শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


মাঝদুপুরে রাস্তা খালি। হুশ করে আকাশবাণী টপকে ইডেনগার্ডেনস ডান দিকে ফেলে ধৃতিমানের ট্যাক্সি ছেলেটিকে নিয়ে স্ট্র্যান্ড রোডে পড়ে বাঁদিকে ঘুরল। একটু এগিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামসের উল্টোদিকে গোয়ালিয়র মনুমেন্ট আর স্কুপ রেস্তরাঁর মাঝে ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিল। খুব জোরে গাড়ি যাতায়াত করছে। একটু সময় নিয়ে সাবধানে রাস্তা পার হয়ে গঙ্গার ধারে গিয়ে দাঁড়াল ছেলেটিকে নিয়ে।
—বলুন।
– কী বলবো?
—যে কথা বলার জন্য আপনি এতটা আমার সঙ্গে এলেন। দেখুন সময় আমাদের সকলের হাতেই ভীষণ অল্প। তাই সেটা নষ্ট না করাই উচিত হবে।
—মৃদুল একটা নচ্ছার ছেলে!
—ভালো খেলোয়াড়!
—হ্যাঁ, সব খেলাতেই ভালো!
—দেখুন আমি গসিপ লিখি না। তাই কেচ্ছা নয় আমি স্পেসিফিক খবর চাই। নাম ধাম সময় উল্লেখ করে। ক্লাব ক্রিকেট নিয়ে আমি একটা ডিটেইল লেখা করতে চাই।
—মৃদুল সাহার প্রচুর পয়সা! নাইটক্লাবে গিয়ে দুহাতে পয়সা ওড়াতো!
—আর?
—মেয়েদের নিয়ে দীঘা-পুরী মন্দারমণি বা কলকাতার হোটেলে রাত্রিবাস।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬৯: গুগলি/৪

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৮: সুন্দরবনের পাখি — শালিক

—আর ক্রিকেট?
—ক্রিকেটটা সিরিয়াসলি খেলত!
—মৃদুলের বান্ধবীরা ক্লাবে আসতো।
—প্রায়ই!
—ক্লাবে কেউ মানা করত না!
—কে মানা করবে? পুরুষ মানুষের তো… আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন?
—সকলেই তো একরকম নয়?
—খুব কম লোক অন্যরকম! মৃদুলের ক্ষমতা অনেক, লবি করে অন্যরকম লোকেদের সিধে করতে সিদ্ধহস্ত ,পলিটিক্স করে আমাকেই একটা সিজন ছাড়ুন।
—রানা দত্ত! আপনিও তো লেফট হ্যান্ড স্পিনার তাই না?
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৩: গ্রহের ফের

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৩: গ্রহের ফের

—আমাকে চেনেন?
—প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে খেয়াল হল খেলার জগতে আপনার ছবি দেখেছি। গত সিজনে আপনি খুব ভালো বল করেছিলেন, সিজন অ্যাভারেজ খুব ভালো ছিল। কিন্তু স্পোটিং ইউনিয়ন থেকে রাজস্থানে এলেন কেন?
—আমি বুঝতে পারিনি লেফহ্যান্ড স্পিনার হিসেবে আমার ক্যারিয়ারটা শেষ করার জন্য মৃদুলই ছক করে আমাকে দলবদল করিয়েছে। কিন্তু আমায় খেলাচ্ছে না -যাতে ওর কোন কম্পিটিটার না থাকে!
—তাই আপনি মৃদুলের গোপন ইতিহাস জানাতে চান!
—জানাবার মতো মহান ইতিহাস কিছু নয়, একটি দুশ্চরিত্র অমানুষের অন্ধকার জীবন কথা!
—বেশ বলুন।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১৬: পূতিমাংসজাতক—শেয়ালের বুদ্ধি না ছাগলের বুদ্ধি?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৭: উত্তরণ-অবতরণ শেষে স্বপ্নের ‘সূর্যতোরণ’

কথা শেষ হবার পর একটা ট্যাক্সি ডেকে রানা দত্তকে তাতে তুলে দিল ধৃতিমান। তারপর উদ্দেশ্যহীন ভাবে খানিকক্ষণ গঙ্গার ধারে হেঁটে বেড়ালো। রানার বলা কথাগুলো কতটা সত্যি সেটা জানা দরকার। মৃদুলের উপর রানার একটা ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ স্পৃহা থাকা খুব স্বাভাবিক। মৃদুলের মৃত্যুতে আদৌ রানা যুক্ত কিনা আর থাকলে ঠিক কিভাবে যুক্ত সেটা জানা খুব প্রয়োজন। কলকাতা মাঠে মৃদুলের সঠিক প্রতিযোগী হল এই রানা দত্ত। রানা সম্বন্ধে যা খোঁজ পেয়েছে তাতে, সে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। এই ধরনের ছেলের পক্ষে ফুটবল মাঠে মানিয়ে নেওয়ার সোজা কিন্তু ক্রিকেট খেলাটা এখনও উচ্চবিত্ত প্রভাবশালীদের খেলা। এমন অনেক খেলোয়ার্ডের কথা ধৃতিমান জানে, যারা কলকাতায় বাংলার হয়ে রঞ্জি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পেরে স্রেফ টাকার জোরে ত্রিপুরার হয়ে রাজ্যস্তরে ক্রিকেট খেলছে। গরমকালে তাদের পয়সাওয়ালা অভিভাবকরা স্রেফ অর্থ আর যোগাযোগের অনুকূল্যে তাদের ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এত ধরনের বাধা সত্বেও রানা দত্ত স্রেফ তার ব্যক্তিগত ক্রীড়াকৌশল ব্যবহার করে মানুষের নজর কেড়েছিল। বলাবাহুল্য নির্বাচকেরাও রানাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন মৃদুল যদি রানাকে স্পোর্টিং ইউনিয়ন থেকে তুলে নিয়ে এসে তার ক্যারিয়ার আটকে দেওয়ার খেলা খেলতে পারে তাহলে বলতে হবে ভালো খেলোয়াড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ভালো পলিটিশিয়নও। ভারতীয় দলেও এমন অনেক নামকরা ক্রিকেটার ছিলেন যাদের আপাত দৃষ্টিতে খুব বেচারা মনে হলেও তারা সেই বেচারা ভাবটাকে মানুষের কাছে ব্যবহার করেছেন। কৃতিত্ব থাকা একটা জিনিস আর কৃতিত্বের সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিম কার্ড খেলে দেওয়ার প্রবণতা আসলে নোংরা চাতুরি। তবে যারা চাতুরি করতে অভ্যস্ত তারা একটানা একটা সময় ধরা পড়ে যায়।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০২: ভরতের মতো একমুখী লক্ষ্যে এগিয়ে চলা কী সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১২: দারুণ এক গগনবিহারী খেলনা বানিয়েছিলেন গগনেন্দ্রনাথ

লালবাজারে চক্রবর্তী সাহেবের তখনকার অফিসে যেতে যেতে ধৃতিমান ভাবছিল রানা দত্ত মহিলা সংক্রান্ত এত কথা বললেন, কিন্তু মৃদুল যে পারফরমেন্স বাড়ানোর জন্য ড্রাগস ব্যবহার করতেন সেটা কেন বললেন না ? —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content