সোমবার ৩১ মার্চ, ২০২৫


ছবি: সংগৃহীত।

লিলির প্রতিশোধ নেওয়ার মোটিফ আছে, কিন্তু কাজটা করার সাহস আছে কি? অপরাধ করার জন্যে প্রতিশোধস্পৃহা লাগে, অপরাধপ্রবণতা লাগে কিংবা লাগে ভয়ঙ্কর দুঃসাহস! যে দুঃসাহস থেকে অনেক আধুনিকা নারীর আজকাল পছন্দের পুরুষ পোষেন, যাকে পরিভাষায় গিগোলো বলে। টাকার বিনিময়ে পাওয়া পুরুষসঙ্গী! শহর ছেয়ে গেছে এই ধরনের দুঃসাহসিনী নারীতে এরা বিশেষ কাউকে পছন্দ করলে তার প্রতি অবসেসড হয়ে এমন কাজ করতে পারেন।
‘অবসেশন’ কথাটার শুদ্ধ বাংলা হল আবেশ! কেউ কারো প্রতি আবিষ্ট থাকতে পারে। এই যেমন বুবু আমার একমাত্র সহবাসী প্রাণী, মানে আমার কাকাতুয়া যে আমায় শুধু বিশ্বাস করেপছন্দ করে বা ভালোবাসে তেমনটা নয়, বুবু আমার প্রতি একটা অধিকারবোধ অনুভব করে। মোটামুটি বাড়িতে আমি একা থাকলে বুবু খাঁচার বাইরে থাকে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায় আমার সঙ্গে নানান কথা বলে অনেকে সময় আমার তদন্তের অনেক আশ্চর্য ক্লু দিয়ে দেয় বুবু! আসলে যখন আমি ফোনে কথা বলি তখন চুপ করে শোনে আর যেহেতু ভয়ংকর বুদ্ধিমান কথাগুলো ওর মাথার মধ্যে থাকে, তার মধ্যেই কখনও কখনও কোনও কোনও কথা আলটপকা বলে দেয় যেগুলো আমার কাজে লেগে যায়। কিন্তু বাইরে থাকা অবস্থায় যদি কোনও কারণে আমার ফোন আসে। আমি সেখানে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি ব্যাস আর দেখতে হবে না। বুবু রেগেমেগে আমাকে কামড়ে দেবে, সারা ঘরময় উড়তে থাকবে আমাকে বিরক্ত করতে থাকবে। এটা হল পসেশন!
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯o: মা সারদার কথায় ‘ঈশ্বর হলেন বালকস্বভাব’

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭৩: গুগলি/৯

মৃদুলের জীবনে কি এমন কেউ ছিল? এ পর্যন্ত যাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে তারা কেউই এই ক্যাটাগরিতে পড়েন না, পরবর্তী সন্দেহভাজন হলেন উঠতি মডেল শবনম! এই শবনম মৃদুলের বয়সের কাছাকাছি একজন প্রেমিকা অবশ্যই এদের মধ্যে প্রেম ছিল কিনা সেটা জানা যায়নি তাই সঙ্গিনী বলাই সুবিধেজনক। কিন্তু তার কাছে পৌঁছনোই যাচ্ছে না। আজ রাতে কলকাতায় তো পরদিন বম্বেতে চারদিন পরে ফিরবেন, চারদিন পর আচমকা হায়দরাবাদে রামোজি ফিল্মস্টুডিয়োতে আইটেম গানে নাচছেন! ঠিক যেন সুকুমার রায়ের হযবরল-এর গেছোদাদা! কিছুতেই তাঁর নাগাল পাওয়া যায় না। আজ উলুবেড়ে তো কাল মতিহারি!
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-৯: আকাশ এখনও মেঘলা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৭: সুভদ্রাপুত্র অভিমন্যু ও দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্র, কে বা কারা রইলেন পাদপ্রদীপের আলোয়?

ক্রমাগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে লাভ হচ্ছে না, ভয়েস রেকর্ডিং-এ চলে যাচ্ছে। সেখানে বিপ শব্দের পর ভয়েস রেকর্ড করে তো আর বলা যায় না—‘মৃদুল সাহা খুনের তদন্তের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার!’ অনেকবার ব্যর্থ হবার পর ভেবেচিন্তে ধৃতিমান একটা মেসেজ রাখবে ঠিক করল। কারণ চক্রবর্তী সাহেবের সঙ্গে কথা বলে এটা বোঝা গেছে যে অফিসিয়ালী থানায় ডেকে পাঠানোয় কিছুটা মুশকিল আছে। এ সমস্ত হাইপ্রোফাইল তরুণীদের হাত অনেক লম্বা, তদন্তের শুরুতেই ব্যাপারটা ঘেঁটে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৩: সাত-সহেলি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৭: লুকাবো বলি, লুকাবো কোথায়?

শবনমের জন্ম তারিখ জানে না। তবু আন্দাজ করা যায় এই দুঃসাহসিনীর বয়স ২৫ বছরের কমই হবে। তার মানে ২০০০ সাল বা তারপরে পৃথিবীতে আসা প্রজন্ম। পশ্চিমী দেশে জন্মের সাল অনুযায়ী মানবপ্রজন্মের বিভিন্ন ধাপকে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। এই পদ্ধতিটার নাম ডেমোগ্রাফিক কো-হর্ট। তাঁদের নানা ধরনের শ্রেণি নাম। শুরু হয়েছে ১৮৮৩ থেকে। মানে ১৫৬৪ সালে জন্মানো উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বা ১৮৬১ সনের রবি ঠাকুরকে টপকে এসে গুনতি শুরু হয়েছে। ভাগ্যিস! তাঁরা তো চিরায়ত! প্রজন্মহীন তাঁদের অস্তিত্ব! যাইহোক ১৮৮৩ থেকে ১৯০০ হল লস্ট জেনারেশান, ১৯০১ থেকে ১৯২৭ হল গ্রেটেস্ট জেনারেশন, এঁরা সব কৃতি পুরুষ। আমাদের চেনাশোনার মধ্যে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সলিল চৌধুরী… তালিকা লম্বা। আর যা হয় মাপটা তো নির্দিষ্ট! মাথার মাপটা বড় হয়ে গেলে পায়ের দিকটা ছোট হয়ে যাবেই। তাই আধুনিক প্রজন্মে আর কৃতিত্ব মাপবার জায়গা নেই।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৭০: বিচারক

যাইহোক ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ সালে যারা তারা হলেন সাইলেন্ট জেনারেশন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ -এঁরা হলেন বেবি বুমার্স! মানে এঁরাই আজকাল ষাটোর্দ্ধ পক্ককেশ কিংবা “কলপায়িত প্রজন্ম”। ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০-তে যাঁরা পৃথিবীতে এসেছেন তাঁরা হলেন জেনারেশন এক্স! জেনেক্স শুনেই উত্তেজিত হওয়ার কোন কারণ নেই! আশিতে জন্মালেও তাঁরা চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছেন, মানে মধ্যবয়সী।হাঁটুতে কনুই-য়ে টনটনানি সিঁড়ি ভাঙ্গতে কষ্ট! ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬-রা হলেন মিলিয়েনিয়ালস! হালে যাদের বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলেন বা যাবেন! ছেলেমেয়েরা আজকাল প্রতিষ্ঠিত না হয়ে তো বিয়ে করতে চায় না! এটা তো সেই পুরনো সময় নেই একটা সাইকেল আর দুটো টিউশনির ভরসায় কেউ একজন দুম করে কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করে বসলেন! ১৯৯৭ থেকে ২০১২ হল জেনারেশান জেড, ২০১৩ থেকে ২০২৪ হল জেনারেশান আলফা, ২০২৫ থেকে ২০৩৯ হবে জেনারেশান বেটা, তারপর কাপ্পা, ডেল্টা, এফসাইলন…
ধৃতিমান মেসেজ রাখলো—
—“নমস্কার আমার নাম ধৃতিমান চৌধুরী! একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চাই। অনেকবার ফোন করার চেষ্টা করেছি কিন্তু আপনাকে পাইনি, কলকাতায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। বিষয়টি যথেষ্ট গোপনীয় এবং জানাজানি হলে আপনার ক্যারিয়ারের পক্ষে ক্ষতি হতে পারে। তাই এখানে রেকর্ড করে সেটা বলা সম্ভব নয়। না আপনি যেটা ভাবছেন সেটা নয় আমি কোনওভাবেই আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাই না! এরপরেও আপনার সন্দেহ হলে আপনি স্বচ্ছন্দে পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে আমাকে ফোন করে কোনও লাভ নেই আমি আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাই। কলকাতায় ফিরলে কোথায় কখন দেখা করতে হবে সেটা জানিয়ে আমাকে একটা টেক্সট করবেন ধন্যবাদ!”
—চলবে।

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, মৃদুল সাহা হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৩ এপ্রিল ২০২৫।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content