শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


সেদিন মৃদুল একটু অন্যমনস্ক ছিল। সাধারণত মৃদুল খুব হইচই করা ছেলে। খুব বড় চাপের ম্যাচেও দলের অন্যরা যখন একটু গুটিয়ে বসে আছে, মৃদুল তখনও হুল্লোড় করতো। ওয়াকম্যানে হিন্দি গান চালিয়ে কানে গুঁজে নাচতো। সেদিন মৃদুল এসব কিছুই করেনি। মৃদুলের দল টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল। মৃদুল ক্যাপ্টেন। সে চেয়েছিল ফিল্ডিং করতে। কিন্তু ইদানিং কোচ হোসেন আলির সঙ্গে মৃদুলের সম্পর্কটা খুব একটা ভালো নয়। টস করতে যাওয়ার আগেও আলি বারবার মৃদুলকে সতর্ক করে দিয়েছিল টস জিতলে যেন কোনওভাবেই ফিল্ডিং না নেয়। আসলে পরপর দুটো ম্যাচে মৃদুল ফিল্ডিং দিয়ে শুরু করেছিল, কিন্তু দুটো ক্ষেত্রেই তার সহযোগী বোলাররা এবং সে নিজে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। রানের বোঝা সামলাতে দলকে হাঁসফাঁস করতে হয়েছে।
একটা ম্যাচ মৃদুল খুব ভালো ব্যাট করে জিতিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তার পরের ম্যাচটাতে মাত্র চার রানে বাউন্ডারি লাইনের ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যায়। হারা ম্যাচ দলের অন্যান্য খেলোয়াড়রা মিলেজুলে কোনক্রমে বাঁচিয়ে দেয়। মৃদুলের রেকর্ড খুবই ভালো, তার জন্যই সেদিনের ম্যাচে বেঙ্গল সিলেক্টররা এসেছেন খেলা দেখতে। সিনেমায় যেমন হয় সবসময় স্টেডিয়ামেই সিলেক্টররা খেলা দেখতে আসেন। বাস্তবে কিন্তু তারা ছোটখাট মাঠক্রিকেটেও গিয়ে গিয়ে খেলা দেখেন। মৃদুল পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যান থার্ড ডাউন ব্যাট করতে যায়। নিয়ম মতো প্যাড আপ করা উচিত। কিন্তু সেদিন হয়তো কিছুটা কোচ হোসেন আলির ওপর উষ্মা প্রকাশ করতেই প্যাড পাশে রেখে বসেছিল।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬৮: গুগলি/৩

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭১: ধর্মকার্যের জন্য টাকা জোগাড় করা আর সাদা কাপড়ে ময়লা লাগিয়ে ধোয়া, দুই-ই সমান

মাঠে নামার আগে এক গ্লাস মুসাম্বির রস খাওয়াটা মৃদুলের বহু বছরের স্বভাব। ক্লাব ক্যান্টিনের রামলাল মুসাম্বির রস নিয়ে আসার পরে মৃদুল বলেছিল—
—আমি এসে একটা ফ্রুট জুস খেয়েছি! আর ভালো লাগছে না রামলালদা তুই খেয়ে নে!
—খেয়েছেন? কে বানালো?
—তুই!
—আমি?
রামলালের সঙ্গে কথা বলে মনে হল সে বেশ কনফিউজড!
—সেদিন আপনি আর কাউকে ফ্রুট জুস দিয়েছিলেন? কিছু মনে পড়ে?
—আমি খেলা থাকলে মাঝেমধ্যে অনেকেই তো ফ্রুট জ্যুস চায়। ওই মৃদুলদা চিনি বরফ কিছু নিতো না। আমি নিজে এসে দিতাম। এখন সেদিন কে আগের ফ্রুট জ্যুস দিয়েছিল সেটা তো আমি বলতে পারছি না।
—মৃদুলবাবুর কোন গেস্ট আসতেন নাকি? খেলা দেখতে?
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০২: অন্ধকারে কে?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১১: মৃণালিনীর মৃত্যুর পর বিবাহ-প্রস্তাবের মুখোমুখি রবীন্দ্রনাথ

স্পোর্টস সেক্রেটারি বা ফিজিও পুলিশ শুনে বিশেষ মুখ খুলছেন না। তাই আবার রামলালের শরণাপন্ন হতে হল। রামলাল জানে আমি কোন একজন ক্রীড়া সাংবাদিক মৃদুল সাহার উপর একটা লেখা করবার জন্য খোঁজখবর নিতে এসেছি। তাই সে যা জানে স্বাভাবিক ভাবেই বলছিল।
—সকলকে তো আমি চিনি না। তবে সিনেমার মুখ চেনা অনেক হিরোইন টিরোইন আসতো। এক দু’বার না অনেকবার এসেছে। মৃদুলদার খেলা থাকলেই অনেকে আসতেন। তবে কোন খেলা দেখতে কে কে এসেছিল অতশত আমার মনে নেই। খেলা থাকলে খাওয়া দাওয়া হয় তাই আমার উপর খুব চাপ থাকে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৭: সুন্দরবনের পাখি — ফিঙে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৬: জীবন নিয়ে কৌতুক আর ‘যৌতুক’

আরও খোঁজ খবর নিতে নিতে বেশ কয়েকটা নাম পাওয়া গেল। এই কয়েক বছরে মৃদুলের বান্ধবীর সংখ্যা অনেক। মৃদুল একইসঙ্গে দু’ তিনজন মহিলার সঙ্গে ক্রমাগত সম্পর্ক রেখে চলত, সকালে সন্ধ্যায় বান্ধবী বদলে যেত। আর তারা কেউ উঠতি নায়িকা মডেল এমনকি গায়িকায় ছিল তালিকায়। খেলোয়াড়রা মহিলাদের মধ্যে চিরকাল জনপ্রিয়। আসলে যে রক্ত মাংসের নায়কদের সঙ্গে তারা পর্দায় অভিনয় করেন, তাদের কর্মকাণ্ডের শতকরা ৮০ শতাংশই বানানো মিথ্যে ক্যামেরার কারিকুরি! অথচ স্পোর্টসম্যান যারা তারা মাঠে যেটা করেন সেটা শতকরা একশভাগ আগমার্কা খাঁটি, অতটাই শক্তি দিয়ে মাঠের এক কোণ থেকে অন্য কোণে ছুটে যেতে পারেন। বাউন্ডারি লাইন থেকে বল ছুঁড়ে মাঝমাঠে উইকেট ভেঙে দিতে পারেন। সরাসরি মাঠ থেকে ব্যাটেবলের সঠিক সংঘাতে বল গ্যালারি টপকে দিতে পারেন মাঝমাঠ থেকে ভয়ংকর শটে গোলপোস্টের জাল ছিঁড়ে দিতে পারেন। টগবগে টাট্টু ঘোড়ার মতো পায়ে বল নিয়ে সাইড লাইনের ধার দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে যেতে পারেন। সিনেমার নায়কের মতো এর একটা কাজও মিথ্যে নয় ক্যামেরার কারসাজি নয় হাজার হাজার মানুষের সামনে প্রতিদিন তাঁরা করে দেখান। তাই তাদের পুজো করে মানুষ, মহিলারা সকাল-সন্ধে প্রেমে পড়েন। আর এরই মধ্যে সাজগোজ টুপি রুমাল চশমায় সজ্জিত ক্রিকেটাররা একটু বাড়তি নজর কেড়ে নেন। তাই মৃদুল সাহার মতো ক্লাবস্তরে খেলা ক্রিকেটারও ইনা-মিনা-ডিকার মতো সখী পরিবৃত হয়ে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াতে পারেন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৪: ‘…জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’, লরেন্স ও ফ্রিডা/২

সেদিন রাজস্থান ক্লাব থেকে বের হবার সময় একটি ছেলে ক্লাব থেকে বেরিয়ে গিয়েও দূরে টেন্ট-এর সামনে গাছের আড়ালে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। বারবার ঘুরে ঘুরে সে ধৃতিমানের দিকে দেখছিল। ধৃতিমান বুঝল ছেলেটি হয়তো কিছু বলতে চায়। কিন্তু সেটা সর্বসমক্ষে নয়। ধৃতিমান ছেলেটির পাশ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে মাঠ টপকে গিয়ে বড়রাস্তায় একটা ট্যাক্সিকে হাত দিয়ে দাঁড় করালো। ছেলেটা দ্রুতপথে রাস্তার দিকে এগিয়ে আসছে। রাস্তাটা ঘুরে যেখানে রাজস্থান ক্লাবটা ময়দানের অন্য তাঁবুর আড়ালে চলে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে ট্যাক্সিটা দাঁড় করালো ধৃতিমান, যা ভেবেছিল তাই। এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে সেই ছেলেটি ছুটে এল ট্যাক্সির দিকে। ধৃতিমান ট্যাক্সি দরজা খুলে দিতেই ছেলেটি ট্যাক্সিতে বসে দরজা বন্ধ করে দিল। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content