
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
পিছনের সিট থেকে বসে ধৃতিমানের যেন নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। ধৃতিমানের খেয়াল হলো শবনম সামনের লুকিংগ্লাসটা সামান্য ঘুরিয়ে দিয়েছিল। যাতে সে ধৃতিমানকে স্পষ্ট লক্ষ্য করতে পারে। ধৃতিমানের অস্বস্তি খেয়াল করে দরজাটা একটু খুলে ‘এসি’ বলে একটা হুকুম জারি করল। নিমেষের মধ্যে মাঝবয়সী ড্রাইভার ছুটে এসে গাড়ির এসি অন করে আবার দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা বন্ধ করবার পর হাসি চেপে শবনম বলে উঠল—
—কী রকম ডিটেকটিভ আপনি মদের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না! দুধ খান বুঝি?
—কী রকম ডিটেকটিভ আপনি মদের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না! দুধ খান বুঝি?
ধৃতিমান কোন উত্তর দিল না। সে জানে পুলিশের নামে শবনম যথেষ্ট ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই সে এখন আপার হ্যান্ড নিতে চাইছে। পিছনের সিটে বসে ধৃতিমান মনে মনে ভাবছিল কত বয়স হবে মেয়েটার উনিশ কুড়ি বা বড় জোর বাইশ বছর? এই বয়সে রাত করে পার্টি করছে মদ খাচ্ছে। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করছে! এই অনিয়ম এই ইন্দ্রিয়সর্বস্ব জীবনে কী পাবে এই মেয়েটি। শবনমের এই বেহিসেবি বেপরোয়া হয়ে ওঠার কারণ কিছু কিছু জেনেছে আমাদের বাবু মানে ধৃতিমান চৌধুরী!
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭৬: গুগলি/১১

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৩: মা সারদার সঙ্গে সরলাদেবীর কাশীভ্রমণ
শবনমের বাবা ডাক্তার আলি হোসেন নামকরা আই সার্জন! পার্কস্ট্রিটে বড়সড় চেম্বার। লম্বা সময় ধরে তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় না কিন্তু শবনমের মা অনেক ছোটবেলায় আত্মহত্যা করে মারা যান। শবনম তার মাসির কাছে বড় হয়েছে। কানাঘুষো কুৎসাটা অনেক পরে শবনম জানতে পেরেছে। শবনমের মা ফারহার সাংসারিক সঙ্কটের কারণ তারই আপনবোন জসমিন! জসমিন বিবাহিতা কিন্তু সন্তানহীনা। আর তাঁর নিজের বাবা জসমিনের জামাইবাবু ডাক্তার আলি হোসেনের জন্যেই নাকি জসমিনের সন্তান হয়নি। তাদের মধ্যে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ছিল কিন্তু নিয়মিত গর্ভ-নিরোধক নেবার ফলে জসমিনের সন্তানধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৮: গার্হস্থ্যজীবনে জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্রের ভাবমূর্তি, তাঁর দেববিগ্রহে উত্তরণের একটি অন্যতম কারণ?

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৫: ঝোপ টিকরা
জসমিনের স্বামী ফিরোজ ক্যাশ থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে এবং কলকাতার এক নামী হোটেলের চাকরী খোয়ায়। সে কলকাতায় আর কোন চাকরী পায়নি। কেস চলতে থাকে শবনমের বাবা ডাঃ আলি হোসেন টাকাপয়সা খরচ করে আউট অফ দা কোর্ট সেটেলমেন্ট করে ফিরোজকে নিশ্চিত জেলযাত্রা থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন। বদলে ফিরোজকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। শবনম তার মাসি জসমিনের সঙ্গে ফ্ল্যাটে একাই থাকতো। শবনমের বাবা ডক্টর আলি ভায়রা ভাই ফিরোজকে নিয়মিত মাসোহারা দিতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিশোরী শবনমকে একদিন ফিরোজ সবকিছু বলে দেয়। মাসির সঙ্গে বাবার আলোচনায় তার কাছে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৭: চায়ের দেশের বিনি-মিনির কথা

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৫: রবীন্দ্রনাথ, মণিপুরী নৃত্য ও ত্রিপুরা
ফিরোজের কাছে সব শুনে সেই প্রশ্নগুলোর মধ্যে ডটসগুলো যেন জুড়ে গেল। ফিরোজ আরও জানিয়েছিল, হোটেলের ক্যাশ থেকে টাকা চুরি ব্যাপারটাও পুরোপুরি সাজিয়ে তাকে বিপদে ফেলা হয়েছে। শবনমের কাছে তার কোন গুরুত্ব ছিল না। এসব কথা সে কাউকে বলতেও পারে না মনের যন্ত্রণার কোন সান্তনাও তার কাছে নেই! সে বুঝতে পারে তার মা ছাড়া এই পৃথিবীতে ভালোবাসার মানুষ আর কেউ নেই। তাই শবনম দুহাতে টাকা ওড়ায় এবং বেপরোয়া বেহিসেবি উচ্ছৃংখল জীবনযাপন করে। তাকে শাসন করার কেউ নেই কারণ শাসন করা যাদের উচিত তাঁরা অভিভাবকত্বের অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন।
—কী হল গোয়েন্দামশাই প্রশ্ন করুন! আমার সঙ্গে এসি গাড়িতে সন্ধ্যে রাতে বসে থাকবার জন্য এসেছেন নাকি? পার্টিতে অন্তত পাঁচ-ছ’জন পুরুষমানুষ আমার একটু সঙ্গ পাওয়ার জন্য ছটফট করছেন। আমার সময়ের দাম খুব বেশি! আপনি আপনার মান্থলি স্যালারি দিয়ে হিসেব করবেন না অংক গুলিয়ে যাবে।
ধৃতিমান ভেতরে ভেতরে অপমানিত বোধ করছিল। তাই বহুবার ব্যবহার করা পুরনো অস্ত্রটা আচমকা ছুঁড়ে দিল।
—মৃদুল সাহাকে ফ্রুটজুস আপনি দিয়েছিলেন?
সাপুড়ের লাঠিতে ঠোকা খাওয়া ক্রুদ্ধ গোখরো সাপের মত ফোঁস করে ঘাড় ঘোরালো শবনম
—What do you mean?
—আপনি যথেষ্ট চালাকচতুর মহিলা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কী মিন করছি!
—দেখুন নিশ্চয়ই মিঃ চৌধুরী! আপনি এই সমস্ত পুলিশের ডায়লগ বলবেন আর খুনি এসে আপনাকে ধরা দিয়ে যাবে?
— মৃদুল সাহা যে খুন হয়েছে সেটা আপনাকে কে বলল?
—সারা দিনরাত্রি খালি খুনের ক্লু খুঁজে বেড়ান। কদিন আগেই তো কাগজে লিক করেছিল পুলিশ সন্দেহ করছে ক্রিকেটার মৃদুল সাহাকে শরবতের সঙ্গে বিষ দিয়ে খুন করা হয়েছে! শুনুন উনি খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনার। মৃদুলের প্রেমিকার সংখ্যা অনেক ডায়মন্ড হার্টস ক্লাব স্পেডের সবকটা বিবি’র খোঁজ করেছেন। মৃদুলের লেটেস্ট ফায়ার শ্রেয়সী গুপ্তের সঙ্গে দেখা করেছেন?
—কী হল গোয়েন্দামশাই প্রশ্ন করুন! আমার সঙ্গে এসি গাড়িতে সন্ধ্যে রাতে বসে থাকবার জন্য এসেছেন নাকি? পার্টিতে অন্তত পাঁচ-ছ’জন পুরুষমানুষ আমার একটু সঙ্গ পাওয়ার জন্য ছটফট করছেন। আমার সময়ের দাম খুব বেশি! আপনি আপনার মান্থলি স্যালারি দিয়ে হিসেব করবেন না অংক গুলিয়ে যাবে।
ধৃতিমান ভেতরে ভেতরে অপমানিত বোধ করছিল। তাই বহুবার ব্যবহার করা পুরনো অস্ত্রটা আচমকা ছুঁড়ে দিল।
—মৃদুল সাহাকে ফ্রুটজুস আপনি দিয়েছিলেন?
সাপুড়ের লাঠিতে ঠোকা খাওয়া ক্রুদ্ধ গোখরো সাপের মত ফোঁস করে ঘাড় ঘোরালো শবনম
—What do you mean?
—আপনি যথেষ্ট চালাকচতুর মহিলা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কী মিন করছি!
—দেখুন নিশ্চয়ই মিঃ চৌধুরী! আপনি এই সমস্ত পুলিশের ডায়লগ বলবেন আর খুনি এসে আপনাকে ধরা দিয়ে যাবে?
— মৃদুল সাহা যে খুন হয়েছে সেটা আপনাকে কে বলল?
—সারা দিনরাত্রি খালি খুনের ক্লু খুঁজে বেড়ান। কদিন আগেই তো কাগজে লিক করেছিল পুলিশ সন্দেহ করছে ক্রিকেটার মৃদুল সাহাকে শরবতের সঙ্গে বিষ দিয়ে খুন করা হয়েছে! শুনুন উনি খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনার। মৃদুলের প্রেমিকার সংখ্যা অনেক ডায়মন্ড হার্টস ক্লাব স্পেডের সবকটা বিবি’র খোঁজ করেছেন। মৃদুলের লেটেস্ট ফায়ার শ্রেয়সী গুপ্তের সঙ্গে দেখা করেছেন?
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১০: অন্ধকারে, চুপিসারে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’
শবনমের কনফিডেন্স ধৃতিমানকে এক মুহূর্তের জন্য হলে থমকে দিল। এটা হতে পারে শবনম মৃদুল হত্যা রহস্যের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। তাই তার আত্মবিশ্বাস এতখানি। অথবা এটাও হতে পারে শবনমই এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আসলে একটা মুখোশ। নিজেকে লুকিয়ে রাখার মুখোশ নিজের দুর্বলতাকে ঢাকার মুখোশ। কিন্তু এই ধরনের কথা বলার পর শবনমকে গাড়ির মধ্যে আটকে রাখার বা আর কোন প্রশ্ন করা অর্থহীন। তবে বিষের গল্পটা ভেবেচিন্তে লিক করা হয়েছে! ড্রাগ ওভারডোজটা গোপন করা হয়েছে! বহুক্ষণ এয়ারকন্ডিশনের মধ্যে মদের অস্বস্তিকর গন্ধটা এখনও গাড়ির মধ্যে ঘুরছে।
— কী হল ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি মিঃ সত্যানুসন্ধানী। প্রমাণ থাকলে মেয়েপুলিশ ডাকুন কিন্তু সময় নষ্ট করবেন না। আমার পার আওয়ার ইন্টীমেসি ইজ কোয়াইট কস্টলি! —চলবে।
— কী হল ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি মিঃ সত্যানুসন্ধানী। প্রমাণ থাকলে মেয়েপুলিশ ডাকুন কিন্তু সময় নষ্ট করবেন না। আমার পার আওয়ার ইন্টীমেসি ইজ কোয়াইট কস্টলি! —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।