মঙ্গলবার ২৫ মার্চ, ২০২৫


প্রতিমার ধরনের মহিলারা খোলাখুলি এমন কথা বলতে পারেন যেটা শুনতে বসলে ভদ্র মানুষের লজ্জায় কান লাল হয়ে যেতে পারে। আসলে এই প্রতিমা দত্ত বা প্রতিমা চৌধুরীদের প্রাপ্তির ভাঁড়ারটা শূন্য। না পেয়েছেন জনপ্রিয় চিত্রতারকার জীবন, না পেয়েছেন একটা স্বাভাবিক দাম্পত্য বা পরিবার। মাতৃত্বের স্বাদ পেলেও হয়তো সন্তানকে মানুষ করার তাগিদে একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা ভাবতেন। সেটাও পাননি। আসলে সাধারণ মানুষেরা তারকা জীবনের চাকচিক্য দেখে ভাবেন সে জীবনে কত আলো কত সুখ কত বৈভব কত আনন্দ। কিন্তু তাঁরা এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না, ওই আলো সুখ বৈভব আনন্দের বেশিরভাগটাই মেকি, সাজানো। প্রকৃত অন্ধকারকে জীবন থেকে হারিয়ে দেবার একটা অক্ষম অদম্য প্রচেষ্টা। তার থেকেই বেহিসেবি উদ্দাম জীবনযাপন সর্বক্ষণ যে একটা না পাওয়ার আক্ষেপ তাড়া করে বেড়াচ্ছে সেটাকে অস্বীকার করার চেষ্টা। তাই তারা যখন ক্যামেরার আড়ালে ব্যক্তিগতস্তরে কথা বলতে শুরু করেন তখন মুখের ভাষায় আর কোনও লাগাম থাকে না।
সাফল্যের চূড়ায় থাকলেও মানসিক বিচ্যুতি যে ঘটেনা তা নয়, টালিগঞ্জের বহু পুরনো এক পরিচিত প্রোডাকশন ম্যানেজার জীবন শুরু করেছিলেন প্রোডাকশন বয় হিসেবে। সর্বত্র মেকআপ রুমের অন্দরে তাদের ছিল অবারিত দ্বার। নায়ক-নায়িকারা কেউই এদের খুব একটা মানুষ বলে গণ্য করতেন না, তারা যেন থেকেও নেই গোছের। তাই তাঁদের নিঃশব্দ উপস্থিতিতে তাঁরা অনেক কিছু শুনেছেন অনেক কিছু দেখেছেন। যেহেতু তাঁরা পাদ-প্রদীপের আলোর থেকে অনেকটা দূরে তাই তাঁদের কথা কেউ শুনবেও না বিশ্বাস করবে না। আর সেসব কথা তাঁরা বলতে চান না। এই বয়সে এসে কে আর ঝঞ্ঝাটকে ডেকে আনে। সে রকম একজন মানুষের কাছ থেকে ধৃতিমান শুনেছে এক ভয়ংকর সত্য, শুনেছে এক অবিসংবাদিত নায়িকার মুখের গালিগালাজ এতই কুৎসিত ছিল যে কানে হাতচাপা দেওয়া ছাড়া উপায় থাকতো না। ধৃতিমানের মনে হয় এঁদের মধ্যেও প্রবল হতাশা কাজ করতো। মনোবিদরা হয়তো এই সমস্ত কেস পেলে স্টাডি করতে পারতেন, ফ্রয়েড সাহেবের তথ্যাবলিকে নেড়েচেড়ে দেখতে পারতেন ঠিক কোন স্তরে এঁদের মানসিকতা মেলে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৯: তমসো মা জ্যোতির্গময়: গ্রীষ্মকালে আলাস্কায় রোজদিন

প্রতিমা নিরাসক্ত মুখে জানিয়েছিল, মৃদুল সাহার থেকে সে প্রায় ১২ বছরের বড়। তাই সম্পর্কে কোনওরকম মানসিক যোগাযোগ ছিল না। উভয় পক্ষের চাহিদা ছিল শারীরিক। অন্যান্য ক্ষেত্রে হোটেল-রিসর্ট এসব বুক করতে হয়। প্রতিমার ফ্ল্যাটটা সে দিক থেকে নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ। খেলা না থাকলে প্র্যাকটিস সেরে দুপুরবেলাতেই চলে আসত মৃদুল। বিকেল গড়িয়ে জিমে যেত। তারপর সন্ধ্যে-রাত্তিরে কোনও বারে বা নাইট ক্লাবে কার সঙ্গে যেত, সে নিয়ে প্রতিমার কোনও ইন্টারেস্ট ছিল না।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু! পর্ব-৭২: গুগলি/৭

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন

বছরখানেক এভাবে কাটবার পর মৃদুল ক্রমশ প্রতিমার ওপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। অপরদিকে প্রতিমাও তার নতুন বন্ধুর খোঁজ পেয়েছে। এক্সাইড কোম্পানির একজন গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক। বোম্বে থেকে কলকাতায় বদলি হয়ে এসেছেন। পরিবার বোম্বেতেই আছে। এখানে তিনি একা কোম্পানি গেস্ট হাউসে থাকেন। সুতরাং তারপর থেকে প্রতিমা ও মৃদুলের সম্পর্কের ইতি ঘটে যায়।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯১: গো-শালিক

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’

এসব জানবার আগে ধৃতিমানের কাছে যে অন্যান্য সূত্রের খবর ছিল তার সঙ্গে প্রতিমার স্টেটমেন্ট প্রায় মিলে যাচ্ছে। তাই তার সঙ্গের নোটবইতে যে নিজস্ব এভিডেন্স বোর্ড থাকে সেখান থেকে প্রতিমার নামটা সে বাদ দিয়ে দিল। এর পরের জন হল, গায়িকা লিলি মুখোপাধ্যায়! লিলি অবিবাহিতা। গানই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। একসময়ে কলকাতা মাঠের এক দাপুটে সেন্টার ফরওয়ার্ড লিলির গুণমুগ্ধ ছিল। আকাশবাণীতে অনুষ্ঠান থাকলে দেখা যেত উল্টোদিকে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি। যেকোনও কারণেই হোক ফুটবলের সঙ্গে লিলির প্রেম শেষমেশ আর হয়ে ওঠেনি। হল ক্রিকেটের সঙ্গে। তাও হাঁটুর বয়সী এক উঠতি ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৬: নীল রাত্রি, নীল অন্ধকার

লিলি নিয়মিত গান গাইত জলসায়। তারপর টেলিভিশনে প্রায় তার অনুষ্ঠান। মৃদুল আসলে খুব দ্রুত প্রেম জমাতে পারতো। বয়সের বাদ-বিচার খুব একটা ছিল না। আর যৌবন ফেলে আসা প্রেমিক মনের স্ত্রী বা পুরুষ নির্বিশেষে সকলে প্রায়শই ভুবনের চারপাশে পেতে রাখা প্রেমের ফাঁদে পড়তে চায়।—চলবে।
 

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, মৃদুল সাহা হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content