শুক্রবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৫


ক্রিকেটার না ফুটবলার রোম্যান্টিকতার প্রশ্নে কারা এগিয়ে আছে এ নিয়ে কোনও পরিসংখ্যান হাতে নেই! জানতে পারলাম মৃদুলের মৃগয়াক্ষেত্র শুধুই চলচ্চিত্রকেন্দ্রিক নয়, সংগীত জগতেও তার সদর্থক উপস্থিতি রয়েছে। হীরেন নন্দী রসিয়ে রসিয়ে বললেন—
—আপনি তো কেচ্ছা কেলেঙ্কারি পছন্দ করেন না, কিন্তু রহস্য রোমাঞ্চ আপনার নেশা! সম্ভবত, সেই কারণেই আপনি মৃদুল সাহার খুঁটিনাটি নিয়ে খোঁজখবর করছেন। তাই একটু সময় নিয়ে দুতিনখানা সোর্স থেকে খবর নিলুম!
ধৃতিমান তার গোয়েন্দা সত্তাকে নেহাত ভালোলাগা সখ হিসেবেই পরিচিত মহলে বলে থাকে। তার সঙ্গে গোয়েন্দা বিভাগের যোগাযোগের কথা কোথাও কোনোভাবে প্রকাশ করে না। সরকারিভাবে যেকোনো তদন্তেই সামনে থাকে সংশ্লিষ্ট থানা গোয়েন্দাবিভাগ বা লালবাজার। রহস্য সমাধানে ধৃতিমান চৌধুরীর অস্তিত্ব কখনও কোথাও নেই। তার নামে যে ভাউচার হয় সেটা পুলিশের খবরা-খবর সংগ্রহের জন্য সোর্স পেমেন্ট হিসেবে দেখানো হয়। ভৈরব চক্রবর্তী প্রথম দিনেই বলেছিলেন, আন্ডার কভার এসপিওনেজ সার্ভিস এর মতো আপনি আমাদের আই আই!
এই অদ্ভুত এব্রিভিয়েশন শুনে ধৃতিমানও একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল।
—মানে!
—ইনভিজিবল ইনভেস্টিগেটর!
অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও জাতীয় ও রাজ্যস্তরে তদন্ত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানান সংস্থা কাজ করে। এর মধ্যে মিডিয়া এবং হিন্দি সিনেমার দৌলতে কিছু সংস্থার নাম আমাদের পরিচিত। যেমন ‘ইডি’, ‘সিবিআই’, ‘সিআইডি’, ‘এনআইএ’, ‘আইবি’ এবং অবশ্যই ‘র’। কিন্তু এর বাইরে অনেক সংস্থা রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক তথ্য আদান-প্রদানের উপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছে। এর মধ্যে একটি মিল ভয়ঙ্কর। এইসব সংস্থায় যুক্ত আধিকারিকরা কখনই তাদের অস্তিত্ব প্রকাশ করেন না।
আরও পড়ুন:

হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬৭: গুগলি/২

বীণাবাদিনীর শতদলদলে করিছে সে টলোমল

হালের বিখ্যাত ফ্যামিলি ম্যান ওয়েবসিরিজে যেমন দেখানো হয়েছে সিরিজের প্রটাগনিস্ট শ্রীকান্ত তিওয়ারি বা তার সহযোগী জে কে তলপড়ে কোথায় চাকরি করেন সেটা পরিবারের কাছে খুব একটা স্পষ্ট নয়। ধৃতিমানের মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় রানাঘাটের এক কাকু ছিলেন, কী যেন নামটা। পাড়ার ফাংশনে মান্না দের গান করতেন। চোখ বুঝিয়ে শুনলে একটু মিল বলে মনে হতো! কোথায় চাকরি করেন কেউ খুব একটা ভালো করে জানে না কেউ বলতো ব্যাংকে কেউ বলতো প্রাইভেট ফার্ম, অনেক পরে মানে বাড়ি ছেড়ে কলকাতা চলে আসার কিছুদিন আগে ধৃতিমান জানতে পেরেছিল তিনি সিবিআইতে চাকরি করেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১০: মানুষের পাশে, মানুষের কাছে

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০১: সরষের মধ্যে ভূত

বহু লোক আছে যাঁরা সরাসরি জিনিসের দাম জিজ্ঞেস করেন, মাইনে জিজ্ঞেস করেন। তাদের মধ্যে একটা যাচাই করে নেবার প্রবণতা কাজ করে। বাড়ির কাছে সুষমা কর হত্যা রহস্যের সেই যে উল্টোডাঙা থানার খিটখিটে সন্দেহবাতিক সাবইন্সপেক্টর বিপুল পাল, তিনি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন—
—আপনার রোজগারটা আসলে ঠিক কি বলুন তো? সিনেমা থিয়েটার নাকি গোয়েন্দাগিরি?
ক্রিকেটার এমএল জয়সিমার মতো হাসিমুখে আক্রমণ প্রতিহত করা শিখতে হয়। তবেই কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুই ইনিংস মিলিয়ে পাঁচদিনের টেস্টম্যাচে পাঁচটা দিনই ব্যাট হাতে মাঠে নেমে রেকর্ড করা যায়। সেটা মাথায় রেখেই হাসিমুখে ধৃতিমান উত্তর দেয়!
—সিনেমা থিয়েটার গোয়েন্দাগিরি আর পৈতৃক কিছু সম্পত্তি এইসব মিলিয়ে-জুলিয়েই বেঁচে আছি স্যার!
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৬: সুন্দরবনের পাখি — কুবো

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

হীরেন নন্দীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যভাণ্ডার নিয়ে ভৈরব চক্রবর্তী সঙ্গে মিটিংয়ে বসলো ধৃতিমান। সব শুনে কফি কাপে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে মি. চক্রবর্তী বললেন
—বাপরে এতো খুব হিসেবি রোমিও একটা গাড়ির জন্য দু-দুখানা স্টেপনি ব্যবহার করে! জানেন ধৃতিমান আমার বুড়ো ঠাকুমা কিছুদিন আগে গত হয়েছেন। তিনি হলে দেশজ ভাষায় বলতেন, “ড্যাকরা পোলাপান ঘুইরা ঘুইরা ফুলে ফুলে মধু খাইয়া বেড়ায়! বলদাডাকে দইরা আচ্ছা কইরা পিটন দিতে পারোস না?”
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৩: রাগ অনুরাগের বন্ধন, ডিএইচ লরেন্স ও ফ্রিডা

মিস্টার চৌধুরীর সেই ঠাকুমা ভাবতেও পারবেন না যে সেখানে দোষটা ড্যাকরা পোলাপানের ছিল। আজও মৌমাছিরা তো স্বভাব দোষে ফুল বদলায়। তবে ফুলেরাও কিন্তু এখন সময়ে সময়ে মৌমাছি বদলে নেয় । এসব ভাবতে ভাবতেই ধৃতিমানের মনে হল সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমরা এখন যথেষ্ট “উদার এবং উন্নত” রিলেশনশিপ-এর মতোই আজকাল খুব চালু শব্দ হল সিচুয়েশনশিপ। মানে সম্পর্কে আছি কিন্তু দুজনেরই সম্পর্কের কোনও দায় নেই! খানিকটা ঠিকে কাজের লোকের মতো! আগের দিনে তাঁরা দীর্ঘসময় ধরে একই বাড়িতে কাটিয়ে দিতেন এখন কোনও স্থিরতা নেই। আজ একজন আছে, কাল হয়তো অন্য কাজের লোক। এরই সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ডেটিং এর ক্ষেত্রে একটা নতুন সংজ্ঞা ‘বেঞ্চিং’। মানে স্টেপনি বা অল্টারনেট রেডি রাখা।
মি. চৌধুরী ধৃতিমানকে বললেন, দ্রুত রাজস্থান ক্লাব থেকে তদন্ত শুরু করতে।
—কিন্তু আমাকে ওরা সাহায্য করবেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তরই বা দেবেন কেন? আমি তো পুলিশ নই।
—সেটা তো তারা জানেন না। আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে ফোন করে বলা হবে আমাদের অফিসার যাবেন কথা বলতে।
শুরু হল তদন্ত।—চলবে।

উপন্যাস: গুগলি: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content