলি বলটা বুঝতে পারতো। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content