
মৃদুল খেলোয়াড় মানুষ। একই ম্যাচে আটকে থাকার লোক সে নয়। কিছু দিন লিলিকে নিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়ে দিঘা, ডায়মন্ডহারবার, মন্দারমণিতে সময় কাটিয়ে মৃদুল ক্লান্ত হয়ে পড়ল। লিলিও মৃদুলের থেকে বয়সে বড়! তারপর মৃদুলকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়াচ্ছিল গানের ক্ষেত্রে। সে জগতেও প্রেমিকের সংখ্যা তো কম নয়, তারা লিলিকে টিকাটিপ্পুনিতে বুঝিয়ে দিত গানের জগতের বাইরের থেকে এসে এই ছোকরা খেলোয়াড় গায়িকার সঙ্গে প্রেম করে যাবে, আর তারা কি বুড়ো আঙুল চুষবে? মৃদুলের কারণে জানাঘরের কাজ হাতছাড়া হতে থাকলো। যে সুরকার লিলিকে গান দিতেন। তিনি পরপর বেসিক রেকর্ড বা ছবির গানে লিলির বদলে অন্য গায়িকাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন।
গানের জগতে প্রথমে সুরকারই ঠিক হয়, সুরকারই বিষয় অনুযায়ী তাঁর পছন্দমত গান লিখিয়েকে দিয়ে সুরে কথা বসিয়ে সুর অনুযায়ী পছন্দের গায়ক-গায়িকা বেছে নেন। তবে শিল্প সংস্কৃতির বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় জনপ্রিয়তার ভরকেন্দ্র অনুযায়ী। গায়িকা-গায়িকা যখন জনপ্রিয়তম তখন তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন যে কে সুর করবেন কে কথা লিখবেন। সুরকার যখন জনপ্রিয়তার ভরকেন্দ্রে তখন তারা ঠিক করেন বাকিদের। তবে লেখকরা সব সময় পিছনের সারিতে। যদিও ছেলের হাতে মোয়া ধরিয়ে দেওয়ার মতো মুখে বলা হয় ‘Text is the King’। গান-নাটক থেকে সিনেমা সর্বত্র একই নিয়ম। কখনও হিরো-হিরোইন বাকিদের নিয়ন্ত্রণ করেন, কখনও পরিচালক বা ক্ষেত্র বিশেষে প্রযোজক।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৬: ভারতীয় পারিবারিক জীবনে স্নেহময় জ্যেষ্ঠর ভূমিকায় রামচন্দ্র কতটা আকর্ষণীয়?

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭৩: গুগলি/৮
মৃদুল লিলির অসমবয়সী শরীরীপ্রেম ফুলের দোকানের না-বিকোনো বাসি ব্যোকের মতো শুকিয়ে ঘাড় নোটকে পড়ল। লিলি আবার প্রৌঢ় এক বিপত্নীক সুরকারের কণ্ঠলগ্না হয়ে পরপর বেশ কয়েকটি অ্যালবাম করে ফেলল-ছবির সুযোগও এল। আর ব্যবসায়িক কারণে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে হল প্রোগ্রাম ইমপ্রেসারিওদের। বিশেষণহীন বাংলা কথায় জমি বাড়ি কোর্টকাচারির কাজের মতো জলসার দালাল। গ্রামেগঞ্জে, শহরতলিতে ভোটের সময় মিটিং হয় যে মাঠগুলোতে সেখানেই সিজনে যাত্রাপালা মেলা বা সারা রাতব্যাপী জলসা হয়। এইসব জলসার কর্মকর্তারা শিল্পীদের বাড়িতে জনে-জনে ঘুরতে গেলে গাঁটের কড়ি বেশি খরচ করতে হয়। কারণ, নিজেদের বাজারদরকে চড়া দেখাতে গিয়ে শিল্পীরা চড়াদাম হেঁকে বসেন। কয়েকবার ঠকে নাককাটা গিয়েছে তাদের। তাই তারা নিশ্চিন্ত হয়ে একজন দালাল ধরেন। দালাল নানান জলসার চার ছড়িয়ে বড়শি গেঁথে শিল্পী তোলেন। আশ্চর্যের বিষয় যে শিল্পীর কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে তাঁকে এক বিশেষ পারিশ্রমিকে রাজি করাতে পারেনি। সেই শিল্পী তার থেকে অনেক কম পারিশ্রমিকে দালাল মারফত এসে মাথা নুইয়ে গান করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গিয়েছে। লিলি এই ধরনের বেশ কয়েকজন দালালকে ডেকে ডেকে ভাইফোঁটা দেয়। জন্মদিনে কেক পাঠায় ঈদ মুবারক জানায়। একজনের তো বিশেষ দেখভাল করতে হয়। কারণ তিনি স্বদেশে নয় বিদেশে অনুষ্ঠান করেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫০: রোজই দেখি আলাস্কা পর্বতশৃঙ্গের বাঁ দিকের চূড়া থেকে সূর্য উঠতে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’
লিলিকে ফেলে এরপর মৃদুলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল মডেল শবনম। শবনম লরেটো ডে স্কুল ফর গার্লস-এর ছাত্রী। দেখতে শুনতে খারাপ না। ফরফর করে ইংরেজিটা বলতে পারে। খুব সহজেই বিয়ার পাব বা পার্টিতে দুর্বল পুরুষমানুষকে ঘায়েল করতে পারে। তবে শবনমের শিকারের তালিকায় বিজ্ঞাপনজগতের চুল লালকরা জেঠু বা দাদু বা মিষ্টি-হাসি ভাঙ্গা বাংলা বলা নিখুঁত কলপমাখা গলায় ঘাড়ে ট্যাটু করা অবাঙ্গালি প্রযোজক ছিলই। টগবগে খেলোয়াড় যুবকের অভাব ছিল। সুতরাং এক খেলোয়াড় আরেক খেলোয়াড়কে বেছে নিল।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯২: দুর্গা টুনটুনি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৭: লুকাবো বলি, লুকাবো কোথায়?
লিলি মৃদুলকে ভুলতে পারেনি। বরং মৃদুলের প্রত্যাখান এখনও লিলিকে কষ্ট দেয়। প্রেমিকার মানসিক কষ্ট নয়, ছুঁড়ে ফেলার রাগ। লিলি চেয়েছিল মৃদুলের সঙ্গে যা চলছে যেমন চলছে চলুক আর পেশাদারি কারণে তাকে যাঁদের যাঁদের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ বজায় রাখতে হয়। সে সেটা চালিয়ে যাবে। কিন্তু মৃদুল একেবারে বেদ উপনিষদ মেনেচলা খেলোয়াড় ঋকবেদের ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ‘চরৈবেতি’ শব্দটাকে সে একেবারে আত্মস্থ করে নিয়েছে। মৃদুল সাহারা থেমে থাকতে জানে না!
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন
—অত্যন্ত অভদ্র ছেলে! প্রথমে আমার গান ভালোবাসি বলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করল। গিফট নিয়ে আসতো। আমি ভাবলাম গুণমুগ্ধ ভক্ত। ভদ্রতা করেই যোগাযোগ রাখতাম। পরে বুঝলাম না তার উদ্দেশ্য অন্য। আমার থেকে বেশ কয়েকবছরের ছোট কিন্তু তার আকাঙ্ক্ষার বহর দেখে আমি চমকে গিয়েছি। হ্যাঁ, মানছি কয়েকবার আমার সঙ্গে অনুষ্ঠানে গিয়েছে। যদি কোন রকম দুর্বলতা থাকে সেটা তার তরফে। আমি আমার গোটা জীবনটাই গানের পেছনে সঁপে দিয়েছি। সঙ্গীতের বাইরে আর আমার কোন প্রেম নেই।
লিলির কাছে মৃদুল সাহাকে নিয়ে জানতে গিয়ে ধৃতিমান লিলির কাছে একটানা এই কথাগুলো শুনে ভাবতে শুরু করল ঠিক এরপরে কি প্রশ্ন করবে?
লিলির কাছে মৃদুল সাহাকে নিয়ে জানতে গিয়ে ধৃতিমান লিলির কাছে একটানা এই কথাগুলো শুনে ভাবতে শুরু করল ঠিক এরপরে কি প্রশ্ন করবে?
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, মৃদুল সাহা হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।